রাশেদ রাব্বি ও আয়নাল হোসেন, ঢাকা
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে সারা দেশ কাঁপছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এই সংকটময় মুহূর্তে জমে উঠেছে ডেঙ্গু ‘বাণিজ্য’। সরকারি হাসপাতালে যেখানে নিজস্ব দাতার কাছ থেকে এক ব্যাগ প্লাটিলেট নিতে খরচ হয় ২ হাজার টাকার মতো, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় নেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
এদিকে সুযোগ বুঝে বেড়েছে স্যালাইন, স্যালাইন দেওয়ার অনুষঙ্গ ক্যানুলা ও মাইক্রোপ্রোর (ক্যানুলা স্থাপনে ব্যবহৃত বিশেষ টেপ) দামও।রক্তের ব্যাগের দামও বেড়েছে। এতে চিকিৎসাব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বেসরকারিতে প্লাটিলেট ‘বাণিজ্য’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেঙ্গু চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো দুভাবে প্লাটিলেট ‘বাণিজ্য’ করছে।প্রথমত, ডেঙ্গু হলেই প্লাটিলেট লাগবে–এমন একটি ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে জন্মেছে। এই ধারণাকে পুঁজি করে বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেসব রোগীর প্লাটিলেট প্রয়োজন না, তাদেরও প্লাটিলেট দিচ্ছে। আবার প্লাটিলেট দিতে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় ১০-১৫ গুণ টাকা নিচ্ছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে প্লাটিলেটের অযাচিত ব্যবহার হচ্ছে। অনেকে এটা ভয়ে ব্যবহার করে থাকে, যাতে রোগীর ঝুঁকি তৈরি না হয়। তিনি বলেন, রোগীর ল্যাবরেটরি-নির্ভর চিকিৎসা না করে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিলে প্লাটিলেট ও প্লাজমা বা রক্তের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব। তাতে ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যয় অনেক কমে আসবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাটিলেট দুভাবে সংগ্রহ করা যায়। সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট ও র্যান্ডম ডোনার প্লাটিলেট। সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট প্রক্রিয়ায় একজন দাতার শরীর থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়। সরকারি হাসপাতালে এই প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট নিতে একজন রোগীর ব্যয় হয় মাত্র ২ হাজার টাকা। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট ব্যবস্থাপনায় ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ফি নিচ্ছে।
র্যান্ডম ডোনার প্লাটিলেট প্রক্রিয়ায় চারজন দাতার রক্ত নিয়ে এক ব্যাগ প্লাটিলেট তৈরি করা হয়। সরকারি হাসপাতালে এই প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট পেতে শুধু স্ক্রিনিং ও ক্রস ম্যাচিং ফি দিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে রক্তের ব্যাগ না থাকলে সেই দামটি ফির সঙ্গে যুক্ত হয়। কিন্তু বেসরকারিতে চার দাতার রক্ত পরিসঞ্চালনেই রোগীর ব্যয় হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয় ডোনার স্ক্রিনিং ও ক্রস ম্যাচিং ফি।
আর প্রতি ব্যাগ রক্ত থেকে প্লাটিলেট বের করতে দিতে হয় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ চার ব্যাগ রক্ত থেকে এক ব্যাগ প্লাটিলেট পেতে রোগীর ব্যয় হয় ১৪ থেকে ২০ হাজার টাকা। আনুষঙ্গিক ব্যয় হিসেবে আরও দিতে হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। ডেঙ্গু রোগীদের প্লাজমার ক্ষেত্রেও একই ব্যয় হয়ে থাকে। তবে প্লাজমা খুব কমসংখ্যক রোগীর লাগে। যাদের প্লাজমা ক্ষরণ হয়, তাদের চিকিৎসায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট ও রক্তদানকে গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
সরকারের নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই সুবিধা আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, জটিল ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় এক থেকে চার ব্যাগ পর্যন্ত প্লাটিলেট লাগতে পারে। যেসব রোগীর প্লাজমা লিকেজ দেখা দেয়, তাদের ক্ষেত্রে রক্ত পরিসঞ্চালন এবং ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রয়োজন ছাড়াও রোগীদের প্লাটিলেট ও প্লাজমা চিকিৎসা দিয়ে থাকে। কারণ, তাদের জন্য লাভজনক ব্যবসা। যে রোগীকে পাঁচ দিন পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া যেত, প্লাজমা বা প্লাটিলেটের কথা বলে তার হাসপাতালে থাকার সময় বাড়ানো হয়। আবার অনেক রোগীকে প্রয়োজন না হলেও আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) বা এইচডিইউয়ে (উচ্চ নির্ভরশীল কেন্দ্র) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এতে রোগীর চিকিৎসার ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যয় বাড়াতে প্রথম থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনে অ্যালবুমিন প্রয়োগ করে। এতে রোগীর চিকিৎসার ব্যয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেড়ে যায়। একটি অ্যালবুমিনের দাম ৭ হাজার ৬০০ টাকা। সম্প্রতি এর চাহিদা বাড়ায় ভারত থেকে নিম্নমানের অ্যালবুমিন আনা হচ্ছে, যা ব্যবহারে রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমনকি মৃত্যুও ঘটছে। তবে এ নিয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষ নীরব। এতে রোগীদের দুর্ভোগ ও ঝুঁকি বাড়ছে।
বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার ব্যয় প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যয় ও পরীক্ষার ফি নির্ধারণে আমরা বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা সময় চেয়েছে। চিকিৎসার ব্যয় নির্ধারণে কিছু জটিলতা আছে। এটা করতে হলে হাসপাতালগুলোর গ্রেড নির্ধারণ করতে হবে। তবে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা এনএস-১ ও আইজিজি-আইজিএম ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিবিসি পরীক্ষার ফি ৪০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ফি নির্ধারণের বিষয়টি শিগগিরই সম্পন্ন করার চেষ্টা চলেছে।
বেড়েছে স্যালাইন-ক্যানুলার দাম
ডেঙ্গু চিকিৎসার অন্যতম অনুষঙ্গ স্যালাইন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবু আজহার বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষুধা কমে যায়। এতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। রোগীর রক্তের চাপ কমে যায়। একপর্যায়ে রোগী শকে চলে যায়। হেমারেজিকের মতো জটিলতা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে রোগীর জীবন বাঁচাতে শরীরে স্যালাইন প্রয়োগ করা হয়।
তবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই স্যালাইন উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্যালাইনের দাম বাড়িয়েছে, সৃষ্ট হয়েছে সরবরাহের সংকট। আগে যে স্যালাইন বিক্রি হতো ৯০ টাকায়, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। আবার অনেক জায়গায় স্যালাইন পাওয়াও যাচ্ছে না।
রাজধানীর বাবুবাজারের মেসার্স আলিফ লাম মিম ফার্মার বিক্রয় প্রতিনিধি পলাশ চন্দ্র দাস ও কেরানীগঞ্জের চড়াইলের মেসার্স আসলাম ফার্মেসীর প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম বলেন, আগে প্রতিটি ১ হাজার মিলিলিটারের নরমাল স্যালাইন ৯০ টাকায় বিক্রি করতেন তাঁরা। এখন তার দাম ১৫০-১৬০ টাকা। সরবরাহের সংকটে কোথাও কোথাও ৩০০-৩৫০ টাকায়ও স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, রোগীর শরীরে স্যালাইন ঢোকানোর জন্য ক্যানুলা ব্যবহার করা হয়। ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ায় উৎপাদক ও সরবরাহকারীরা ক্যানুলার দাম বাড়িয়েছে। আগে ক্যানুলার যে সেটের দাম ছিল ৪০ টাকা, এখন সেটি ১৫০ টাকা। এর সঙ্গে দাম বেড়েছে মাইক্রোপ্রোরও (ক্যানুলা স্থাপনে ব্যবহৃত বিশেষ টেপ)। আগে এক বাক্স মাইক্রোপ্রোর দাম ছিল ৬০০ টাকা।এখন তা ৮০০ টাকা।
স্যালাইনের সংকটের বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূরুল আলম বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা রয়েছে। কেউ চাইলে কৃত্রিম সংকট করতে পারবে না। এরপরও যদি কেউ করে থাকে, তাহলে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে সারা দেশ কাঁপছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এই সংকটময় মুহূর্তে জমে উঠেছে ডেঙ্গু ‘বাণিজ্য’। সরকারি হাসপাতালে যেখানে নিজস্ব দাতার কাছ থেকে এক ব্যাগ প্লাটিলেট নিতে খরচ হয় ২ হাজার টাকার মতো, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় নেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
এদিকে সুযোগ বুঝে বেড়েছে স্যালাইন, স্যালাইন দেওয়ার অনুষঙ্গ ক্যানুলা ও মাইক্রোপ্রোর (ক্যানুলা স্থাপনে ব্যবহৃত বিশেষ টেপ) দামও।রক্তের ব্যাগের দামও বেড়েছে। এতে চিকিৎসাব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বেসরকারিতে প্লাটিলেট ‘বাণিজ্য’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেঙ্গু চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো দুভাবে প্লাটিলেট ‘বাণিজ্য’ করছে।প্রথমত, ডেঙ্গু হলেই প্লাটিলেট লাগবে–এমন একটি ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে জন্মেছে। এই ধারণাকে পুঁজি করে বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেসব রোগীর প্লাটিলেট প্রয়োজন না, তাদেরও প্লাটিলেট দিচ্ছে। আবার প্লাটিলেট দিতে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় ১০-১৫ গুণ টাকা নিচ্ছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে প্লাটিলেটের অযাচিত ব্যবহার হচ্ছে। অনেকে এটা ভয়ে ব্যবহার করে থাকে, যাতে রোগীর ঝুঁকি তৈরি না হয়। তিনি বলেন, রোগীর ল্যাবরেটরি-নির্ভর চিকিৎসা না করে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিলে প্লাটিলেট ও প্লাজমা বা রক্তের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব। তাতে ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যয় অনেক কমে আসবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাটিলেট দুভাবে সংগ্রহ করা যায়। সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট ও র্যান্ডম ডোনার প্লাটিলেট। সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট প্রক্রিয়ায় একজন দাতার শরীর থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়। সরকারি হাসপাতালে এই প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট নিতে একজন রোগীর ব্যয় হয় মাত্র ২ হাজার টাকা। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট ব্যবস্থাপনায় ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ফি নিচ্ছে।
র্যান্ডম ডোনার প্লাটিলেট প্রক্রিয়ায় চারজন দাতার রক্ত নিয়ে এক ব্যাগ প্লাটিলেট তৈরি করা হয়। সরকারি হাসপাতালে এই প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট পেতে শুধু স্ক্রিনিং ও ক্রস ম্যাচিং ফি দিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে রক্তের ব্যাগ না থাকলে সেই দামটি ফির সঙ্গে যুক্ত হয়। কিন্তু বেসরকারিতে চার দাতার রক্ত পরিসঞ্চালনেই রোগীর ব্যয় হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয় ডোনার স্ক্রিনিং ও ক্রস ম্যাচিং ফি।
আর প্রতি ব্যাগ রক্ত থেকে প্লাটিলেট বের করতে দিতে হয় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ চার ব্যাগ রক্ত থেকে এক ব্যাগ প্লাটিলেট পেতে রোগীর ব্যয় হয় ১৪ থেকে ২০ হাজার টাকা। আনুষঙ্গিক ব্যয় হিসেবে আরও দিতে হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। ডেঙ্গু রোগীদের প্লাজমার ক্ষেত্রেও একই ব্যয় হয়ে থাকে। তবে প্লাজমা খুব কমসংখ্যক রোগীর লাগে। যাদের প্লাজমা ক্ষরণ হয়, তাদের চিকিৎসায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট ও রক্তদানকে গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
সরকারের নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই সুবিধা আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, জটিল ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় এক থেকে চার ব্যাগ পর্যন্ত প্লাটিলেট লাগতে পারে। যেসব রোগীর প্লাজমা লিকেজ দেখা দেয়, তাদের ক্ষেত্রে রক্ত পরিসঞ্চালন এবং ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রয়োজন ছাড়াও রোগীদের প্লাটিলেট ও প্লাজমা চিকিৎসা দিয়ে থাকে। কারণ, তাদের জন্য লাভজনক ব্যবসা। যে রোগীকে পাঁচ দিন পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া যেত, প্লাজমা বা প্লাটিলেটের কথা বলে তার হাসপাতালে থাকার সময় বাড়ানো হয়। আবার অনেক রোগীকে প্রয়োজন না হলেও আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) বা এইচডিইউয়ে (উচ্চ নির্ভরশীল কেন্দ্র) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এতে রোগীর চিকিৎসার ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যয় বাড়াতে প্রথম থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনে অ্যালবুমিন প্রয়োগ করে। এতে রোগীর চিকিৎসার ব্যয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেড়ে যায়। একটি অ্যালবুমিনের দাম ৭ হাজার ৬০০ টাকা। সম্প্রতি এর চাহিদা বাড়ায় ভারত থেকে নিম্নমানের অ্যালবুমিন আনা হচ্ছে, যা ব্যবহারে রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমনকি মৃত্যুও ঘটছে। তবে এ নিয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষ নীরব। এতে রোগীদের দুর্ভোগ ও ঝুঁকি বাড়ছে।
বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার ব্যয় প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যয় ও পরীক্ষার ফি নির্ধারণে আমরা বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা সময় চেয়েছে। চিকিৎসার ব্যয় নির্ধারণে কিছু জটিলতা আছে। এটা করতে হলে হাসপাতালগুলোর গ্রেড নির্ধারণ করতে হবে। তবে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা এনএস-১ ও আইজিজি-আইজিএম ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিবিসি পরীক্ষার ফি ৪০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ফি নির্ধারণের বিষয়টি শিগগিরই সম্পন্ন করার চেষ্টা চলেছে।
বেড়েছে স্যালাইন-ক্যানুলার দাম
ডেঙ্গু চিকিৎসার অন্যতম অনুষঙ্গ স্যালাইন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবু আজহার বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষুধা কমে যায়। এতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। রোগীর রক্তের চাপ কমে যায়। একপর্যায়ে রোগী শকে চলে যায়। হেমারেজিকের মতো জটিলতা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে রোগীর জীবন বাঁচাতে শরীরে স্যালাইন প্রয়োগ করা হয়।
তবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই স্যালাইন উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্যালাইনের দাম বাড়িয়েছে, সৃষ্ট হয়েছে সরবরাহের সংকট। আগে যে স্যালাইন বিক্রি হতো ৯০ টাকায়, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। আবার অনেক জায়গায় স্যালাইন পাওয়াও যাচ্ছে না।
রাজধানীর বাবুবাজারের মেসার্স আলিফ লাম মিম ফার্মার বিক্রয় প্রতিনিধি পলাশ চন্দ্র দাস ও কেরানীগঞ্জের চড়াইলের মেসার্স আসলাম ফার্মেসীর প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম বলেন, আগে প্রতিটি ১ হাজার মিলিলিটারের নরমাল স্যালাইন ৯০ টাকায় বিক্রি করতেন তাঁরা। এখন তার দাম ১৫০-১৬০ টাকা। সরবরাহের সংকটে কোথাও কোথাও ৩০০-৩৫০ টাকায়ও স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, রোগীর শরীরে স্যালাইন ঢোকানোর জন্য ক্যানুলা ব্যবহার করা হয়। ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ায় উৎপাদক ও সরবরাহকারীরা ক্যানুলার দাম বাড়িয়েছে। আগে ক্যানুলার যে সেটের দাম ছিল ৪০ টাকা, এখন সেটি ১৫০ টাকা। এর সঙ্গে দাম বেড়েছে মাইক্রোপ্রোরও (ক্যানুলা স্থাপনে ব্যবহৃত বিশেষ টেপ)। আগে এক বাক্স মাইক্রোপ্রোর দাম ছিল ৬০০ টাকা।এখন তা ৮০০ টাকা।
স্যালাইনের সংকটের বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূরুল আলম বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা রয়েছে। কেউ চাইলে কৃত্রিম সংকট করতে পারবে না। এরপরও যদি কেউ করে থাকে, তাহলে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে