এম আর খায়রুল উমাম
তথ্যপ্রযুক্তির আলোড়িত জয়যাত্রার এই লগ্নে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আজ বিশ্বব্যাপী এক বহুল আলোচিত শব্দমালা। শিল্পবিপ্লবের এই চেতনা, চিন্তা উৎপাদন ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। বদলে দিচ্ছে জীবনের গতিধারা এবং পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি। ২০৪১ সাল লক্ষ্য রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সঙ্গে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সফল করার বিষয়টি পরস্পর সাযুজ্যপূর্ণ বলে মতপ্রকাশ করছেন প্রাজ্ঞজনেরা।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক কল্যাণের ব্রত নিয়ে একটার পর একটা শিল্পবিপ্লব এসেছে। ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল প্রথম শিল্পবিপ্লবের। ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের সূচনা। ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট এবং ২০১৬ সালে আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় তৃতীয় ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। বিশ্বে পর্যায়ক্রমে একের পর এক চারটি শিল্পবিপ্লব এসেছে, দেশ এই বিপ্লবের ঢেউও লেগেছে, কিন্তু প্রতিটি শিল্পবিপ্লবে দেশে পরনির্ভরই রয়ে গেছে। তাহলে সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশে এত মেধাবী সন্তান, এতগুলো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা কী? তাদের ভূমিকাই বা কী?
শিল্পবিপ্লব সফল করার জন্য আমাদের সবার প্রথমে প্রয়োজন ছিল মানবসম্পদ পরিকল্পনার। পরাধীন দেশে যা হয়তো কল্পনা করা কঠিন ছিল কিন্তু স্বাধীন দেশ, যে দেশ এক নদী রক্ত দিয়ে কেনা সেখানেও ৫০ বছরে মানবসম্পদ পরিকল্পনা হবে, না! শুধু মানবসম্পদ পরিকল্পনাই নয় অনেক পরিকল্পনা কিংবা নীতির ক্ষেত্রেও আমরা পশ্চাদমুখী। স্বাধীনতার ৪০ বছর পার করার পর একটি শিক্ষানীতি যদিও বা জাতি পেল কিন্তু পরবর্তী এক যুগেও তা বাস্তবায়নের আলো দেখল না। এখনো দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা স্বপ্নের মধ্য দিয়ে চলছে। যে শিক্ষানীতি আমরা পেয়েছি তা যে স্বাধীন দেশ উপযোগী—এমন দাবি করতে চাই না। তারপরও যা আছে তা যাঁরা শিক্ষানীতি প্রণয়নকারী হিসেবে দাবি করেন, তাঁরাও বাস্তবায়ন করতে চান না। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিসেকশন টেবিলের আলোর নিচে রেখে জনগণের কল্যাণের নামে একের পর এক যে ঘোষণাগুলো আসছে তাতে সংসদে পাস হওয়া শিক্ষানীতি দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেউ আদৌ পড়েছেন তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। জানা থাকলে তখন তো মানার প্রশ্ন আসে। শিক্ষানীতিতে কী ধরনের সুপারিশ আসবে তার জন্য অপেক্ষা করার ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তাও দায়িত্বপ্রাপ্তরা অনুভব করেন না। এমনভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যবচ্ছেদ করার ফলে শিক্ষা যেমন মানহীন হয়েছে আবার শিক্ষা অনুযায়ী কর্মেরও কোনো সুযোগ নেই। দরিদ্র জনগণের করের টাকা দিয়ে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শিক্ষা গ্রহণকারীরা একবারের জন্যও দরিদ্র জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।
মানবসম্পদ পরিকল্পনা না থাকার কারণে দেশের জন্য কোন বিষয়ের কত জনবল প্রয়োজন, তার হিসাব কেউ জানে না। বেহিসাবিভাবে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। বোধকরি সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশ্বাস করে জনসংখ্যা কোনো সমস্যাই নয়, পুরাটাই জনশক্তি। হয়তোবা তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন দক্ষতা অর্জন ছাড়া জনসংখ্যা জনশক্তি হতে পারে না। সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রসারে সরকারি পলিটেকনিকের পাশাপাশি বেশুমার বেসরকারি পলিটেকনিকে দেশ ভরিয়ে তুলেছে। সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা, কাঁচামালের অভাব, যুগোপযোগী বই ও যন্ত্রপাতির সরবরাহ নেই। আর শিক্ষাক্রম নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই মঙ্গল। তারপরও সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তবু ব্রিটিশ আমলের কিছু যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই একটা ফ্ল্যাটে সীমাবদ্ধ। দক্ষতা অর্জনের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির শতকরা দুই-এক ভাগ সংগ্রহও এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব কি না, তা বিবেচনার দাবি রাখে।
সরকারি পলিটেকনিকে শত অব্যবস্থাপনার পরও সিংহভাগ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে থাকে, সেখানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী পায় না বলে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ-২ করা হয়েছে। বয়সের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন, ‘শিক্ষা গ্রহণে বয়স যেমন কোনো বিষয় হতে পারে না, তেমনি দক্ষতা অর্জনের জন্যও বয়সের সীমা থাকার প্রয়োজন নেই। তাই বয়সের সীমারেখা সর্বত্র তুলে দেওয়া জরুরি।’ এখন আবার সরকার নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পলিটেকনিক শিক্ষার সেমিস্টারের সময়সীমা চার মাসে শেষ করে চার বছরের কোর্সকে তিন বছরে নিয়ে আসবে। এই ব্যবস্থা যদি দেশের সবার জন্য হতো তাহলে কোনো প্রশ্ন উঠত না, কিন্তু সেটা করা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্সের জন্য এমন ব্যবস্থা করেছে। ২০০০ সালে দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে আনতে পলিটেকনিক শিক্ষাকে চার বছরের কোর্সে রূপান্তর করেছিল। কয়েক বছর যেতে না যেতেই দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের বদ্ধপরিকর হয়ে চার বছরের কোর্সকে পুনরায় তিন বছরে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সফল করার মানসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত দক্ষতা অর্জনের জন্য পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্সের সময় কমানোর ব্যবস্থা করেছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, প্রকৌশল শিক্ষার জন্য এমনটা করা হলো না কেন? দেশের সাধারণ মানুষ কিন্তু মনে করে প্রকৌশল শিক্ষা-পরবর্তী যেসব কাজ তার সিংহভাগই যেহেতু বিদেশনির্ভর তাই দেশে দরিদ্র জনগণের করের টাকায় এই দীর্ঘ কোর্সের প্রয়োজন নেই। এই কোর্সও দুই-তিন বছরে নামিয়ে আনা যায়। এরপর সরকারের ক্ষমতার বলয়ে থাকা ব্যক্তিরা যদি মনে করেন, ‘দেশের উচ্চ পদাধিকারীরা জনগণের করের টাকায় বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা পাকা করে রেখেছেন। বিত্তবানসহ আরও একটি শ্রেণি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করেছেন। দেশের কিছু সাধারণ মানুষ সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে প্রতিবছর ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন। কারণ দেশে কিছু চিকিৎসকের সাক্ষাৎ তিন মাসেও পাওয়া যায় না। কিছু ডাক্তারের রাত আড়াইটার সময় সাক্ষাতের সুযোগ মেলে। আভিজাত্য প্রকাশে এলএমএফ অনেক আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ তাহলে সেসব বিবেচনায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিকট ভবিষ্যতে দেশের চিকিৎসা-সংকট নিরসনে মেডিকেল শিক্ষাকেও দুই-তিন বছরের কোর্সে পরিণত করতে পারে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হোক বা অষ্টম শিল্পবিপ্লব—দেশের অর্জন অতীতকে অতিক্রম করতে পারবে না। দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির জোয়ারে ভাসবে। অনেক বিষয়ে বিশ্বের রোল মডেল হবে। সাধারণ জনগণ যে দক্ষতাই অর্জন করুক না কেন, বিদেশে গিয়ে যে কাজই করুক না কেন, দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা যা উপার্জন করবেন তা দেশেই পাঠাবেন। দেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে একশ্রেণির মানুষের একবার বিদেশে পাঠাতে পারলেই হয়। দেশের শত-লক্ষ বেকারের চিৎকার না শুনলেও চলবে। পরিসংখ্যানে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সফল হবেই হবে।
লেখক: সাবেক সভাপতি ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ
তথ্যপ্রযুক্তির আলোড়িত জয়যাত্রার এই লগ্নে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আজ বিশ্বব্যাপী এক বহুল আলোচিত শব্দমালা। শিল্পবিপ্লবের এই চেতনা, চিন্তা উৎপাদন ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। বদলে দিচ্ছে জীবনের গতিধারা এবং পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি। ২০৪১ সাল লক্ষ্য রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সঙ্গে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সফল করার বিষয়টি পরস্পর সাযুজ্যপূর্ণ বলে মতপ্রকাশ করছেন প্রাজ্ঞজনেরা।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক কল্যাণের ব্রত নিয়ে একটার পর একটা শিল্পবিপ্লব এসেছে। ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল প্রথম শিল্পবিপ্লবের। ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের সূচনা। ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট এবং ২০১৬ সালে আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় তৃতীয় ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। বিশ্বে পর্যায়ক্রমে একের পর এক চারটি শিল্পবিপ্লব এসেছে, দেশ এই বিপ্লবের ঢেউও লেগেছে, কিন্তু প্রতিটি শিল্পবিপ্লবে দেশে পরনির্ভরই রয়ে গেছে। তাহলে সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশে এত মেধাবী সন্তান, এতগুলো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা কী? তাদের ভূমিকাই বা কী?
শিল্পবিপ্লব সফল করার জন্য আমাদের সবার প্রথমে প্রয়োজন ছিল মানবসম্পদ পরিকল্পনার। পরাধীন দেশে যা হয়তো কল্পনা করা কঠিন ছিল কিন্তু স্বাধীন দেশ, যে দেশ এক নদী রক্ত দিয়ে কেনা সেখানেও ৫০ বছরে মানবসম্পদ পরিকল্পনা হবে, না! শুধু মানবসম্পদ পরিকল্পনাই নয় অনেক পরিকল্পনা কিংবা নীতির ক্ষেত্রেও আমরা পশ্চাদমুখী। স্বাধীনতার ৪০ বছর পার করার পর একটি শিক্ষানীতি যদিও বা জাতি পেল কিন্তু পরবর্তী এক যুগেও তা বাস্তবায়নের আলো দেখল না। এখনো দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা স্বপ্নের মধ্য দিয়ে চলছে। যে শিক্ষানীতি আমরা পেয়েছি তা যে স্বাধীন দেশ উপযোগী—এমন দাবি করতে চাই না। তারপরও যা আছে তা যাঁরা শিক্ষানীতি প্রণয়নকারী হিসেবে দাবি করেন, তাঁরাও বাস্তবায়ন করতে চান না। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিসেকশন টেবিলের আলোর নিচে রেখে জনগণের কল্যাণের নামে একের পর এক যে ঘোষণাগুলো আসছে তাতে সংসদে পাস হওয়া শিক্ষানীতি দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেউ আদৌ পড়েছেন তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। জানা থাকলে তখন তো মানার প্রশ্ন আসে। শিক্ষানীতিতে কী ধরনের সুপারিশ আসবে তার জন্য অপেক্ষা করার ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তাও দায়িত্বপ্রাপ্তরা অনুভব করেন না। এমনভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যবচ্ছেদ করার ফলে শিক্ষা যেমন মানহীন হয়েছে আবার শিক্ষা অনুযায়ী কর্মেরও কোনো সুযোগ নেই। দরিদ্র জনগণের করের টাকা দিয়ে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শিক্ষা গ্রহণকারীরা একবারের জন্যও দরিদ্র জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।
মানবসম্পদ পরিকল্পনা না থাকার কারণে দেশের জন্য কোন বিষয়ের কত জনবল প্রয়োজন, তার হিসাব কেউ জানে না। বেহিসাবিভাবে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। বোধকরি সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশ্বাস করে জনসংখ্যা কোনো সমস্যাই নয়, পুরাটাই জনশক্তি। হয়তোবা তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন দক্ষতা অর্জন ছাড়া জনসংখ্যা জনশক্তি হতে পারে না। সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রসারে সরকারি পলিটেকনিকের পাশাপাশি বেশুমার বেসরকারি পলিটেকনিকে দেশ ভরিয়ে তুলেছে। সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা, কাঁচামালের অভাব, যুগোপযোগী বই ও যন্ত্রপাতির সরবরাহ নেই। আর শিক্ষাক্রম নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই মঙ্গল। তারপরও সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তবু ব্রিটিশ আমলের কিছু যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই একটা ফ্ল্যাটে সীমাবদ্ধ। দক্ষতা অর্জনের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির শতকরা দুই-এক ভাগ সংগ্রহও এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব কি না, তা বিবেচনার দাবি রাখে।
সরকারি পলিটেকনিকে শত অব্যবস্থাপনার পরও সিংহভাগ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে থাকে, সেখানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী পায় না বলে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ-২ করা হয়েছে। বয়সের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন, ‘শিক্ষা গ্রহণে বয়স যেমন কোনো বিষয় হতে পারে না, তেমনি দক্ষতা অর্জনের জন্যও বয়সের সীমা থাকার প্রয়োজন নেই। তাই বয়সের সীমারেখা সর্বত্র তুলে দেওয়া জরুরি।’ এখন আবার সরকার নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পলিটেকনিক শিক্ষার সেমিস্টারের সময়সীমা চার মাসে শেষ করে চার বছরের কোর্সকে তিন বছরে নিয়ে আসবে। এই ব্যবস্থা যদি দেশের সবার জন্য হতো তাহলে কোনো প্রশ্ন উঠত না, কিন্তু সেটা করা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্সের জন্য এমন ব্যবস্থা করেছে। ২০০০ সালে দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে আনতে পলিটেকনিক শিক্ষাকে চার বছরের কোর্সে রূপান্তর করেছিল। কয়েক বছর যেতে না যেতেই দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের বদ্ধপরিকর হয়ে চার বছরের কোর্সকে পুনরায় তিন বছরে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সফল করার মানসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত দক্ষতা অর্জনের জন্য পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্সের সময় কমানোর ব্যবস্থা করেছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, প্রকৌশল শিক্ষার জন্য এমনটা করা হলো না কেন? দেশের সাধারণ মানুষ কিন্তু মনে করে প্রকৌশল শিক্ষা-পরবর্তী যেসব কাজ তার সিংহভাগই যেহেতু বিদেশনির্ভর তাই দেশে দরিদ্র জনগণের করের টাকায় এই দীর্ঘ কোর্সের প্রয়োজন নেই। এই কোর্সও দুই-তিন বছরে নামিয়ে আনা যায়। এরপর সরকারের ক্ষমতার বলয়ে থাকা ব্যক্তিরা যদি মনে করেন, ‘দেশের উচ্চ পদাধিকারীরা জনগণের করের টাকায় বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা পাকা করে রেখেছেন। বিত্তবানসহ আরও একটি শ্রেণি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করেছেন। দেশের কিছু সাধারণ মানুষ সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে প্রতিবছর ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন। কারণ দেশে কিছু চিকিৎসকের সাক্ষাৎ তিন মাসেও পাওয়া যায় না। কিছু ডাক্তারের রাত আড়াইটার সময় সাক্ষাতের সুযোগ মেলে। আভিজাত্য প্রকাশে এলএমএফ অনেক আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ তাহলে সেসব বিবেচনায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিকট ভবিষ্যতে দেশের চিকিৎসা-সংকট নিরসনে মেডিকেল শিক্ষাকেও দুই-তিন বছরের কোর্সে পরিণত করতে পারে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হোক বা অষ্টম শিল্পবিপ্লব—দেশের অর্জন অতীতকে অতিক্রম করতে পারবে না। দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির জোয়ারে ভাসবে। অনেক বিষয়ে বিশ্বের রোল মডেল হবে। সাধারণ জনগণ যে দক্ষতাই অর্জন করুক না কেন, বিদেশে গিয়ে যে কাজই করুক না কেন, দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা যা উপার্জন করবেন তা দেশেই পাঠাবেন। দেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে একশ্রেণির মানুষের একবার বিদেশে পাঠাতে পারলেই হয়। দেশের শত-লক্ষ বেকারের চিৎকার না শুনলেও চলবে। পরিসংখ্যানে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সফল হবেই হবে।
লেখক: সাবেক সভাপতি ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
১১ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
১১ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
১১ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
১২ ঘণ্টা আগে