মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
শুভ-অশুভ মিলিয়ে যাত্রা ক্লান্তিকর। সেই ওয়াশিংটন থেকে দোহা ১৩ ঘণ্টা। এরপর বিরতির পর সবটা মিলিয়ে ৭ ঘণ্টা। এর মধ্যে নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে পরিচয়। যাওয়ার সময় একদলের সঙ্গে পরিচয়, যাঁরা যাচ্ছেন লাতিন আমেরিকা। তাঁদের লক্ষ্য, যাবেন কলম্বিয়া। ভাষা শিখেছেন, শিক্ষিত। কিন্তু সেখানকার লেখকদের, বিশেষ করে মারকেজের লেখা থেকে জেনেছি প্রবল দারিদ্র্যও সেখানে। তবু প্রবাস ভালো। ছেলেগুলোকে বেশ বুদ্ধিমান মনে হলো, একটুখানি সমাজ সচেতনও। তবু ওই দেশে কেন যাচ্ছেন, বোধগম্য হলো না।
বাঙালিকে একসময় মনে হতো ঘরকুনো। ইংরেজিতে বলা হতো ‘হোম সিক’। কথাটা আজকে নয়, বহু আগে থেকেই সত্য নয়। বাংলার সব শহরেই একটা ব্যবসার এলাকা ছিল। যার নাম ঢাকাইয়াপট্টি। এখানে বিশেষ ধরনের কিছু গার্হস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া যেত। তাঁরা সবাই বিক্রমপুরের অধিবাসী। এখনো বাংলার বিভিন্ন শহরে তাঁদের অস্তিত্ব রয়ে গেছে। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, লক্ষ্ণৌ, এলাহাবাদ থেকে শুরু করে ভিন্ন জাতীয়তার দেশে এই অভিবাসন খুবই লক্ষণীয়। এমনকি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বিপুলসংখ্যক বাঙালি পাওয়া যাবে। এসব জায়গায় দুর্গাপূজা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। দুর্গাপূজার সময় কলকাতা থেকে বিভিন্ন নাট্যদল, গানের-নাচের দল এবং বড় বড় কণ্ঠশিল্পীর আগমন ঘটে।
একবার আসামের ধুবড়ীতে বেশ কিছু লোকের সঙ্গে পরিচিত হলাম, যাঁরা গেছেন টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ থেকে। শুধু তা-ই নয়, এই অঞ্চলের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী থাকে উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর হয়ে একেবারে পঞ্চগড় পর্যন্ত। তাঁরা দরিদ্রও নয়, মোটামুটি সম্পন্ন। কখনো দুর্ভিক্ষের কারণে, কখনোবা উন্নত জীবনযাপনের জন্য দেশ ছেড়েছেন। দেশবিভাগের কারণেও শিলিগুড়ি, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি অঞ্চলেও বিপুল পরিমাণ পূর্ব বাংলার লোক মোটামুটি সচ্ছল জীবনযাপন করে আসছেন।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর পশ্চিমেও ব্যাপকভাবে অভিবাসন হয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে তুলনামূলকভাবে স্থায়ী অভিবাসনের সংখ্যা নিতান্তই কম। এখানে সবাই আসে জীবিকার জন্য, এক বিশাল অদক্ষ শ্রমজীবী। তাঁরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেও চান না। দেশে টাকা পাঠান, দেশেই বিয়েশাদি করেন এবং সুযোগ পেলে দেশে আসেন। তবে তাঁরা কোনো উন্নত সংস্কৃতি নিয়ে আসেন না।
আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বিরাট একটা অংশ উত্তর আমেরিকায় যায়। সঙ্গে অভিভাবকেরাও। তাঁদের চোখে স্বপ্ন। এ যেন নতুন এক স্বপ্নের দেশে যাচ্ছেন তাঁরা। জীবনের বড় সার্থকতার সূচনা হচ্ছে। অধিকাংশের ক্ষেত্রে হয়তো তা-ই হয়।
একদা অভিবাসনের লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ড। সেই ১৭৭৪ সালে প্রথম বাঙালি হিশামুদ্দিন গিয়েছিলেন লন্ডনে, ছয় মাস, নয় মাস বা এক বছর সমুদ্র যাত্রা করে। এরপর ঊনবিংশ শতাব্দীতে উচ্চশিক্ষার জন্য এবং বিশেষ করে ব্যারিস্টারি পড়তে একশ্রেণির বিত্তবান লোকের সন্তানেরাও যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু সনাতন ধর্মে যেহেতু সমুদ্র পার হয়তো বারণ ছিল এবং কালাপানি স্পর্শ করলেই অধর্ম হতো। তাই একটা বড় ধরনের বাধাও ছিল। এই বাধা অতিক্রম করে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশে আইন ব্যবসায় তাঁরা বড় বড় জায়গা করে নিয়েছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে তাঁরাই আইনজীবী হয়ে দেশের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এভাবে বিংশ শতাব্দীতে বিলেতযাত্রা (ইংল্যান্ডযাত্রা) সহজ হয়ে ওঠে।
এই পথ ধরেই ইউরোপযাত্রা বাঙালির জীবনে একটা আশীর্বাদ হয়ে ওঠে। কলকাতা, মুম্বাই, মাদ্রাজ থেকে এই যাত্রা শুরু হয়ে মিসরের সুয়েজখাল হয়ে ইংল্যান্ডের ডোভারে গিয়ে শেষ হতো। সেখান থেকে এক ক্লান্তিকর যাত্রা লন্ডনে। তবু বাঙালির অভিবাসন যাত্রা কমেনি; বরং বাড়তেই থাকে। এ সময় আমেরিকাযাত্রা সহজ ছিল না। যদিও এ সময় স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকায় গেছেন, বেশ কিছু শহরে গিয়ে বক্তৃতাও করেছেন। ইতিহাস ঘাঁটলে ওই সময়ে আরও অনেক স্থানেই এই অঞ্চলের অনেক অভিবাসীকে খুঁজে পাওয়া যাবে। যেমন কানাডার বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে ভ্যানকুভার শহরটাই যেন অভিবাসীদের তৈরি। সেই ইতিহাসের গভীরে আর যাব না।
এক শ বছরের অধিক সময় ধরে উপমহাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র রয়ে গেছে পশ্চিমেই। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ না গেলে উচ্চশিক্ষার পরীক্ষাটা ঠিক হয় না। এখন কেন্দ্রের পরিবর্তন হয়ে গেছে। উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র দাঁড়িয়ে গেছে। এখন শিক্ষার চেয়ে নম্বর এবং চাকরি প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার মর্মবাণী আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই নির্বাসিত হয়ে গেছে। তবু শিক্ষার ক্ষেত্রে টাকার লগ্নি কিন্তু কম হচ্ছে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গতি মন্থর হলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একেবারে রমরমা। সম্প্রতি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে যা দেখলাম তাতে মনে হলো, আমি কি বাংলাদেশে আছি নাকি পশ্চিমের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরছি!
বোঝা যায়, শিক্ষায় মালিকদের মুনাফা অকল্পনীয় যেমন হয়েছে, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও তা-ই। প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি দেশে। তাতেও হচ্ছে না। যেতে হচ্ছে বিদেশে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং হাসপাতাল আমাদের দেশের টাকাতেই চলছে। বৈধ এবং অবৈধভাবে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার ঊর্ধ্বমুখী চলাচল! এই চলাচল দিন দিন বাড়ছে।
আজকের দিনে অভিবাসন শুধু ইংল্যান্ড, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য তো নয়ই, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, হংকং, তাইওয়ান, রাশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। সব জায়গাতেই বাঙালিদের পাওয়া যাবে। তাঁদের সবারই বাংলা সংস্কৃতিতেও আগ্রহ আছে। বাঙালির চিরদিনের স্বভাবও তাঁদের মধ্যে আছে। দলাদলি, সমিতি গঠন, পরশ্রীকাতরতা—সবকিছু। আরও আছে ‘হোয়াইট কলারদের’ সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষদের চলাচলের বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য। এই বৈষম্যটা ধরা পড়ে বিদেশের সংস্কৃতি চর্চায় এবং ভ্রমণে। এক শ্রেণি আরেক শ্রেণির সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলে না। এভাবে একটা ব্যাপক শ্রেণিবৈষম্যও গড়ে উঠেছে প্রবাসে।
তবে এখন তা শহরভিত্তিক হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু শহরে উচ্চশিক্ষিতদের বসবাস, চাকরিবাকরির ক্ষেত্রেও ‘হোয়াইট কলার’, আবার কিছু শহরে মিশ্র। সেই সব শহরে উচ্চশিক্ষিতদের কোনো জায়গাই নেই; বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের শহরগুলোতে একজন প্রবাসীর আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর। প্রতিদিনই নিষ্ঠুরতার নানা কাহিনি আমরা শুনতে পাই। ফিরতি যাত্রায় অনেক হতাশ এবং ব্যর্থ মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়; যাঁরা বিদেশে তেমন কিছু করতে পারেননি; বরং বিশাল ঋণের বোঝা নিয়ে ফিরছেন।
ভারতবর্ষ, চীন বহু আগে থেকেই প্রবাসের পথে যাত্রা করেছে। তাদের একটা প্রবাস সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যা-ই কিছু হোক না কেন, একতাবদ্ধ হয়ে তাঁরা একটা সুস্থ জীবনযাপন করেন। কিন্তু আমাদের বাঙালিরা বড়ই রাজনীতিসচেতন। সার্বক্ষণিক তাঁরা দেশের যেকোনো সংবাদে কাতর হয়ে পড়েন। তাঁরা যেকোনো দলের সমর্থক ও অন্য দলের সমালোচক। তবে ওয়াশিংটন ডিসির বইমেলা আমাকে এটুকু স্বস্তি দিয়েছিল, সেখানে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে কোনো কথা হয়নি; হাত গুটিয়ে একদল আরেক দলের দিকে মারমুখী হয়নি। তবে রাজনীতিকে একেবারে এড়িয়ে গিয়ে কিছু বইয়ের আলোচনা হলো, এ রকমও নয়। কারণ সাহিত্য-শিল্প রাজনীতি বিবর্জিত কোনো বিষয় নয়। তাই সমাজের উপরিতলে যে রাজনীতি আমাদের ৫২ বছরের অভিজ্ঞতা দিল, তার আলোচনা তো হওয়া চাই। সেটি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে।
শুভ-অশুভ মিলিয়ে যাত্রা ক্লান্তিকর। সেই ওয়াশিংটন থেকে দোহা ১৩ ঘণ্টা। এরপর বিরতির পর সবটা মিলিয়ে ৭ ঘণ্টা। এর মধ্যে নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে পরিচয়। যাওয়ার সময় একদলের সঙ্গে পরিচয়, যাঁরা যাচ্ছেন লাতিন আমেরিকা। তাঁদের লক্ষ্য, যাবেন কলম্বিয়া। ভাষা শিখেছেন, শিক্ষিত। কিন্তু সেখানকার লেখকদের, বিশেষ করে মারকেজের লেখা থেকে জেনেছি প্রবল দারিদ্র্যও সেখানে। তবু প্রবাস ভালো। ছেলেগুলোকে বেশ বুদ্ধিমান মনে হলো, একটুখানি সমাজ সচেতনও। তবু ওই দেশে কেন যাচ্ছেন, বোধগম্য হলো না।
বাঙালিকে একসময় মনে হতো ঘরকুনো। ইংরেজিতে বলা হতো ‘হোম সিক’। কথাটা আজকে নয়, বহু আগে থেকেই সত্য নয়। বাংলার সব শহরেই একটা ব্যবসার এলাকা ছিল। যার নাম ঢাকাইয়াপট্টি। এখানে বিশেষ ধরনের কিছু গার্হস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া যেত। তাঁরা সবাই বিক্রমপুরের অধিবাসী। এখনো বাংলার বিভিন্ন শহরে তাঁদের অস্তিত্ব রয়ে গেছে। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, লক্ষ্ণৌ, এলাহাবাদ থেকে শুরু করে ভিন্ন জাতীয়তার দেশে এই অভিবাসন খুবই লক্ষণীয়। এমনকি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বিপুলসংখ্যক বাঙালি পাওয়া যাবে। এসব জায়গায় দুর্গাপূজা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। দুর্গাপূজার সময় কলকাতা থেকে বিভিন্ন নাট্যদল, গানের-নাচের দল এবং বড় বড় কণ্ঠশিল্পীর আগমন ঘটে।
একবার আসামের ধুবড়ীতে বেশ কিছু লোকের সঙ্গে পরিচিত হলাম, যাঁরা গেছেন টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ থেকে। শুধু তা-ই নয়, এই অঞ্চলের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী থাকে উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর হয়ে একেবারে পঞ্চগড় পর্যন্ত। তাঁরা দরিদ্রও নয়, মোটামুটি সম্পন্ন। কখনো দুর্ভিক্ষের কারণে, কখনোবা উন্নত জীবনযাপনের জন্য দেশ ছেড়েছেন। দেশবিভাগের কারণেও শিলিগুড়ি, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি অঞ্চলেও বিপুল পরিমাণ পূর্ব বাংলার লোক মোটামুটি সচ্ছল জীবনযাপন করে আসছেন।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর পশ্চিমেও ব্যাপকভাবে অভিবাসন হয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে তুলনামূলকভাবে স্থায়ী অভিবাসনের সংখ্যা নিতান্তই কম। এখানে সবাই আসে জীবিকার জন্য, এক বিশাল অদক্ষ শ্রমজীবী। তাঁরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেও চান না। দেশে টাকা পাঠান, দেশেই বিয়েশাদি করেন এবং সুযোগ পেলে দেশে আসেন। তবে তাঁরা কোনো উন্নত সংস্কৃতি নিয়ে আসেন না।
আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বিরাট একটা অংশ উত্তর আমেরিকায় যায়। সঙ্গে অভিভাবকেরাও। তাঁদের চোখে স্বপ্ন। এ যেন নতুন এক স্বপ্নের দেশে যাচ্ছেন তাঁরা। জীবনের বড় সার্থকতার সূচনা হচ্ছে। অধিকাংশের ক্ষেত্রে হয়তো তা-ই হয়।
একদা অভিবাসনের লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ড। সেই ১৭৭৪ সালে প্রথম বাঙালি হিশামুদ্দিন গিয়েছিলেন লন্ডনে, ছয় মাস, নয় মাস বা এক বছর সমুদ্র যাত্রা করে। এরপর ঊনবিংশ শতাব্দীতে উচ্চশিক্ষার জন্য এবং বিশেষ করে ব্যারিস্টারি পড়তে একশ্রেণির বিত্তবান লোকের সন্তানেরাও যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু সনাতন ধর্মে যেহেতু সমুদ্র পার হয়তো বারণ ছিল এবং কালাপানি স্পর্শ করলেই অধর্ম হতো। তাই একটা বড় ধরনের বাধাও ছিল। এই বাধা অতিক্রম করে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশে আইন ব্যবসায় তাঁরা বড় বড় জায়গা করে নিয়েছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে তাঁরাই আইনজীবী হয়ে দেশের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এভাবে বিংশ শতাব্দীতে বিলেতযাত্রা (ইংল্যান্ডযাত্রা) সহজ হয়ে ওঠে।
এই পথ ধরেই ইউরোপযাত্রা বাঙালির জীবনে একটা আশীর্বাদ হয়ে ওঠে। কলকাতা, মুম্বাই, মাদ্রাজ থেকে এই যাত্রা শুরু হয়ে মিসরের সুয়েজখাল হয়ে ইংল্যান্ডের ডোভারে গিয়ে শেষ হতো। সেখান থেকে এক ক্লান্তিকর যাত্রা লন্ডনে। তবু বাঙালির অভিবাসন যাত্রা কমেনি; বরং বাড়তেই থাকে। এ সময় আমেরিকাযাত্রা সহজ ছিল না। যদিও এ সময় স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকায় গেছেন, বেশ কিছু শহরে গিয়ে বক্তৃতাও করেছেন। ইতিহাস ঘাঁটলে ওই সময়ে আরও অনেক স্থানেই এই অঞ্চলের অনেক অভিবাসীকে খুঁজে পাওয়া যাবে। যেমন কানাডার বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে ভ্যানকুভার শহরটাই যেন অভিবাসীদের তৈরি। সেই ইতিহাসের গভীরে আর যাব না।
এক শ বছরের অধিক সময় ধরে উপমহাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র রয়ে গেছে পশ্চিমেই। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ না গেলে উচ্চশিক্ষার পরীক্ষাটা ঠিক হয় না। এখন কেন্দ্রের পরিবর্তন হয়ে গেছে। উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র দাঁড়িয়ে গেছে। এখন শিক্ষার চেয়ে নম্বর এবং চাকরি প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার মর্মবাণী আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই নির্বাসিত হয়ে গেছে। তবু শিক্ষার ক্ষেত্রে টাকার লগ্নি কিন্তু কম হচ্ছে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গতি মন্থর হলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একেবারে রমরমা। সম্প্রতি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে যা দেখলাম তাতে মনে হলো, আমি কি বাংলাদেশে আছি নাকি পশ্চিমের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরছি!
বোঝা যায়, শিক্ষায় মালিকদের মুনাফা অকল্পনীয় যেমন হয়েছে, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও তা-ই। প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি দেশে। তাতেও হচ্ছে না। যেতে হচ্ছে বিদেশে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং হাসপাতাল আমাদের দেশের টাকাতেই চলছে। বৈধ এবং অবৈধভাবে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার ঊর্ধ্বমুখী চলাচল! এই চলাচল দিন দিন বাড়ছে।
আজকের দিনে অভিবাসন শুধু ইংল্যান্ড, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য তো নয়ই, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, হংকং, তাইওয়ান, রাশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। সব জায়গাতেই বাঙালিদের পাওয়া যাবে। তাঁদের সবারই বাংলা সংস্কৃতিতেও আগ্রহ আছে। বাঙালির চিরদিনের স্বভাবও তাঁদের মধ্যে আছে। দলাদলি, সমিতি গঠন, পরশ্রীকাতরতা—সবকিছু। আরও আছে ‘হোয়াইট কলারদের’ সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষদের চলাচলের বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য। এই বৈষম্যটা ধরা পড়ে বিদেশের সংস্কৃতি চর্চায় এবং ভ্রমণে। এক শ্রেণি আরেক শ্রেণির সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলে না। এভাবে একটা ব্যাপক শ্রেণিবৈষম্যও গড়ে উঠেছে প্রবাসে।
তবে এখন তা শহরভিত্তিক হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু শহরে উচ্চশিক্ষিতদের বসবাস, চাকরিবাকরির ক্ষেত্রেও ‘হোয়াইট কলার’, আবার কিছু শহরে মিশ্র। সেই সব শহরে উচ্চশিক্ষিতদের কোনো জায়গাই নেই; বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের শহরগুলোতে একজন প্রবাসীর আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর। প্রতিদিনই নিষ্ঠুরতার নানা কাহিনি আমরা শুনতে পাই। ফিরতি যাত্রায় অনেক হতাশ এবং ব্যর্থ মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়; যাঁরা বিদেশে তেমন কিছু করতে পারেননি; বরং বিশাল ঋণের বোঝা নিয়ে ফিরছেন।
ভারতবর্ষ, চীন বহু আগে থেকেই প্রবাসের পথে যাত্রা করেছে। তাদের একটা প্রবাস সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যা-ই কিছু হোক না কেন, একতাবদ্ধ হয়ে তাঁরা একটা সুস্থ জীবনযাপন করেন। কিন্তু আমাদের বাঙালিরা বড়ই রাজনীতিসচেতন। সার্বক্ষণিক তাঁরা দেশের যেকোনো সংবাদে কাতর হয়ে পড়েন। তাঁরা যেকোনো দলের সমর্থক ও অন্য দলের সমালোচক। তবে ওয়াশিংটন ডিসির বইমেলা আমাকে এটুকু স্বস্তি দিয়েছিল, সেখানে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে কোনো কথা হয়নি; হাত গুটিয়ে একদল আরেক দলের দিকে মারমুখী হয়নি। তবে রাজনীতিকে একেবারে এড়িয়ে গিয়ে কিছু বইয়ের আলোচনা হলো, এ রকমও নয়। কারণ সাহিত্য-শিল্প রাজনীতি বিবর্জিত কোনো বিষয় নয়। তাই সমাজের উপরিতলে যে রাজনীতি আমাদের ৫২ বছরের অভিজ্ঞতা দিল, তার আলোচনা তো হওয়া চাই। সেটি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে