মহিউদ্দিন খান মোহন
আজকের পত্রিকায় ১৭ অক্টোবর ‘ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে চায় সরকার’ শীর্ষ খবরটি সচেতন ব্যক্তিদের নজর যেমন কেড়েছে, তেমনি কিছু প্রশ্নও জন্ম দিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালনা কমিটিতে জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ দিতে চায় সরকার। আর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য করার দাবি উঠেছিল। সেই দাবি পূরণ করতেই সরকার এ অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞজনেরা।
বিদ্যমান আইনে ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে সম্পৃক্ত করা সম্ভব নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইউজিসি কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষাবিদেরা। এ ব্যাপারে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান এবং শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক ছাড়া কাউকে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে যুক্ত করার উদ্যোগ ভালো ফল বয়ে আনবে না।
একই রকম অভিমত ব্যক্ত করেছেন সরকার-সমর্থক চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মেডিকেল কলেজগুলোর ধ্বংস ডেকে আনবে। চিকিৎসাব্যবস্থার জন্য এটি খুবই খারাপ পদক্ষেপ।’ দেশের বিশিষ্টজন, শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যখন ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করছেন, তখন সরকার কেন এমন একটি পদক্ষেপ নিয়েছে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
এখানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের বর্তমান গঠনপ্রণালির দিকে একটু দৃষ্টিপাত করতে পারি। বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সিন্ডিকেট সদস্যসংখ্যা নির্দিষ্ট করা আছে ১৮ জন। তাঁদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, দুজন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা একজন (যুগ্ম সচিব বা তদূর্ধ্ব, সরকার কর্তৃক মনোনীত), চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত তিনজন, সিনেট কর্তৃক মনোনীত একজন, একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত দুজন (কলেজ অধ্যক্ষ)। এ ছাড়া সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত দুজন (একজন সিনেট সদস্য, একজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট) এবং শিক্ষক কর্তৃক নির্বাচিত ছয়জন। এই অর্গানোগ্রামের কোথাও কি ডিসিদের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ আছে? ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন সেই আইনের অনাবশ্যক পরিবর্তন আনতে যাবে সরকার? বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ডিসিদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে কী এমন ফায়দা হবে? কিংবা তাঁরা সিন্ডিকেটে না থাকায় কী এমন সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে, যা তাঁরা উদ্ধার করবেন?
আজকের পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সম্মেলনে ডিসিরা যুক্তি দেখান, বিভিন্ন জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা নিরসনে তাঁরা কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেন না। তাই তাঁদের এ আবদার। মূল কারণটা এখানেই। জেলার সব কাজে সবখানে তাঁরা কর্তৃত্ব করেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কেন বাকি থাকবে? কর্তৃত্ববাদিতা আমাদের সরকারি আমলাদের এমনভাবে আচ্ছন্ন করেছে যে তাঁরা সবখানে মাতব্বরি ফলানোর মওকা খোঁজার চেষ্টা করেন। তাঁর জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, অথচ তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকাণ্ডে শরিক হতে পারেন না, এটা বড়ই মর্মযাতনার বিষয়। অথচ আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ডিসিরা প্রভূত ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের রয়েছে প্রভূত প্রভুত্ব। ১৭ অক্টোবর অপর একটি দৈনিকের ‘অগাধ ক্ষমতায় দাপট ডিসি-ইউএনওদের’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন ডিসি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে রাজস্ব, বিনোদন, উন্নয়ন, জেলখানা, নির্বাচনসহ ৬২টি ক্যাটাগরিতে তিন শতাধিক বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। একইভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও প্রায় একই ধরনের কর্তৃত্বের অধিকারী। এ ছাড়া স্থানীয় বেসরকারি অনেক কলেজে ডিসি এবং স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে ইউএনওরা সভাপতির পদ অলংকৃত করে থাকেন। তারপরও তাঁদের যেন তুষ্টি নেই। এখন ভাগ বসাতে উদ্যত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিন্ডিকেটে।
ডিসি-ইউএনওদের অতিমাত্রায় ক্ষমতালিপ্সা সচেতন ব্যক্তিদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ কথা সর্বজনবিদিত যে ডিসি-ইউএনওরা কার্যত এখন দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তাঁরা এতটাই উদ্ধত যে মন্ত্রী-এমপিদেরও থোড়াই কেয়ার করেন। অতিসম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে ডিসি-এসপিদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। পদমর্যাদায় অনেক ধাপ নিচের হওয়া সত্ত্বেও সেই বৈঠকে ডিসি-এসপিরা যে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছেন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে, তাতে তাঁদের ড্যামকেয়ার ভাবই স্পষ্ট হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনাররা সাংবিধানিক পদে নিয়োজিত। আর ডিসি-এসপিরা মাঠপর্যায়ের পাবলিক সার্ভেন্ট। সুতরাং তাঁরা যখন ‘কুচ পরোয়া নেহি’ ভাব দেখিয়ে একজন নির্বাচন কমিশনারকে বক্তৃতা বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেন, তখন বুঝতে কষ্ট হয় না, আমলাতন্ত্রের আগ্রাসন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডিসি-ইউএনওদের ভাবসাব এবং ক্ষমতার ব্যবহার-অপব্যবহার দেখলে মনে হয়, তাঁরা জেলা-উপজেলার জমিদার-তালুকদার। ডিসি জেলার জমিদারিপ্রাপ্ত, আর তাঁদের কাছ থেকে উপজেলার তালুক কিনেছেন ইউএনওরা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ‘তিনাদের’ কথার ওপরে কথা বলার অধিকার যেন কারও নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ডিসি-ইউএনওদের কীর্তি-কুকীর্তির যেসব নজির স্থাপিত হয়েছে, তা যে প্রজাতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়, তা বলাই বাহুল্য।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এমন হচ্ছে? এমনিতে আমরা হরহামেশা শুনতে পাই রাজনীতিকে, শাসনব্যবস্থাকে, প্রজাতন্ত্রকে আমলাতন্ত্রের কবল থেকে মুক্ত করা হবে। কিন্তু কার্যত তার কোনো নিশানা দেখা যায় না; বরং যতই দিন যাচ্ছে, আমলাতন্ত্র ততই চেপে বসছে জাতির ঘাড়ে। দেশে এখন রাজনৈতিক সরকার বিদ্যমান। সামরিক শাসকেরা আমলাদের ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক সরকার কেন আমলাদের বাড়বাড়ন্তকে প্রশ্রয় দেবে? তাহলে কি সরকার পুরোপুরি আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে? ছোট-বড় আমলারা যেসব দাবি তুলছেন, সরকার সেগুলো একরকম বিনা বাক্য ব্যয়েই মেনে নিচ্ছে। মাঠপর্যায়ে খবরদারি তো আছেই, তাঁরা এখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই মাতব্বরি ফলাতে শুরু করেছেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার কথা সবারই জানা। বরিশালের মেয়রের সঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর লড়াইয়ের স্মৃতি এখনো তরতাজা।
সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় বা সরকারি বিভিন্ন কাজে জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে আমলাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়ায় তাঁরা নিজেদের সর্বেসর্বা মনে করতে শুরু করেছেন। জেলা পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলেও ডিসি-ইউএনওরা তাঁদের কোনো পাত্তাই দিতে চান না। সবারই স্মরণ থাকার কথা, করোনাকালে দুর্যোগে ত্রাণ তৎপরতার দায়িত্ব মন্ত্রী, এমপি, জেলা পরিষদ কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যানদের না দিয়ে সচিব, ডিসি ও ইউএনওদের দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এই অবজ্ঞা আমলাদের জন্য একরকম আশকারা। রাজনৈতিক সরকার যখন রাজনীতিকদের চেয়ে আমলাদের বেশি তোয়াজ করবে, তখন আমলারা যে কাঁধে চড়ে বসতে চাইবেন, তাতে আর বিচিত্র কী!
আরেকটি বিষয় প্রাসঙ্গিকভাবে এসে যায়। প্রতিবছর ডিসি-এসপি সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনে তাঁরা সরকারের কাছে ‘চার্টার অব ডিমান্ড’-এর মতো দাবিনামা পেশ করে থাকেন। এটা কি সরকারি চাকরিবাকরির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? ডিসি-এসপিরা তো কলকারখানার শ্রমিক-কর্মচারী নন। তাঁদের কোনো
ট্রেড ইউনিয়নও নেই। তাহলে কোন আইনে তাঁরা ওই সব দাবিনামা হাজির করে সরকারকে তা মেনে নেওয়ার জন্য দাবি জানান?
আজকের পত্রিকার খবরটি পাঠ করে একজন মন্তব্য করলেন, ডিসিরা আজ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ঢুকতে চাইছেন। আর সরকারও তাতে প্রায় সম্মতি দিয়ে ফেলেছে। এভাবে যদি আমলাদের অযৌক্তিক আবদার সরকার মেনে নিতে থাকে, তাহলে হয়তো একদিন তাঁরা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে থাকতে চাইবেন। এমনকি তাঁরা যদি জাতীয় সংসদে ‘সংরক্ষিত আমলা কোটা’ রাখার দাবি তোলেন, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আজকের পত্রিকায় ১৭ অক্টোবর ‘ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে চায় সরকার’ শীর্ষ খবরটি সচেতন ব্যক্তিদের নজর যেমন কেড়েছে, তেমনি কিছু প্রশ্নও জন্ম দিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালনা কমিটিতে জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ দিতে চায় সরকার। আর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য করার দাবি উঠেছিল। সেই দাবি পূরণ করতেই সরকার এ অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞজনেরা।
বিদ্যমান আইনে ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে সম্পৃক্ত করা সম্ভব নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইউজিসি কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষাবিদেরা। এ ব্যাপারে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান এবং শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক ছাড়া কাউকে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে যুক্ত করার উদ্যোগ ভালো ফল বয়ে আনবে না।
একই রকম অভিমত ব্যক্ত করেছেন সরকার-সমর্থক চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মেডিকেল কলেজগুলোর ধ্বংস ডেকে আনবে। চিকিৎসাব্যবস্থার জন্য এটি খুবই খারাপ পদক্ষেপ।’ দেশের বিশিষ্টজন, শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যখন ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করছেন, তখন সরকার কেন এমন একটি পদক্ষেপ নিয়েছে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
এখানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের বর্তমান গঠনপ্রণালির দিকে একটু দৃষ্টিপাত করতে পারি। বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সিন্ডিকেট সদস্যসংখ্যা নির্দিষ্ট করা আছে ১৮ জন। তাঁদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, দুজন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা একজন (যুগ্ম সচিব বা তদূর্ধ্ব, সরকার কর্তৃক মনোনীত), চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত তিনজন, সিনেট কর্তৃক মনোনীত একজন, একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত দুজন (কলেজ অধ্যক্ষ)। এ ছাড়া সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত দুজন (একজন সিনেট সদস্য, একজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট) এবং শিক্ষক কর্তৃক নির্বাচিত ছয়জন। এই অর্গানোগ্রামের কোথাও কি ডিসিদের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ আছে? ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন সেই আইনের অনাবশ্যক পরিবর্তন আনতে যাবে সরকার? বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ডিসিদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে কী এমন ফায়দা হবে? কিংবা তাঁরা সিন্ডিকেটে না থাকায় কী এমন সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে, যা তাঁরা উদ্ধার করবেন?
আজকের পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সম্মেলনে ডিসিরা যুক্তি দেখান, বিভিন্ন জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা নিরসনে তাঁরা কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেন না। তাই তাঁদের এ আবদার। মূল কারণটা এখানেই। জেলার সব কাজে সবখানে তাঁরা কর্তৃত্ব করেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কেন বাকি থাকবে? কর্তৃত্ববাদিতা আমাদের সরকারি আমলাদের এমনভাবে আচ্ছন্ন করেছে যে তাঁরা সবখানে মাতব্বরি ফলানোর মওকা খোঁজার চেষ্টা করেন। তাঁর জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, অথচ তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকাণ্ডে শরিক হতে পারেন না, এটা বড়ই মর্মযাতনার বিষয়। অথচ আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ডিসিরা প্রভূত ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের রয়েছে প্রভূত প্রভুত্ব। ১৭ অক্টোবর অপর একটি দৈনিকের ‘অগাধ ক্ষমতায় দাপট ডিসি-ইউএনওদের’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন ডিসি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে রাজস্ব, বিনোদন, উন্নয়ন, জেলখানা, নির্বাচনসহ ৬২টি ক্যাটাগরিতে তিন শতাধিক বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। একইভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও প্রায় একই ধরনের কর্তৃত্বের অধিকারী। এ ছাড়া স্থানীয় বেসরকারি অনেক কলেজে ডিসি এবং স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে ইউএনওরা সভাপতির পদ অলংকৃত করে থাকেন। তারপরও তাঁদের যেন তুষ্টি নেই। এখন ভাগ বসাতে উদ্যত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিন্ডিকেটে।
ডিসি-ইউএনওদের অতিমাত্রায় ক্ষমতালিপ্সা সচেতন ব্যক্তিদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ কথা সর্বজনবিদিত যে ডিসি-ইউএনওরা কার্যত এখন দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তাঁরা এতটাই উদ্ধত যে মন্ত্রী-এমপিদেরও থোড়াই কেয়ার করেন। অতিসম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে ডিসি-এসপিদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। পদমর্যাদায় অনেক ধাপ নিচের হওয়া সত্ত্বেও সেই বৈঠকে ডিসি-এসপিরা যে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছেন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে, তাতে তাঁদের ড্যামকেয়ার ভাবই স্পষ্ট হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনাররা সাংবিধানিক পদে নিয়োজিত। আর ডিসি-এসপিরা মাঠপর্যায়ের পাবলিক সার্ভেন্ট। সুতরাং তাঁরা যখন ‘কুচ পরোয়া নেহি’ ভাব দেখিয়ে একজন নির্বাচন কমিশনারকে বক্তৃতা বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেন, তখন বুঝতে কষ্ট হয় না, আমলাতন্ত্রের আগ্রাসন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডিসি-ইউএনওদের ভাবসাব এবং ক্ষমতার ব্যবহার-অপব্যবহার দেখলে মনে হয়, তাঁরা জেলা-উপজেলার জমিদার-তালুকদার। ডিসি জেলার জমিদারিপ্রাপ্ত, আর তাঁদের কাছ থেকে উপজেলার তালুক কিনেছেন ইউএনওরা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ‘তিনাদের’ কথার ওপরে কথা বলার অধিকার যেন কারও নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ডিসি-ইউএনওদের কীর্তি-কুকীর্তির যেসব নজির স্থাপিত হয়েছে, তা যে প্রজাতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়, তা বলাই বাহুল্য।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এমন হচ্ছে? এমনিতে আমরা হরহামেশা শুনতে পাই রাজনীতিকে, শাসনব্যবস্থাকে, প্রজাতন্ত্রকে আমলাতন্ত্রের কবল থেকে মুক্ত করা হবে। কিন্তু কার্যত তার কোনো নিশানা দেখা যায় না; বরং যতই দিন যাচ্ছে, আমলাতন্ত্র ততই চেপে বসছে জাতির ঘাড়ে। দেশে এখন রাজনৈতিক সরকার বিদ্যমান। সামরিক শাসকেরা আমলাদের ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক সরকার কেন আমলাদের বাড়বাড়ন্তকে প্রশ্রয় দেবে? তাহলে কি সরকার পুরোপুরি আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে? ছোট-বড় আমলারা যেসব দাবি তুলছেন, সরকার সেগুলো একরকম বিনা বাক্য ব্যয়েই মেনে নিচ্ছে। মাঠপর্যায়ে খবরদারি তো আছেই, তাঁরা এখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই মাতব্বরি ফলাতে শুরু করেছেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার কথা সবারই জানা। বরিশালের মেয়রের সঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর লড়াইয়ের স্মৃতি এখনো তরতাজা।
সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় বা সরকারি বিভিন্ন কাজে জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে আমলাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়ায় তাঁরা নিজেদের সর্বেসর্বা মনে করতে শুরু করেছেন। জেলা পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলেও ডিসি-ইউএনওরা তাঁদের কোনো পাত্তাই দিতে চান না। সবারই স্মরণ থাকার কথা, করোনাকালে দুর্যোগে ত্রাণ তৎপরতার দায়িত্ব মন্ত্রী, এমপি, জেলা পরিষদ কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যানদের না দিয়ে সচিব, ডিসি ও ইউএনওদের দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এই অবজ্ঞা আমলাদের জন্য একরকম আশকারা। রাজনৈতিক সরকার যখন রাজনীতিকদের চেয়ে আমলাদের বেশি তোয়াজ করবে, তখন আমলারা যে কাঁধে চড়ে বসতে চাইবেন, তাতে আর বিচিত্র কী!
আরেকটি বিষয় প্রাসঙ্গিকভাবে এসে যায়। প্রতিবছর ডিসি-এসপি সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনে তাঁরা সরকারের কাছে ‘চার্টার অব ডিমান্ড’-এর মতো দাবিনামা পেশ করে থাকেন। এটা কি সরকারি চাকরিবাকরির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? ডিসি-এসপিরা তো কলকারখানার শ্রমিক-কর্মচারী নন। তাঁদের কোনো
ট্রেড ইউনিয়নও নেই। তাহলে কোন আইনে তাঁরা ওই সব দাবিনামা হাজির করে সরকারকে তা মেনে নেওয়ার জন্য দাবি জানান?
আজকের পত্রিকার খবরটি পাঠ করে একজন মন্তব্য করলেন, ডিসিরা আজ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ঢুকতে চাইছেন। আর সরকারও তাতে প্রায় সম্মতি দিয়ে ফেলেছে। এভাবে যদি আমলাদের অযৌক্তিক আবদার সরকার মেনে নিতে থাকে, তাহলে হয়তো একদিন তাঁরা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে থাকতে চাইবেন। এমনকি তাঁরা যদি জাতীয় সংসদে ‘সংরক্ষিত আমলা কোটা’ রাখার দাবি তোলেন, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে