মামুনুর রশীদ
ডালাসে বাংলাদেশের অনেক সফল তরুণ-তরুণীকে দেখেছি, যাঁরা এখান থেকে শিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন এবং পড়ালেখা শিখে বেশ সম্মানজনক চাকরিও করছেন। তাঁদের মধ্যে স্থপতি আছেন, চিকিৎসক আছেন, আইটি এক্সপার্ট আছেন। আবার আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় বহু ব্যর্থ মানুষকে দেখেছি, যাঁরা একটি স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকায় গিয়েছিলেন, কিন্তু সারা জীবন কোনো জীবিকায় স্থির হতে পারেননি; বরং একেবারে তাঁদের যোগ্যতার চেয়ে ছোট চাকরি করে জীবন পার করছেন, সম্ভবত তাঁদের সংখ্যাই বেশি। সৌভাগ্যের দ্বার তাঁদের জন্য কখনোই খোলেনি।
এক সন্ধ্যায় আমার ছেলের বাসায় বেশ আড্ডা জমে উঠেছিল, ঠিক আড্ডা নয়; সেটা ছিল কয়েকজন প্রবাসী তরুণের প্রাজ্ঞ সম্মিলনী। যে তরুণটি সম্মিলনী জমিয়ে রাখছিলেন এবং আমরা মুগ্ধ হয়ে তাঁর কথা শুনছিলাম। তাঁরই এক বন্ধু হঠাৎ করে বলে উঠলেন, ‘দেখুন তো ওর পেছনে কী আছে?’ খুব একটা জোরাজুরি করতে হলো না। পেছন থেকে বের করে আনলেন একটি রিভলবার। আমরা সবাই একটু অবাক হলাম। এই শান্তিপ্রিয় তরুণটির সঙ্গে রিভলবার কেন? সে কি আত্মরক্ষার জন্য? নাকি মাঝে মাঝে তিনি কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত হন?
এ প্রসঙ্গ উঠতেই আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম! মনে পড়ল অনেকগুলো টিভি ফুটেজের কথা, যেখানে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা শপিং মল, স্কুল, চার্চ—এসব জায়গায় হামলা চালায়। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে ছাত্ররাই একজন শিক্ষককে গুলি করে মেরে ফেলেছিল। কিছুদিন আগেও টেক্সাসের কোনো একটি স্কুলে সশস্ত্র হামলায় বেশ কিছু শিশু নিহত ও আহত হয়েছিল। এরপর একটা জোর আওয়াজ উঠেছিল—অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, প্রকাশ্যে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে। এই আওয়াজ আমেরিকার ইতিহাসে বহুবার উঠেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। একদিকে যারা অস্ত্র ব্যবসায়ী বা অস্ত্র কারখানার মালিক, তারা খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি। আর অন্যদিকে আত্মরক্ষার অধিকারের জন্যও এই ব্যবস্থাকে চালু রাখার পক্ষে একটা বিরাট জনসমর্থন আছে।
একদা সম্ভবত বহু আগে একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, কখনো যদি স্বৈরাচারী একনায়কের আবির্ভাব হয়, তাকে উৎখাত করার জন্য অস্ত্র কেনা এবং সঙ্গে রাখার অধিকার থাকতে হবে। বারবার শান্তিকামী নাগরিকেরা এ কথাও বলে থাকে যে ইংল্যান্ডে পুলিশের হাতেও কোনো অস্ত্র থাকে না, কিন্তু সেই পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা যথাযথভাবেই দিয়ে থাকে।
অস্ত্রের বিষয়টি বড়ই জটিল একটি বিষয়। পৃথিবীর দেশে দেশে বিপ্লবের জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন হয়েছে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছাড়া কোথাও মানুষের মুক্তি আসেনি। যেখানে অস্ত্র লেগেছে, নানা অবৈধ পথে তা সংগ্রহ করতে হতো। সেই অস্ত্র পবিত্র অস্ত্র। এখনো পৃথিবীতে এমনও দেশ আছে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র সমর্পণ করেনি, সেখানে সার্বভৌমত্বের একটা বড় রক্ষাকবচ হচ্ছে অস্ত্র। আবার অবৈধ অস্ত্রের কারবার সারা বিশ্বেই আছে। অস্ত্রের কারখানাগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই অবৈধ পথ প্রয়োজন।আমেরিকায় যেকোনো লোক অস্ত্র কিনতে পারে, কিন্তু অবশ্যই সেখানে কিছু নিয়মকানুন আছে। মানবজাতি নিয়মকানুন ভাঙতে বড়ই ওস্তাদ। নিয়ম ভাঙাই যেন নিয়ম। আমাদের দেশেও প্রায়ই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার দেখে থাকি, বিশেষ করে রাজনৈতিক কারণে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অস্ত্র প্রয়োজন। এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে অস্ত্র ব্যবহারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানেও অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার লক্ষ করা যায়। আমেরিকানরা মনে করে, অস্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার একটা হাতিয়ার।
একদা জাপানে অস্ত্র এবং পেশিশক্তি সবকিছু নির্ধারণ করত। তারও আগে রোমে বা ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় অস্ত্র চালাতে যে বেশি পারঙ্গম, সে-ই দেশ চালাত, রাষ্ট্রক্ষমতা তার হাতেই থাকত। ইব্রাহিম লোদি বা শেরশাহ অস্ত্রের বলেই দিল্লি দখল করেছিলেন। পানিপথের যুদ্ধে বাবর কামান দিয়ে ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করেছিলেন। অবশ্য মোগল শাসনকর্তারা অস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে দেশ শাসনের মেধাও অর্জন করেছিলেন বলে দীর্ঘদিন তাঁরা দেশ শাসন করতে পেরেছিলেন। রবার্ট ক্লাইভের মতো পাড়ার একটা ‘ছিঁচকে মাস্তান’ ইস্ট ইন্ডিয়ার কেরানি হয়ে ভারতবর্ষ শাসন করেছিলেন। ন্যায়নীতিহীন এই ‘ছিঁচকে মাস্তান’ তাঁর সামান্য কিছু অনুসারীকে নিয়ে অস্ত্রের ব্যবহারে এবং শঠতার আশ্রয় নিয়ে বাংলার স্বাধীন নবাবকে পরাজিত করেন এবং সেই পরাজয় কালক্রমে ভারতবর্ষকে তাঁদের শাসনাধীন করার ব্যবস্থা করে দেয়। পলাশীর পরাজিত সৈনিকদের যাদের হাতে অস্ত্র ছিল, তারা অনেক দিন যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। যদিও ইংরেজদের পরাজিত করতে পারেনি।
পৃথিবীতে আসলে অস্ত্র দিন দিন শক্তিশালী হয়েছে। ছোট্ট একটি বোমা আণবিক বোমায় পরিণত হয়েছে। সেই আণবিক বোমা মানবজাতির জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এখন প্রতিটি দেশই আণবিক বোমার দেশ হতে চায়। এদিকে বড় দেশগুলো মনে করে তাদের কাছে আণবিক বোমা থাকুক, কেন ছোট দেশের কাছে থাকবে? সাম্রাজ্যবাদী শক্তির জন্য এখন অস্ত্র বড়ই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিরস্ত্রীকরণের জন্য অনেক আন্দোলন চলছে, কথাবার্তা হচ্ছে, কিন্তু মানবজাতি শক্তি সঞ্চয়ের জন্য তার একগুঁয়ে মনোভাবের কোনো পরিবর্তন করছে না।
সেই তরুণের কথায় ফিরে আসি। তিনি তাঁর একটি ছোট্ট অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন, একদিন তিনি দেখছেন তাঁর বাড়ির সামনে পুলিশ কাউকে খুঁজছে। পুলিশ যাঁকে খুঁজছে তাঁর নামটি বাংলাদেশের কোনো একজনের। এরপর তরুণ ঘরে ফিরে এসেছেন। তাঁর রিভলবারটি রাখা ছিল সামনের একটি টেবিলের ওপর। পুলিশ ঘরের ভেতরে ঢুকে গেছে; তখন পুলিশ জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি এই ব্যক্তি?’ তরুণ জবাব দিলেন, ‘না, আমি এই ব্যক্তি নই। তুমি আমার ঘরের ভেতরে ঢুকলে কেন?’ পুলিশ জবাব দিল, ‘আসামি খুঁজতে গেলে তো আমি ভেতরে ঢুকবই।’ তরুণ তখন বললেন, ‘তোমার কাছে ওয়ারেন্ট আছে? দেখছ তো টেবিলের ওপর একটি অস্ত্র আছে। আত্মরক্ষার জন্য আমি এটি ব্যবহার করতে পারি?’ বলেই তরুণ টেবিলের দিকে যেতে থাকেন এবং পুলিশ দৌড়ে পালিয়ে যায়। তরুণটি এবার বলছেন, ‘ওই সময়ে যদি আমার রিভলবারটি না থাকত, তাহলে পুলিশ প্রয়োজনে তার অস্ত্রটি উঁচিয়ে ধরত।’ ওই একটি রিভলবারের উপস্থিতি তাঁর আত্মমর্যাদা রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হলো। এটাও একটা যুক্তি, যারা অবাধ অস্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের পক্ষে এটা বিশ্বাসযোগ্য।
এরপর অস্ত্রের পক্ষে এবং বিপক্ষে বিতর্ক জমে উঠল। পৃথিবীর ইতিহাসে ক্ষমতা দখল এমনকি ধর্ম যুদ্ধেও অস্ত্রের ব্যবহার গৌরবান্বিত হয়েছে। আমাদের এই উপমহাদেশে প্রতিটি রাষ্ট্রেই অস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনী রয়েছে। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আবার আরেক সীমান্তে চীন-ভারতের মাঝেও যুদ্ধ চলছে। কারও পক্ষেই অস্ত্রসমর্পণের কোনো উপায় নেই। কাশ্মীরে অস্ত্রের ভয়ংকর ব্যবহার সব সময়ই চলে আসছে। নিরীহ সাধারণ মানুষ অস্ত্রকে ভয় পায়। দেশে যখন সামরিক শাসন চলে, তখন ছিঁচকে মাস্তানরা গাঢাকা দেয়। কিন্তু সুসভ্য শিক্ষিত দায়িত্ববান মানুষের হাতে যদি অস্ত্র থাকে, তখন তার ভয়ের কোনো কারণ থাকে না।
এ কথাও সত্যি, অস্ত্র নিজেই একটা ভীতিকর বিষয়। অস্ত্র সঙ্গে রাখা কখনো কখনো বড় বিপদ ডেকে আনে। আমেরিকার জনগণের একটা বড় অংশ এভাবে অস্ত্র রাখার বিরুদ্ধে। আবার বড় একটা অংশ অস্ত্র ব্যবসার কারণে এবং তাদের যুক্তিতে আত্মরক্ষার কারণে অস্ত্র অবাধ রাখার পক্ষে। এই বিতর্কের শিগগিরই সমাধান হবে না। কারণ, পৃথিবীতে অস্ত্রই যেখানে শক্তির নিয়ামক, সেখানে কেউ শান্তির প্রশ্নে অস্ত্র ছাড় দেবে না; বরং এটাই বলবে—শান্তির জন্যই অস্ত্রের প্রয়োজন। জাতিসংঘ যে কারণে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাচ্ছে পৃথিবীর অশান্তির দেশে। তাতে কি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, নাকি নতুন অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে? তর্কপ্রিয় মানবজাতি এই তর্ক চালাতেই থাকবে। আমরাও চা-কফির সঙ্গে সন্ধ্যাটা উত্তাপের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছি।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
ডালাসে বাংলাদেশের অনেক সফল তরুণ-তরুণীকে দেখেছি, যাঁরা এখান থেকে শিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন এবং পড়ালেখা শিখে বেশ সম্মানজনক চাকরিও করছেন। তাঁদের মধ্যে স্থপতি আছেন, চিকিৎসক আছেন, আইটি এক্সপার্ট আছেন। আবার আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় বহু ব্যর্থ মানুষকে দেখেছি, যাঁরা একটি স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকায় গিয়েছিলেন, কিন্তু সারা জীবন কোনো জীবিকায় স্থির হতে পারেননি; বরং একেবারে তাঁদের যোগ্যতার চেয়ে ছোট চাকরি করে জীবন পার করছেন, সম্ভবত তাঁদের সংখ্যাই বেশি। সৌভাগ্যের দ্বার তাঁদের জন্য কখনোই খোলেনি।
এক সন্ধ্যায় আমার ছেলের বাসায় বেশ আড্ডা জমে উঠেছিল, ঠিক আড্ডা নয়; সেটা ছিল কয়েকজন প্রবাসী তরুণের প্রাজ্ঞ সম্মিলনী। যে তরুণটি সম্মিলনী জমিয়ে রাখছিলেন এবং আমরা মুগ্ধ হয়ে তাঁর কথা শুনছিলাম। তাঁরই এক বন্ধু হঠাৎ করে বলে উঠলেন, ‘দেখুন তো ওর পেছনে কী আছে?’ খুব একটা জোরাজুরি করতে হলো না। পেছন থেকে বের করে আনলেন একটি রিভলবার। আমরা সবাই একটু অবাক হলাম। এই শান্তিপ্রিয় তরুণটির সঙ্গে রিভলবার কেন? সে কি আত্মরক্ষার জন্য? নাকি মাঝে মাঝে তিনি কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত হন?
এ প্রসঙ্গ উঠতেই আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম! মনে পড়ল অনেকগুলো টিভি ফুটেজের কথা, যেখানে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা শপিং মল, স্কুল, চার্চ—এসব জায়গায় হামলা চালায়। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে ছাত্ররাই একজন শিক্ষককে গুলি করে মেরে ফেলেছিল। কিছুদিন আগেও টেক্সাসের কোনো একটি স্কুলে সশস্ত্র হামলায় বেশ কিছু শিশু নিহত ও আহত হয়েছিল। এরপর একটা জোর আওয়াজ উঠেছিল—অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, প্রকাশ্যে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে। এই আওয়াজ আমেরিকার ইতিহাসে বহুবার উঠেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। একদিকে যারা অস্ত্র ব্যবসায়ী বা অস্ত্র কারখানার মালিক, তারা খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি। আর অন্যদিকে আত্মরক্ষার অধিকারের জন্যও এই ব্যবস্থাকে চালু রাখার পক্ষে একটা বিরাট জনসমর্থন আছে।
একদা সম্ভবত বহু আগে একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, কখনো যদি স্বৈরাচারী একনায়কের আবির্ভাব হয়, তাকে উৎখাত করার জন্য অস্ত্র কেনা এবং সঙ্গে রাখার অধিকার থাকতে হবে। বারবার শান্তিকামী নাগরিকেরা এ কথাও বলে থাকে যে ইংল্যান্ডে পুলিশের হাতেও কোনো অস্ত্র থাকে না, কিন্তু সেই পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা যথাযথভাবেই দিয়ে থাকে।
অস্ত্রের বিষয়টি বড়ই জটিল একটি বিষয়। পৃথিবীর দেশে দেশে বিপ্লবের জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন হয়েছে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছাড়া কোথাও মানুষের মুক্তি আসেনি। যেখানে অস্ত্র লেগেছে, নানা অবৈধ পথে তা সংগ্রহ করতে হতো। সেই অস্ত্র পবিত্র অস্ত্র। এখনো পৃথিবীতে এমনও দেশ আছে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র সমর্পণ করেনি, সেখানে সার্বভৌমত্বের একটা বড় রক্ষাকবচ হচ্ছে অস্ত্র। আবার অবৈধ অস্ত্রের কারবার সারা বিশ্বেই আছে। অস্ত্রের কারখানাগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই অবৈধ পথ প্রয়োজন।আমেরিকায় যেকোনো লোক অস্ত্র কিনতে পারে, কিন্তু অবশ্যই সেখানে কিছু নিয়মকানুন আছে। মানবজাতি নিয়মকানুন ভাঙতে বড়ই ওস্তাদ। নিয়ম ভাঙাই যেন নিয়ম। আমাদের দেশেও প্রায়ই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার দেখে থাকি, বিশেষ করে রাজনৈতিক কারণে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অস্ত্র প্রয়োজন। এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে অস্ত্র ব্যবহারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানেও অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার লক্ষ করা যায়। আমেরিকানরা মনে করে, অস্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার একটা হাতিয়ার।
একদা জাপানে অস্ত্র এবং পেশিশক্তি সবকিছু নির্ধারণ করত। তারও আগে রোমে বা ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় অস্ত্র চালাতে যে বেশি পারঙ্গম, সে-ই দেশ চালাত, রাষ্ট্রক্ষমতা তার হাতেই থাকত। ইব্রাহিম লোদি বা শেরশাহ অস্ত্রের বলেই দিল্লি দখল করেছিলেন। পানিপথের যুদ্ধে বাবর কামান দিয়ে ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করেছিলেন। অবশ্য মোগল শাসনকর্তারা অস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে দেশ শাসনের মেধাও অর্জন করেছিলেন বলে দীর্ঘদিন তাঁরা দেশ শাসন করতে পেরেছিলেন। রবার্ট ক্লাইভের মতো পাড়ার একটা ‘ছিঁচকে মাস্তান’ ইস্ট ইন্ডিয়ার কেরানি হয়ে ভারতবর্ষ শাসন করেছিলেন। ন্যায়নীতিহীন এই ‘ছিঁচকে মাস্তান’ তাঁর সামান্য কিছু অনুসারীকে নিয়ে অস্ত্রের ব্যবহারে এবং শঠতার আশ্রয় নিয়ে বাংলার স্বাধীন নবাবকে পরাজিত করেন এবং সেই পরাজয় কালক্রমে ভারতবর্ষকে তাঁদের শাসনাধীন করার ব্যবস্থা করে দেয়। পলাশীর পরাজিত সৈনিকদের যাদের হাতে অস্ত্র ছিল, তারা অনেক দিন যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। যদিও ইংরেজদের পরাজিত করতে পারেনি।
পৃথিবীতে আসলে অস্ত্র দিন দিন শক্তিশালী হয়েছে। ছোট্ট একটি বোমা আণবিক বোমায় পরিণত হয়েছে। সেই আণবিক বোমা মানবজাতির জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এখন প্রতিটি দেশই আণবিক বোমার দেশ হতে চায়। এদিকে বড় দেশগুলো মনে করে তাদের কাছে আণবিক বোমা থাকুক, কেন ছোট দেশের কাছে থাকবে? সাম্রাজ্যবাদী শক্তির জন্য এখন অস্ত্র বড়ই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিরস্ত্রীকরণের জন্য অনেক আন্দোলন চলছে, কথাবার্তা হচ্ছে, কিন্তু মানবজাতি শক্তি সঞ্চয়ের জন্য তার একগুঁয়ে মনোভাবের কোনো পরিবর্তন করছে না।
সেই তরুণের কথায় ফিরে আসি। তিনি তাঁর একটি ছোট্ট অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন, একদিন তিনি দেখছেন তাঁর বাড়ির সামনে পুলিশ কাউকে খুঁজছে। পুলিশ যাঁকে খুঁজছে তাঁর নামটি বাংলাদেশের কোনো একজনের। এরপর তরুণ ঘরে ফিরে এসেছেন। তাঁর রিভলবারটি রাখা ছিল সামনের একটি টেবিলের ওপর। পুলিশ ঘরের ভেতরে ঢুকে গেছে; তখন পুলিশ জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি এই ব্যক্তি?’ তরুণ জবাব দিলেন, ‘না, আমি এই ব্যক্তি নই। তুমি আমার ঘরের ভেতরে ঢুকলে কেন?’ পুলিশ জবাব দিল, ‘আসামি খুঁজতে গেলে তো আমি ভেতরে ঢুকবই।’ তরুণ তখন বললেন, ‘তোমার কাছে ওয়ারেন্ট আছে? দেখছ তো টেবিলের ওপর একটি অস্ত্র আছে। আত্মরক্ষার জন্য আমি এটি ব্যবহার করতে পারি?’ বলেই তরুণ টেবিলের দিকে যেতে থাকেন এবং পুলিশ দৌড়ে পালিয়ে যায়। তরুণটি এবার বলছেন, ‘ওই সময়ে যদি আমার রিভলবারটি না থাকত, তাহলে পুলিশ প্রয়োজনে তার অস্ত্রটি উঁচিয়ে ধরত।’ ওই একটি রিভলবারের উপস্থিতি তাঁর আত্মমর্যাদা রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হলো। এটাও একটা যুক্তি, যারা অবাধ অস্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের পক্ষে এটা বিশ্বাসযোগ্য।
এরপর অস্ত্রের পক্ষে এবং বিপক্ষে বিতর্ক জমে উঠল। পৃথিবীর ইতিহাসে ক্ষমতা দখল এমনকি ধর্ম যুদ্ধেও অস্ত্রের ব্যবহার গৌরবান্বিত হয়েছে। আমাদের এই উপমহাদেশে প্রতিটি রাষ্ট্রেই অস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনী রয়েছে। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আবার আরেক সীমান্তে চীন-ভারতের মাঝেও যুদ্ধ চলছে। কারও পক্ষেই অস্ত্রসমর্পণের কোনো উপায় নেই। কাশ্মীরে অস্ত্রের ভয়ংকর ব্যবহার সব সময়ই চলে আসছে। নিরীহ সাধারণ মানুষ অস্ত্রকে ভয় পায়। দেশে যখন সামরিক শাসন চলে, তখন ছিঁচকে মাস্তানরা গাঢাকা দেয়। কিন্তু সুসভ্য শিক্ষিত দায়িত্ববান মানুষের হাতে যদি অস্ত্র থাকে, তখন তার ভয়ের কোনো কারণ থাকে না।
এ কথাও সত্যি, অস্ত্র নিজেই একটা ভীতিকর বিষয়। অস্ত্র সঙ্গে রাখা কখনো কখনো বড় বিপদ ডেকে আনে। আমেরিকার জনগণের একটা বড় অংশ এভাবে অস্ত্র রাখার বিরুদ্ধে। আবার বড় একটা অংশ অস্ত্র ব্যবসার কারণে এবং তাদের যুক্তিতে আত্মরক্ষার কারণে অস্ত্র অবাধ রাখার পক্ষে। এই বিতর্কের শিগগিরই সমাধান হবে না। কারণ, পৃথিবীতে অস্ত্রই যেখানে শক্তির নিয়ামক, সেখানে কেউ শান্তির প্রশ্নে অস্ত্র ছাড় দেবে না; বরং এটাই বলবে—শান্তির জন্যই অস্ত্রের প্রয়োজন। জাতিসংঘ যে কারণে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাচ্ছে পৃথিবীর অশান্তির দেশে। তাতে কি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, নাকি নতুন অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে? তর্কপ্রিয় মানবজাতি এই তর্ক চালাতেই থাকবে। আমরাও চা-কফির সঙ্গে সন্ধ্যাটা উত্তাপের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছি।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে