এ কে এম শামসুদ্দিন
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের এক বছর পূরণ হতে চলল। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর এই এক বছরে বিশ্বের অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। করোনা মহামারিতে বিশ্ব যে সংকটে পড়েছিল, সেই সংকট কাটতে না কাটতেই এই যুদ্ধ যেন বিশ্ব পরিস্থিতিকে আরও মহাসংকটে ঠেলে দিয়েছে। ইউক্রেনে আক্রমণের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেই ঐক্য যেন আজও টিকে আছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে এক বছর ধরে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেন বরাবরই পশ্চিমা অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল।
চলমান যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেন বেশ কিছু এলাকা খোয়ালেও ধীরে ধীরে পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রুশ বাহিনীর অগ্রাভিযানকে রুখে দিতে সমর্থ হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, রুশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে দখল হয়ে যাওয়া বেশ কিছু এলাকা উদ্ধারও করেছে। রুশ বাহিনী যখন প্রথম আগ্রাসন শুরু করেছিল, তখন মনে করা হয়েছিল জেলেনস্কি সরকারকে উৎখাত করাই রাশিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু দিন যতই গড়িয়েছে যুদ্ধের রং যেন ততই বদলেছে। যুদ্ধের পটপরিবর্তন হয়েছে সেভাবে। প্রথম দিকে রাশিয়া কিয়েভকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলেও শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে তাদের বাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর অবশ্য খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রুশ বাহিনী পূর্বাঞ্চলের চারটি এলাকা দখল করে নেয়।
রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ৩০টির বেশি দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউক্রেন বেকায়দায় পড়ে গেলেও ধীরে ধীরে পশ্চিমাদের সহযোগিতায় প্রতিরোধ যুদ্ধ জোরদার করতে সক্ষম হয়। ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থা, হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (এম-১৪২ হিমার্স)। যুদ্ধের ময়দানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে রুশ বাহিনীর অবস্থান শনাক্ত করে হিমার্স দিয়ে ধ্বংস করে প্রভূত সাফল্য অর্জন করে ইউক্রেন। রাশিয়াকে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করতে প্রথম থেকেই জেলেনস্কি পশ্চিমাদের কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের দাবি করে আসছিলেন। তিনি দাবি করেন, অন্তত ৩০০টি ট্যাংক পেলে রুশ বাহিনীকে পিছু হটিয়ে তাঁদের হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। এত দিনে জেলেনস্কির অনুরোধে পশ্চিমাদের বোধ হয় মন গলেছে। তারা ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক ট্যাংক সরবরাহে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। ইউক্রেনকে মোট ৩২১টি অত্যাধুনিক ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পশ্চিমারা। এই ট্যাংক দেওয়ার ব্যাপারে অবশ্য একেক দেশের একেক রকমের শর্ত রয়েছে। ইউক্রেনও সে সব শর্ত মেনে নিয়েই যত দ্রুত সম্ভব ট্যাংক পেতে চায়। এত দিন তারা সোভিয়েত আমলের অন্তত ৩০ বছরের পুরোনো টি-৭২ ট্যাংক ব্যবহার করে আসছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত না হলেও ইউক্রেনকে ব্যবহার করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একরকম প্রক্সি যুদ্ধেই লিপ্ত রয়েছে। যুদ্ধের শুরু থেকেই বিভিন্ন উপায়ে ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেই বসে থাকেনি; রণকৌশল ও অস্ত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইউক্রেনের সেনাসদস্যদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। জেলেনস্কিও পশ্চিমাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় যুদ্ধ সরঞ্জামাদি চেয়ে নিচ্ছেন। তাঁর চাহিদার তালিকা দিন দিন কেবল বেড়েই চলেছে। যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের পর এবার যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন চাইছেন তিনি। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের নৌ সক্ষমতা বৃদ্ধি করতেই জার্মানির প্রতি নতুন করে অনুরোধ করেছেন জেলেনস্কি। উল্লেখ্য, জার্মানি এক মাস আগে তাদের ফ্রিগেট লুবেবককে বাতিল ঘোষণা করেছে। ফ্রিগেটটি ৩২ বছরের পুরোনো। ইউক্রেন এ ফ্রিগেটটি চেয়েছে, যাতে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার সাবমেরিন মোকাবিলায় ব্যবহার করতে পারে। জার্মানি যদি ফ্রিগেট দিতে রাজি না হয়, তাহলে অন্তত ওই ফ্রিগেটের অস্ত্রশস্ত্র, যেমন সি স্প্যারো, এম্প হারপুন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তাদের দেয়। জেলেনস্কির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানির পক্ষ থেকে এসব সরঞ্জাম দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য বা তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে কোনো যুদ্ধবিমান পাঠাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান না দেওয়ার কারণ সহজেই অনুমান করা যায়। আগেই উল্লেখ করেছি, পশ্চিমারা সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হলেও তারা প্রক্সি যুদ্ধে ভালোভাবেই যুক্ত আছে।
তারপরও কিছু স্পর্শকাতর বিষয় আছে, সে ব্যাপারে তারা বেশ সতর্ক। তারা চায় না, তাদের দেওয়া যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানুক। যদি এ রকম কিছু হয়ে যায়, তাহলে রাশিয়া মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে; যার পরিণতি হয়তো ভয়াবহ হবে। কাজেই পশ্চিমারা রাশিয়াকে সেই সুযোগ দিতে রাজি নয়। তারা বরং এই যুদ্ধটাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে চায়। ধীরে ধীরে রাশিয়ার সামরিক শক্তিকে ক্ষয় করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দেওয়া প্রতিশ্রুত ট্যাংক হাতে পেলে ইউক্রেন বাহিনী আরও শক্তিশালী হবে। তাদের আক্রমণের ধার যেমন বাড়বে, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতেও নিখুঁত হবে। এসব ভারী সরঞ্জাম পরিচালনার সঠিক রণকৌশল যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে রুশ বাহিনীকে পিছু হটাতে বেশি বেগ পেতে হবে না বলে সামরিক বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এই অত্যাধুনিক ট্যাংকগুলো পাওয়ার পর ইউক্রেনের সেনারা রুশ বাহিনীর খনন করা বাংকারগুলো লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারবে। ট্যাংক ও পদাতিক বাহিনীর সমন্বিত অভিযানও চালাতে পারবে। ট্যাংক ও পদাতিক বাহিনী যখন একযোগে হামলা চালায়, তখন ট্যাংক অগ্রভাগে থাকে। যুদ্ধক্ষেত্রে পদাতিক বাহিনী ট্যাংকের পাশাপাশি ও আড়ালে থেকে শত্রুর ওপর আক্রমণ চালাতে সক্ষম। অত্যাধুনিক ট্যাংকগুলো পেলে ইউক্রেনের সেনাসদস্যরা সে সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে পারবেন।
অপরদিকে রাশিয়াও চুপ করে বসে নেই। রাশিয়া ইতিমধ্যে সমরাস্ত্র কারখানায় অস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে। যুদ্ধের ময়দানেও তাদের আগ্রাসন বৃদ্ধি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণার পর থেকে ইউক্রেনে হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। এরই মধ্যে তারা সোলেদার শহর দখল করে নিয়েছে। দোনেৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের শক্ত অবস্থান ছিল সোলেদার-বাখমুত এলাকা। রুশ বাহিনী সোলেদার শহর দখলে নেওয়ার পর বাখমুত শহরও ঘিরে ফেলেছে। সোলেদার দখল করে নেওয়ার পর রুশ বাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্যই ছিল বাখমুত শহর। বাখমুত থেকে ইউক্রেনের সেনাদের পিছু হটার জন্য একটি মাত্র মহাসড়ক খোলা আছে।
সেই সড়কটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য উভয় পক্ষই জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই মহা সড়কটির নিয়ন্ত্রণ যদি রাশিয়া নিয়ে নিতে পারে, তাহলে ইউক্রেন বাহিনীর সদস্যদের হয় মৃত্যু অথবা আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে, এ লেখা প্রকাশিত হওয়ার আগেই হয়তো রুশ বাহিনী বাখমুত দখল করে নেবে। গত মে মাসের পর রাশিয়া প্রায় ছয় মাস দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ ছাড়া উল্লেখ করার মতো বড় কোনো অভিযান চালায়নি ইউক্রেনে। সেই সুযোগে ইউক্রেন খারকিভ ও খেরসনের বেশ কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। আগেই ধারণা করা হয়েছিল, শীত মৌসুমে রাশিয়া তাদের আক্রমণ শাণিত করতে পারে। এরই মধ্যে পশ্চিমারা ট্যাংকসহ বেশ কিছু অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ইউক্রেনকে সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা দেওয়ার অব্যবহিত পরেই রাশিয়া এই আক্রমণ শুরু করল। বসন্ত শেষ হওয়ার আগেই রাশিয়া বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করতে পারে বলেই অনুমান করা যাচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সে রকম নির্দেশই দিয়েছেন। এই আক্রমণ পরিচালনার জন্য রাশিয়া তাদের আধুনিক নতুন নতুন অস্ত্র ও বেশি বেশি গোলাবারুদ মজুত করছে। তা ছাড়া রুশ সামরিক বাহিনীতে নতুন সদস্যদের রিক্রুট করার কাজও এগিয়ে নিচ্ছে।
অদূর ভবিষ্যতে ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দান আরও উত্তপ্ত হবে। যুদ্ধ পরিস্থিত কোন দিকে মোড় নেয়, এ মুহূর্তে তা বলা মুশকিল। তবে পশ্চিমা বিশ্ব সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইউক্রেনকে ব্যবহার করে রাশিয়ার সামরিক সামর্থ্য যে পরীক্ষা করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যুদ্ধ বন্ধ করা যে তাদের উদ্দেশ্য নয়, এখন তা স্পষ্ট। অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়াকে আরও দুর্বল করাই তাদের মূল লক্ষ্য। রাশিয়াও যুদ্ধে নেমে পিছু হটে যেতে পারছে না। এর মধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে যে নতুন সামরিক সাহায্যের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তার উদ্দেশ্য যে ভালো নয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়। পশ্চিমারা নতুন এই সামরিক প্যাকেজের ঘোষণা দিয়ে পূর্ব ইউরোপে আরেকটি
মহাযুদ্ধ ডেকে আনছে কি না, সে প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠছে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের এক বছর পূরণ হতে চলল। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর এই এক বছরে বিশ্বের অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। করোনা মহামারিতে বিশ্ব যে সংকটে পড়েছিল, সেই সংকট কাটতে না কাটতেই এই যুদ্ধ যেন বিশ্ব পরিস্থিতিকে আরও মহাসংকটে ঠেলে দিয়েছে। ইউক্রেনে আক্রমণের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেই ঐক্য যেন আজও টিকে আছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে এক বছর ধরে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেন বরাবরই পশ্চিমা অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল।
চলমান যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেন বেশ কিছু এলাকা খোয়ালেও ধীরে ধীরে পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রুশ বাহিনীর অগ্রাভিযানকে রুখে দিতে সমর্থ হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, রুশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে দখল হয়ে যাওয়া বেশ কিছু এলাকা উদ্ধারও করেছে। রুশ বাহিনী যখন প্রথম আগ্রাসন শুরু করেছিল, তখন মনে করা হয়েছিল জেলেনস্কি সরকারকে উৎখাত করাই রাশিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু দিন যতই গড়িয়েছে যুদ্ধের রং যেন ততই বদলেছে। যুদ্ধের পটপরিবর্তন হয়েছে সেভাবে। প্রথম দিকে রাশিয়া কিয়েভকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলেও শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে তাদের বাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর অবশ্য খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রুশ বাহিনী পূর্বাঞ্চলের চারটি এলাকা দখল করে নেয়।
রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ৩০টির বেশি দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউক্রেন বেকায়দায় পড়ে গেলেও ধীরে ধীরে পশ্চিমাদের সহযোগিতায় প্রতিরোধ যুদ্ধ জোরদার করতে সক্ষম হয়। ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থা, হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (এম-১৪২ হিমার্স)। যুদ্ধের ময়দানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে রুশ বাহিনীর অবস্থান শনাক্ত করে হিমার্স দিয়ে ধ্বংস করে প্রভূত সাফল্য অর্জন করে ইউক্রেন। রাশিয়াকে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করতে প্রথম থেকেই জেলেনস্কি পশ্চিমাদের কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের দাবি করে আসছিলেন। তিনি দাবি করেন, অন্তত ৩০০টি ট্যাংক পেলে রুশ বাহিনীকে পিছু হটিয়ে তাঁদের হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। এত দিনে জেলেনস্কির অনুরোধে পশ্চিমাদের বোধ হয় মন গলেছে। তারা ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক ট্যাংক সরবরাহে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। ইউক্রেনকে মোট ৩২১টি অত্যাধুনিক ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পশ্চিমারা। এই ট্যাংক দেওয়ার ব্যাপারে অবশ্য একেক দেশের একেক রকমের শর্ত রয়েছে। ইউক্রেনও সে সব শর্ত মেনে নিয়েই যত দ্রুত সম্ভব ট্যাংক পেতে চায়। এত দিন তারা সোভিয়েত আমলের অন্তত ৩০ বছরের পুরোনো টি-৭২ ট্যাংক ব্যবহার করে আসছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত না হলেও ইউক্রেনকে ব্যবহার করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একরকম প্রক্সি যুদ্ধেই লিপ্ত রয়েছে। যুদ্ধের শুরু থেকেই বিভিন্ন উপায়ে ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেই বসে থাকেনি; রণকৌশল ও অস্ত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইউক্রেনের সেনাসদস্যদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। জেলেনস্কিও পশ্চিমাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় যুদ্ধ সরঞ্জামাদি চেয়ে নিচ্ছেন। তাঁর চাহিদার তালিকা দিন দিন কেবল বেড়েই চলেছে। যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের পর এবার যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন চাইছেন তিনি। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের নৌ সক্ষমতা বৃদ্ধি করতেই জার্মানির প্রতি নতুন করে অনুরোধ করেছেন জেলেনস্কি। উল্লেখ্য, জার্মানি এক মাস আগে তাদের ফ্রিগেট লুবেবককে বাতিল ঘোষণা করেছে। ফ্রিগেটটি ৩২ বছরের পুরোনো। ইউক্রেন এ ফ্রিগেটটি চেয়েছে, যাতে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার সাবমেরিন মোকাবিলায় ব্যবহার করতে পারে। জার্মানি যদি ফ্রিগেট দিতে রাজি না হয়, তাহলে অন্তত ওই ফ্রিগেটের অস্ত্রশস্ত্র, যেমন সি স্প্যারো, এম্প হারপুন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তাদের দেয়। জেলেনস্কির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানির পক্ষ থেকে এসব সরঞ্জাম দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য বা তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে কোনো যুদ্ধবিমান পাঠাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান না দেওয়ার কারণ সহজেই অনুমান করা যায়। আগেই উল্লেখ করেছি, পশ্চিমারা সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হলেও তারা প্রক্সি যুদ্ধে ভালোভাবেই যুক্ত আছে।
তারপরও কিছু স্পর্শকাতর বিষয় আছে, সে ব্যাপারে তারা বেশ সতর্ক। তারা চায় না, তাদের দেওয়া যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানুক। যদি এ রকম কিছু হয়ে যায়, তাহলে রাশিয়া মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে; যার পরিণতি হয়তো ভয়াবহ হবে। কাজেই পশ্চিমারা রাশিয়াকে সেই সুযোগ দিতে রাজি নয়। তারা বরং এই যুদ্ধটাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে চায়। ধীরে ধীরে রাশিয়ার সামরিক শক্তিকে ক্ষয় করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দেওয়া প্রতিশ্রুত ট্যাংক হাতে পেলে ইউক্রেন বাহিনী আরও শক্তিশালী হবে। তাদের আক্রমণের ধার যেমন বাড়বে, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতেও নিখুঁত হবে। এসব ভারী সরঞ্জাম পরিচালনার সঠিক রণকৌশল যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে রুশ বাহিনীকে পিছু হটাতে বেশি বেগ পেতে হবে না বলে সামরিক বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এই অত্যাধুনিক ট্যাংকগুলো পাওয়ার পর ইউক্রেনের সেনারা রুশ বাহিনীর খনন করা বাংকারগুলো লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারবে। ট্যাংক ও পদাতিক বাহিনীর সমন্বিত অভিযানও চালাতে পারবে। ট্যাংক ও পদাতিক বাহিনী যখন একযোগে হামলা চালায়, তখন ট্যাংক অগ্রভাগে থাকে। যুদ্ধক্ষেত্রে পদাতিক বাহিনী ট্যাংকের পাশাপাশি ও আড়ালে থেকে শত্রুর ওপর আক্রমণ চালাতে সক্ষম। অত্যাধুনিক ট্যাংকগুলো পেলে ইউক্রেনের সেনাসদস্যরা সে সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে পারবেন।
অপরদিকে রাশিয়াও চুপ করে বসে নেই। রাশিয়া ইতিমধ্যে সমরাস্ত্র কারখানায় অস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে। যুদ্ধের ময়দানেও তাদের আগ্রাসন বৃদ্ধি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণার পর থেকে ইউক্রেনে হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। এরই মধ্যে তারা সোলেদার শহর দখল করে নিয়েছে। দোনেৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের শক্ত অবস্থান ছিল সোলেদার-বাখমুত এলাকা। রুশ বাহিনী সোলেদার শহর দখলে নেওয়ার পর বাখমুত শহরও ঘিরে ফেলেছে। সোলেদার দখল করে নেওয়ার পর রুশ বাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্যই ছিল বাখমুত শহর। বাখমুত থেকে ইউক্রেনের সেনাদের পিছু হটার জন্য একটি মাত্র মহাসড়ক খোলা আছে।
সেই সড়কটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য উভয় পক্ষই জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই মহা সড়কটির নিয়ন্ত্রণ যদি রাশিয়া নিয়ে নিতে পারে, তাহলে ইউক্রেন বাহিনীর সদস্যদের হয় মৃত্যু অথবা আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে, এ লেখা প্রকাশিত হওয়ার আগেই হয়তো রুশ বাহিনী বাখমুত দখল করে নেবে। গত মে মাসের পর রাশিয়া প্রায় ছয় মাস দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ ছাড়া উল্লেখ করার মতো বড় কোনো অভিযান চালায়নি ইউক্রেনে। সেই সুযোগে ইউক্রেন খারকিভ ও খেরসনের বেশ কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। আগেই ধারণা করা হয়েছিল, শীত মৌসুমে রাশিয়া তাদের আক্রমণ শাণিত করতে পারে। এরই মধ্যে পশ্চিমারা ট্যাংকসহ বেশ কিছু অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ইউক্রেনকে সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা দেওয়ার অব্যবহিত পরেই রাশিয়া এই আক্রমণ শুরু করল। বসন্ত শেষ হওয়ার আগেই রাশিয়া বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করতে পারে বলেই অনুমান করা যাচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সে রকম নির্দেশই দিয়েছেন। এই আক্রমণ পরিচালনার জন্য রাশিয়া তাদের আধুনিক নতুন নতুন অস্ত্র ও বেশি বেশি গোলাবারুদ মজুত করছে। তা ছাড়া রুশ সামরিক বাহিনীতে নতুন সদস্যদের রিক্রুট করার কাজও এগিয়ে নিচ্ছে।
অদূর ভবিষ্যতে ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দান আরও উত্তপ্ত হবে। যুদ্ধ পরিস্থিত কোন দিকে মোড় নেয়, এ মুহূর্তে তা বলা মুশকিল। তবে পশ্চিমা বিশ্ব সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইউক্রেনকে ব্যবহার করে রাশিয়ার সামরিক সামর্থ্য যে পরীক্ষা করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যুদ্ধ বন্ধ করা যে তাদের উদ্দেশ্য নয়, এখন তা স্পষ্ট। অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়াকে আরও দুর্বল করাই তাদের মূল লক্ষ্য। রাশিয়াও যুদ্ধে নেমে পিছু হটে যেতে পারছে না। এর মধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে যে নতুন সামরিক সাহায্যের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তার উদ্দেশ্য যে ভালো নয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়। পশ্চিমারা নতুন এই সামরিক প্যাকেজের ঘোষণা দিয়ে পূর্ব ইউরোপে আরেকটি
মহাযুদ্ধ ডেকে আনছে কি না, সে প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠছে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে