তাপস মজুমদার
আমরা প্রায় সবাই জেনেছি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে রবীন্দ্রনাথের একটি সাড়ে ১৯ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয় সাময়িকভাবে। বিষয়টি নিয়ে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা চলেছে। এটি একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। টেপ দিয়ে ক্রস করে রবীন্দ্রনাথের মুখটি আটকানো। তাঁর হাত পেরেকে বিদ্ধ। বিখ্যাত গ্রন্থ গীতাঞ্জলি হাতে ধরা এবং পেরেকের ঘায়ে হাত রক্তাক্ত; অর্থাৎ বইটি খোলা যাচ্ছে না এবং মুখে কথা বলা যাচ্ছে না। মূলত বাক্স্বাধীনতা এবং পাঠস্বাধীনতার পক্ষে প্রচারই এ ভাস্কর্যটি স্থাপনের উদ্দেশ্য—বেশ বোঝা যায়। কোনো সন্দেহ নেই, এটি একটি অভিনব প্রতিবাদ।
আজকাল আমরা নানাভাবে প্রতিবাদ করতে দেখি। যার বেশির ভাগেরই ধরন লাঠালাঠি, নির্যাতন, নিরাবরণকরণ, রক্তারক্তি, জীবননাশ ইত্যাদি। এ রকম অমানবিক ও হিংসাত্মক প্রতিবাদের আবহের মধ্যে থেকেও যে কিছু ছাত্র এমন শিল্পিত একটি প্রতিবাদ করেছে, এটাতে চিন্তাশীল জনগোষ্ঠীর খুশি না হয়ে কোনো উপায় থাকে না। মানুষের মুক্তি ও কল্যাণ নিয়ে যাঁরা ভাবেন, যাঁদের হৃদয় ব্যথিত হয় রক্তারক্তি ও অসহিষ্ণুতায়, ঘরে-বাইরে যাঁরা মানবতার পক্ষে কাজ করেন, এ রকম শোভন সভ্য প্রতিবাদই তাঁদের কাছে একান্ত বাঞ্ছিত।
এখানে এই প্রতিবাদে কী ঘটেছে? আমরা একটু ভাবলেই বুঝব রবীন্দ্রনাথ আমাদের সাহিত্য, মানবিকতা, কর্ম, জ্ঞান ও চেতনার জগতে প্রধানতম মানুষ। আজকাল তাঁকেও বাঙালি বিস্মৃত হতে বসেছে। এটা এখন সাধারণ চিত্র যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রবীন্দ্রনাথকে বড়জোর শুধু নামে চেনেন। অথবা কোনো ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আমাদের জাতীয় সংগীতের রচয়িতার নামটি মুখস্থ করার প্রয়োজনে চেনেন। বাঙালি জাতি হিসেবে এটা আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য। তিনি ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি ও প্রথম এশিয়ান হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। অথচ শুধু সাহিত্য সৃষ্টি নয়, অজস্র প্রতিবাদ, কর্মযজ্ঞ, মানবিক কাজে ঠাসা এই মনীষীর জীবন। তাঁকে স্মরণে রাখা আমাদের জন্যই মঙ্গল—এই ভাস্কর্য আন্দোলনে এ কথাটিও সামনে এসেছে।
এ ছাড়া হিংসা এড়িয়ে রুচিশীলভাবে, শিল্পিতভাবে প্রতিবাদ জানানোর চমৎকার অভিনবত্বের বিষয়টি তো এসেছেই।
কয়েক বছর আগে রাশিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে শিল্পীরা প্রতীকী চিত্রকর্ম নিয়ে ‘মনস্ট্রেশন’ নামে একটি শোভাযাত্রা করেছিলেন। পায়ে শিকল, পরনে কালো পোশাক, মুখে মুখোশ পরে প্ল্যাকার্ড হাতে তাঁরা রাস্তায় নামেন। প্রতিবাদে এবং স্লোগানে তাঁরাই আবার লিখেছেন, ‘এসবের কোনো মানে নেই!’
এ বছরের শুরুতে ভারতের মহারাষ্ট্রে আমরা কৃষক সুনীলের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদের খবর জেনেছি। তাঁর নামে বরাদ্দকৃত সরকারি জমি না পেয়ে ওই কৃষক গলা পর্যন্ত শরীর মাটির নিচে পুঁতে ফেলে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানেও জয়নব নামের একটি শিশু এক দানব কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হলে টেলিভিশনের একজন উপস্থাপিকা যাঁর নাম কিরণ নাজ, তাঁর নিজের শিশুসন্তানকে নিয়ে টেলিভিশনের লাইভে আসেন এবং তাঁর মূল অনুষ্ঠান উপস্থাপনের আগেই সেই শিশুটিকে কোলে নিয়ে বলেন, ‘আজ আমি কিরণ নাজ নই। আমি একজন মা। এ ঘটনায় আমি বিধ্বস্ত। গোটা পাকিস্তান ভারাক্রান্ত সেই ছোট্ট মেয়েটির ভারে।’
এমন অজস্র অভিনব সৃজনশীল বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিবাদের উদাহরণ রয়েছে বিশ্বজুড়ে, সময়জুড়ে। সভ্যতা এটাই শেখায়। সমাজে কোনো মতের পক্ষে যেমন মানুষ থাকবে, তেমনি বিপক্ষেও থাকবে। অতএব সেই প্রতিবাদ বা বিপক্ষতা শোভন না অশোভন, সেটাই বিবেচিত হতে পারে।
জে ডি বার্নালের মতে, সমাজ সভ্য হলে সেই সমাজের মানুষের গ্রহণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাস্কর্যটি তাই না সরালেও পারত। সৃষ্টিশীল প্রতিবাদ তাহলে প্রশ্রয় পেত, জ্ঞান ও বুদ্ধির প্রয়োগ সেখানে এগিয়ে থাকত। ভবিষ্যতে আমরা সেটারই অপেক্ষায় থাকব অধীর হয়ে।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী
আমরা প্রায় সবাই জেনেছি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে রবীন্দ্রনাথের একটি সাড়ে ১৯ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয় সাময়িকভাবে। বিষয়টি নিয়ে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা চলেছে। এটি একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। টেপ দিয়ে ক্রস করে রবীন্দ্রনাথের মুখটি আটকানো। তাঁর হাত পেরেকে বিদ্ধ। বিখ্যাত গ্রন্থ গীতাঞ্জলি হাতে ধরা এবং পেরেকের ঘায়ে হাত রক্তাক্ত; অর্থাৎ বইটি খোলা যাচ্ছে না এবং মুখে কথা বলা যাচ্ছে না। মূলত বাক্স্বাধীনতা এবং পাঠস্বাধীনতার পক্ষে প্রচারই এ ভাস্কর্যটি স্থাপনের উদ্দেশ্য—বেশ বোঝা যায়। কোনো সন্দেহ নেই, এটি একটি অভিনব প্রতিবাদ।
আজকাল আমরা নানাভাবে প্রতিবাদ করতে দেখি। যার বেশির ভাগেরই ধরন লাঠালাঠি, নির্যাতন, নিরাবরণকরণ, রক্তারক্তি, জীবননাশ ইত্যাদি। এ রকম অমানবিক ও হিংসাত্মক প্রতিবাদের আবহের মধ্যে থেকেও যে কিছু ছাত্র এমন শিল্পিত একটি প্রতিবাদ করেছে, এটাতে চিন্তাশীল জনগোষ্ঠীর খুশি না হয়ে কোনো উপায় থাকে না। মানুষের মুক্তি ও কল্যাণ নিয়ে যাঁরা ভাবেন, যাঁদের হৃদয় ব্যথিত হয় রক্তারক্তি ও অসহিষ্ণুতায়, ঘরে-বাইরে যাঁরা মানবতার পক্ষে কাজ করেন, এ রকম শোভন সভ্য প্রতিবাদই তাঁদের কাছে একান্ত বাঞ্ছিত।
এখানে এই প্রতিবাদে কী ঘটেছে? আমরা একটু ভাবলেই বুঝব রবীন্দ্রনাথ আমাদের সাহিত্য, মানবিকতা, কর্ম, জ্ঞান ও চেতনার জগতে প্রধানতম মানুষ। আজকাল তাঁকেও বাঙালি বিস্মৃত হতে বসেছে। এটা এখন সাধারণ চিত্র যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রবীন্দ্রনাথকে বড়জোর শুধু নামে চেনেন। অথবা কোনো ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আমাদের জাতীয় সংগীতের রচয়িতার নামটি মুখস্থ করার প্রয়োজনে চেনেন। বাঙালি জাতি হিসেবে এটা আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য। তিনি ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি ও প্রথম এশিয়ান হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। অথচ শুধু সাহিত্য সৃষ্টি নয়, অজস্র প্রতিবাদ, কর্মযজ্ঞ, মানবিক কাজে ঠাসা এই মনীষীর জীবন। তাঁকে স্মরণে রাখা আমাদের জন্যই মঙ্গল—এই ভাস্কর্য আন্দোলনে এ কথাটিও সামনে এসেছে।
এ ছাড়া হিংসা এড়িয়ে রুচিশীলভাবে, শিল্পিতভাবে প্রতিবাদ জানানোর চমৎকার অভিনবত্বের বিষয়টি তো এসেছেই।
কয়েক বছর আগে রাশিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে শিল্পীরা প্রতীকী চিত্রকর্ম নিয়ে ‘মনস্ট্রেশন’ নামে একটি শোভাযাত্রা করেছিলেন। পায়ে শিকল, পরনে কালো পোশাক, মুখে মুখোশ পরে প্ল্যাকার্ড হাতে তাঁরা রাস্তায় নামেন। প্রতিবাদে এবং স্লোগানে তাঁরাই আবার লিখেছেন, ‘এসবের কোনো মানে নেই!’
এ বছরের শুরুতে ভারতের মহারাষ্ট্রে আমরা কৃষক সুনীলের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদের খবর জেনেছি। তাঁর নামে বরাদ্দকৃত সরকারি জমি না পেয়ে ওই কৃষক গলা পর্যন্ত শরীর মাটির নিচে পুঁতে ফেলে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানেও জয়নব নামের একটি শিশু এক দানব কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হলে টেলিভিশনের একজন উপস্থাপিকা যাঁর নাম কিরণ নাজ, তাঁর নিজের শিশুসন্তানকে নিয়ে টেলিভিশনের লাইভে আসেন এবং তাঁর মূল অনুষ্ঠান উপস্থাপনের আগেই সেই শিশুটিকে কোলে নিয়ে বলেন, ‘আজ আমি কিরণ নাজ নই। আমি একজন মা। এ ঘটনায় আমি বিধ্বস্ত। গোটা পাকিস্তান ভারাক্রান্ত সেই ছোট্ট মেয়েটির ভারে।’
এমন অজস্র অভিনব সৃজনশীল বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিবাদের উদাহরণ রয়েছে বিশ্বজুড়ে, সময়জুড়ে। সভ্যতা এটাই শেখায়। সমাজে কোনো মতের পক্ষে যেমন মানুষ থাকবে, তেমনি বিপক্ষেও থাকবে। অতএব সেই প্রতিবাদ বা বিপক্ষতা শোভন না অশোভন, সেটাই বিবেচিত হতে পারে।
জে ডি বার্নালের মতে, সমাজ সভ্য হলে সেই সমাজের মানুষের গ্রহণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাস্কর্যটি তাই না সরালেও পারত। সৃষ্টিশীল প্রতিবাদ তাহলে প্রশ্রয় পেত, জ্ঞান ও বুদ্ধির প্রয়োগ সেখানে এগিয়ে থাকত। ভবিষ্যতে আমরা সেটারই অপেক্ষায় থাকব অধীর হয়ে।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে