আজকের পত্রিকা: দেশের পরিস্থিতি কেমন বুঝছেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: কথাটা মজা করে বললে আমাদের পার্টির একজন সিনিয়র নেতা এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে বলতেন, দেশের পরিস্থিতি এখন দুই টাকার নোটের মতো। মানে ভালো হোক, মন্দ হোক, চলে যাচ্ছে আর কি। কাউকে দুই টাকা দিলে কেউ না বলে না। আসলে পরিস্থিতিটা সে রকমই চলছে। কিন্তু এটাকে চলা বলে না। পরিস্থিতিটা দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথমত, অধিকাংশ মানুষ, বিশেষ করে শ্রমিক, মেহনতি, মধ্যবিত্ত তারা দিন যত যাচ্ছে, কত কম খেয়ে টিকে থাকা যায়, সেভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে হতাশা গ্রাস করছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে মানুষের মধ্যে এই ধারণা কাজ করছে যে তারা কীভাবে বেঁচে আছে—সেটাই যেন জানে না।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনের কথা যদি বলি, রাজনীতিবিদেরা মনে করছেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিই যেন স্বাভাবিক একটা বিষয়। সে রকম একটা জায়গায় আমাদের দেশ পৌঁছে গেছে।
আজকের পত্রিকা: সিপিবি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমাদের পার্টি চায়, পুরো সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের জন্য নানা ধরনের পথ আছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া যেতে পারে। এ পথ তো আছেই। এর বাইরেও আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। মূল কথা হলো, গণ-অভ্যুত্থান বা অন্য যেভাবেই করি না কেন নির্বাচনে তো অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে যেটা হচ্ছে, সেটাকে প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। অতীতেও এ ধরনের পরিস্থিতি অনেকবার হয়েছে। আর গত দুটি নির্বাচন বড় ধরনের বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে সিপিবি অংশগ্রহণের চিন্তা করবে। যদি নির্বাচনের নামে প্রহসন করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে সিপিবি অংশ নেবে না।
আজকের পত্রিকা: এখন যদি রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে আশা করেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: অবস্থার পরিবর্তন হলে, কোন দিকে যাবে—সেটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আওয়ামী লীগ তিন টার্মে ক্ষমতায় থেকে দেশে একটা দুঃশাসন এবং স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করেছে। বর্তমানে আমাদের সমাজে চারটি বড় ঘটনা ঘটে গেছে। সমাজে সাম্প্রদায়িকতা বেড়েছে, রাজনীতিতে বিভক্তি বেড়েছে, ভয়ের সংস্কৃতি সর্বত্র বিরাজ করছে, গণতন্ত্র নাই হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হচ্ছে, লুটপাটতন্ত্র জেগে আছে, বিদেশি শক্তি আধিপত্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা নিচ্ছে এবং নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতির নামে লুটপাট চলছে। দেশে আয়বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যদি আমরা ব্যবস্থা পরিবর্তনের সংগ্রামে জয়ী হতে পারি, তাহলে দেশের মানুষের জন্য আমরা একটা কল্যাণ বয়ে আনতে পারব। কিন্তু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যদি স্থিতিশীলতা রক্ষা না পায়, তাহলে তো সেটা খারাপই হবে। আওয়ামী লীগকে সরিয়ে দেশ আরও পেছনে গেলে, মানুষের মুক্তি আসবে কীভাবে? সে জন্যই আমরা মনে করি মুক্তির একটিই পথ—ব্যবস্থা পরিবর্তনের সংগ্রামটা জোরদার করা।
আজকের পত্রিকা: বাম বিকল্পের অগ্রগতির কোনো খবর আছে?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: দেশে বাম, প্রগতিশীল শক্তির ঐক্য নানা কারণে জরুরিভাবে দরকার। প্রচলিত ব্যবস্থা পাল্টিয়ে জনকল্যাণমুখী ব্যবস্থার জন্যও এ ধরনের একটা বিকল্প দরকার। আমরা নব্বইয়ের দশকে বলেছিলাম, দেশি-বিদেশি লুটেরারা এ দেশের রাজনীতিকে দ্বিদলীয় রাজনীতির ফাঁদে ফেলতে চায়। দ্বিদলীয় রাজনীতির ফাঁদটা এমন, নামে-বেনামে যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তারা লুটেরা ধনিক শ্রেণি, বিদেশি কমিশনভোগী, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের স্বার্থ রক্ষা করবে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের যে লড়াই, সেটা এখনো জারি আছে।
আমাদের জন্য এটা মোটেও সুখবর নয়। যাদের নিয়ে আমরা এ লড়াইয়ের সূচনা করলাম, তাদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের মধ্যে একীভূত হয়ে গেল। পরবর্তী সময়ে আবার যাদের নিয়ে এক জায়গায় দাঁড়াতে চাইলাম, তাদের মধ্যে দুটি দল বিএনপির বলয়ে চলে গেল। এ রকম একটা সংকটজনক পরিস্থিতিতে জনগণের মধ্যে কিছু হতাশা ও প্রশ্ন থাকাটা স্বাভাবিক। তারপরও আমি বলব, নীতিহীন রাজনীতির মধ্যেও সিপিবি এখন বাম গণতান্ত্রিক জোটের মধ্য দিয়ে যে লড়াই-সংগ্রাম জারি রেখেছে, সেটা এক ধাপ অগ্রগতি।
মানুষ অন্তত দেখতে পাচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরেও একটা নীতিনিষ্ঠ শক্তি দেশে আছে। সম্প্রতি বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে ঐক্য ন্যাপ ও বাংলাদেশ জাসদ যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা করেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করব। তারা তাদের নিজস্ব দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং দুঃশাসনের অবসানের জন্য ব্যবস্থা বদলের লড়াইয়েও ঐক্যবদ্ধ হবে। এ ধারা এগোচ্ছে। একই সঙ্গে জেলা, উপজেলা, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দ্বিদলীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে দুঃশাসনের অবস্থার বদল চায় এমন অনেক ব্যক্তি, সংগঠন আছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আছি। এভাবে বিকল্প শক্তি সমাবেশের জন্য যে মালাটা গাঁথার চেষ্টা করছি, ভবিষ্যতে এটা আরও বেশি দৃশ্যমান হবে।
আজকের পত্রিকা: একদিকে দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি বাড়ছে, অপরদিকে দুর্নীতি-লুটপাট ও টাকা পাচারও হচ্ছে। প্রতিরোধের উপায় কী?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: এসব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। দেশের পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে সমাজের মধ্যে সাম্প্রদায়িকীকরণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজনীতি হলো উপরিকাঠামো আর ভিত্তিটা হলো অর্থনীতি। নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতির কতগুলো অনিবার্য পরিণতি আছে। তাকে টিকে থাকতে হলে সমাজের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা ও লুটপাটতন্ত্রকে বিস্তার ও প্রশ্রয় দিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, পাশের দেশসহ পাশ্চাত্য দেশগুলো তথাকথিত উন্নত সংস্কৃতির কথা বলে থাকে। সেই সব দেশে জাত-উপজাত, বর্ণবাদ ও ধর্মীয় উত্থানের ঘটনা ঘটছে। সবই হলো নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতির অনিবার্য ফল।
বাংলাদেশ, বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই যে উদারনীতিবাদী অর্থনীতি গ্রহণ করেছে, যা এখনো বহমান। এর পাহারাদার হচ্ছে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি। অসৎ আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী—এই ত্রয়ী দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি তৈরি করেছে, তাদের বহাল রাখতে গেলে লুটপাটতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রশ্রয় দিতে হবে।
এখন আমরা যদি সাম্প্রদায়িক শক্তি ও লুটপাটতন্ত্রকে উপড়ে ফেলে অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন দেশ গড়তে বিজয় লাভ করতে চাই, এর জন্য নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতির বিরুদ্ধে বৌদ্ধিক সংগ্রামটা আমাদের করতে হবে। স্পষ্ট করে বললে পুরো ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সংগ্রামটা করতে হবে। ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া সাময়িক টোটকা দিয়ে এর পুরো সমাধান করা যাবে না। এর জন্য নীতিনিষ্ঠ বাম বিকল্প শক্তিকে আরও শক্তিশালী করা দরকার।
আজকের পত্রিকা: সিপিবির অভ্যন্তরে বিরোধের কথা শোনা যায়। আসল ঘটনা কী?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: যারা বাংলাদেশে বিকল্প শক্তির উত্থান চায় না, এটা তাদের একধরনের অপপ্রচার। এ দেশে যদি বিকল্প বাম শক্তির উত্থান ঘটে, তাহলে তার অন্যতম সহায়ক শক্তি হবে সিপিবি। সুতরাং এটা যেন না ঘটে তার জন্য নানা গ্রুপ, নানাভাবে চেষ্টা করছে।
এক বছর আগে আমাদের পার্টির জাতীয় কংগ্রেস হয়েছে। আমাদের অন্যতম সৌন্দর্য হলো, কংগ্রেসের আগে যে দলিল রচনা করি তার কপি আমরা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিই। সবার মতামত গ্রহণ করি। দলিল নিয়ে নানা মত ও দ্বিমত থাকে।
আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছে আমাদের রাজনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণ করি। সুতরাং আমাদের ভেতরে অনৈক্যের কোনো কারণ দেখি না। আমাদের নেতৃত্ব ডেলিগেটদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের দল চলছে। তাই দলের মধ্যে বিরোধের কোনো ব্যাপার নেই। তবে আমার ধারণা, বাংলাদেশে যেভাবে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ প্রধান উপাদান হিসেবে দাঁড়িয়েছে, তাতে করে কোথাও কোথাও নেতৃত্বের কোনো অংশের মধ্যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করার ব্যাপার আছে কি না, আমি জানি না। আমি পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের পার্টিতে অনৈক্যের কোনো ধরনের ব্যাপার নেই।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ।
রুহিন হোসেন প্রিন্স: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: দেশের পরিস্থিতি কেমন বুঝছেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: কথাটা মজা করে বললে আমাদের পার্টির একজন সিনিয়র নেতা এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে বলতেন, দেশের পরিস্থিতি এখন দুই টাকার নোটের মতো। মানে ভালো হোক, মন্দ হোক, চলে যাচ্ছে আর কি। কাউকে দুই টাকা দিলে কেউ না বলে না। আসলে পরিস্থিতিটা সে রকমই চলছে। কিন্তু এটাকে চলা বলে না। পরিস্থিতিটা দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথমত, অধিকাংশ মানুষ, বিশেষ করে শ্রমিক, মেহনতি, মধ্যবিত্ত তারা দিন যত যাচ্ছে, কত কম খেয়ে টিকে থাকা যায়, সেভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে হতাশা গ্রাস করছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে মানুষের মধ্যে এই ধারণা কাজ করছে যে তারা কীভাবে বেঁচে আছে—সেটাই যেন জানে না।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনের কথা যদি বলি, রাজনীতিবিদেরা মনে করছেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিই যেন স্বাভাবিক একটা বিষয়। সে রকম একটা জায়গায় আমাদের দেশ পৌঁছে গেছে।
আজকের পত্রিকা: সিপিবি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমাদের পার্টি চায়, পুরো সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের জন্য নানা ধরনের পথ আছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া যেতে পারে। এ পথ তো আছেই। এর বাইরেও আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। মূল কথা হলো, গণ-অভ্যুত্থান বা অন্য যেভাবেই করি না কেন নির্বাচনে তো অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে যেটা হচ্ছে, সেটাকে প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। অতীতেও এ ধরনের পরিস্থিতি অনেকবার হয়েছে। আর গত দুটি নির্বাচন বড় ধরনের বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে সিপিবি অংশগ্রহণের চিন্তা করবে। যদি নির্বাচনের নামে প্রহসন করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে সিপিবি অংশ নেবে না।
আজকের পত্রিকা: এখন যদি রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে আশা করেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: অবস্থার পরিবর্তন হলে, কোন দিকে যাবে—সেটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আওয়ামী লীগ তিন টার্মে ক্ষমতায় থেকে দেশে একটা দুঃশাসন এবং স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করেছে। বর্তমানে আমাদের সমাজে চারটি বড় ঘটনা ঘটে গেছে। সমাজে সাম্প্রদায়িকতা বেড়েছে, রাজনীতিতে বিভক্তি বেড়েছে, ভয়ের সংস্কৃতি সর্বত্র বিরাজ করছে, গণতন্ত্র নাই হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হচ্ছে, লুটপাটতন্ত্র জেগে আছে, বিদেশি শক্তি আধিপত্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা নিচ্ছে এবং নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতির নামে লুটপাট চলছে। দেশে আয়বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যদি আমরা ব্যবস্থা পরিবর্তনের সংগ্রামে জয়ী হতে পারি, তাহলে দেশের মানুষের জন্য আমরা একটা কল্যাণ বয়ে আনতে পারব। কিন্তু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যদি স্থিতিশীলতা রক্ষা না পায়, তাহলে তো সেটা খারাপই হবে। আওয়ামী লীগকে সরিয়ে দেশ আরও পেছনে গেলে, মানুষের মুক্তি আসবে কীভাবে? সে জন্যই আমরা মনে করি মুক্তির একটিই পথ—ব্যবস্থা পরিবর্তনের সংগ্রামটা জোরদার করা।
আজকের পত্রিকা: বাম বিকল্পের অগ্রগতির কোনো খবর আছে?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: দেশে বাম, প্রগতিশীল শক্তির ঐক্য নানা কারণে জরুরিভাবে দরকার। প্রচলিত ব্যবস্থা পাল্টিয়ে জনকল্যাণমুখী ব্যবস্থার জন্যও এ ধরনের একটা বিকল্প দরকার। আমরা নব্বইয়ের দশকে বলেছিলাম, দেশি-বিদেশি লুটেরারা এ দেশের রাজনীতিকে দ্বিদলীয় রাজনীতির ফাঁদে ফেলতে চায়। দ্বিদলীয় রাজনীতির ফাঁদটা এমন, নামে-বেনামে যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তারা লুটেরা ধনিক শ্রেণি, বিদেশি কমিশনভোগী, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের স্বার্থ রক্ষা করবে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের যে লড়াই, সেটা এখনো জারি আছে।
আমাদের জন্য এটা মোটেও সুখবর নয়। যাদের নিয়ে আমরা এ লড়াইয়ের সূচনা করলাম, তাদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের মধ্যে একীভূত হয়ে গেল। পরবর্তী সময়ে আবার যাদের নিয়ে এক জায়গায় দাঁড়াতে চাইলাম, তাদের মধ্যে দুটি দল বিএনপির বলয়ে চলে গেল। এ রকম একটা সংকটজনক পরিস্থিতিতে জনগণের মধ্যে কিছু হতাশা ও প্রশ্ন থাকাটা স্বাভাবিক। তারপরও আমি বলব, নীতিহীন রাজনীতির মধ্যেও সিপিবি এখন বাম গণতান্ত্রিক জোটের মধ্য দিয়ে যে লড়াই-সংগ্রাম জারি রেখেছে, সেটা এক ধাপ অগ্রগতি।
মানুষ অন্তত দেখতে পাচ্ছে, দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরেও একটা নীতিনিষ্ঠ শক্তি দেশে আছে। সম্প্রতি বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে ঐক্য ন্যাপ ও বাংলাদেশ জাসদ যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা করেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করব। তারা তাদের নিজস্ব দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং দুঃশাসনের অবসানের জন্য ব্যবস্থা বদলের লড়াইয়েও ঐক্যবদ্ধ হবে। এ ধারা এগোচ্ছে। একই সঙ্গে জেলা, উপজেলা, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দ্বিদলীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে দুঃশাসনের অবস্থার বদল চায় এমন অনেক ব্যক্তি, সংগঠন আছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আছি। এভাবে বিকল্প শক্তি সমাবেশের জন্য যে মালাটা গাঁথার চেষ্টা করছি, ভবিষ্যতে এটা আরও বেশি দৃশ্যমান হবে।
আজকের পত্রিকা: একদিকে দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি বাড়ছে, অপরদিকে দুর্নীতি-লুটপাট ও টাকা পাচারও হচ্ছে। প্রতিরোধের উপায় কী?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: এসব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। দেশের পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে সমাজের মধ্যে সাম্প্রদায়িকীকরণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজনীতি হলো উপরিকাঠামো আর ভিত্তিটা হলো অর্থনীতি। নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতির কতগুলো অনিবার্য পরিণতি আছে। তাকে টিকে থাকতে হলে সমাজের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা ও লুটপাটতন্ত্রকে বিস্তার ও প্রশ্রয় দিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, পাশের দেশসহ পাশ্চাত্য দেশগুলো তথাকথিত উন্নত সংস্কৃতির কথা বলে থাকে। সেই সব দেশে জাত-উপজাত, বর্ণবাদ ও ধর্মীয় উত্থানের ঘটনা ঘটছে। সবই হলো নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতির অনিবার্য ফল।
বাংলাদেশ, বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই যে উদারনীতিবাদী অর্থনীতি গ্রহণ করেছে, যা এখনো বহমান। এর পাহারাদার হচ্ছে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি। অসৎ আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী—এই ত্রয়ী দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি তৈরি করেছে, তাদের বহাল রাখতে গেলে লুটপাটতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রশ্রয় দিতে হবে।
এখন আমরা যদি সাম্প্রদায়িক শক্তি ও লুটপাটতন্ত্রকে উপড়ে ফেলে অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন দেশ গড়তে বিজয় লাভ করতে চাই, এর জন্য নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতির বিরুদ্ধে বৌদ্ধিক সংগ্রামটা আমাদের করতে হবে। স্পষ্ট করে বললে পুরো ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সংগ্রামটা করতে হবে। ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া সাময়িক টোটকা দিয়ে এর পুরো সমাধান করা যাবে না। এর জন্য নীতিনিষ্ঠ বাম বিকল্প শক্তিকে আরও শক্তিশালী করা দরকার।
আজকের পত্রিকা: সিপিবির অভ্যন্তরে বিরোধের কথা শোনা যায়। আসল ঘটনা কী?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: যারা বাংলাদেশে বিকল্প শক্তির উত্থান চায় না, এটা তাদের একধরনের অপপ্রচার। এ দেশে যদি বিকল্প বাম শক্তির উত্থান ঘটে, তাহলে তার অন্যতম সহায়ক শক্তি হবে সিপিবি। সুতরাং এটা যেন না ঘটে তার জন্য নানা গ্রুপ, নানাভাবে চেষ্টা করছে।
এক বছর আগে আমাদের পার্টির জাতীয় কংগ্রেস হয়েছে। আমাদের অন্যতম সৌন্দর্য হলো, কংগ্রেসের আগে যে দলিল রচনা করি তার কপি আমরা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিই। সবার মতামত গ্রহণ করি। দলিল নিয়ে নানা মত ও দ্বিমত থাকে।
আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছে আমাদের রাজনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণ করি। সুতরাং আমাদের ভেতরে অনৈক্যের কোনো কারণ দেখি না। আমাদের নেতৃত্ব ডেলিগেটদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের দল চলছে। তাই দলের মধ্যে বিরোধের কোনো ব্যাপার নেই। তবে আমার ধারণা, বাংলাদেশে যেভাবে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ প্রধান উপাদান হিসেবে দাঁড়িয়েছে, তাতে করে কোথাও কোথাও নেতৃত্বের কোনো অংশের মধ্যে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করার ব্যাপার আছে কি না, আমি জানি না। আমি পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের পার্টিতে অনৈক্যের কোনো ধরনের ব্যাপার নেই।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ।
রুহিন হোসেন প্রিন্স: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে