জাহীদ রেজা নূর
আরও একটি নির্বাচন হয়ে গেল। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করলেও নিবন্ধিত বাকি দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। তাতে কোথাও কোথাও নির্বাচনী আমেজ দেখা গেছে। তবে যেসব নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী যথেষ্ট শক্তিশালী, সেই সব এলাকায় অন্য দলগুলো তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম প্রায় গুটিয়ে নিয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হলে সাংবিধানিকভাবে এই নির্বাচনের একটা গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। কিন্তু আদতে তা গণতন্ত্রকে সংহত করবে কি না, সেই প্রশ্ন এড়ানো যাবে না।
আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করছি, পৃথিবীর বহু গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ খুব একটা কাজ করছে না। ক্যাডারভিত্তিক দল হিসেবে যে দলগুলোর সুনাম ছিল, সেই দলগুলোও একনায়কতন্ত্রের সঙ্গে আপস করে নিয়েছে। দলের মধ্যে গণতন্ত্রহীনতা রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য কতটা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বস্তুত এখন নিষ্ঠা ও সততা থাকলেই দলের নেতা হওয়া যায় না। রাজনৈতিক ময়দান গণতন্ত্রের জন্য সংকীর্ণ হতে হতে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যাকে গণতন্ত্র বলা হলেও ‘গণতন্ত্র’ বলে ভাবতে ভয় লাগে।
আমরা লক্ষ করে দেখেছি, এবার নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের (বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের) কোনো কোনো নেতা এমন সব অগণতান্ত্রিক আচরণ করেছেন, যা একটি দলের নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা ইত্যাদির বিপরীত। এহেন অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর কতটা আস্থা রাখা যায়, সে ব্যাপারে জনগণ সন্দিহান।
বিশ্ব এখন একটি ভয়াবহ সময় পার করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ পুরো পৃথিবীকেই অস্থিতিশীল করে রেখেছে। আলাদাভাবে বাংলাদেশের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, মুদ্রাস্ফীতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে দেশের সাধারণ নাগরিকেরা বিপাকে পড়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে সেটা কতটা সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।
প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন যাঁরা, তাঁদের কি আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে? যে ব্যাংকাররা লাভবান হওয়ার বিনিময়ে এই দুর্বৃত্তদের টাকা পাচারের সুযোগ করে দিয়েছেন, তাঁদের কি বিচার হবে? দেশে কি পরমতসহিষ্ণুতার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ক্ষমতাসীন দল কোনো পদক্ষেপ নেবে? পুলিশ বাহিনী কি নিরপেক্ষভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে কাজ করবে, নাকি ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি করবে?
এ রকম অজস্র প্রশ্ন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নির্বাচনে তাঁর দলকে জয়ী করে আনলে তিনি তাঁর সরকারের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের করা ভুলত্রুটির কোনো তালিকা কি করা হয়েছে?তালিকা ধরে ধরে ভুলগুলো সত্যিই কি শুধরে নেওয়া সম্ভব হবে? সেই তালিকাটি কি সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে?
অপরদিকে, যারা নির্বাচন বর্জন করল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহিংসতার জন্ম দিল, তারা আসলে কাদের সমর্থনে ক্ষমতায় আসবে বলে ভেবেছিল? জনসমর্থন থাকলে এই সময়ে তারা আন্দোলনের তীব্রতায় সরকারকে তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করতে পারত। কিন্তু তারা জনগণের ওপর নির্ভর না করে নির্ভর করেছে সরকারের অজনপ্রিয়তার ওপর। নির্ভর করেছে বিদেশি শক্তির জ্যাঠামির ওপর।
নিজেরা এমন কোনো পথ দেখায়নি যে পথটাকে জনগণ সমর্থন করতে পারত। জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়েছে, কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই বিরোধী দল ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে। শুধু ক্ষমতার লোভই বিরোধী রাজনীতির চালিকাশক্তি হয়েছে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মতো অনেক ভুলই করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সেই ভুলগুলো চিহ্নিত করে আওয়ামীবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা কঠিন ছিল না। কিন্তু বিএনপি বা সমমনা দলগুলো সেই সুযোগ কাজে লাগায়নি। তাতে স্পষ্ট হয়েছে, বিএনপি চেয়েছে ক্ষমতার পরিবর্তন। নিজ দল ক্ষমতায় আসুক, সেটাই তাদের মূল দাবি। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তারা কী এমন পরিকল্পনার জন্ম দেবে, যা আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে ভালো, সেটা আর তারা প্রকাশ করেনি।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে কীভাবে দুর্নীতির মোকাবিলা করবে, কিংবা জনগণের সেবার জন্য কোন পথ বেছে নেবে, তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই বিএনপির নেতাদের কথাবার্তায়। শুধু সরকারের সমালোচনা করা হবে, অথচ নিজেরা কী করে সেই সংকট মোকাবিলা করবেন, সেটা বলা হবে না—এটা কখনোই জনগণের মনে আস্থা আনতে পারে না। তাই বিএনপি নির্বাচন বর্জন করল কি করল না, তা নিয়ে সাধারণ জনগণ খুব বেশি পীড়িত হয়েছে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।
ক্ষমতায় থাকলে সরকার জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। সরকারের ভেতর যাঁরা দুর্নীতিবাজ, তাঁদের কার্যকলাপ প্রকাশিত হয়ে পড়ায় সরকারও বিপদে পড়ে। তখন সেই দুর্নীতিবাজদের যথাযথ শাস্তি দিয়ে আবার জনগণকে বোঝাতে হয়, দুর্নীতি যিনিই করে থাকুন না কেন, তাঁর কোনো নিস্তার নেই। এটা যদি পালন করা হয়, তাহলে দলের মধ্যে থাকা দুর্নীতিবাজেরা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন না।
তৃণমূল পর্যায়ে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসে। জনগণের সঙ্গে তাঁদের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। আর যদি দুর্নীতির দিকে চোখ বন্ধ করে রাখা হয়, তাহলে জনগণ সরকারকে আর যোগ্য সরকার বলে মনে করে না। আওয়ামী লীগকে সে কথা গভীরভাবে ভাবতে হবে।
২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে পরের পাঁচ বছর বিএনপি যেভাবে জঙ্গিবাদের মদদ দিয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, হাওয়া ভবনের মাধ্যমে যেভাবে সরকারি কাজও নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে, তাতে তাদের ভাবমূর্তিও ভালো নয়। ক্ষমতায় এলে লুটপাটের রাজনীতির বিপরীতে কোনো দিগ্দর্শন তারা দিতে পারবে, তার কোনো স্পষ্ট সমাধান দেখা যায়নি।
২০০১ সালের নির্বাচনে যে ইশতেহার দিয়েছিল বিএনপি, তার কতটা তারা বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল, সে কথাও এখন উঠে আসবে। দেখা যাক, ইশতেহারে থাকা কোন অঙ্গীকারগুলো তারা পালন করেনি। ইশতেহারে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিদের সম্পদের হিসাব দেওয়া হবে।
সেটা আর দেওয়া হয়নি। বিচার বিভাগ পৃথক্করণ হয়নি, রাষ্ট্রায়ত্ত রেডিও-টিভির স্বায়ত্তশাসন হয়নি, স্থায়ী পে-কমিশন হয়নি, গঙ্গার পানি চুক্তির পরিবর্তন হয়নি, পার্বত্য চুক্তির নতুন সমাধান হয়নি, সবার জন্য বিদ্যুৎ হয়নি। এ ছাড়া প্রবাসী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ও তৈরি পোশাকশিল্প মন্ত্রণালয় হয়নি।
আওয়ামী লীগের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোও কি রাখা হয়েছে? জনগণ তো এই প্রশ্ন করতেই পারে। সেই প্রশ্নের উত্তরও আশাপ্রদ নয়।জনগণ তাহলে কী করবে? কার ওপর ভরসা রাখবে?
সফল নির্বাচন কাকে বলা হয়, তা নিয়ে ঐকমত্য নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, ২ শতাংশ ভোট পড়লেই নির্বাচন হয়ে যাবে। কথাটা মন্দ নয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই স্পষ্ট হবে, ২ শতাংশ ভোট পড়লে নির্বাচন হয়ে যাবে, সেটা যেমন ঠিক, তেমনি সেই নির্বাচনে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষের অংশগ্রহণ যে থাকে না, সেটাও তো ঠিক। গণতন্ত্র তাতে কীভাবে রক্ষা হয়? এ প্রশ্নটি আগামী দিনের একটি বড় প্রশ্ন হয়ে উঠতে পারে। গণতন্ত্র রক্ষা করা মানে মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখা, তা মনে রাখা খুব জরুরি।
রাজনীতি এক আজব খেলার মাঠ। যে আওয়ামী লীগ একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেই আওয়ামী লীগই একসময় বলল, তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থার আর দরকার নেই। যে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর ছিল, সেই বিএনপি এখন চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। রাজনীতির আজব খেলার মাঠটিতে রাজনৈতিক দলগুলো খেলছে। আর জনগণ যেন তাদের পায়ের কাছে ফুটবল হয়ে পড়ে রয়েছে। যে যখন পারে, সে-ই ফুটবলরূপী জনগণকে লাথি মারে।
নির্বাচন বর্জন করলে তাতে যেমন জনগণের কোনো প্রত্যাশা পূরণ হয় না, তেমনি যেনতেনভাবে নির্বাচন করলেও তাতে লাভবান হয় না জনগণ। এই সহজ সত্যটা রাজনীতির দিকপালেরা বুঝতে চান না।
আরেকটি নির্বাচন হয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু আমজনতার জীবনযাপন পদ্ধতিতে বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারলে নির্বাচন শুধুই ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী দলগুলোর ‘টাগ অব ওয়ার’ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তাতে আমজনতার প্রত্যাশা পূরণ হবে না।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আরও একটি নির্বাচন হয়ে গেল। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করলেও নিবন্ধিত বাকি দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। তাতে কোথাও কোথাও নির্বাচনী আমেজ দেখা গেছে। তবে যেসব নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী যথেষ্ট শক্তিশালী, সেই সব এলাকায় অন্য দলগুলো তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম প্রায় গুটিয়ে নিয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হলে সাংবিধানিকভাবে এই নির্বাচনের একটা গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। কিন্তু আদতে তা গণতন্ত্রকে সংহত করবে কি না, সেই প্রশ্ন এড়ানো যাবে না।
আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করছি, পৃথিবীর বহু গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ খুব একটা কাজ করছে না। ক্যাডারভিত্তিক দল হিসেবে যে দলগুলোর সুনাম ছিল, সেই দলগুলোও একনায়কতন্ত্রের সঙ্গে আপস করে নিয়েছে। দলের মধ্যে গণতন্ত্রহীনতা রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য কতটা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বস্তুত এখন নিষ্ঠা ও সততা থাকলেই দলের নেতা হওয়া যায় না। রাজনৈতিক ময়দান গণতন্ত্রের জন্য সংকীর্ণ হতে হতে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যাকে গণতন্ত্র বলা হলেও ‘গণতন্ত্র’ বলে ভাবতে ভয় লাগে।
আমরা লক্ষ করে দেখেছি, এবার নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের (বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের) কোনো কোনো নেতা এমন সব অগণতান্ত্রিক আচরণ করেছেন, যা একটি দলের নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা ইত্যাদির বিপরীত। এহেন অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর কতটা আস্থা রাখা যায়, সে ব্যাপারে জনগণ সন্দিহান।
বিশ্ব এখন একটি ভয়াবহ সময় পার করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ পুরো পৃথিবীকেই অস্থিতিশীল করে রেখেছে। আলাদাভাবে বাংলাদেশের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, মুদ্রাস্ফীতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে দেশের সাধারণ নাগরিকেরা বিপাকে পড়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে সেটা কতটা সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।
প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন যাঁরা, তাঁদের কি আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে? যে ব্যাংকাররা লাভবান হওয়ার বিনিময়ে এই দুর্বৃত্তদের টাকা পাচারের সুযোগ করে দিয়েছেন, তাঁদের কি বিচার হবে? দেশে কি পরমতসহিষ্ণুতার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ক্ষমতাসীন দল কোনো পদক্ষেপ নেবে? পুলিশ বাহিনী কি নিরপেক্ষভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে কাজ করবে, নাকি ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি করবে?
এ রকম অজস্র প্রশ্ন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নির্বাচনে তাঁর দলকে জয়ী করে আনলে তিনি তাঁর সরকারের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের করা ভুলত্রুটির কোনো তালিকা কি করা হয়েছে?তালিকা ধরে ধরে ভুলগুলো সত্যিই কি শুধরে নেওয়া সম্ভব হবে? সেই তালিকাটি কি সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে?
অপরদিকে, যারা নির্বাচন বর্জন করল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহিংসতার জন্ম দিল, তারা আসলে কাদের সমর্থনে ক্ষমতায় আসবে বলে ভেবেছিল? জনসমর্থন থাকলে এই সময়ে তারা আন্দোলনের তীব্রতায় সরকারকে তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করতে পারত। কিন্তু তারা জনগণের ওপর নির্ভর না করে নির্ভর করেছে সরকারের অজনপ্রিয়তার ওপর। নির্ভর করেছে বিদেশি শক্তির জ্যাঠামির ওপর।
নিজেরা এমন কোনো পথ দেখায়নি যে পথটাকে জনগণ সমর্থন করতে পারত। জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়েছে, কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই বিরোধী দল ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে। শুধু ক্ষমতার লোভই বিরোধী রাজনীতির চালিকাশক্তি হয়েছে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মতো অনেক ভুলই করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সেই ভুলগুলো চিহ্নিত করে আওয়ামীবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা কঠিন ছিল না। কিন্তু বিএনপি বা সমমনা দলগুলো সেই সুযোগ কাজে লাগায়নি। তাতে স্পষ্ট হয়েছে, বিএনপি চেয়েছে ক্ষমতার পরিবর্তন। নিজ দল ক্ষমতায় আসুক, সেটাই তাদের মূল দাবি। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তারা কী এমন পরিকল্পনার জন্ম দেবে, যা আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে ভালো, সেটা আর তারা প্রকাশ করেনি।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে কীভাবে দুর্নীতির মোকাবিলা করবে, কিংবা জনগণের সেবার জন্য কোন পথ বেছে নেবে, তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই বিএনপির নেতাদের কথাবার্তায়। শুধু সরকারের সমালোচনা করা হবে, অথচ নিজেরা কী করে সেই সংকট মোকাবিলা করবেন, সেটা বলা হবে না—এটা কখনোই জনগণের মনে আস্থা আনতে পারে না। তাই বিএনপি নির্বাচন বর্জন করল কি করল না, তা নিয়ে সাধারণ জনগণ খুব বেশি পীড়িত হয়েছে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।
ক্ষমতায় থাকলে সরকার জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। সরকারের ভেতর যাঁরা দুর্নীতিবাজ, তাঁদের কার্যকলাপ প্রকাশিত হয়ে পড়ায় সরকারও বিপদে পড়ে। তখন সেই দুর্নীতিবাজদের যথাযথ শাস্তি দিয়ে আবার জনগণকে বোঝাতে হয়, দুর্নীতি যিনিই করে থাকুন না কেন, তাঁর কোনো নিস্তার নেই। এটা যদি পালন করা হয়, তাহলে দলের মধ্যে থাকা দুর্নীতিবাজেরা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন না।
তৃণমূল পর্যায়ে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসে। জনগণের সঙ্গে তাঁদের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। আর যদি দুর্নীতির দিকে চোখ বন্ধ করে রাখা হয়, তাহলে জনগণ সরকারকে আর যোগ্য সরকার বলে মনে করে না। আওয়ামী লীগকে সে কথা গভীরভাবে ভাবতে হবে।
২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে পরের পাঁচ বছর বিএনপি যেভাবে জঙ্গিবাদের মদদ দিয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, হাওয়া ভবনের মাধ্যমে যেভাবে সরকারি কাজও নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে, তাতে তাদের ভাবমূর্তিও ভালো নয়। ক্ষমতায় এলে লুটপাটের রাজনীতির বিপরীতে কোনো দিগ্দর্শন তারা দিতে পারবে, তার কোনো স্পষ্ট সমাধান দেখা যায়নি।
২০০১ সালের নির্বাচনে যে ইশতেহার দিয়েছিল বিএনপি, তার কতটা তারা বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল, সে কথাও এখন উঠে আসবে। দেখা যাক, ইশতেহারে থাকা কোন অঙ্গীকারগুলো তারা পালন করেনি। ইশতেহারে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিদের সম্পদের হিসাব দেওয়া হবে।
সেটা আর দেওয়া হয়নি। বিচার বিভাগ পৃথক্করণ হয়নি, রাষ্ট্রায়ত্ত রেডিও-টিভির স্বায়ত্তশাসন হয়নি, স্থায়ী পে-কমিশন হয়নি, গঙ্গার পানি চুক্তির পরিবর্তন হয়নি, পার্বত্য চুক্তির নতুন সমাধান হয়নি, সবার জন্য বিদ্যুৎ হয়নি। এ ছাড়া প্রবাসী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ও তৈরি পোশাকশিল্প মন্ত্রণালয় হয়নি।
আওয়ামী লীগের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোও কি রাখা হয়েছে? জনগণ তো এই প্রশ্ন করতেই পারে। সেই প্রশ্নের উত্তরও আশাপ্রদ নয়।জনগণ তাহলে কী করবে? কার ওপর ভরসা রাখবে?
সফল নির্বাচন কাকে বলা হয়, তা নিয়ে ঐকমত্য নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, ২ শতাংশ ভোট পড়লেই নির্বাচন হয়ে যাবে। কথাটা মন্দ নয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই স্পষ্ট হবে, ২ শতাংশ ভোট পড়লে নির্বাচন হয়ে যাবে, সেটা যেমন ঠিক, তেমনি সেই নির্বাচনে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষের অংশগ্রহণ যে থাকে না, সেটাও তো ঠিক। গণতন্ত্র তাতে কীভাবে রক্ষা হয়? এ প্রশ্নটি আগামী দিনের একটি বড় প্রশ্ন হয়ে উঠতে পারে। গণতন্ত্র রক্ষা করা মানে মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখা, তা মনে রাখা খুব জরুরি।
রাজনীতি এক আজব খেলার মাঠ। যে আওয়ামী লীগ একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেই আওয়ামী লীগই একসময় বলল, তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থার আর দরকার নেই। যে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর ছিল, সেই বিএনপি এখন চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। রাজনীতির আজব খেলার মাঠটিতে রাজনৈতিক দলগুলো খেলছে। আর জনগণ যেন তাদের পায়ের কাছে ফুটবল হয়ে পড়ে রয়েছে। যে যখন পারে, সে-ই ফুটবলরূপী জনগণকে লাথি মারে।
নির্বাচন বর্জন করলে তাতে যেমন জনগণের কোনো প্রত্যাশা পূরণ হয় না, তেমনি যেনতেনভাবে নির্বাচন করলেও তাতে লাভবান হয় না জনগণ। এই সহজ সত্যটা রাজনীতির দিকপালেরা বুঝতে চান না।
আরেকটি নির্বাচন হয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু আমজনতার জীবনযাপন পদ্ধতিতে বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারলে নির্বাচন শুধুই ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী দলগুলোর ‘টাগ অব ওয়ার’ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তাতে আমজনতার প্রত্যাশা পূরণ হবে না।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে