আজাদুর রহমান চন্দন
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুই মাস হতে বেশি বাকি নেই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। সরকার ও দলীয় প্রধানের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরপরই তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যসহ দলের অনেক নেতা-কর্মীও আত্মগোপনে চলে যান। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরে স্থলপথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছেন।
কেউ কেউ আকাশপথেও বিদেশ যেতে সক্ষম হয়েছেন। দেশ ছেড়ে যেতে না পারা নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন একের পর এক। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের নামে খুন-জখমে ভূমিকা রাখার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বাকিরা এখনো দেশের ভেতরে নানা জায়গায় আত্মগোপনে আছেন। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ ঢাকার দলীয় কার্যালয়গুলোর একটিও আস্ত নেই। সামনে আরও বিপর্যয় দেখা দেবে না, এমনটি হলফ করে বলা যায় না।
নতুন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশ দিতে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও এখনো রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের কোনো সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবশেষ এটুকুই শুধু জানিয়েছেন, সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হলে এবং ভোটার তালিকা তৈরি হয়ে গেলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের এক ফাঁকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ড. ইউনূস নির্বাচন, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা ছয়টি কমিশন সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি বলেন, কমিশনের সুপারিশ নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হলে এবং ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। তবে এর আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেছেন, সংস্কারের ধারাবাহিকতায় এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটা উচিত। তবে সে জন্য তিনি ধৈর্য ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তাঁর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে পরদিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রয়টার্স।
দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধানের বক্তব্যও যথেষ্ট তাৎপর্যবহ। কেননা, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ত্বরান্বিত করা এবং অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও পুলিশ বাহিনীর ভঙ্গুর অবস্থার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়ও সেনাবাহিনীকে ভূমিকা রাখতে হচ্ছে।
সংগত কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা নিয়ে সেনাপ্রধানের দেওয়া বক্তব্যকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি মনে করে, সরকার আন্তরিক হলে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামী ১৮ মাসের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। আর এটি যত দ্রুত করা সম্ভব হবে, ততই দেশ, জনগণ এবং সরকারের জন্যও মঙ্গল হবে। সরকারের কাছ থেকেও নির্বাচনের সময় নিয়ে রোডম্যাপ আশা করে দলটি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন একটি জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘আমরা এ সরকারের সংস্কারকে সমর্থন করছি। কিন্তু আমরা বলে আসছি, এখানে নির্বাচনের বিষয়টা জরুরি এবং অগ্রাধিকার। যদি সরকার আন্তরিক হয়, এ-সংক্রান্ত সংস্কার করে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান ১৮ মাসের মধ্যেই সম্ভব।’
সেনাপ্রধানের বক্তব্যে সন্তোষ জানিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টাও ছিলেন জয়। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জয় বলেছেন, এ সময়সীমা তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। তবে তাঁর দাবি, বাংলাদেশে তাঁদের দল আওয়ামী লীগকে ছাড়া সত্যিকার সংস্কার ও নির্বাচন সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ জয় ২৪ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে বলেন, ‘অন্তত এখন যে আমরা (নির্বাচনের) একটা সময়সূচি পেলাম, এতে আমি খুশি।’
তিনি জানান, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যোগাযোগ করেনি এবং তিনিও সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। জয় দাবি করেন, দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে আইনসংগত সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব। জয়ের এই বক্তব্য শুনে বোঝার উপায় নেই যে কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তিনি এবং তাঁদের দল। অথচ কে না জানে, তাঁর নিজের এবং শেখ হাসিনার দেশে ফেরা অনিশ্চিত? দেশে ফিরলেও তাঁদের হত্যা মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশে শত শত হত্যা মামলা হচ্ছে। একটি মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি হয়েছেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদও।
এদিকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ জমছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বাহিনী বা দলের সম্পৃক্ততায় গুম, খুন, যৌন নির্যাতনকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং জড়িত রাজনৈতিক দলকে ১০ বছর নিষিদ্ধ করাসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আটটি সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এসব সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে এরই মধ্যে মতবিনিময়ও করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এমন অবস্থায় রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়া এবং সামনের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার আশা করাটা দুরাশার শামিল নয় কি?
এটা ঠিক যে আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মী ও সমর্থক গুরুতর অপরাধে জড়াননি। বর্তমানে যেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলার মতো লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন, তেমন পরিস্থিতিতেও দলটির কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হচ্ছে।সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে তো সুনামগঞ্জে রীতিমতো বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সদ্য অপসারিত মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে শামীম ওসমানের সঙ্গে একই মামলায় আসামি করায় আওয়ামী লীগবিরোধী অনেকেও সমালোচনামুখর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ এমন অভিমতও ব্যক্ত করছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের উচিত সেলিনা হায়াত আইভী, তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের মতো অনেকটা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী লোকজনকে দায়িত্ব দিয়ে নতুনভাবে দলকে সংগঠিত করা। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব কি এ বিষয়ে এখনো কিছু ভাবছে আদৌ?
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতা হারানোর পর থেকে সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়া অন্য কেউ আওয়ামী লীগের নীতিগত বিষয়ে টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করছেন না। যদিও দলান্ধ লোকজন ছাড়া আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের লোকজন যে বিষয়টিকে খুব সুনজরে দেখছেন তা কিন্তু নয়। ৫ আগস্টের পর থেকে জয়ের দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতিগুলো কেবল বাস্তবতাবর্জিতই নয়, অনেকখানি স্ববিরোধিতাপূর্ণও। তারপরও শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের একমাত্র নীতিনির্ধারক হিসেবে জয় নিজেকে তুলে ধরায় এমন সন্দেহ জাগা অস্বাভাবিক নয় যে শেখ হাসিনা নিজ পরিবারের বাইরের কারও হাতে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব ছাড়তে নারাজ। এ ছাড়া আন্দোলন দমনের নামে হত্যা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে বারবার তামাশার নির্বাচন, সীমাহীন দুর্নীতি, অর্থ পাচার ইত্যাদি বিষয়ে অনুশোচনার লেশমাত্রও দেখা যাচ্ছে না তাদের মধ্যে। বরং নানা যুক্তি দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে আওয়ামী লীগের সবই সঠিক ছিল।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপযোগী করে নিজেদের শুধরে নেওয়ার বদলে অনুকূল সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকার কৌশল নিয়েছে। কিন্তু নিজেদের না শোধরানোর উদ্যোগ নিলে তাদের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কি?
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুই মাস হতে বেশি বাকি নেই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। সরকার ও দলীয় প্রধানের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরপরই তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যসহ দলের অনেক নেতা-কর্মীও আত্মগোপনে চলে যান। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরে স্থলপথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছেন।
কেউ কেউ আকাশপথেও বিদেশ যেতে সক্ষম হয়েছেন। দেশ ছেড়ে যেতে না পারা নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন একের পর এক। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের নামে খুন-জখমে ভূমিকা রাখার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বাকিরা এখনো দেশের ভেতরে নানা জায়গায় আত্মগোপনে আছেন। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ ঢাকার দলীয় কার্যালয়গুলোর একটিও আস্ত নেই। সামনে আরও বিপর্যয় দেখা দেবে না, এমনটি হলফ করে বলা যায় না।
নতুন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশ দিতে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও এখনো রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের কোনো সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবশেষ এটুকুই শুধু জানিয়েছেন, সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হলে এবং ভোটার তালিকা তৈরি হয়ে গেলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের এক ফাঁকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ড. ইউনূস নির্বাচন, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা ছয়টি কমিশন সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি বলেন, কমিশনের সুপারিশ নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হলে এবং ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। তবে এর আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেছেন, সংস্কারের ধারাবাহিকতায় এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটা উচিত। তবে সে জন্য তিনি ধৈর্য ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তাঁর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে পরদিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রয়টার্স।
দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধানের বক্তব্যও যথেষ্ট তাৎপর্যবহ। কেননা, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ত্বরান্বিত করা এবং অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও পুলিশ বাহিনীর ভঙ্গুর অবস্থার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়ও সেনাবাহিনীকে ভূমিকা রাখতে হচ্ছে।
সংগত কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা নিয়ে সেনাপ্রধানের দেওয়া বক্তব্যকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি মনে করে, সরকার আন্তরিক হলে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামী ১৮ মাসের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। আর এটি যত দ্রুত করা সম্ভব হবে, ততই দেশ, জনগণ এবং সরকারের জন্যও মঙ্গল হবে। সরকারের কাছ থেকেও নির্বাচনের সময় নিয়ে রোডম্যাপ আশা করে দলটি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন একটি জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘আমরা এ সরকারের সংস্কারকে সমর্থন করছি। কিন্তু আমরা বলে আসছি, এখানে নির্বাচনের বিষয়টা জরুরি এবং অগ্রাধিকার। যদি সরকার আন্তরিক হয়, এ-সংক্রান্ত সংস্কার করে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান ১৮ মাসের মধ্যেই সম্ভব।’
সেনাপ্রধানের বক্তব্যে সন্তোষ জানিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টাও ছিলেন জয়। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জয় বলেছেন, এ সময়সীমা তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। তবে তাঁর দাবি, বাংলাদেশে তাঁদের দল আওয়ামী লীগকে ছাড়া সত্যিকার সংস্কার ও নির্বাচন সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ জয় ২৪ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে বলেন, ‘অন্তত এখন যে আমরা (নির্বাচনের) একটা সময়সূচি পেলাম, এতে আমি খুশি।’
তিনি জানান, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যোগাযোগ করেনি এবং তিনিও সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। জয় দাবি করেন, দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে আইনসংগত সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব। জয়ের এই বক্তব্য শুনে বোঝার উপায় নেই যে কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তিনি এবং তাঁদের দল। অথচ কে না জানে, তাঁর নিজের এবং শেখ হাসিনার দেশে ফেরা অনিশ্চিত? দেশে ফিরলেও তাঁদের হত্যা মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশে শত শত হত্যা মামলা হচ্ছে। একটি মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি হয়েছেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদও।
এদিকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ জমছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বাহিনী বা দলের সম্পৃক্ততায় গুম, খুন, যৌন নির্যাতনকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং জড়িত রাজনৈতিক দলকে ১০ বছর নিষিদ্ধ করাসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আটটি সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এসব সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে এরই মধ্যে মতবিনিময়ও করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এমন অবস্থায় রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়া এবং সামনের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার আশা করাটা দুরাশার শামিল নয় কি?
এটা ঠিক যে আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মী ও সমর্থক গুরুতর অপরাধে জড়াননি। বর্তমানে যেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলার মতো লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন, তেমন পরিস্থিতিতেও দলটির কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হচ্ছে।সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে তো সুনামগঞ্জে রীতিমতো বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সদ্য অপসারিত মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে শামীম ওসমানের সঙ্গে একই মামলায় আসামি করায় আওয়ামী লীগবিরোধী অনেকেও সমালোচনামুখর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ এমন অভিমতও ব্যক্ত করছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের উচিত সেলিনা হায়াত আইভী, তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের মতো অনেকটা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী লোকজনকে দায়িত্ব দিয়ে নতুনভাবে দলকে সংগঠিত করা। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব কি এ বিষয়ে এখনো কিছু ভাবছে আদৌ?
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতা হারানোর পর থেকে সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়া অন্য কেউ আওয়ামী লীগের নীতিগত বিষয়ে টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করছেন না। যদিও দলান্ধ লোকজন ছাড়া আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের লোকজন যে বিষয়টিকে খুব সুনজরে দেখছেন তা কিন্তু নয়। ৫ আগস্টের পর থেকে জয়ের দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতিগুলো কেবল বাস্তবতাবর্জিতই নয়, অনেকখানি স্ববিরোধিতাপূর্ণও। তারপরও শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের একমাত্র নীতিনির্ধারক হিসেবে জয় নিজেকে তুলে ধরায় এমন সন্দেহ জাগা অস্বাভাবিক নয় যে শেখ হাসিনা নিজ পরিবারের বাইরের কারও হাতে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব ছাড়তে নারাজ। এ ছাড়া আন্দোলন দমনের নামে হত্যা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে বারবার তামাশার নির্বাচন, সীমাহীন দুর্নীতি, অর্থ পাচার ইত্যাদি বিষয়ে অনুশোচনার লেশমাত্রও দেখা যাচ্ছে না তাদের মধ্যে। বরং নানা যুক্তি দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে আওয়ামী লীগের সবই সঠিক ছিল।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপযোগী করে নিজেদের শুধরে নেওয়ার বদলে অনুকূল সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকার কৌশল নিয়েছে। কিন্তু নিজেদের না শোধরানোর উদ্যোগ নিলে তাদের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কি?
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে