ইব্রাহিম আল-মারাশি
মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসবিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি সান মার্কোস বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরান ১ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এখন তেল আবিব কীভাবে প্রতিশোধ নেবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। কিছু পর্যবেক্ষকের ধারণা, ইরানের তেল ও পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এই দুটি বিষয়ের বিরোধিতা করছে বলে মনে হচ্ছে। তবে তিনি একটি টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি) নামের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইসরায়েলে মার্কিন সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছেন। এটা করা হয়েছে সম্ভবত ইসরায়েলি হামলায় ইরানের প্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখে।
এদিকে বাইডেনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে প্রথমেই পারমাণবিক আঘাত হানার জন্য উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারও একই পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও ট্রাম্প, কুশনার এবং অন্য কট্টর ইসরায়েল সমর্থকেরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলায় উল্লসিত হতেই পারেন। তবে তাঁরা সম্ভবত ইরাকি পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে এমন আরেকটি ইসরায়েলি হামলার পরিণতি সম্পর্কে খুব কমই জানেন।
ইসরায়েল ১৯৮১ সালে ইরাকের ফরাসি-নির্মিত ওসিরাক পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংস করে দেয়। এটি আসলে ভূগর্ভস্থ একটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি ছিল। এই হামলা ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেনকে পারমাণবিক অস্ত্রের সন্ধানে বিনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ সম্ভবত একই রকম প্রভাব ফেলবে।
একটি অনুমান-নির্ভর হামলা
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৬০-এর দশকে ইরাকের পারমাণবিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি ছোট পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি তৈরি করে দেয়। এর মাধ্যমে ইরাক এ বিষয়ে সামান্য কিছু জানতে পারত। ১৯৭০-এর দশকে ইরাক ফ্রান্সের কাছ থেকে একটি বড় চুল্লি কেনে, যার নাম ওসিরাক। এর মাধ্যমেও ফ্রান্স ও ইতালির উল্লেখযোগ্য সহায়তায় ইরাক তার বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি সম্প্রসারিত করে।
ফরাসি সরকার এটা নিশ্চিত করেছিল যে চুল্লিটির সম্ভাব্য দ্বৈত ব্যবহার রোধ করার জন্য প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা রয়েছে। তারা এ বিষয়টি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়। ইরাক পারমাণবিক অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ ছিল। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) নিয়মিত তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করত। ফলে ইরাক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে ছিল না, এটা ছিল ইসরায়েলের ডাহা মিথ্যা প্রচার। তা সত্ত্বেও ইসরায়েল সরকার এই আগাম অনুমানমূলক হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, ওই সরকার তখন দেশের ভেতরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখোমুখি হচ্ছিল। পাশাপাশি নেসেট বা আইনসভা নির্বাচনে তাদের হারার আশঙ্কা ছিল।
১৯৮১ সালের ৭ জুন মার্কিন এফ-১৫ এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো ইসরায়েল থেকে উড়ে গিয়ে ওসিরাক চুল্লিতে হামলা চালায় এবং এটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে। এই ঘটনায় তিন ইরাকি বেসামরিক মানুষ এবং একজন ফরাসি প্রকৌশলী নিহত হন।
হামলাটি ইসরায়েলিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উসকে দিয়েছিল, যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিনকে পরবর্তী নির্বাচনে ছোট আকারে হলেও জয় পেতে সাহায্য করে। ২০২১ সালে প্রকাশিত মার্কিন সরকারি নথিপত্রে প্রমাণ মেলে যে ইসরায়েলের হামলা ইরাকের কর্মসূচিকে শেষ করতে পারেনি। বরং সাদ্দামকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলেছিল।
এই ঘটনা আরও বেশি বেশি ইরাকি বিজ্ঞানীদের তাঁদের দেশের পারমাণবিক কর্মসূচিতে কাজ করার জন্য যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেছিল। যেমন ইরাকি পরমাণু বিজ্ঞানী জাফর ধিয়া জাফর তাঁর স্মৃতিচারণায় লিখেছেন: ‘তাম্মুজ (ওরিকাস) প্রথমে (অর্থাৎ ইসরায়েলি বোমা হামলা) অনেককে ক্ষুব্ধ করেছিল এবং তারা কার্যত মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি রাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটাতে অংশ নেওয়ার জন্য কয়েক সারির জনবল তৈরি করেছিল।’ তাঁরা সাদ্দামের কাছে হার্ডওয়্যার বা পারমাণবিক চুল্লির চেয়ে বেশি মূল্যবান বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন।
পরবর্তী বছরগুলোতে সাদ্দামের শাসনামলে পারমাণবিক কার্যকলাপকে গোপন করে তোলে। ইরাক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জনে পাকিস্তানের দ্বারস্থ হতে থাকে। দেশটি এ সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত চুল্লি পুনর্নির্মাণেরও চেষ্টা করেছিল। এই প্রচেষ্টাগুলো শুধু ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের কারণে গতি হারায়। কারণ, এই সময় ইরাকি অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছিল এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞাগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে শূন্য করে দেয়।
ইরানের ওপর হামলার পরিণতি
গত কয়েক বছরে ইরানের বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। অতিসম্প্রতি, ২০২০ সালের নভেম্বরে মোহসেন ফাখরিজাদেহ তেহরানের কাছে একটি অতর্কিত হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তিনি একজন পারমাণবিক পদার্থবিদ এবং পারমাণবিক কর্মসূচির উচ্চপদস্থ সদস্য ছিলেন। ইরান অতীতে তাঁকে ও অন্যদের হত্যার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে।
যদিও এই হত্যাকাণ্ডগুলো মূল কারিগরদের হত্যা করতে পারে, তবে তা ইরানিদের একটি নতুন প্রজন্মকে পারমাণবিক বিজ্ঞান চর্চায় অনুপ্রাণিত করেছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ক্রমাগত আক্রমণের ফলে তা থেকে ইরানের ‘পারমাণবিক জাতীয়তাবাদ’ উদ্ভূত হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবরের পরের ঘটনাগুলো এই অনুভূতিকে আরও উসকে দিয়েছে। এই বছরের ফেব্রুয়ারি ও মে মাসের মধ্যে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ইরানে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য জনসমর্থন অবিশ্বাস্যভাবে বেশি রয়ে গেছে। এখন দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করা উচিত—এমন ধারণার প্রতি জনসমর্থন ক্রমে বাড়ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬৯ শতাংশ বলেছেন যে তাঁরা এটিকে সমর্থন করবেন।
স্পষ্টতই, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সংকল্পকে দৃঢ় করেছে। দেশটির যেকোনো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে সেই সংকল্প আরও জোরালো হবে। আর যদি আমরা ইরাকের উদাহরণে যেতে চাই, তাহলে এটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে যাবে এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে ধাবিত করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখন
তাঁর পূর্বসূরি বেগিনের জুতোয় পা ঢুকিয়েছেন। তিনি গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকানোর ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন ব্যর্থতার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত একটি সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সে জন্য তিনি ইসরায়েলি জনসাধারণকে একটি ‘বিজয়’ দেখাতে মরিয়া।
কিন্তু নেতানিয়াহু এখন গাজা ও লেবাননে যা করছেন এবং ইরানে যা করবেন, তা ইসরায়েলের জন্য কোনো বিজয় বয়ে আনবে না। তাঁর কৌশল এই দেশগুলোসহ মধ্যপ্রাচ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করবে, যা আদতে ইরান ও তার মিত্রদের বেপরোয়া ইসরায়েলি হামলার ক্ষতি কাটিয়ে উঠে দ্রুত সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করবে।
লেখক: ইব্রাহিম আল-মারাশি
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসবিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি সান মার্কোস বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরান ১ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এখন তেল আবিব কীভাবে প্রতিশোধ নেবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। কিছু পর্যবেক্ষকের ধারণা, ইরানের তেল ও পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এই দুটি বিষয়ের বিরোধিতা করছে বলে মনে হচ্ছে। তবে তিনি একটি টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি) নামের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইসরায়েলে মার্কিন সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছেন। এটা করা হয়েছে সম্ভবত ইসরায়েলি হামলায় ইরানের প্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখে।
এদিকে বাইডেনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে প্রথমেই পারমাণবিক আঘাত হানার জন্য উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারও একই পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও ট্রাম্প, কুশনার এবং অন্য কট্টর ইসরায়েল সমর্থকেরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলায় উল্লসিত হতেই পারেন। তবে তাঁরা সম্ভবত ইরাকি পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে এমন আরেকটি ইসরায়েলি হামলার পরিণতি সম্পর্কে খুব কমই জানেন।
ইসরায়েল ১৯৮১ সালে ইরাকের ফরাসি-নির্মিত ওসিরাক পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংস করে দেয়। এটি আসলে ভূগর্ভস্থ একটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি ছিল। এই হামলা ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেনকে পারমাণবিক অস্ত্রের সন্ধানে বিনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ সম্ভবত একই রকম প্রভাব ফেলবে।
একটি অনুমান-নির্ভর হামলা
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৬০-এর দশকে ইরাকের পারমাণবিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি ছোট পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি তৈরি করে দেয়। এর মাধ্যমে ইরাক এ বিষয়ে সামান্য কিছু জানতে পারত। ১৯৭০-এর দশকে ইরাক ফ্রান্সের কাছ থেকে একটি বড় চুল্লি কেনে, যার নাম ওসিরাক। এর মাধ্যমেও ফ্রান্স ও ইতালির উল্লেখযোগ্য সহায়তায় ইরাক তার বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি সম্প্রসারিত করে।
ফরাসি সরকার এটা নিশ্চিত করেছিল যে চুল্লিটির সম্ভাব্য দ্বৈত ব্যবহার রোধ করার জন্য প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা রয়েছে। তারা এ বিষয়টি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়। ইরাক পারমাণবিক অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ ছিল। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) নিয়মিত তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করত। ফলে ইরাক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে ছিল না, এটা ছিল ইসরায়েলের ডাহা মিথ্যা প্রচার। তা সত্ত্বেও ইসরায়েল সরকার এই আগাম অনুমানমূলক হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, ওই সরকার তখন দেশের ভেতরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখোমুখি হচ্ছিল। পাশাপাশি নেসেট বা আইনসভা নির্বাচনে তাদের হারার আশঙ্কা ছিল।
১৯৮১ সালের ৭ জুন মার্কিন এফ-১৫ এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো ইসরায়েল থেকে উড়ে গিয়ে ওসিরাক চুল্লিতে হামলা চালায় এবং এটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে। এই ঘটনায় তিন ইরাকি বেসামরিক মানুষ এবং একজন ফরাসি প্রকৌশলী নিহত হন।
হামলাটি ইসরায়েলিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উসকে দিয়েছিল, যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিনকে পরবর্তী নির্বাচনে ছোট আকারে হলেও জয় পেতে সাহায্য করে। ২০২১ সালে প্রকাশিত মার্কিন সরকারি নথিপত্রে প্রমাণ মেলে যে ইসরায়েলের হামলা ইরাকের কর্মসূচিকে শেষ করতে পারেনি। বরং সাদ্দামকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলেছিল।
এই ঘটনা আরও বেশি বেশি ইরাকি বিজ্ঞানীদের তাঁদের দেশের পারমাণবিক কর্মসূচিতে কাজ করার জন্য যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেছিল। যেমন ইরাকি পরমাণু বিজ্ঞানী জাফর ধিয়া জাফর তাঁর স্মৃতিচারণায় লিখেছেন: ‘তাম্মুজ (ওরিকাস) প্রথমে (অর্থাৎ ইসরায়েলি বোমা হামলা) অনেককে ক্ষুব্ধ করেছিল এবং তারা কার্যত মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি রাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটাতে অংশ নেওয়ার জন্য কয়েক সারির জনবল তৈরি করেছিল।’ তাঁরা সাদ্দামের কাছে হার্ডওয়্যার বা পারমাণবিক চুল্লির চেয়ে বেশি মূল্যবান বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন।
পরবর্তী বছরগুলোতে সাদ্দামের শাসনামলে পারমাণবিক কার্যকলাপকে গোপন করে তোলে। ইরাক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জনে পাকিস্তানের দ্বারস্থ হতে থাকে। দেশটি এ সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত চুল্লি পুনর্নির্মাণেরও চেষ্টা করেছিল। এই প্রচেষ্টাগুলো শুধু ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের কারণে গতি হারায়। কারণ, এই সময় ইরাকি অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছিল এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞাগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে শূন্য করে দেয়।
ইরানের ওপর হামলার পরিণতি
গত কয়েক বছরে ইরানের বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। অতিসম্প্রতি, ২০২০ সালের নভেম্বরে মোহসেন ফাখরিজাদেহ তেহরানের কাছে একটি অতর্কিত হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তিনি একজন পারমাণবিক পদার্থবিদ এবং পারমাণবিক কর্মসূচির উচ্চপদস্থ সদস্য ছিলেন। ইরান অতীতে তাঁকে ও অন্যদের হত্যার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে।
যদিও এই হত্যাকাণ্ডগুলো মূল কারিগরদের হত্যা করতে পারে, তবে তা ইরানিদের একটি নতুন প্রজন্মকে পারমাণবিক বিজ্ঞান চর্চায় অনুপ্রাণিত করেছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ক্রমাগত আক্রমণের ফলে তা থেকে ইরানের ‘পারমাণবিক জাতীয়তাবাদ’ উদ্ভূত হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবরের পরের ঘটনাগুলো এই অনুভূতিকে আরও উসকে দিয়েছে। এই বছরের ফেব্রুয়ারি ও মে মাসের মধ্যে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ইরানে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য জনসমর্থন অবিশ্বাস্যভাবে বেশি রয়ে গেছে। এখন দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করা উচিত—এমন ধারণার প্রতি জনসমর্থন ক্রমে বাড়ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬৯ শতাংশ বলেছেন যে তাঁরা এটিকে সমর্থন করবেন।
স্পষ্টতই, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সংকল্পকে দৃঢ় করেছে। দেশটির যেকোনো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে সেই সংকল্প আরও জোরালো হবে। আর যদি আমরা ইরাকের উদাহরণে যেতে চাই, তাহলে এটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে যাবে এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে ধাবিত করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখন
তাঁর পূর্বসূরি বেগিনের জুতোয় পা ঢুকিয়েছেন। তিনি গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকানোর ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন ব্যর্থতার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত একটি সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সে জন্য তিনি ইসরায়েলি জনসাধারণকে একটি ‘বিজয়’ দেখাতে মরিয়া।
কিন্তু নেতানিয়াহু এখন গাজা ও লেবাননে যা করছেন এবং ইরানে যা করবেন, তা ইসরায়েলের জন্য কোনো বিজয় বয়ে আনবে না। তাঁর কৌশল এই দেশগুলোসহ মধ্যপ্রাচ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করবে, যা আদতে ইরান ও তার মিত্রদের বেপরোয়া ইসরায়েলি হামলার ক্ষতি কাটিয়ে উঠে দ্রুত সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করবে।
লেখক: ইব্রাহিম আল-মারাশি
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে