আজকের পত্রিকা: বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: রাজনীতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। আমরা স্বাধীনতার পর থেকে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের এ জায়গায় পৌঁছেছি। এখান থেকে আমরা বলতে পারি, দেশটি একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে। কিন্তু এটাও একটা বাস্তবতা যে পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে সুবিধাভোগী একটি শ্রেণি সৃষ্টি হয়েছিল, তারাই আবার জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। সেই গোষ্ঠীই এখন পর্যন্ত নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একই সময়ে প্রায় সব জেলায় বোমা ফাটানো হয়েছে। মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়েছে। বিগত সময়ে এ ধরনের নানা অপতৎপরতা আমরা লক্ষ করেছি। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই, সেখানে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু তারা সেসব অপতৎপরতা একটি রাজনৈতিক পার্টির মাধ্যমে করছে।
আমরা যখন কথা বলছি, তখন আমরা জানি যে দেশে এখন কী অবস্থা বিদ্যমান? ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যেভাবে একটি যড়যন্ত্রকারী চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, গাড়ি ও হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ করেছে, প্রধান বিচারপতির বাসা আক্রমণ করেছে এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে, বাইডেনের তথাকথিত উপদেষ্টা সাজিয়ে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে—এতে বোঝা যায়, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য কত ধরনের চক্রান্ত করা হচ্ছে। সেই জায়গাগুলো ধরে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াই হবে দেশের সব মানুষের প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ আমাদের দরকার।একটি দেশে নানা পথ, মত, দর্শন ও আদর্শ থাকবে, তবে স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো চক্র তাদের দর্শন, আদর্শ নিয়ে কাজ করবে—সেটা কারও কাম্য নয়।
আজকের পত্রিকা: সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। নির্বাচনকেন্দ্রিক এই সংকটের কি কোনো সমাধান নেই?
আরেফিন সিদ্দিক: আমরা নিশ্চয়ই মুক্তি পাব। এই মুক্তি পাওয়ার শর্তটি হচ্ছে, ন্যূনতম ঐক্যের জায়গায় পৌঁছানো। এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব, সেটাও ভাবার বিষয়। যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তারাই আবার এ দেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়। তাহলে তো আমরা এগিয়ে যেতে পারব না।
আর পাঁচ বছর পর পর যে সংকটের মধ্যে পড়ি, তা থেকে মুক্তি পাওয়াও কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ঐক্যের দরকার। পৃথিবীর কোথাও, কোনো দেশে সে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরোধী রাজনৈতিক দল খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এটাই আমাদের দেশে আছে।
তারপরও আমি আশা করি, নবীন প্রজন্ম এখন সার্বিকভাবে দেশ ও পৃথিবী সম্পর্কে অনেক বেশি অবগত। তারা যখন এ দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় আসবে, তখন নিশ্চয় এ দেশের অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন প্রত্যেকেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবে। আমরা সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছি।
আজকের পত্রিকা: রাজনীতিতে যে পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি চলছে, তা কি শেষ হবে না?
আরেফিন সিদ্দিক: পারস্পরিক দোষারোপ রাজনীতিতে থাকবে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে, যেখানে শত শত বছর গণতন্ত্র কার্যকর আছে, সেখানেও দেখা যায় পারস্পরিক দোষারোপ আছে। তাদের মধ্যেও অনেক ধরনের দুর্বলতা আছে। আমরা তো গণতন্ত্র শুরুই করতে পারিনি। যখনই শুরু করি, তারপরই একটু হোঁচট খাই। কিন্তু দোষারোপেরও একটি সীমারেখা থাকে। সৌন্দর্য, ভদ্রতা, সৌজন্যতা, ভাষার মাধুর্য—এগুলো নিয়েই দোষারোপের রাজনীতি চলতে পারে। আমরা অনেক সময় যে জায়গায় চলে যাই, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা হয়।
এটা তো রাজনীতি না। ৯ মাসের যুদ্ধে অর্জিত যে সংবিধান, সেটাকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল তথাকথিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাসের মাধ্যমে। ১৫ আগস্ট এবং তার সঙ্গে যুক্ত সব ঘটনাকে নিয়ে কোনো মামলা এবং বিচার করা যাবে না। যে দেশে এ ধরনের কালো আইন যুক্ত করা হয়, সেখান থেকে নিশ্চিত বোঝা যায়, অবস্থাটা কোন জায়গায় পৌঁছেছিল। এসব জায়গা থেকে আমরা এখন একটা পর্যায়ে এসেছি।
২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একটা স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু প্রতি পাঁচ বছর পর যখনই নির্বাচন আসে, তখনই দেখা যায় ওই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী দেশের অগ্রযাত্রা ও অগ্রগতিকে ক্ষুণ্ন করার জন্য নানা ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। এই মুহূর্তে আমরা দেখছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হওয়ার কথা। নির্বাচনকালীন একটা সরকার থাকবে, যারা রুটিন ওয়ার্ক করবে। আর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সব দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনই হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারপরও বিরোধী দল যদি মনে করে, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার—সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু যখন বলা হচ্ছে, অনির্বাচিত লোক দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে—তাহলে সে অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য ভালো নয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার একসময় সংবিধানে যুক্ত ছিল। মনে রাখতে হবে, সেটি কেন বাতিল করা হলো? বিএনপির শাসনামলে মাগুরার উপনির্বাচনকে এমনভাবে কলঙ্কিত করা হয়েছিল, সে কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করতে হয়েছিল। আবার তাদের কারণেই এটাকে বাতিল করতে হয়েছে। কারণ ২০০৬ সালের নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এমন এক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো। ফলে এক-এগারোর সৃষ্টি হলো।
তাই নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ হতে পারে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রাজনীতিবিদদেরই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই প্রত্যাশা আমি এখনো করি।
আজকের পত্রিকা: সংলাপ-সমঝোতার ক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হয়। কিন্তু সরকারপ্রধান নিজেই সংলাপে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাহলে রাজপথেই কি ফয়সালা হবে?
আরেফিন সিদ্দিক: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সংলাপ করার জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশটা তো আগে সৃষ্টি করতে হবে। আর এর জন্য বড় সংকট হচ্ছে ‘আস্থা’। আগে সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য যারা এটা সৃষ্টি করেছে, তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
মূল লক্ষ্যের জায়গায় কিন্তু সব দল একটি জায়গায় অবস্থান করছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে আমরা কীভাবে পৌঁছাব, সেই পথ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্য আছে। এই মতপার্থক্য কাটিয়ে ওঠা কঠিন কোনো কাজ নয়। এর জন্য দরকার সদিচ্ছা।
আজকের পত্রিকা: দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। হরতাল, অবরোধে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে। দেশ বাঁচানোর রাজনীতি কি গুরুত্ব পাবে না?
আরেফিন সিদ্দিক: বর্তমানে দেশের যে বাজার পরিস্থিতি, তাতে নিম্ন আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তদেরও অসুবিধা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গোষ্ঠী তাদের লাভটাকে বড় করে দেখছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের দেশ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পড়েছে। তারপরও আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো কৃত্রিম সংকট। এসব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া দরকার। একই সঙ্গে সরকারকে এ জায়গায় দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, অনির্বাচিত সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে—আপনি কি তেমন লক্ষণ দেখছেন?
আরেফিন সিদ্দিক: আমি মনে করি, বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। অবশ্য আমি বিদেশি শক্তি বা সামরিক বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় অনির্বাচিত সরকার আসার কোনো লক্ষণ দেখছি না। আমাদের সংবিধানে অনির্বাচিত সরকার বলে কোনো বিষয় নেই। সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালিত হওয়ার কথা। জনপ্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনা করবেন। তবে অনির্বাচিত ব্যক্তিরও দেশ পরিচালনার কথা সংবিধানে আছে। ১০ শতাংশ ব্যক্তি মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন, যাঁরা সরাসরি নির্বাচিত হবেন না। তবে তাঁদের বিশেষজ্ঞ হতে হবে।
আজকের পত্রিকা: বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: রাজনীতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। আমরা স্বাধীনতার পর থেকে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের এ জায়গায় পৌঁছেছি। এখান থেকে আমরা বলতে পারি, দেশটি একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে। কিন্তু এটাও একটা বাস্তবতা যে পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে সুবিধাভোগী একটি শ্রেণি সৃষ্টি হয়েছিল, তারাই আবার জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। সেই গোষ্ঠীই এখন পর্যন্ত নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একই সময়ে প্রায় সব জেলায় বোমা ফাটানো হয়েছে। মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়েছে। বিগত সময়ে এ ধরনের নানা অপতৎপরতা আমরা লক্ষ করেছি। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই, সেখানে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু তারা সেসব অপতৎপরতা একটি রাজনৈতিক পার্টির মাধ্যমে করছে।
আমরা যখন কথা বলছি, তখন আমরা জানি যে দেশে এখন কী অবস্থা বিদ্যমান? ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যেভাবে একটি যড়যন্ত্রকারী চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, গাড়ি ও হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ করেছে, প্রধান বিচারপতির বাসা আক্রমণ করেছে এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে, বাইডেনের তথাকথিত উপদেষ্টা সাজিয়ে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে—এতে বোঝা যায়, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য কত ধরনের চক্রান্ত করা হচ্ছে। সেই জায়গাগুলো ধরে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াই হবে দেশের সব মানুষের প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ আমাদের দরকার।একটি দেশে নানা পথ, মত, দর্শন ও আদর্শ থাকবে, তবে স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো চক্র তাদের দর্শন, আদর্শ নিয়ে কাজ করবে—সেটা কারও কাম্য নয়।
আজকের পত্রিকা: সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। নির্বাচনকেন্দ্রিক এই সংকটের কি কোনো সমাধান নেই?
আরেফিন সিদ্দিক: আমরা নিশ্চয়ই মুক্তি পাব। এই মুক্তি পাওয়ার শর্তটি হচ্ছে, ন্যূনতম ঐক্যের জায়গায় পৌঁছানো। এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব, সেটাও ভাবার বিষয়। যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তারাই আবার এ দেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়। তাহলে তো আমরা এগিয়ে যেতে পারব না।
আর পাঁচ বছর পর পর যে সংকটের মধ্যে পড়ি, তা থেকে মুক্তি পাওয়াও কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ঐক্যের দরকার। পৃথিবীর কোথাও, কোনো দেশে সে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরোধী রাজনৈতিক দল খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এটাই আমাদের দেশে আছে।
তারপরও আমি আশা করি, নবীন প্রজন্ম এখন সার্বিকভাবে দেশ ও পৃথিবী সম্পর্কে অনেক বেশি অবগত। তারা যখন এ দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় আসবে, তখন নিশ্চয় এ দেশের অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন প্রত্যেকেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবে। আমরা সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছি।
আজকের পত্রিকা: রাজনীতিতে যে পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি চলছে, তা কি শেষ হবে না?
আরেফিন সিদ্দিক: পারস্পরিক দোষারোপ রাজনীতিতে থাকবে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে, যেখানে শত শত বছর গণতন্ত্র কার্যকর আছে, সেখানেও দেখা যায় পারস্পরিক দোষারোপ আছে। তাদের মধ্যেও অনেক ধরনের দুর্বলতা আছে। আমরা তো গণতন্ত্র শুরুই করতে পারিনি। যখনই শুরু করি, তারপরই একটু হোঁচট খাই। কিন্তু দোষারোপেরও একটি সীমারেখা থাকে। সৌন্দর্য, ভদ্রতা, সৌজন্যতা, ভাষার মাধুর্য—এগুলো নিয়েই দোষারোপের রাজনীতি চলতে পারে। আমরা অনেক সময় যে জায়গায় চলে যাই, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা হয়।
এটা তো রাজনীতি না। ৯ মাসের যুদ্ধে অর্জিত যে সংবিধান, সেটাকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল তথাকথিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাসের মাধ্যমে। ১৫ আগস্ট এবং তার সঙ্গে যুক্ত সব ঘটনাকে নিয়ে কোনো মামলা এবং বিচার করা যাবে না। যে দেশে এ ধরনের কালো আইন যুক্ত করা হয়, সেখান থেকে নিশ্চিত বোঝা যায়, অবস্থাটা কোন জায়গায় পৌঁছেছিল। এসব জায়গা থেকে আমরা এখন একটা পর্যায়ে এসেছি।
২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একটা স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু প্রতি পাঁচ বছর পর যখনই নির্বাচন আসে, তখনই দেখা যায় ওই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী দেশের অগ্রযাত্রা ও অগ্রগতিকে ক্ষুণ্ন করার জন্য নানা ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। এই মুহূর্তে আমরা দেখছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হওয়ার কথা। নির্বাচনকালীন একটা সরকার থাকবে, যারা রুটিন ওয়ার্ক করবে। আর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সব দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনই হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারপরও বিরোধী দল যদি মনে করে, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার—সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু যখন বলা হচ্ছে, অনির্বাচিত লোক দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে—তাহলে সে অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য ভালো নয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার একসময় সংবিধানে যুক্ত ছিল। মনে রাখতে হবে, সেটি কেন বাতিল করা হলো? বিএনপির শাসনামলে মাগুরার উপনির্বাচনকে এমনভাবে কলঙ্কিত করা হয়েছিল, সে কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করতে হয়েছিল। আবার তাদের কারণেই এটাকে বাতিল করতে হয়েছে। কারণ ২০০৬ সালের নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এমন এক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো। ফলে এক-এগারোর সৃষ্টি হলো।
তাই নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ হতে পারে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রাজনীতিবিদদেরই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই প্রত্যাশা আমি এখনো করি।
আজকের পত্রিকা: সংলাপ-সমঝোতার ক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হয়। কিন্তু সরকারপ্রধান নিজেই সংলাপে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাহলে রাজপথেই কি ফয়সালা হবে?
আরেফিন সিদ্দিক: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সংলাপ করার জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশটা তো আগে সৃষ্টি করতে হবে। আর এর জন্য বড় সংকট হচ্ছে ‘আস্থা’। আগে সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য যারা এটা সৃষ্টি করেছে, তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
মূল লক্ষ্যের জায়গায় কিন্তু সব দল একটি জায়গায় অবস্থান করছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে আমরা কীভাবে পৌঁছাব, সেই পথ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্য আছে। এই মতপার্থক্য কাটিয়ে ওঠা কঠিন কোনো কাজ নয়। এর জন্য দরকার সদিচ্ছা।
আজকের পত্রিকা: দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। হরতাল, অবরোধে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে। দেশ বাঁচানোর রাজনীতি কি গুরুত্ব পাবে না?
আরেফিন সিদ্দিক: বর্তমানে দেশের যে বাজার পরিস্থিতি, তাতে নিম্ন আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তদেরও অসুবিধা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গোষ্ঠী তাদের লাভটাকে বড় করে দেখছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের দেশ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পড়েছে। তারপরও আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো কৃত্রিম সংকট। এসব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া দরকার। একই সঙ্গে সরকারকে এ জায়গায় দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, অনির্বাচিত সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে—আপনি কি তেমন লক্ষণ দেখছেন?
আরেফিন সিদ্দিক: আমি মনে করি, বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। অবশ্য আমি বিদেশি শক্তি বা সামরিক বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় অনির্বাচিত সরকার আসার কোনো লক্ষণ দেখছি না। আমাদের সংবিধানে অনির্বাচিত সরকার বলে কোনো বিষয় নেই। সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালিত হওয়ার কথা। জনপ্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনা করবেন। তবে অনির্বাচিত ব্যক্তিরও দেশ পরিচালনার কথা সংবিধানে আছে। ১০ শতাংশ ব্যক্তি মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন, যাঁরা সরাসরি নির্বাচিত হবেন না। তবে তাঁদের বিশেষজ্ঞ হতে হবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে