মহিউদ্দিন খান মোহন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি ভীষণ শঙ্কার কথা বলেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ২৭ নভেম্বর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচনে কিন্তু বাহির থেকেও থাবা, হাত এসে পড়েছে। তারা থাবা বিস্তার করে রেখেছে। আমাকে যেভাবে ইউনাইটেড স্টেট (যুক্তরাষ্ট্র) কমান্ড করতে পারে, আমি ওয়াশিংটনে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিতে পারছি না। আমাদের অর্থনীতি, ভবিষ্যৎ অনেক কিছুই রক্ষা করতে হলে নির্বাচনটাকে ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল (অবাধ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য) করতে হবে।’ (আজকের পত্রিকা, ২৮ নভেম্বর ২০২৩)
সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে নিরেট সত্যই উচ্চারণ করেছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়ে উঠেছে, তাতে দেশবাসীও শঙ্কিত। কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে দেশের বিশিষ্টজনেরা নানা মাধ্যমে তাঁদের বিজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করে চলেছেন। কিন্তু সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপার হলো, তাঁদের সেই সব অভিমতকে রাজনৈতিক দল তথা সেগুলোর নেতৃত্ব খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। যে কথাটি নিজেদের পক্ষে যাচ্ছে, সেটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন, আর যেটা তাঁদের বিপক্ষে যাচ্ছে, সেটার প্রতি নিন্দাবাদে সোচ্চার হয়ে উঠছেন। নির্বাচন নিয়ে এই যে বিভক্তি, তা নিরসনের উপায় নিয়ে সবাই চিন্তিত।
দুই পক্ষের এই বিবাদের মাঝখানে বিদেশি শক্তির অনুপ্রবেশ সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি রাষ্ট্র সরাসরি আমাদের রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ে নাক গলাচ্ছে; যা ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় হস্তক্ষেপের পর্যায়ে চলে গেছে। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সে কথাই বলেছেন। এই শক্তিগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এবং আপত্তি উঠেছে অনেক অগেই। আমাদের নির্বাচন ইস্যুতে দেশটির তৎপরতা আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও রাষ্ট্রাচারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। তাদের কথাবার্তা এবং কথিত ‘পরামর্শ’ শুনলে মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাংলাদেশ বোধকরি ওই ‘মোড়ল’ রাষ্ট্রটির উপনিবেশ। তাই তারা যে প্রেসক্রিপশন দেবে, মুমূর্ষু রোগীর মতো আমাদের তা চোখ বুজে গলাধঃকরণ করতে হবে; বিশেষ করে ওই রাষ্ট্রটির বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত যেভাবে দৌড়ঝাঁপ ও দেনদরবারে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাতে কারও কারও মনে সংশয় জেগেছিল, তিনি কি একটি ভিন্ন দেশের কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত, নাকি আমাদের নির্বাচন তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত?
তাঁর তৎপরতাকে দেশের সচেতন নাগরিকেরা রাষ্ট্রাচারের ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী বলে আখ্যায়িত করেছেন। অতিসম্প্রতি বিশ্বের আরেক প্রভাবশালী দেশ রাশিয়ার পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগের জবাবে ওই দেশটির ঢাকার দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়া বিষয়টি ভুলভাবে উত্থাপন করেছে। তবে তাদের বক্তব্যে নৈতিক জোর একেবারেই নেই। কেননা, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের আগে ১২ অক্টোবর দুপুরে চুপিসারে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আমেরিকার দূতাবাসে যাওয়া এবং সেখানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে একান্তে বৈঠক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। অনেকের মতে, ওই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে একটি পক্ষের প্রতি মার্কিন সরকারের সমর্থনের প্রমাণ বহন করে। যদিও মার্কিন সরকার বারবার বলছে, তারা বাংলাদেশের কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করে না, তবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তাদের এই চাওয়া নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে সে জন্য তাদের তৎপরতা হতে হবে প্রকাশ্য এবং তা অবশ্যই কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমানার মধ্যে। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা যে অনেক আগেই সে সীমানা লঙ্ঘন করেছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সিইসি হাবিবুল আউয়ালের ‘যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে তাঁকে কমান্ড করতে পারে, তিনি ওয়াশিংটনে গিয়ে সেভাবে হুমকি-ধমকি দিতে পারেন না’—উক্তিটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেননা, মার্কিন রাষ্ট্রদূত একাধিকবার সিইসির সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে নির্বাচন বিষয়ে তাঁরা ‘মতবিনিময়’ করেছেন বলে উভয় পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছিল। তাহলে কি ওই সব ‘মতবিনিময়ের’ আড়ালে রাষ্ট্রদূত সিইসিকে কোনো ‘কমান্ড’ করেছিলেন? যেহেতু সিইসি ওয়াশিংটনে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি-ধমকি দিতে না পারার অক্ষমতার কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, আমেরিকা তাঁকে কোনো হুমকি-ধমকি হয়তো দিয়েছে, যদিও সিইসি সেটা পরিষ্কার করেননি। তবে অনুসন্ধিৎসু মানুষের মনে বিষয়টি প্রশ্নের কাঁটা হয়ে প্রতিনিয়ত খোঁচা দিচ্ছে। লক্ষণীয় হলো, সিইসির বক্তব্যের পর এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত (৩০ নভেম্বর) তিন দিন অতিবাহিত হলেও ‘কমান্ড’ এবং ‘হুমকি-ধমকি’ বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তাদের এ নীরবতা কিসের লক্ষণ, তা নিয়েও জনমনে জল্পনা রয়েছে।
সিইসি তাঁর বক্তব্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে বাঁচতে হলে, আমার জনগণকে বাঁচাতে হলে, আমার গার্মেন্টস বাঁচাতে হলে নির্বাচনটা ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হতে হবে।’ আমার মনে হয় সিইসির ‘আমাকে’ এবং ‘আমার’ শব্দ দুটি ব্যবহার করা সমীচীন হয়নি। কেননা, এ ধরনের শব্দ সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানেরা ব্যবহার করতে পারেন, যাঁরা পুরো জাতির প্রতিনিধিত্ব করেন। সিইসি সে অবস্থানে নেই। এর পরিবর্তে তিনি যদি ‘আমাদের’ শব্দটি ব্যবহার করতেন, তাহলে তা যৌক্তিক ও শোভনীয় হতো। তবে তিনি নির্বাচনের সঙ্গে যেসব বিষয়ের বাঁচা-মরার সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন, তা অবশ্যই গভীর চিন্তার বিষয়। একটি সাধারণ নির্বাচন কেন দেশ, জনগণ এবং একটি রপ্তানিমুখী শিল্পের বাঁচা-মরার নিয়ন্তা হবে—এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। তাহলে কি কথা না শুনলে বা নির্বাচন পছন্দ না হলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দিতে পারে বলে যে কথা বাজারে প্রচারিত আছে, সেটা সত্যি? সিইসিও কি সে আশঙ্কা করছেন? যে জন্য নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের তাগিদ দিলেন?
আমেরিকার স্যাংশন-হুমকি বাংলাদেশের অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে, এটা ঠিক। তাঁরা শঙ্কিত এ জন্য যে এ ধরনের স্যাংশন দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটা মনে রাখতে হবে কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা সংস্থার ওপর স্যাংশন আর সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপর স্যাংশন এক কথা নয়। একটি দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য একতরফা কোনো ব্যাপার নয়, একাধিক দেশ তাতে জড়িত থাকে। একটি দেশ যদি অপর একটি দেশের ওপর স্যাংশন দেয়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্যাংশনদাতা দেশের ওপরও তার প্রতিক্রিয়া পড়ে। এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমেরিকা যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তাদের বৈদেশিক বাণিজ্যও সমান প্রতিকূলতার মুখোমুখি হবে; বিশেষ করে সে দেশের ব্যবসায়ীরা। কারণ তাঁরা আমাদের দেশ থেকে যে মূল্যে পণ্য আমদানি করেন, অন্য কোনো দেশ থেকে সেই দামে পণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শ্রম-মজুরি কম বিধায় উৎপাদিত দ্রব্যের রপ্তানিমূল্য সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আমেরিকার ব্যবসায়ীরাও তাঁদের স্বার্থ বিবেচনায় স্যাংশনচেষ্টার বিরোধিতা করবেন। সুতরাং স্যাংশন হুমকি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে বলে দেখি না।
এটা ঠিক, আমাদের আসন্ন নির্বাচনে বহিঃশক্তির থাবা বিস্তারের বিষয়টি অমূলক নয়। তবে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের শক্তি তখনই থাবা বিস্তারের সুযোগ-সাহস পায়, যখন সে দেশের কোনো পক্ষ তাদের ডেকে আনে অথবা উৎসাহ দেয়। বর্তমানে আমরা তেমনটাই দেখছি। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যতক্ষণ পর্যন্ত ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা’র নেতিবাচক প্রবণতা থেকে বেরিয়ে না আসবেন, ততক্ষণ এ ধরনের থাবা বিস্তারের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি ভীষণ শঙ্কার কথা বলেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ২৭ নভেম্বর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচনে কিন্তু বাহির থেকেও থাবা, হাত এসে পড়েছে। তারা থাবা বিস্তার করে রেখেছে। আমাকে যেভাবে ইউনাইটেড স্টেট (যুক্তরাষ্ট্র) কমান্ড করতে পারে, আমি ওয়াশিংটনে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিতে পারছি না। আমাদের অর্থনীতি, ভবিষ্যৎ অনেক কিছুই রক্ষা করতে হলে নির্বাচনটাকে ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল (অবাধ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য) করতে হবে।’ (আজকের পত্রিকা, ২৮ নভেম্বর ২০২৩)
সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে নিরেট সত্যই উচ্চারণ করেছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়ে উঠেছে, তাতে দেশবাসীও শঙ্কিত। কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে দেশের বিশিষ্টজনেরা নানা মাধ্যমে তাঁদের বিজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করে চলেছেন। কিন্তু সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপার হলো, তাঁদের সেই সব অভিমতকে রাজনৈতিক দল তথা সেগুলোর নেতৃত্ব খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। যে কথাটি নিজেদের পক্ষে যাচ্ছে, সেটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন, আর যেটা তাঁদের বিপক্ষে যাচ্ছে, সেটার প্রতি নিন্দাবাদে সোচ্চার হয়ে উঠছেন। নির্বাচন নিয়ে এই যে বিভক্তি, তা নিরসনের উপায় নিয়ে সবাই চিন্তিত।
দুই পক্ষের এই বিবাদের মাঝখানে বিদেশি শক্তির অনুপ্রবেশ সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি রাষ্ট্র সরাসরি আমাদের রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ে নাক গলাচ্ছে; যা ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় হস্তক্ষেপের পর্যায়ে চলে গেছে। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সে কথাই বলেছেন। এই শক্তিগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এবং আপত্তি উঠেছে অনেক অগেই। আমাদের নির্বাচন ইস্যুতে দেশটির তৎপরতা আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও রাষ্ট্রাচারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। তাদের কথাবার্তা এবং কথিত ‘পরামর্শ’ শুনলে মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাংলাদেশ বোধকরি ওই ‘মোড়ল’ রাষ্ট্রটির উপনিবেশ। তাই তারা যে প্রেসক্রিপশন দেবে, মুমূর্ষু রোগীর মতো আমাদের তা চোখ বুজে গলাধঃকরণ করতে হবে; বিশেষ করে ওই রাষ্ট্রটির বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত যেভাবে দৌড়ঝাঁপ ও দেনদরবারে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাতে কারও কারও মনে সংশয় জেগেছিল, তিনি কি একটি ভিন্ন দেশের কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত, নাকি আমাদের নির্বাচন তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত?
তাঁর তৎপরতাকে দেশের সচেতন নাগরিকেরা রাষ্ট্রাচারের ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী বলে আখ্যায়িত করেছেন। অতিসম্প্রতি বিশ্বের আরেক প্রভাবশালী দেশ রাশিয়ার পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগের জবাবে ওই দেশটির ঢাকার দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়া বিষয়টি ভুলভাবে উত্থাপন করেছে। তবে তাদের বক্তব্যে নৈতিক জোর একেবারেই নেই। কেননা, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের আগে ১২ অক্টোবর দুপুরে চুপিসারে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আমেরিকার দূতাবাসে যাওয়া এবং সেখানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে একান্তে বৈঠক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। অনেকের মতে, ওই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে একটি পক্ষের প্রতি মার্কিন সরকারের সমর্থনের প্রমাণ বহন করে। যদিও মার্কিন সরকার বারবার বলছে, তারা বাংলাদেশের কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করে না, তবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তাদের এই চাওয়া নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে সে জন্য তাদের তৎপরতা হতে হবে প্রকাশ্য এবং তা অবশ্যই কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমানার মধ্যে। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা যে অনেক আগেই সে সীমানা লঙ্ঘন করেছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সিইসি হাবিবুল আউয়ালের ‘যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে তাঁকে কমান্ড করতে পারে, তিনি ওয়াশিংটনে গিয়ে সেভাবে হুমকি-ধমকি দিতে পারেন না’—উক্তিটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেননা, মার্কিন রাষ্ট্রদূত একাধিকবার সিইসির সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে নির্বাচন বিষয়ে তাঁরা ‘মতবিনিময়’ করেছেন বলে উভয় পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছিল। তাহলে কি ওই সব ‘মতবিনিময়ের’ আড়ালে রাষ্ট্রদূত সিইসিকে কোনো ‘কমান্ড’ করেছিলেন? যেহেতু সিইসি ওয়াশিংটনে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি-ধমকি দিতে না পারার অক্ষমতার কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, আমেরিকা তাঁকে কোনো হুমকি-ধমকি হয়তো দিয়েছে, যদিও সিইসি সেটা পরিষ্কার করেননি। তবে অনুসন্ধিৎসু মানুষের মনে বিষয়টি প্রশ্নের কাঁটা হয়ে প্রতিনিয়ত খোঁচা দিচ্ছে। লক্ষণীয় হলো, সিইসির বক্তব্যের পর এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত (৩০ নভেম্বর) তিন দিন অতিবাহিত হলেও ‘কমান্ড’ এবং ‘হুমকি-ধমকি’ বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তাদের এ নীরবতা কিসের লক্ষণ, তা নিয়েও জনমনে জল্পনা রয়েছে।
সিইসি তাঁর বক্তব্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে বাঁচতে হলে, আমার জনগণকে বাঁচাতে হলে, আমার গার্মেন্টস বাঁচাতে হলে নির্বাচনটা ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হতে হবে।’ আমার মনে হয় সিইসির ‘আমাকে’ এবং ‘আমার’ শব্দ দুটি ব্যবহার করা সমীচীন হয়নি। কেননা, এ ধরনের শব্দ সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানেরা ব্যবহার করতে পারেন, যাঁরা পুরো জাতির প্রতিনিধিত্ব করেন। সিইসি সে অবস্থানে নেই। এর পরিবর্তে তিনি যদি ‘আমাদের’ শব্দটি ব্যবহার করতেন, তাহলে তা যৌক্তিক ও শোভনীয় হতো। তবে তিনি নির্বাচনের সঙ্গে যেসব বিষয়ের বাঁচা-মরার সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন, তা অবশ্যই গভীর চিন্তার বিষয়। একটি সাধারণ নির্বাচন কেন দেশ, জনগণ এবং একটি রপ্তানিমুখী শিল্পের বাঁচা-মরার নিয়ন্তা হবে—এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। তাহলে কি কথা না শুনলে বা নির্বাচন পছন্দ না হলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দিতে পারে বলে যে কথা বাজারে প্রচারিত আছে, সেটা সত্যি? সিইসিও কি সে আশঙ্কা করছেন? যে জন্য নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের তাগিদ দিলেন?
আমেরিকার স্যাংশন-হুমকি বাংলাদেশের অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে, এটা ঠিক। তাঁরা শঙ্কিত এ জন্য যে এ ধরনের স্যাংশন দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটা মনে রাখতে হবে কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা সংস্থার ওপর স্যাংশন আর সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপর স্যাংশন এক কথা নয়। একটি দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য একতরফা কোনো ব্যাপার নয়, একাধিক দেশ তাতে জড়িত থাকে। একটি দেশ যদি অপর একটি দেশের ওপর স্যাংশন দেয়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্যাংশনদাতা দেশের ওপরও তার প্রতিক্রিয়া পড়ে। এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমেরিকা যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তাদের বৈদেশিক বাণিজ্যও সমান প্রতিকূলতার মুখোমুখি হবে; বিশেষ করে সে দেশের ব্যবসায়ীরা। কারণ তাঁরা আমাদের দেশ থেকে যে মূল্যে পণ্য আমদানি করেন, অন্য কোনো দেশ থেকে সেই দামে পণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শ্রম-মজুরি কম বিধায় উৎপাদিত দ্রব্যের রপ্তানিমূল্য সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আমেরিকার ব্যবসায়ীরাও তাঁদের স্বার্থ বিবেচনায় স্যাংশনচেষ্টার বিরোধিতা করবেন। সুতরাং স্যাংশন হুমকি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে বলে দেখি না।
এটা ঠিক, আমাদের আসন্ন নির্বাচনে বহিঃশক্তির থাবা বিস্তারের বিষয়টি অমূলক নয়। তবে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের শক্তি তখনই থাবা বিস্তারের সুযোগ-সাহস পায়, যখন সে দেশের কোনো পক্ষ তাদের ডেকে আনে অথবা উৎসাহ দেয়। বর্তমানে আমরা তেমনটাই দেখছি। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যতক্ষণ পর্যন্ত ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা’র নেতিবাচক প্রবণতা থেকে বেরিয়ে না আসবেন, ততক্ষণ এ ধরনের থাবা বিস্তারের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে