রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো কোজাগরি। শব্দটির সচরাচর ব্যবহার ছাড়াও আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্মীপূজা উদ্যাপনের সঙ্গে এর প্রয়োগ লক্ষ করি। বলা হয়ে থাকে শ্রীশ্রী কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা, কিন্তু আমরা কি জানি কোজাগর শব্দের মানে কী?
কেন বলা হয় ‘কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা’? কোজাগর শব্দটির প্রয়োগ কি আমরা উল্লেখিত পূজার সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও দেখতে পাই? তবে চলুন আজ জানব ‘কোজাগরি’ শব্দের ইতিবৃত্ত।
কোজাগর সংস্কৃত শব্দ। এটি বিশেষ্য পদ। আভিধানিকভাবে কোজাগর শব্দের অর্থ হলো ‘আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথি, অর্থাৎ যে তিথিতে লক্ষ্মীপূজা করা হয়’। কিন্তু কোজাগরি বাংলা শব্দ। কোজাগর+বাংলা ই-প্রত্যয় সহযোগে গঠিত হয়েছে ‘কোজাগরি’ শব্দটি। এখানে কঃ (কে) + জাগর (জেগে আছো?)। আক্ষরিক অর্থে, কোজাগর বা কোজাগরি মানে, ‘কে জেগে আছো’? ‘কো জাগর্তি’ শব্দ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ‘কোজাগরি’ শব্দটি। আশ্বিন মাসের এই পূর্ণিমা তিথিকে লক্ষ্মী পূর্ণিমা বা আশ্বিনী পূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়। এ সময় তুলনামূলক অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করে। দাশরথি রায়ের পাঁচালিতে আছে: ‘ঘুমে লক্ষ্মী হন বিরূপা, জাগরণে লক্ষ্মীর কৃপা, নৈলে কেন জাগে কোজাগরে?’ দেবী লক্ষ্মী বলেন, এই পূর্ণিমায় যে জাগে, তাকে ধনসম্পদ প্রদান করব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রায় প্রতি ঘরেই দেবী লক্ষ্মীর পূজা হয়ে থাকে। লক্ষ্মী হলেন ধন-সম্পত্তির দেবী। ধন-সম্পদের আশায় ঘরে ঘরে কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা হয়ে থাকে। ঋগ্বেদে শ্রী ও ঐশ্বর্যের দেবী অর্থে লক্ষ্মীর নাম পাওয়া যায়। সমুদ্র মন্থনের সময় এক হাতে অমৃতের কলস, আরেক হাতে পদ্মহস্তে তিনি উত্থিত হন বলে বর্ণিত হয়েছে। পৌরাণিক যুগে লক্ষ্মী নানারূপে বর্ণিত হয়েছেন। লক্ষ্মীদেবীর রূপবৈচিত্র্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, তিনি কখনো দ্বিভুজা, কখনো চতুর্ভুজা। তবে তিনি সর্বত্রই পদ্ম সেনা ও পদ্মহস্তা। প্রভাত সূর্যের মতো তাঁর জ্যোতি। তিনি বিভিন্ন অলংকারে অলংকৃতা। পার্বতী ও সরস্বতীর সঙ্গে তিনি ত্রিদেবীর একজন।
জৈনধর্মের স্মারকসমূহেও দেবী লক্ষ্মীর ছবি দেখা যায়। কিছু জৈন মন্দিরে শ্রী লক্ষ্মীকে সম্পদ এবং আনন্দের দেবী হিসেবেও চিত্রিত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মনুমেন্টে পার্শ্বনাথ জৈন মন্দিরে তাকে বিষ্ণুর সঙ্গে প্রদর্শন করা হয়েছে, যেখানে তাকে বিষ্ণুর বুকে চাপা অবস্থায় দেখানো হয়েছে। লক্ষ্মীর বাহন প্যাঁচা। লক্ষ্মী ছয়টি বিশেষ গুণের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি বিষ্ণুর শক্তিরও উৎস।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি, সুরক্ষা ও রূপান্তর করতে বিষ্ণুকে সহায়তা করেন। আমরা সাধারণত অষ্টলক্ষ্মীর আটটি রূপ দেখতে পাই। যথা: আদি-লক্ষ্মী এই দেবীর প্রথম প্রকাশ; ধান্য-লক্ষ্মী শস্যসম্পদ; বীর-লক্ষ্মী বীরত্বের সম্পদ; গজ-লক্ষ্মী উর্বরতা, বৃষ্টি ও খাবার; সান্ত্বনা-লক্ষ্মী ধারাবাহিকতা, বংশধরের সম্পদ; বিদ্যা-লক্ষ্মী জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সম্পদ; বিজয়-লক্ষ্মী বিজয়ের সম্পদ এবং ঐশ্বর্য-লক্ষ্মী সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের সম্পদ। অষ্টলক্ষ্মীর রূপ তামিলনাড়ুর মন্দিরগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুয়ায়ী, আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে, লক্ষ্মী দেবী বিষ্ণুলোক থেকে নেমে আসেন মর্ত্যধামে এবং সারা রাত ধরে গৃহস্থের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে দেখতে চান কে তাঁর অপেক্ষায় রাত জেগে বসে আছে। ‘নিশীথে বরদা লক্ষ্মী কোজাগর্তিভাষিণী’, অর্থাৎ রাত্রিবেলা লক্ষ্মী দেবী জিজ্ঞেস করেন, ‘কে, জেগে আছো আমার জন্য?’ যিনি জেগে থাকেন, তাঁকে লক্ষ্মী দেবী সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও ধনসম্পদ প্রদান করেন। এরকম ধারণা থেকেই ‘কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা’ নামকরণ হয়। ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর স্বামী হলেন নারায়ণ। তাই একই তিথিতে অনেকে যৌথভাবে লক্ষ্মী-নারায়ণের পূজাও করে থাকেন। সে হিসাবে অনেকে নারায়ণী-লক্ষ্মীও বলে থাকেন। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে ‘কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা’ শব্দবন্ধই বেশি পরিচিত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যোগাযোগ’ নাটকে নবীনের মুখে আমরা ‘কোজাগরি লক্ষ্মীপূর্ণিমা’ শব্দবন্ধের প্রয়োগ দেখতে পাই। এ ছাড়া কবি-সাহিত্যিকবর্গের রচনায় আমরা কোজাগরি শব্দটির প্রয়োগ লক্ষ করি।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো কোজাগরি। শব্দটির সচরাচর ব্যবহার ছাড়াও আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্মীপূজা উদ্যাপনের সঙ্গে এর প্রয়োগ লক্ষ করি। বলা হয়ে থাকে শ্রীশ্রী কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা, কিন্তু আমরা কি জানি কোজাগর শব্দের মানে কী?
কেন বলা হয় ‘কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা’? কোজাগর শব্দটির প্রয়োগ কি আমরা উল্লেখিত পূজার সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও দেখতে পাই? তবে চলুন আজ জানব ‘কোজাগরি’ শব্দের ইতিবৃত্ত।
কোজাগর সংস্কৃত শব্দ। এটি বিশেষ্য পদ। আভিধানিকভাবে কোজাগর শব্দের অর্থ হলো ‘আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথি, অর্থাৎ যে তিথিতে লক্ষ্মীপূজা করা হয়’। কিন্তু কোজাগরি বাংলা শব্দ। কোজাগর+বাংলা ই-প্রত্যয় সহযোগে গঠিত হয়েছে ‘কোজাগরি’ শব্দটি। এখানে কঃ (কে) + জাগর (জেগে আছো?)। আক্ষরিক অর্থে, কোজাগর বা কোজাগরি মানে, ‘কে জেগে আছো’? ‘কো জাগর্তি’ শব্দ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ‘কোজাগরি’ শব্দটি। আশ্বিন মাসের এই পূর্ণিমা তিথিকে লক্ষ্মী পূর্ণিমা বা আশ্বিনী পূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়। এ সময় তুলনামূলক অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করে। দাশরথি রায়ের পাঁচালিতে আছে: ‘ঘুমে লক্ষ্মী হন বিরূপা, জাগরণে লক্ষ্মীর কৃপা, নৈলে কেন জাগে কোজাগরে?’ দেবী লক্ষ্মী বলেন, এই পূর্ণিমায় যে জাগে, তাকে ধনসম্পদ প্রদান করব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রায় প্রতি ঘরেই দেবী লক্ষ্মীর পূজা হয়ে থাকে। লক্ষ্মী হলেন ধন-সম্পত্তির দেবী। ধন-সম্পদের আশায় ঘরে ঘরে কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা হয়ে থাকে। ঋগ্বেদে শ্রী ও ঐশ্বর্যের দেবী অর্থে লক্ষ্মীর নাম পাওয়া যায়। সমুদ্র মন্থনের সময় এক হাতে অমৃতের কলস, আরেক হাতে পদ্মহস্তে তিনি উত্থিত হন বলে বর্ণিত হয়েছে। পৌরাণিক যুগে লক্ষ্মী নানারূপে বর্ণিত হয়েছেন। লক্ষ্মীদেবীর রূপবৈচিত্র্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, তিনি কখনো দ্বিভুজা, কখনো চতুর্ভুজা। তবে তিনি সর্বত্রই পদ্ম সেনা ও পদ্মহস্তা। প্রভাত সূর্যের মতো তাঁর জ্যোতি। তিনি বিভিন্ন অলংকারে অলংকৃতা। পার্বতী ও সরস্বতীর সঙ্গে তিনি ত্রিদেবীর একজন।
জৈনধর্মের স্মারকসমূহেও দেবী লক্ষ্মীর ছবি দেখা যায়। কিছু জৈন মন্দিরে শ্রী লক্ষ্মীকে সম্পদ এবং আনন্দের দেবী হিসেবেও চিত্রিত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মনুমেন্টে পার্শ্বনাথ জৈন মন্দিরে তাকে বিষ্ণুর সঙ্গে প্রদর্শন করা হয়েছে, যেখানে তাকে বিষ্ণুর বুকে চাপা অবস্থায় দেখানো হয়েছে। লক্ষ্মীর বাহন প্যাঁচা। লক্ষ্মী ছয়টি বিশেষ গুণের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি বিষ্ণুর শক্তিরও উৎস।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি, সুরক্ষা ও রূপান্তর করতে বিষ্ণুকে সহায়তা করেন। আমরা সাধারণত অষ্টলক্ষ্মীর আটটি রূপ দেখতে পাই। যথা: আদি-লক্ষ্মী এই দেবীর প্রথম প্রকাশ; ধান্য-লক্ষ্মী শস্যসম্পদ; বীর-লক্ষ্মী বীরত্বের সম্পদ; গজ-লক্ষ্মী উর্বরতা, বৃষ্টি ও খাবার; সান্ত্বনা-লক্ষ্মী ধারাবাহিকতা, বংশধরের সম্পদ; বিদ্যা-লক্ষ্মী জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সম্পদ; বিজয়-লক্ষ্মী বিজয়ের সম্পদ এবং ঐশ্বর্য-লক্ষ্মী সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের সম্পদ। অষ্টলক্ষ্মীর রূপ তামিলনাড়ুর মন্দিরগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুয়ায়ী, আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে, লক্ষ্মী দেবী বিষ্ণুলোক থেকে নেমে আসেন মর্ত্যধামে এবং সারা রাত ধরে গৃহস্থের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে দেখতে চান কে তাঁর অপেক্ষায় রাত জেগে বসে আছে। ‘নিশীথে বরদা লক্ষ্মী কোজাগর্তিভাষিণী’, অর্থাৎ রাত্রিবেলা লক্ষ্মী দেবী জিজ্ঞেস করেন, ‘কে, জেগে আছো আমার জন্য?’ যিনি জেগে থাকেন, তাঁকে লক্ষ্মী দেবী সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও ধনসম্পদ প্রদান করেন। এরকম ধারণা থেকেই ‘কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা’ নামকরণ হয়। ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর স্বামী হলেন নারায়ণ। তাই একই তিথিতে অনেকে যৌথভাবে লক্ষ্মী-নারায়ণের পূজাও করে থাকেন। সে হিসাবে অনেকে নারায়ণী-লক্ষ্মীও বলে থাকেন। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে ‘কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা’ শব্দবন্ধই বেশি পরিচিত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যোগাযোগ’ নাটকে নবীনের মুখে আমরা ‘কোজাগরি লক্ষ্মীপূর্ণিমা’ শব্দবন্ধের প্রয়োগ দেখতে পাই। এ ছাড়া কবি-সাহিত্যিকবর্গের রচনায় আমরা কোজাগরি শব্দটির প্রয়োগ লক্ষ করি।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে