মহিউদ্দিন খান মোহন
পরিচিত স্বজন-সুহৃদরা প্রায়ই ফোন করে জানতে চান, বিএনপির এই অবরোধ নামের হাস্যকর আন্দোলন কর্মসূচির ইতি ঘটবে কবে? তাঁদের বলি, আমি তো ভাই গণক নই, বিএনপির নীতিনির্ধারকও নই। সুতরাং বলব কী করে? তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, তাহলে কি এভাবেই চলতে থাকবে? দলটির নীতিনির্ধারকেরা কি আন্দোলনের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বুঝতে পারছেন না? তাঁরা কিসের আশায় দেশবাসীকে এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রেখে নির্বিকার আত্মগোপন করে আছেন?
এসব প্রশ্নের জবাব বিএনপির নেতারাই দিতে পারবেন। তাঁরা কি চলমান আন্দোলন স্থগিত করবেন, নাকি মুমূর্ষু আন্দোলনের অচল দেহ কাঁধে নিয়ে ক্লান্ত পদক্ষেপে পথ চলতে থাকবেন, সেটা তাঁরাই ভালো জানেন। তা ছাড়া এ পর্যায়ে এসে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে যাবেনই-বা কোথায়? নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল থেকে তাঁরা চলে গেছেন পয়েন্ট অব নো রিটার্নে। পেছনে ফেরার যেমন উপায় নেই, সামনে যাওয়াও কঠিন। যদিও বিএনপির নেতারা এখনো আন্দোলনের সফলতা নিয়ে আশাবাদী। ৬ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘মাঠ গরম করার চেষ্টা করবে বিএনপি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমাগত হরতাল, অবরোধের পরেও আন্দোলনের মাঠ গরম না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে দলটির হাইকমান্ড নড়েচড়ে বসছেন।
তাঁরা আন্দোলনে গতি আনার জন্য নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছেন। এরপর ভোট প্রতিহত করতে মাঠে নামতে চায়। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথাও বলছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগারের বাইরে থাকা নেতাদের ভূমিকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘বিএনপি আন্দোলনেই আছে। আন্দোলন কীভাবে করতে হয়, এরই মধ্যে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। অপেক্ষা করেন। সময় হলেই দেখতে পাবেন।’
সেলিমা রহমানের এ বক্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম আমার এলাকার বিএনপির কয়েকজন কর্মীকে। ক্ষোভের সঙ্গে একজন বললেন, ‘হ্যাঁ, ওনারা সেই আশাতেই থাকুন। তৃণমূলের কর্মীরা আন্দোলন সফল করে শীর্ষ নেতাদের পকেট বা ভ্যানিটি ব্যাগে ভরে দিয়ে আসবে, আর তাঁরা সেই “সাফল্যের লেবেনচুস” চুষে চুষে খাবেন।’ আরেকজন তো বলেই ফেললেন, ‘আর না। এর আগে আন্দোলনে নেমে জেল খেটেছি। নেতারা পালিয়ে বেঁচেছেন। এবার তাঁরা না নামলে আর যাচ্ছি না।’ যুবদলের এক নেতা বললেন, ‘আন্দোলন যাকে বলে তৃণমূলও তা দেখাতে পারেনি। দেখাবে কীভাবে? তারা তো কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে চেয়ে আছে।
তৃণমূলে কর্মীরা আছে, নেতারা নাই। আপনি যান এলাকায়, বাটি চালান দিয়েও একজন নেতা খুঁজে পাবেন না।’ তাকে বললাম, ‘কেন, এক নেতা তো প্রতিদিনই ভিডিও বার্তায় আপনাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।’ শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন ওই যুবনেতা। শ্লেষমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, ‘নিজে আত্মগোপনে থেকে অন্যদের মাঠে নেমে আন্দোলন সফল করতে বলা একধরনের ফাজলামো। এসব কাপুরুষ নেতার কারণে দলের কর্মীরা এখন হতাশ। তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’
ঠিক এ চিত্রটিই উঠে এসেছে ৫ ডিসেম্বরের একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে। ‘নেতাদের কারণেই কর্মীরা মনোবলহারা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তৃণমূলের কর্মীরা ক্রমেই মনোবল হারিয়ে ফেলছেন। তাঁরা বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে না থাকায় কর্মীরা মাঠে নামতে সাহস পাচ্ছেন না। পত্রিকাটি কয়েকটি এলাকার নেতা-কর্মীদের বক্তব্যও তুলে ধরেছে। কুমিল্লার দাউদকান্দির এক কেন্দ্রীয় নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই কড়া নজরদারিতে তাঁর পক্ষে রাজপথে নেমে আন্দোলন করা সম্ভব নয়। এতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিকেটিং করতে। তবে তাঁর নির্দেশে এখন পর্যন্ত সেখানে কাউকে দেখা যায়নি।
মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আশিক অভি পত্রিকাটিকে বলেছেন, জেলার নেতাদের গত এক মাসের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। আশিক এটাও বলেছেন, সিরাজদিখান উপজেলার নেতা এম আবদুল্লাহ সংসদ নির্বাচন করবেন বলে এত দিন তাঁর সমর্থকেরা বলে বেড়িয়েছেন। অথচ আন্দোলন শুরুর পর তিনি এক দিনও এলাকায় আসেননি। একই দিনে অপর একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি যে মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে, তাতে নির্বাচনকালীন প্রশাসন কী রকম আচরণ করে তা দেখে দলটি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। এ নিয়ে ৩ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে নেতাদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
তাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যুগপৎ ও যুগপতের বাইরে থাকা দলগুলোকে একত্র করে ঢাকায় গণমিছিল, পেশাজীবীদের সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। চলতি অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করবে বিএনপি। সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি লিখেছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়ে গেলে পরবর্তী এক মাস ‘কঠোর’ আন্দোলন পরিচালনার বিষয়ে ওই ভার্চুয়াল সভায় আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান পত্রিকাটিকে বলেছেন, ‘আমরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে আছি। এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সরকারের আচার-আচরণই বলে দেবে আমাদের আন্দোলনের চরিত্র কী হবে।’
বিএনপির আন্দোলন প্রশ্নে সরকার কী আচরণ করবে তা এখন আর অস্পষ্ট নেই। আর তার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি কী করবে বা করতে পারবে তা-ও বুঝতে কারও বাকি থাকার কথা নয়। ভেতরের খবর হলো, বিএনপির হাইকমান্ড বুঝে গেছেন, তাঁরা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা বা নির্বাচন ঠেকাতে পারবেন না। আর সে জন্যই ৩ ডিসেম্বরের সভায় নির্বাচন হয়ে যাওয়া পরবর্তী এক মাসের কঠোর আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাতে কি কোনো ফলোদয় হবে? এক দফার আন্দোলনে যে সক্ষমতা বিএনপি দেখিয়েছে, তাতে নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে একমাত্র বোকারাই আশাবাদী হতে পারে। নির্বাচনের পর পুনরায় গদিতে বসে সরকার নিশ্চয়ই দুর্বল হবে না; বরং অধিকতর বলশালী হওয়াটাই স্বাভাবিক। সে অবস্থায় বিএনপি যে তেমন সুবিধা করতে পারবে না, সেটা বলার জন্য জ্যোতিষী হওয়ার দরকার পড়ে না।
বিএনপির এই ‘অবরোধ অবরোধ তামাশা’ আর কত দিন চলবে—এক বন্ধু তা জানতে চাইলে তাকে প্রাইমারি ছাত্রাবস্থায় পাঠ্যবইয়ে পড়া একটি গল্প শোনালাম। গল্পটির নাম ছিল ‘ফুয়াদের গল্প বলা’। গল্পটি ছিল এ রকম: এক বাদশাহ তাঁর পুত্রের জন্য বন্ধু নির্বাচন করবেন। উজির-নাজির সভাসদদের পুত্ররা এল পরীক্ষা দিতে। বাদশাহ তাদের কাছে গল্প শুনতে চান। কিন্তু কারও গল্পই বাদশাহর পছন্দ হয় না, কাউকে তেমন বুদ্ধিমানও মনে হয় না। অবশেষে এল ফুয়াদ নামে এক দরিদ্র কিশোর।
সে গল্প বলা শুরু করল:‘একটি বাড়ির কার্নিশে ছিল চড়ুইপাখির বাসা। পাখিটি মাঝে মাঝেই জানালা দিয়ে ঘরে ঢোকে আর ফুরুৎ করে বেরিয়ে যায়।’ এটুকু বলেই ফুয়াদ থেমে গেল। উজির জিজ্ঞেস করলেন, তারপর? ফুয়াদ বলল, ‘তারপর ফুরুৎ।’ বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারপর?’ ফুযাদ বলল, ‘তারপরও ফুরুৎ।’ বাদশাহ যতবার জিজ্ঞেস করেন, ফুয়াদ ততবারই বলে ‘ফুরুৎ।’ বিরক্ত বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই ফুরুৎ আর কতক্ষণ চলিবে?’ ফুয়াদ চটপট জবাব দিল, ‘চড়ুইপাখি যতক্ষণ আসা-যাওয়া করিবে, ফুরুৎও ততক্ষণ চলিবে।’
গল্পের ফুয়াদ তা-ও ফুরুৎ চলার একটা মেয়াদ বলেছিল, চড়ুইপাখির আসা-যাওয়ার ভিত্তিতে। কিন্তু বিএনপির এই অর্থহীন অবরোধ-আন্দোলন কত দিন চলবে, কেউ বলতে পারছে না। সম্ভবত বিএনপির নীতিনির্ধারকেরাও না।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
পরিচিত স্বজন-সুহৃদরা প্রায়ই ফোন করে জানতে চান, বিএনপির এই অবরোধ নামের হাস্যকর আন্দোলন কর্মসূচির ইতি ঘটবে কবে? তাঁদের বলি, আমি তো ভাই গণক নই, বিএনপির নীতিনির্ধারকও নই। সুতরাং বলব কী করে? তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, তাহলে কি এভাবেই চলতে থাকবে? দলটির নীতিনির্ধারকেরা কি আন্দোলনের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বুঝতে পারছেন না? তাঁরা কিসের আশায় দেশবাসীকে এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রেখে নির্বিকার আত্মগোপন করে আছেন?
এসব প্রশ্নের জবাব বিএনপির নেতারাই দিতে পারবেন। তাঁরা কি চলমান আন্দোলন স্থগিত করবেন, নাকি মুমূর্ষু আন্দোলনের অচল দেহ কাঁধে নিয়ে ক্লান্ত পদক্ষেপে পথ চলতে থাকবেন, সেটা তাঁরাই ভালো জানেন। তা ছাড়া এ পর্যায়ে এসে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে যাবেনই-বা কোথায়? নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল থেকে তাঁরা চলে গেছেন পয়েন্ট অব নো রিটার্নে। পেছনে ফেরার যেমন উপায় নেই, সামনে যাওয়াও কঠিন। যদিও বিএনপির নেতারা এখনো আন্দোলনের সফলতা নিয়ে আশাবাদী। ৬ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘মাঠ গরম করার চেষ্টা করবে বিএনপি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমাগত হরতাল, অবরোধের পরেও আন্দোলনের মাঠ গরম না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে দলটির হাইকমান্ড নড়েচড়ে বসছেন।
তাঁরা আন্দোলনে গতি আনার জন্য নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছেন। এরপর ভোট প্রতিহত করতে মাঠে নামতে চায়। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথাও বলছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগারের বাইরে থাকা নেতাদের ভূমিকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘বিএনপি আন্দোলনেই আছে। আন্দোলন কীভাবে করতে হয়, এরই মধ্যে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। অপেক্ষা করেন। সময় হলেই দেখতে পাবেন।’
সেলিমা রহমানের এ বক্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম আমার এলাকার বিএনপির কয়েকজন কর্মীকে। ক্ষোভের সঙ্গে একজন বললেন, ‘হ্যাঁ, ওনারা সেই আশাতেই থাকুন। তৃণমূলের কর্মীরা আন্দোলন সফল করে শীর্ষ নেতাদের পকেট বা ভ্যানিটি ব্যাগে ভরে দিয়ে আসবে, আর তাঁরা সেই “সাফল্যের লেবেনচুস” চুষে চুষে খাবেন।’ আরেকজন তো বলেই ফেললেন, ‘আর না। এর আগে আন্দোলনে নেমে জেল খেটেছি। নেতারা পালিয়ে বেঁচেছেন। এবার তাঁরা না নামলে আর যাচ্ছি না।’ যুবদলের এক নেতা বললেন, ‘আন্দোলন যাকে বলে তৃণমূলও তা দেখাতে পারেনি। দেখাবে কীভাবে? তারা তো কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে চেয়ে আছে।
তৃণমূলে কর্মীরা আছে, নেতারা নাই। আপনি যান এলাকায়, বাটি চালান দিয়েও একজন নেতা খুঁজে পাবেন না।’ তাকে বললাম, ‘কেন, এক নেতা তো প্রতিদিনই ভিডিও বার্তায় আপনাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।’ শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন ওই যুবনেতা। শ্লেষমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, ‘নিজে আত্মগোপনে থেকে অন্যদের মাঠে নেমে আন্দোলন সফল করতে বলা একধরনের ফাজলামো। এসব কাপুরুষ নেতার কারণে দলের কর্মীরা এখন হতাশ। তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’
ঠিক এ চিত্রটিই উঠে এসেছে ৫ ডিসেম্বরের একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে। ‘নেতাদের কারণেই কর্মীরা মনোবলহারা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তৃণমূলের কর্মীরা ক্রমেই মনোবল হারিয়ে ফেলছেন। তাঁরা বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে না থাকায় কর্মীরা মাঠে নামতে সাহস পাচ্ছেন না। পত্রিকাটি কয়েকটি এলাকার নেতা-কর্মীদের বক্তব্যও তুলে ধরেছে। কুমিল্লার দাউদকান্দির এক কেন্দ্রীয় নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই কড়া নজরদারিতে তাঁর পক্ষে রাজপথে নেমে আন্দোলন করা সম্ভব নয়। এতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিকেটিং করতে। তবে তাঁর নির্দেশে এখন পর্যন্ত সেখানে কাউকে দেখা যায়নি।
মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আশিক অভি পত্রিকাটিকে বলেছেন, জেলার নেতাদের গত এক মাসের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। আশিক এটাও বলেছেন, সিরাজদিখান উপজেলার নেতা এম আবদুল্লাহ সংসদ নির্বাচন করবেন বলে এত দিন তাঁর সমর্থকেরা বলে বেড়িয়েছেন। অথচ আন্দোলন শুরুর পর তিনি এক দিনও এলাকায় আসেননি। একই দিনে অপর একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি যে মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে, তাতে নির্বাচনকালীন প্রশাসন কী রকম আচরণ করে তা দেখে দলটি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। এ নিয়ে ৩ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে নেতাদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
তাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যুগপৎ ও যুগপতের বাইরে থাকা দলগুলোকে একত্র করে ঢাকায় গণমিছিল, পেশাজীবীদের সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। চলতি অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করবে বিএনপি। সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি লিখেছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়ে গেলে পরবর্তী এক মাস ‘কঠোর’ আন্দোলন পরিচালনার বিষয়ে ওই ভার্চুয়াল সভায় আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান পত্রিকাটিকে বলেছেন, ‘আমরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে আছি। এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সরকারের আচার-আচরণই বলে দেবে আমাদের আন্দোলনের চরিত্র কী হবে।’
বিএনপির আন্দোলন প্রশ্নে সরকার কী আচরণ করবে তা এখন আর অস্পষ্ট নেই। আর তার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি কী করবে বা করতে পারবে তা-ও বুঝতে কারও বাকি থাকার কথা নয়। ভেতরের খবর হলো, বিএনপির হাইকমান্ড বুঝে গেছেন, তাঁরা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা বা নির্বাচন ঠেকাতে পারবেন না। আর সে জন্যই ৩ ডিসেম্বরের সভায় নির্বাচন হয়ে যাওয়া পরবর্তী এক মাসের কঠোর আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাতে কি কোনো ফলোদয় হবে? এক দফার আন্দোলনে যে সক্ষমতা বিএনপি দেখিয়েছে, তাতে নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে একমাত্র বোকারাই আশাবাদী হতে পারে। নির্বাচনের পর পুনরায় গদিতে বসে সরকার নিশ্চয়ই দুর্বল হবে না; বরং অধিকতর বলশালী হওয়াটাই স্বাভাবিক। সে অবস্থায় বিএনপি যে তেমন সুবিধা করতে পারবে না, সেটা বলার জন্য জ্যোতিষী হওয়ার দরকার পড়ে না।
বিএনপির এই ‘অবরোধ অবরোধ তামাশা’ আর কত দিন চলবে—এক বন্ধু তা জানতে চাইলে তাকে প্রাইমারি ছাত্রাবস্থায় পাঠ্যবইয়ে পড়া একটি গল্প শোনালাম। গল্পটির নাম ছিল ‘ফুয়াদের গল্প বলা’। গল্পটি ছিল এ রকম: এক বাদশাহ তাঁর পুত্রের জন্য বন্ধু নির্বাচন করবেন। উজির-নাজির সভাসদদের পুত্ররা এল পরীক্ষা দিতে। বাদশাহ তাদের কাছে গল্প শুনতে চান। কিন্তু কারও গল্পই বাদশাহর পছন্দ হয় না, কাউকে তেমন বুদ্ধিমানও মনে হয় না। অবশেষে এল ফুয়াদ নামে এক দরিদ্র কিশোর।
সে গল্প বলা শুরু করল:‘একটি বাড়ির কার্নিশে ছিল চড়ুইপাখির বাসা। পাখিটি মাঝে মাঝেই জানালা দিয়ে ঘরে ঢোকে আর ফুরুৎ করে বেরিয়ে যায়।’ এটুকু বলেই ফুয়াদ থেমে গেল। উজির জিজ্ঞেস করলেন, তারপর? ফুয়াদ বলল, ‘তারপর ফুরুৎ।’ বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারপর?’ ফুযাদ বলল, ‘তারপরও ফুরুৎ।’ বাদশাহ যতবার জিজ্ঞেস করেন, ফুয়াদ ততবারই বলে ‘ফুরুৎ।’ বিরক্ত বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই ফুরুৎ আর কতক্ষণ চলিবে?’ ফুয়াদ চটপট জবাব দিল, ‘চড়ুইপাখি যতক্ষণ আসা-যাওয়া করিবে, ফুরুৎও ততক্ষণ চলিবে।’
গল্পের ফুয়াদ তা-ও ফুরুৎ চলার একটা মেয়াদ বলেছিল, চড়ুইপাখির আসা-যাওয়ার ভিত্তিতে। কিন্তু বিএনপির এই অর্থহীন অবরোধ-আন্দোলন কত দিন চলবে, কেউ বলতে পারছে না। সম্ভবত বিএনপির নীতিনির্ধারকেরাও না।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২৬ মিনিট আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩২ মিনিট আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
১ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ ঘণ্টা আগে