অরুণ কর্মকার
জুলাই-আগস্টের অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে দীর্ঘকালের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের মাধ্যমে দেশে একটি উদার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-জনতার সংকল্প, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা ও কর্মধারা সেই সুযোগ ও সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে বিশেষ বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর কিছু কিছু তৎপরতা ও প্রবণতা সেই ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রবণতাগুলো অশুভ ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করারও যথেষ্ট যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার সময় হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বাণী: প্রথমেই উল্লেখ করা দরকার শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে বাণী দিয়েছেন তার কথা। ওই বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।’ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা যায়, প্রধান উপদেষ্টার বাণীর এই বাক্যবন্ধ উল্লেখ করে অনেক বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। মন্তব্যগুলো জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সংকল্প কিংবা যে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে আমরা যাত্রা শুরু করেছি, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মন্তব্যগুলো আমরা ‘সামাজিক মাধ্যমের বাত কা বাত’ বলে উপেক্ষা করতে পারি না। কারণ সামাজিক মাধ্যম এখন বিভিন্ন মত ও পথের একত্র হওয়ার বড় অনুষঙ্গ। তা ছাড়া, প্রধান উপদেষ্টার ওই বাণীর মর্মার্থ সঠিক নয় বলে মনে করেন—এমন প্রচুর মানুষ যে আমাদের আশপাশে রয়েছে এবং তাঁরাও যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সহযাত্রী, সে কথাও মনে রাখা জরুরি।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বাণীতে যথার্থই বলেছেন, ‘অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এই দেশ আমাদের সকলের। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এই দেশ সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।’ কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই, দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ এই চেতনার বিরোধী। অন্তর্বর্তী সরকার এবং অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীসহ যাঁরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার যাত্রায় সামনে থেকে ভূমিকা রাখছেন, এই ইঙ্গিতগুলো তাঁদের ভাবনায় রাখা প্রয়োজন।
খালেদা জিয়ার ম্যুরাল: কয়েক দিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী রাজপথে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।তাঁরাও জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের অংশীজন। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামফলক রাখা গেলেও সেখানে তাঁর ছবিসহ ম্যুরাল থাকতে পারবে না। কেন? সে কথা দাবিদারেরা অনুক্ত রেখেছেন।ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও ছবির মতো উপাদান-উপকরণের বিরোধিতা এ দেশে অনেকেই আজকাল করেন। সেগুলো কোনো নারীর হলে বিরোধিতার মাত্রা আরও একটু বেশিই হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও কি বিষয়টি তেমন?
খালেদা জিয়া দেশের একজন সম্মানিত রাজনৈতিক নেত্রী। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের প্রধান। তাঁর শাসনকালে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে তাঁর ম্যুরালসহ নামফলক রাখায় আপত্তি যাঁরা করছেন, তাঁরা কারা? তাঁরা কি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সংকল্প বাস্তবায়নের প্রকৃত অংশীজন হতে পারেন? এ বিষয়গুলোও দায়িত্ববানদের ভাবনার বিষয়।
সামাজিক মাধ্যমের দৌরাত্ম্য: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশ যখন একটি নতুন যাত্রা শুরু করেছে, তখন অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির কিছু অপচেষ্টাও আমরা লক্ষ করি। মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেই এ ধরনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যার সর্বশেষ বড় উদাহরণ প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে একটি গুজব সৃষ্টি করা। এ ধরনের ছোট ছোট আরও কিছু ঘটনা ঘটছে বলে খবর পাওয়া যায়। সাধারণভাবে এটা বিশ্বাস করাই যৌক্তিক যে একমাত্র বিগত সরকার ও দলই এগুলোর পেছনে সক্রিয় রয়েছে।
কিন্তু অন্য কোনো উৎস এর পেছনে আছে কি না, কিংবা থাকতে পারে কি না, সে বিষয়েও আমাদের চোখ-কান খোলা রাখা, মন ও মস্তিষ্ক সজাগ রাখা দরকার। আর দরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, অসত্য, অর্ধসত্য, সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন বিষয়াদির প্রচার নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা ভাবা।
প্রশাসনে অস্থিরতা: অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সরকারি প্রশাসনের শীর্ষপর্যায় এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল হয়নি। প্রশাসনকে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও কাজের উপযোগী করার জন্য বিগত সরকারের আমলের সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য বেশ কিছু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। বিগত সরকারের আমলে বঞ্চনার শিকার বলে দাবিদার পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে বিভাগীয় মামলায় শাস্তিপ্রাপ্তদের কেউ কেউও রয়েছেন। পাশাপাশি রেকর্ড-সংখ্যক কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে (প্রায় আড়াই শ)। পাঁচজন সিনিয়র সচিবসহ মোট ১৫ জন সচিব রয়েছেন ওএসডির এই তালিকায়। ওদিকে তিনটি মন্ত্রণালয় ও চারটি বিভাগে সচিবের পদ ফাঁকা। আট জেলায় ডিসি নিয়োগ করা যায়নি।
পুলিশ প্রশাসনও শতভাগ সক্রিয় হতে পারেনি। এসবের পেছনে বিগত সরকারের প্রভাব থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রবণতা আর বেশি দিন চলতে দেওয়া উচিত হবে না। নতুন বাংলাদেশ গড়ার যাত্রাপথের এই বিঘ্নের অবসান ঘটানো জরুরি প্রয়োজন।
দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া: নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এখন জনজীবনের প্রধান সমস্যা। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ছিল অত্যন্ত চড়া। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রব্যমূল্য আরও বেড়েছে।’ নিত্যপণ্যের দাম ‘অত্যন্ত চড়া’র পরও বাড়লে তাকে কী বলা যায়, সেই বিশেষণ খুঁজে পাওয়া কঠিনই বটে। ঠিক তেমনই কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা।
পেঁয়াজ আমদানির শুল্ক কমানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ এসে বাজার ভরে গেছে। ভারত থেকেও আমদানির খবরাখবর প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়। তার পরও পেঁয়াজের দাম কমছে না কেন? ডিম আমদানি উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ডিমের দাম কমছে কি? চাল, আটা, ভোজ্যতেল, মাছ, মুরগি কোনোটিই নয়! মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিগত সরকারের আমলে দায়ী করা হতো সিন্ডিকেটকে। এখন দায়ী করা হবে কাকে? সিন্ডিকেট কি ভেঙে দেওয়া গেছে? না গেলে কেন যায়নি, সে বিষয়ে ভাবতে হবে, এই অশুভ ইঙ্গিত সম্পর্কে মানুষকে বলতে হবে। কারণ গণ-অভ্যুত্থানে মানুষের একটি বড় প্রত্যাশা ছিল দ্রব্যমূল্য কমবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ট্রাকে থাকা অবস্থায়ই কারওয়ান বাজারে চারবার ডিমের হাতবদল হয়। এখন পর্যন্ত এই সরকার কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। শুধু সিন্ডিকেটের সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এই অভ্যুত্থানের প্রাথমিক মাহাত্ম্য কী?’ এই প্রশ্ন শুধু তাঁর নয়, সমগ্র দেশবাসীর। অন্তর্বর্তী সরকারকে কাজ দেখিয়ে এর জবাব দিতে হবে।
‘কোথায় যেন একটা ভয়’: অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একাধিক সভায় একটি কথা বলেছেন—‘এত বড় পরিবর্তনের পরও কোথায় যেন একটা ভয়।’ তিনি ঠিকই বলেছেন। ভয়টা শেখ হাসিনা ফিরে এসে ক্ষমতায় বসবেন এবং গণ-অভ্যুত্থানের সব অর্জন ধ্বংস করে দেবেন, সেটা নয়। ভয়টা ভবিষ্যতে যাঁরা দেশ পরিচালনায় আসবেন তাঁদের নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এবং সব শুভ প্রচেষ্টাও তাঁদের চিন্তা, মনন ও দৃষ্টিভঙ্গি অতীত থেকে ভবিষ্যতের পানে ফেরাতে পারবে কি না, ভয়টা তা নিয়ে। এই ভয়ের নিরসন হতে পারে কার্যকর রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে। আমাদের বিশ্বাস, আমরা সেই পথেই আছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জুলাই-আগস্টের অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে দীর্ঘকালের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের মাধ্যমে দেশে একটি উদার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-জনতার সংকল্প, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা ও কর্মধারা সেই সুযোগ ও সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে বিশেষ বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর কিছু কিছু তৎপরতা ও প্রবণতা সেই ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রবণতাগুলো অশুভ ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করারও যথেষ্ট যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার সময় হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বাণী: প্রথমেই উল্লেখ করা দরকার শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে বাণী দিয়েছেন তার কথা। ওই বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।’ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা যায়, প্রধান উপদেষ্টার বাণীর এই বাক্যবন্ধ উল্লেখ করে অনেক বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। মন্তব্যগুলো জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সংকল্প কিংবা যে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে আমরা যাত্রা শুরু করেছি, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মন্তব্যগুলো আমরা ‘সামাজিক মাধ্যমের বাত কা বাত’ বলে উপেক্ষা করতে পারি না। কারণ সামাজিক মাধ্যম এখন বিভিন্ন মত ও পথের একত্র হওয়ার বড় অনুষঙ্গ। তা ছাড়া, প্রধান উপদেষ্টার ওই বাণীর মর্মার্থ সঠিক নয় বলে মনে করেন—এমন প্রচুর মানুষ যে আমাদের আশপাশে রয়েছে এবং তাঁরাও যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সহযাত্রী, সে কথাও মনে রাখা জরুরি।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বাণীতে যথার্থই বলেছেন, ‘অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এই দেশ আমাদের সকলের। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এই দেশ সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।’ কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই, দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ এই চেতনার বিরোধী। অন্তর্বর্তী সরকার এবং অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীসহ যাঁরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার যাত্রায় সামনে থেকে ভূমিকা রাখছেন, এই ইঙ্গিতগুলো তাঁদের ভাবনায় রাখা প্রয়োজন।
খালেদা জিয়ার ম্যুরাল: কয়েক দিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী রাজপথে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।তাঁরাও জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের অংশীজন। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামফলক রাখা গেলেও সেখানে তাঁর ছবিসহ ম্যুরাল থাকতে পারবে না। কেন? সে কথা দাবিদারেরা অনুক্ত রেখেছেন।ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও ছবির মতো উপাদান-উপকরণের বিরোধিতা এ দেশে অনেকেই আজকাল করেন। সেগুলো কোনো নারীর হলে বিরোধিতার মাত্রা আরও একটু বেশিই হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও কি বিষয়টি তেমন?
খালেদা জিয়া দেশের একজন সম্মানিত রাজনৈতিক নেত্রী। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের প্রধান। তাঁর শাসনকালে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে তাঁর ম্যুরালসহ নামফলক রাখায় আপত্তি যাঁরা করছেন, তাঁরা কারা? তাঁরা কি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সংকল্প বাস্তবায়নের প্রকৃত অংশীজন হতে পারেন? এ বিষয়গুলোও দায়িত্ববানদের ভাবনার বিষয়।
সামাজিক মাধ্যমের দৌরাত্ম্য: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশ যখন একটি নতুন যাত্রা শুরু করেছে, তখন অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির কিছু অপচেষ্টাও আমরা লক্ষ করি। মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেই এ ধরনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যার সর্বশেষ বড় উদাহরণ প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে একটি গুজব সৃষ্টি করা। এ ধরনের ছোট ছোট আরও কিছু ঘটনা ঘটছে বলে খবর পাওয়া যায়। সাধারণভাবে এটা বিশ্বাস করাই যৌক্তিক যে একমাত্র বিগত সরকার ও দলই এগুলোর পেছনে সক্রিয় রয়েছে।
কিন্তু অন্য কোনো উৎস এর পেছনে আছে কি না, কিংবা থাকতে পারে কি না, সে বিষয়েও আমাদের চোখ-কান খোলা রাখা, মন ও মস্তিষ্ক সজাগ রাখা দরকার। আর দরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, অসত্য, অর্ধসত্য, সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন বিষয়াদির প্রচার নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা ভাবা।
প্রশাসনে অস্থিরতা: অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সরকারি প্রশাসনের শীর্ষপর্যায় এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল হয়নি। প্রশাসনকে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও কাজের উপযোগী করার জন্য বিগত সরকারের আমলের সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য বেশ কিছু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। বিগত সরকারের আমলে বঞ্চনার শিকার বলে দাবিদার পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে বিভাগীয় মামলায় শাস্তিপ্রাপ্তদের কেউ কেউও রয়েছেন। পাশাপাশি রেকর্ড-সংখ্যক কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে (প্রায় আড়াই শ)। পাঁচজন সিনিয়র সচিবসহ মোট ১৫ জন সচিব রয়েছেন ওএসডির এই তালিকায়। ওদিকে তিনটি মন্ত্রণালয় ও চারটি বিভাগে সচিবের পদ ফাঁকা। আট জেলায় ডিসি নিয়োগ করা যায়নি।
পুলিশ প্রশাসনও শতভাগ সক্রিয় হতে পারেনি। এসবের পেছনে বিগত সরকারের প্রভাব থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রবণতা আর বেশি দিন চলতে দেওয়া উচিত হবে না। নতুন বাংলাদেশ গড়ার যাত্রাপথের এই বিঘ্নের অবসান ঘটানো জরুরি প্রয়োজন।
দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া: নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এখন জনজীবনের প্রধান সমস্যা। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ছিল অত্যন্ত চড়া। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রব্যমূল্য আরও বেড়েছে।’ নিত্যপণ্যের দাম ‘অত্যন্ত চড়া’র পরও বাড়লে তাকে কী বলা যায়, সেই বিশেষণ খুঁজে পাওয়া কঠিনই বটে। ঠিক তেমনই কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা।
পেঁয়াজ আমদানির শুল্ক কমানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ এসে বাজার ভরে গেছে। ভারত থেকেও আমদানির খবরাখবর প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়। তার পরও পেঁয়াজের দাম কমছে না কেন? ডিম আমদানি উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ডিমের দাম কমছে কি? চাল, আটা, ভোজ্যতেল, মাছ, মুরগি কোনোটিই নয়! মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিগত সরকারের আমলে দায়ী করা হতো সিন্ডিকেটকে। এখন দায়ী করা হবে কাকে? সিন্ডিকেট কি ভেঙে দেওয়া গেছে? না গেলে কেন যায়নি, সে বিষয়ে ভাবতে হবে, এই অশুভ ইঙ্গিত সম্পর্কে মানুষকে বলতে হবে। কারণ গণ-অভ্যুত্থানে মানুষের একটি বড় প্রত্যাশা ছিল দ্রব্যমূল্য কমবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ট্রাকে থাকা অবস্থায়ই কারওয়ান বাজারে চারবার ডিমের হাতবদল হয়। এখন পর্যন্ত এই সরকার কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। শুধু সিন্ডিকেটের সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এই অভ্যুত্থানের প্রাথমিক মাহাত্ম্য কী?’ এই প্রশ্ন শুধু তাঁর নয়, সমগ্র দেশবাসীর। অন্তর্বর্তী সরকারকে কাজ দেখিয়ে এর জবাব দিতে হবে।
‘কোথায় যেন একটা ভয়’: অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একাধিক সভায় একটি কথা বলেছেন—‘এত বড় পরিবর্তনের পরও কোথায় যেন একটা ভয়।’ তিনি ঠিকই বলেছেন। ভয়টা শেখ হাসিনা ফিরে এসে ক্ষমতায় বসবেন এবং গণ-অভ্যুত্থানের সব অর্জন ধ্বংস করে দেবেন, সেটা নয়। ভয়টা ভবিষ্যতে যাঁরা দেশ পরিচালনায় আসবেন তাঁদের নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এবং সব শুভ প্রচেষ্টাও তাঁদের চিন্তা, মনন ও দৃষ্টিভঙ্গি অতীত থেকে ভবিষ্যতের পানে ফেরাতে পারবে কি না, ভয়টা তা নিয়ে। এই ভয়ের নিরসন হতে পারে কার্যকর রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে। আমাদের বিশ্বাস, আমরা সেই পথেই আছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে