মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
কলকাতায় এসেছি। রাঢ়াঙ নাটকের এক অভিযাত্রায়। প্রদর্শনী শুরু হয়েছে কল্যাণী থেকে। উত্তরপাড়া, মধ্যমগ্রাম, বেলঘরিয়া হয়ে কলকাতায়। প্রতিটি প্রদর্শনী বিশাল বিশাল রঙ্গমঞ্চে। সেই সব জায়গায় একসঙ্গে ৮৫০ জন দর্শক নাটক দেখতে পায়। প্রতিটি জনপদেই একটি করে রঙ্গমঞ্চ। উপচে পড়া দর্শক। নাটক শেষে ছবি তোলার এবং অটোগ্রাফ নেওয়ার হিড়িক। রাঢ়াঙ নাটকের ক্ষেত্রে ঢাকায়ও তাই– হয়। অবাক লাগে, রাঢ়াঙ হচ্ছে ক্ষুদ্রজাতিসত্তার অধিবাসীদের উচ্ছেদের মর্মান্তিক কাহিনি। দুই বাংলাতেই শহর এবং গ্রামে এক অসাধারণ আবেদন সৃষ্টি করেছে। সরল, সাধারণ এবং বোদ্ধা দর্শকদের কাছেই ১৯ বছর ধরে নাটকটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
পুলসংখ্যক দর্শক এখানে নাটক দেখছে। আর বাংলাদেশের অভিনেতা, অভিনেত্রী এখানে বিশেষভাবেই সমাদৃত হয়ে আসছে বহু দিন ধরেই। আমরা ৪০ বছর ধরেই নিয়মিত পশ্চিমবঙ্গ এবং এর আশপাশেই অভিনয় করে আসছি। দিল্লির এনএমডি এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক উৎসবেও বাংলাদেশের নাটক অভিনীত হয়ে আসছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ভারতের স্বাধীনতার পর অনেক মঞ্চ নির্মিত হয়েছে। রবীন্দ্র শতবর্ষে দেশব্যাপী রবীন্দ্র সদন মঞ্চ এবং রবীন্দ্র সার্ধশত বর্ষে বহু স্টুডিও নির্মাণের জন্য সরকার অর্থায়ন করেছে। এক শ থেকে দেড় শ দর্শক এখানে নাটক দেখতে পারে। অথচ ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমি এবং মহিলা সমিতি ছাড়া কোথাও অভিনয় উপযোগী মঞ্চ নেই।
বহু দিন ধরেই আমরা উত্তরা, মিরপুর, ধানমন্ডি, বনানী ও গুলশানে মঞ্চ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। কবে হবে এরও কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। এসব জায়গায় মঞ্চ যে শুধু হয়নি তা-ই নয়, পাঠাগার বা সিনেমা হলও নেই। কেন্দ্রীয় পাঠাগারও শাহবাগে অবস্থিত। সেখানেও বই-পুস্তক পড়তে কেউ আসে না। বিসিএস পরীক্ষার্থী হাজার হাজার ছেলেমেয়ের ভিড় সেখানে। একদা জ্ঞানচর্চার জায়গাগুলো ছিল কারাগারকেন্দ্রিক। কিন্তু এখন সেসব জায়গা নেই। স্কুল, কলেজের লাইব্রেরিগুলো তেমন সমৃদ্ধ নয়। সরকার কোটি কোটি টাকার বই কিনে থাকে, কিন্তু সেই বইয়ের বাছাইও হয়ে থাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং আমলাদের স্বেচ্ছাচারিতায়। লাইব্রেরিগুলো বই পড়ার তেমন আনন্দময় পাঠের ব্যবস্থা করে না। ঢাকার বাইরের অনেক লাইব্রেরিতেই জ্ঞানচর্চার অভাবে দুর্বৃত্তায়নই মুখ্য। এর মধ্যে কিছু সৎ ভাবনার মানুষ এখনো লড়াই করে যাচ্ছে।
অভিনীত স্থানগুলোর মধ্যে আছে কল্যাণী। ডা. বিধান রায়ের মানসকন্যা। বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল এবং পাঠাগারের পরিবেশবান্ধব গাছপালার এক অপূর্ব সমাহার। একেকটি রাস্তায় একেক ধরনের গাছ—মানে বিশাল রঙ্গমঞ্চ এবং কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র একটা চমৎকার স্টুডিও থিয়েটার। কল্যাণীতে ইটের পরে ইট, মধ্যে মানুষ কীট নয়। প্রচুর ফাঁকা জায়গা। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় না। শীত, গ্রীষ্ম, বসন্তের আগমনও টের পাওয়া যায়। একজন বেশ গর্বের সঙ্গে বলে উঠল, ‘দাদা, এখানে হেমন্তও টের পাওয়া যায়।’ লাইব্রেরি, মঞ্চ, স্টুডিও, থিয়েটার এবং শিল্পাঙ্গন মিলে একটা চমৎকার সাংস্কৃতিক পরিবেশে রাঢ়াঙে অভিনয় একটা নতুন অভিজ্ঞতা দিয়ে গেল।
পরের দিন আমাদের অভিনয় উত্তরপাড়ায়। উত্তরপাড়া এক সাংস্কৃতিক নগর। ২৫০ বছরের পুরোনো এক লাইব্রেরি, যার কাছেই মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি। মাইকেল তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো এখানেই কাটিয়েছেন। গঙ্গার ধারে এক আনন্দময় ছোট শহর। অদূরেই দক্ষিণেশ্বর, বেলুর মঠ। শহরের প্রবেশদ্বারেই বিবেকানন্দ ও সিস্টার নিবেদিতা সেতু। মঞ্চের নামও চমৎকার ‘গণভবন’। নাটকের দলের নামও বেশ—‘সমতট’। প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ থাকে বলে বহু দিন ধরেই একে বলা হয় হাউসফুল। সেই রকম একটা মঞ্চে পিনপতন নীরবতার মধ্যেই হয়ে গেল নাটক রাঢ়াঙ।
এরপর মধ্যমগ্রাম। গঙ্গা-যমুনা উৎসব চলছে। সেখানেও ৮৫০ আসনবিশিষ্ট নজরুল মঞ্চ। সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে। তারপরও দর্শকদের অজুহাত—একটি বা দুটি টিকিট চাই। একজন দর্শক প্রশ্ন করলেন, রাঢ়াঙ মানে কী? জানালাম, ‘দূরাগত মাদলের ধ্বনি, জেগে ওঠার মধ্যে’। এটি একটি সাঁওতালি শব্দ। এখানে প্রদর্শনী শুরু হয় বেলা ৩টায়। ৫টায় শেষ হয়ে যেতে হবে বেলঘরিয়ায়। সেখানেও হাজার দর্শক অপেক্ষমাণ। প্রদর্শনী সাড়ে ৬টায়। হাজার দর্শকের সামনে নাট্যদলের উদ্যোগে অভিনীত হলো।
তার পরদিনও শেষ দুটি প্রদর্শনী অসীমের উদ্যোগে, যারা আমাদের জন্য এই অভিযাত্রার রূপকার। সেখানেও টিকিটের হাহাকার। দুটি প্রদর্শনীই অভিনীত হলো কলকাতার বিদ্বজ্জনের সামনে। রাঢ়াঙ নাটকের ৩৫ জন কুশীলব ক্লান্তিহীন প্রেরণা নিয়ে চার দিনে ৬টি প্রদর্শনী শেষ করে, বিভাস চক্রবর্তীর অন্য থিয়েটারের সল্ট লেকের ঘরে ফিরে এল। যাঁরা এই নাটক দেখেছেন তাঁরা জানেন, দুই ঘণ্টার এই অভিনয়ে আছে কোরিওগ্রাফি, গান, মার্শাল আর্টসহ বাচিক ও আঙ্গিক অভিনয়। কিন্তু অভিনেতারা ক্লান্ত হয়নি। কারণ দর্শকের আগ্রহ ও ভালোবাসা। এই দর্শক যে নাট্য সংস্কৃতি নির্মাণ করেছেন, তা দুই শ বছরের। সাধারণ রঙ্গালয়ের বয়সও ১৫০ বছর।
২০২২ সালে সার্ধশত উদ্যাপনের সময় আমরা ‘নীল দর্পণ’ অভিনয় করে গিয়েছি। সমাপনী অনুষ্ঠান হবে ২৯ ডিসেম্বর। কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে আমি সেখানে উপস্থিত হব। কলকাতার দর্শকদের কাছে বাংলাদেশের থিয়েটার একটা প্রিয় উচ্চারণ। একদিকে মাত্র ৫১ বছরের নিয়মিত নাট্যচর্চার বয়স। সেদিক দিয়ে সে এখনো তরুণ। যাঁরা দেশ বিভাগের দুর্ভাগ্য নিয়ে এ দেশে এসেছিলেন, তাঁরা ফেলে আসা সেই পূর্ববঙ্গের মাটির গন্ধ পেয়ে থাকেন আর যাঁদের সে দুর্ভাগ্য হয়নি, তাঁরাও একই ভাষাভাষীর অন্য একটা দেশকে দেখতে চান। আবার এ দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য নাট্য দল। কলকাতা শুধু নয়, কলকাতার বাইরেও একটা বিশাল দর্শকশ্রেণি গড়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে আছে যাত্রা, সংগীত, কীর্তনীয়া, নাচের দল। শীতকালে চারদিকে নাট্য উৎসবের আয়োজন। এসব দর্শকের মধ্যে একটা নতুন প্রেরণার জন্ম দেয়।
আমরাও উৎসব করি। কিন্তু নিয়মিত করতে পারি না। একমাত্র গঙ্গা-যমুনা উৎসবটি নিয়মিত করার চেষ্টা চলছে, যেখানে দুই বাংলার নাটকই অভিনীত হয়। একসময় শীতকালই ছিল রাজনীতি ও সংস্কৃতিচর্চার সময়। এ সময়ই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর রাজনৈতিক আন্দোলন একসঙ্গে দানা বেঁধে উঠত। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের রাজনীতি সংস্কৃতি থেকে দূরে চলে গেছে। অদ্ভুত এক রাজনৈতিক আচার শুরু হয়েছে, যেখানে শুদ্ধাচার, নম্রতা, ভদ্রতা, জ্ঞানচর্চা, কল্যাণ চিন্তা অন্তর্হিত হয়েছে। নতুন মানুষ তৈরির প্রক্রিয়াটিও এখন বলতে গেলে নির্বাসিত ও পর্যুদস্ত। শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও রাজনৈতিক সংস্কৃতি আগের মতো নেই। অর্থনীতিতে, সমাজনীতিতে এক আগ্রাসী মনোভাব তীব্র দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যেও মানুষ তার সুকুমার আত্মাটি রক্ষা করার চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টারই প্রতিফলন সংস্কৃতির চর্চা। এর মধ্য দিয়েই আমরা বাংলাদেশের হৃদয়টি দেখার চেষ্টা করি। রাঢ়াঙ অভিযাত্রার মধ্য দিয়ে তার একটি ঝিলিক দেখতে পেয়েছি।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
কলকাতায় এসেছি। রাঢ়াঙ নাটকের এক অভিযাত্রায়। প্রদর্শনী শুরু হয়েছে কল্যাণী থেকে। উত্তরপাড়া, মধ্যমগ্রাম, বেলঘরিয়া হয়ে কলকাতায়। প্রতিটি প্রদর্শনী বিশাল বিশাল রঙ্গমঞ্চে। সেই সব জায়গায় একসঙ্গে ৮৫০ জন দর্শক নাটক দেখতে পায়। প্রতিটি জনপদেই একটি করে রঙ্গমঞ্চ। উপচে পড়া দর্শক। নাটক শেষে ছবি তোলার এবং অটোগ্রাফ নেওয়ার হিড়িক। রাঢ়াঙ নাটকের ক্ষেত্রে ঢাকায়ও তাই– হয়। অবাক লাগে, রাঢ়াঙ হচ্ছে ক্ষুদ্রজাতিসত্তার অধিবাসীদের উচ্ছেদের মর্মান্তিক কাহিনি। দুই বাংলাতেই শহর এবং গ্রামে এক অসাধারণ আবেদন সৃষ্টি করেছে। সরল, সাধারণ এবং বোদ্ধা দর্শকদের কাছেই ১৯ বছর ধরে নাটকটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
পুলসংখ্যক দর্শক এখানে নাটক দেখছে। আর বাংলাদেশের অভিনেতা, অভিনেত্রী এখানে বিশেষভাবেই সমাদৃত হয়ে আসছে বহু দিন ধরেই। আমরা ৪০ বছর ধরেই নিয়মিত পশ্চিমবঙ্গ এবং এর আশপাশেই অভিনয় করে আসছি। দিল্লির এনএমডি এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক উৎসবেও বাংলাদেশের নাটক অভিনীত হয়ে আসছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ভারতের স্বাধীনতার পর অনেক মঞ্চ নির্মিত হয়েছে। রবীন্দ্র শতবর্ষে দেশব্যাপী রবীন্দ্র সদন মঞ্চ এবং রবীন্দ্র সার্ধশত বর্ষে বহু স্টুডিও নির্মাণের জন্য সরকার অর্থায়ন করেছে। এক শ থেকে দেড় শ দর্শক এখানে নাটক দেখতে পারে। অথচ ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমি এবং মহিলা সমিতি ছাড়া কোথাও অভিনয় উপযোগী মঞ্চ নেই।
বহু দিন ধরেই আমরা উত্তরা, মিরপুর, ধানমন্ডি, বনানী ও গুলশানে মঞ্চ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। কবে হবে এরও কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। এসব জায়গায় মঞ্চ যে শুধু হয়নি তা-ই নয়, পাঠাগার বা সিনেমা হলও নেই। কেন্দ্রীয় পাঠাগারও শাহবাগে অবস্থিত। সেখানেও বই-পুস্তক পড়তে কেউ আসে না। বিসিএস পরীক্ষার্থী হাজার হাজার ছেলেমেয়ের ভিড় সেখানে। একদা জ্ঞানচর্চার জায়গাগুলো ছিল কারাগারকেন্দ্রিক। কিন্তু এখন সেসব জায়গা নেই। স্কুল, কলেজের লাইব্রেরিগুলো তেমন সমৃদ্ধ নয়। সরকার কোটি কোটি টাকার বই কিনে থাকে, কিন্তু সেই বইয়ের বাছাইও হয়ে থাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং আমলাদের স্বেচ্ছাচারিতায়। লাইব্রেরিগুলো বই পড়ার তেমন আনন্দময় পাঠের ব্যবস্থা করে না। ঢাকার বাইরের অনেক লাইব্রেরিতেই জ্ঞানচর্চার অভাবে দুর্বৃত্তায়নই মুখ্য। এর মধ্যে কিছু সৎ ভাবনার মানুষ এখনো লড়াই করে যাচ্ছে।
অভিনীত স্থানগুলোর মধ্যে আছে কল্যাণী। ডা. বিধান রায়ের মানসকন্যা। বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল এবং পাঠাগারের পরিবেশবান্ধব গাছপালার এক অপূর্ব সমাহার। একেকটি রাস্তায় একেক ধরনের গাছ—মানে বিশাল রঙ্গমঞ্চ এবং কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র একটা চমৎকার স্টুডিও থিয়েটার। কল্যাণীতে ইটের পরে ইট, মধ্যে মানুষ কীট নয়। প্রচুর ফাঁকা জায়গা। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় না। শীত, গ্রীষ্ম, বসন্তের আগমনও টের পাওয়া যায়। একজন বেশ গর্বের সঙ্গে বলে উঠল, ‘দাদা, এখানে হেমন্তও টের পাওয়া যায়।’ লাইব্রেরি, মঞ্চ, স্টুডিও, থিয়েটার এবং শিল্পাঙ্গন মিলে একটা চমৎকার সাংস্কৃতিক পরিবেশে রাঢ়াঙে অভিনয় একটা নতুন অভিজ্ঞতা দিয়ে গেল।
পরের দিন আমাদের অভিনয় উত্তরপাড়ায়। উত্তরপাড়া এক সাংস্কৃতিক নগর। ২৫০ বছরের পুরোনো এক লাইব্রেরি, যার কাছেই মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি। মাইকেল তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো এখানেই কাটিয়েছেন। গঙ্গার ধারে এক আনন্দময় ছোট শহর। অদূরেই দক্ষিণেশ্বর, বেলুর মঠ। শহরের প্রবেশদ্বারেই বিবেকানন্দ ও সিস্টার নিবেদিতা সেতু। মঞ্চের নামও চমৎকার ‘গণভবন’। নাটকের দলের নামও বেশ—‘সমতট’। প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ থাকে বলে বহু দিন ধরেই একে বলা হয় হাউসফুল। সেই রকম একটা মঞ্চে পিনপতন নীরবতার মধ্যেই হয়ে গেল নাটক রাঢ়াঙ।
এরপর মধ্যমগ্রাম। গঙ্গা-যমুনা উৎসব চলছে। সেখানেও ৮৫০ আসনবিশিষ্ট নজরুল মঞ্চ। সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে। তারপরও দর্শকদের অজুহাত—একটি বা দুটি টিকিট চাই। একজন দর্শক প্রশ্ন করলেন, রাঢ়াঙ মানে কী? জানালাম, ‘দূরাগত মাদলের ধ্বনি, জেগে ওঠার মধ্যে’। এটি একটি সাঁওতালি শব্দ। এখানে প্রদর্শনী শুরু হয় বেলা ৩টায়। ৫টায় শেষ হয়ে যেতে হবে বেলঘরিয়ায়। সেখানেও হাজার দর্শক অপেক্ষমাণ। প্রদর্শনী সাড়ে ৬টায়। হাজার দর্শকের সামনে নাট্যদলের উদ্যোগে অভিনীত হলো।
তার পরদিনও শেষ দুটি প্রদর্শনী অসীমের উদ্যোগে, যারা আমাদের জন্য এই অভিযাত্রার রূপকার। সেখানেও টিকিটের হাহাকার। দুটি প্রদর্শনীই অভিনীত হলো কলকাতার বিদ্বজ্জনের সামনে। রাঢ়াঙ নাটকের ৩৫ জন কুশীলব ক্লান্তিহীন প্রেরণা নিয়ে চার দিনে ৬টি প্রদর্শনী শেষ করে, বিভাস চক্রবর্তীর অন্য থিয়েটারের সল্ট লেকের ঘরে ফিরে এল। যাঁরা এই নাটক দেখেছেন তাঁরা জানেন, দুই ঘণ্টার এই অভিনয়ে আছে কোরিওগ্রাফি, গান, মার্শাল আর্টসহ বাচিক ও আঙ্গিক অভিনয়। কিন্তু অভিনেতারা ক্লান্ত হয়নি। কারণ দর্শকের আগ্রহ ও ভালোবাসা। এই দর্শক যে নাট্য সংস্কৃতি নির্মাণ করেছেন, তা দুই শ বছরের। সাধারণ রঙ্গালয়ের বয়সও ১৫০ বছর।
২০২২ সালে সার্ধশত উদ্যাপনের সময় আমরা ‘নীল দর্পণ’ অভিনয় করে গিয়েছি। সমাপনী অনুষ্ঠান হবে ২৯ ডিসেম্বর। কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে আমি সেখানে উপস্থিত হব। কলকাতার দর্শকদের কাছে বাংলাদেশের থিয়েটার একটা প্রিয় উচ্চারণ। একদিকে মাত্র ৫১ বছরের নিয়মিত নাট্যচর্চার বয়স। সেদিক দিয়ে সে এখনো তরুণ। যাঁরা দেশ বিভাগের দুর্ভাগ্য নিয়ে এ দেশে এসেছিলেন, তাঁরা ফেলে আসা সেই পূর্ববঙ্গের মাটির গন্ধ পেয়ে থাকেন আর যাঁদের সে দুর্ভাগ্য হয়নি, তাঁরাও একই ভাষাভাষীর অন্য একটা দেশকে দেখতে চান। আবার এ দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য নাট্য দল। কলকাতা শুধু নয়, কলকাতার বাইরেও একটা বিশাল দর্শকশ্রেণি গড়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে আছে যাত্রা, সংগীত, কীর্তনীয়া, নাচের দল। শীতকালে চারদিকে নাট্য উৎসবের আয়োজন। এসব দর্শকের মধ্যে একটা নতুন প্রেরণার জন্ম দেয়।
আমরাও উৎসব করি। কিন্তু নিয়মিত করতে পারি না। একমাত্র গঙ্গা-যমুনা উৎসবটি নিয়মিত করার চেষ্টা চলছে, যেখানে দুই বাংলার নাটকই অভিনীত হয়। একসময় শীতকালই ছিল রাজনীতি ও সংস্কৃতিচর্চার সময়। এ সময়ই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর রাজনৈতিক আন্দোলন একসঙ্গে দানা বেঁধে উঠত। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের রাজনীতি সংস্কৃতি থেকে দূরে চলে গেছে। অদ্ভুত এক রাজনৈতিক আচার শুরু হয়েছে, যেখানে শুদ্ধাচার, নম্রতা, ভদ্রতা, জ্ঞানচর্চা, কল্যাণ চিন্তা অন্তর্হিত হয়েছে। নতুন মানুষ তৈরির প্রক্রিয়াটিও এখন বলতে গেলে নির্বাসিত ও পর্যুদস্ত। শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও রাজনৈতিক সংস্কৃতি আগের মতো নেই। অর্থনীতিতে, সমাজনীতিতে এক আগ্রাসী মনোভাব তীব্র দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যেও মানুষ তার সুকুমার আত্মাটি রক্ষা করার চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টারই প্রতিফলন সংস্কৃতির চর্চা। এর মধ্য দিয়েই আমরা বাংলাদেশের হৃদয়টি দেখার চেষ্টা করি। রাঢ়াঙ অভিযাত্রার মধ্য দিয়ে তার একটি ঝিলিক দেখতে পেয়েছি।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৬ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে