মামুনুর রশীদ
বাঙালির কাছে চিরদিনের প্রশ্ন—ঘোড়া আগে না গাড়ি আগে? কোনটা আগে? আগে ঘোড়া কিনে তারপর গাড়িটা বানাতে হবে? নাকি গাড়িটা বানিয়ে তারপর ঘোড়াটা আনব? এ এক অমীমাংসিত প্রশ্ন। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এর একটা সুরাহা হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ঘোড়া আগে, কোথাও গাড়ি আগে। কথাটা যদি ঘুরিয়ে বলি—আগে অবকাঠামো, তারপর জনবল অথবা ব্যবস্থাপনা আর এই অবকাঠামোকে যারা ব্যবহার করবে তাদের সংস্কৃতি।
দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে সর্বত্রই প্রশস্ত রাস্তা হচ্ছে। কিন্তু এই রাস্তার ব্যবহারে ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রণ সঠিক না হওয়ায় যানজট বাড়ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক তাজা প্রাণ রাজপথে মৃত্যুবরণ করছে। যতই পথঘাটের অবকাঠামো হচ্ছে, ততই দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে মানুষের যাতায়াত। ঢাকার রাজপথও অনেকাংশেই প্রশস্ত হয়েছে; বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে ঢাকার পথগুলো বেশ প্রশস্তই হয়েছে, কিন্তু তাতে লাভ কী হলো? যানজট বাড়ছেই।
দুদিন আগে বিমানবন্দর থেকে আমার ধানমন্ডির বাড়ি পর্যন্ত আসতে তিন ঘণ্টা লেগেছে। অথচ একই দূরত্বে কলকাতা শহরেই লাগে আধা ঘণ্টা। এটাই প্রমাণিত যে রাস্তাঘাটের চেয়েও ব্যবস্থাপনা সঠিক করলে সময় কমে আসে। ঢাকার রাস্তার চেয়ে হংকং বা লন্ডনের রাস্তা অনেক বেশি অপ্রশস্ত। কিন্তু সেখানে সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে যানজট কমে আসে। মানুষ রাস্তার যানজটের এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পায়।
বেশি দিনের কথা নয়—সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের এখানে অবকাঠামো নির্মাণের তোড়জোড় ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ২০-২৫ বছর আগে। এর আগে আশির দশকে অনেক বড় বড় হাইওয়ে নির্মিত হয়েছিল, যার ফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগটা সহজ হয়েছে। কিন্তু রাস্তা ব্যবহারকারী, চালক এবং রাস্তা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো ধরনের বোঝাপড়া গড়ে ওঠেনি। এই বোঝাপড়ার চেষ্টাটাও প্রবল দুর্নীতিতে ভরা। পরিবহনের মালিকদের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা। অথচ পৃথিবীর সব দেশেই পরিবহন মানেই সেবা। আর এই জনসেবার কারণে সরকার প্রচুর টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে। টাকা লগ্নির পরিমাণে মুনাফা ততটা আসে না।
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে পরিবহনে বাসই মুখ্য যানবাহন হিসেবে চলে এসেছে। স্বাধীনতার পরপরই রেল যোগাযোগের কথা জরুরিভাবে চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। কিন্তু ওই দশকের শেষেই মিনিবাস, বাস—এসবই মুখ্য পরিবহনের যানবাহন হিসেবে চলে আসে। সেই সঙ্গে চলে আসে ক্ষুদ্র মালিকানা। একটি বাসের মালিকানা পেয়েই সে মুনাফা খুঁজতে থাকে এবং এই মুনাফা খোঁজার লোকেরা একত্র হয়ে যাত্রী সাধারণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেশি বেশি তার ট্রিপ দরকার, ভাড়া বাড়ানো দরকার। যদি ১৯৭২ থেকে গত ৫১ বছরে ভাড়ার ক্রমবর্ধমান উল্লম্ফন দেখি, তাহলে অবাক হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার হবে। তার তুলনায় ট্রেনে ভাড়া এখনো অনেক কম। যাত্রী সাধারণের সঙ্গে পরিবহনশ্রমিকদের দ্বন্দ্ব দিন দিন সংঘাতে পরিণত হচ্ছে। আমাদের চোখের সামনেই ৪০ বছরে কলকাতায় ও দিল্লিতে শহরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রেন। বাস, মিনিবাস, স্কুটার—এসব ব্যবহৃত হচ্ছে ঘর থেকে রেলস্টেশনে যাওয়ার জন্য।
এখানে যে সমস্যা তা হলো, রাত-দিন পরিবহন নিয়ে ভাবনার মানুষ খুবই কম। যাঁরা ভাবেন, তাঁদের হাতে ক্ষমতা নেই। যাদের হাতে ক্ষমতা, তারা নানাভাবে ওই মুনাফালোভী এবং পরিবহন নেতৃত্ব দিয়ে পরিবৃত্ত হয়ে থাকে। আর পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার একটা হুমকিতে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীদের এই পরিবহন খাত থেকে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। ফলে চাঁদাবাজি আইন ভঙ্গ করা এসব পরিবহন সংস্কৃতির একটা বড় প্রয়োজন হিসেবে দেখা দেয়। সরকারিভাবে এই বিশাল পরিবহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুলিশের অদক্ষ সদস্যরা আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতেও অসমর্থ। আবার ক্ষমতাবানদের আইন ভঙ্গ করার একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে কোনো যুক্তি টেকে না। ঢাকা শহরের ক্ষমতাবানদের হাতে জিম্মি থাকে সব সড়ক ব্যবস্থাপনা।
এমন একটি রাজধানী শহর খুঁজে পাওয়া যাবে, যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই? বিবেকহীন ভিআইপিরা এই ট্রাফিক সিগন্যালটাও করতে দিচ্ছে না। ফলে কিছু কনস্টেবলের হাতে চলছে লাখ লাখ মানুষের চলাচলের ভাগ্য। এই দুর্ভাগ্য নিয়ে শিশুরা প্রাণ দিচ্ছে, মানুষের কর্মঘণ্টা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং এর পরিবর্তনের আশু সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে না। নাগরিকেরা নিজেদের অসহায় ভাবতে ভাবতে এর পরিবর্তনের আশা ত্যাগ করে, নানা অবৈধ পথে পরিবহন ব্যবহার করে থাকে। বিআরটিএ বলে বাংলাদেশের বড় বড় শহরে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। বর্তমানে তা ডিজিটাল হলেও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভিড় দেখে অনুমান করা যায়, সেখানে সবকিছু ঠিকমতো চলছে না। এ কথা দুঃখজনক যে আমাদের সংস্কৃতিতে শ্রমজীবীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গাড়ির চালক হিসেবে কোনো মধ্যবিত্ত শিক্ষিত যুবক এগিয়ে আসে না। নিরক্ষর, প্রশিক্ষণহীন চালকের হাতেই লাখ লাখ মানুষের জীবন নির্ভর করে। এই নির্ভরতা কমার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষায় কম হলেও সংস্কৃতিতে, নাগরিক চেতনায় একজন চালক সব জায়গায়ই শ্রদ্ধার মানুষ হিসেবে তার জায়গা করে নিতে পারে। পৃথিবীর কোনো বড় শহরেই গভীর রাতে নির্জন পথে কোনো চালক ট্রাফিক সিগন্যাল ভঙ্গ করে না। এখানে সুযোগ পেলেই একটুখানি সার্জেন্টের অন্যমনস্কতায় দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। ভিআইপি গাড়ির চালকেরা কিছুই পরোয়া করে না। সরকারি গাড়ির চালকেরাও একটা আলাদা ক্ষমতা নিয়ে গাড়ি চালায়। এই বেপরোয়া গাড়ি চালনায় ফলাফলে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলেও এক অদৃশ্য শক্তিতে তারা পার পেয়ে যায়। পরিবহন আইনেও দীর্ঘসূত্রতা আছে। বিচার নিষ্পত্তি শুধু যে দীর্ঘ সময় লাগে তা নয়, শাস্তির ব্যবস্থাও বেশ নমনীয়। আর পরিবহনশ্রমিকেরা তাদের সংগঠিত শক্তিতে আইন প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
আমাদের বিমানবন্দরে ঢোকার এবং বেরোনোর জায়গাগুলোতে একটা হাট বসে যায়। একজন যাত্রীর সঙ্গে বহু মানুষ এসে জড়ো হয় আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে। পুলিশ হিমশিম খেতে থাকে, নিষ্ফল বাঁশি বাজাতে থাকে কিন্তু মানুষের ভিড় তো কমেই না; বরং নানা দিক থেকে যানবাহনের চলাচলের পথও রুদ্ধ করে দেয়। যাত্রীদের বিদায় এবং আগমনকে কোনো নাগরিক দায়িত্ব দিয়ে কেউ বিচার করতে রাজি নয়। এই সংস্কৃতি পরিবর্তনে কোনো ব্যবস্থাও সরকার নেয়নি। কারণ, ক্ষমতাবানদের জন্য ভিআইপি ব্যবস্থা আছে সেখানে। তারা খুব সহজেই বিমানবন্দরে যাতায়াত করতে পারে।
এসব বিষয় রাজনীতিবিদদের কাছে একেবারেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। কারণ, সরকার ও সরকারবিরোধীরা শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। নির্বাচনের রূপরেখায় ভোটারদের আকর্ষণ করার জন্যও এসব কথা কোথাও বলা হয় না। শিক্ষা নিয়ে কথা নেই, স্বাস্থ্য নিয়ে কথা নেই; শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কিছু দুর্বোধ্য কথাবার্তা বলা হয়ে থাকে। একদল দেশপ্রেমী মানুষের সংখ্যা প্রায় শূন্য হতে চলেছে, যারা মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপনের জন্য একটা ব্যবস্থার কথা ভাববে। দলাদলি শুধু রাজনীতিতে, কিন্তু মানুষের জীবনের, ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য কোনো দল নেই। রাজনৈতিক দল ছাড়াও কিছু দল তো গড়ে উঠতে পারে। সে সম্ভাবনা কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
দুই শিক্ষার্থী গাড়িচাপায় মারা যাওয়ার পর শিশু-কিশোরদের মধ্যে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। তারা রাজপথের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নিয়েছিল। এই ঘটনা থেকে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। ওদের অভিভাবকেরা এমনি করেই হয়তো পথে নামবে। কিন্তু সবটাই উল্টো পথে চলে গেল। শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে গেল। কিছুই হলো না, হচ্ছেও না। শিক্ষার্থীদের সেই নির্দোষ স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করলে হয়তো নতুন কিছু বেরিয়ে আসত। কিন্তু সেই সুযোগ আমরা দিইনি; বরং সর্বত্র পেশিশক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। যুক্তি, মেধা ক্রমাগতভাবে পরাজিত হতে চলেছে। অবৈধ অর্থ ছাড়া কোথাও কিছু হওয়ার উপায় নেই। এই জগদ্দল থেকে একমাত্র রক্ষা করতে পারে যুক্তি এবং জ্ঞানের চর্চা। সে পথগুলোও রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
বাঙালির কাছে চিরদিনের প্রশ্ন—ঘোড়া আগে না গাড়ি আগে? কোনটা আগে? আগে ঘোড়া কিনে তারপর গাড়িটা বানাতে হবে? নাকি গাড়িটা বানিয়ে তারপর ঘোড়াটা আনব? এ এক অমীমাংসিত প্রশ্ন। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এর একটা সুরাহা হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ঘোড়া আগে, কোথাও গাড়ি আগে। কথাটা যদি ঘুরিয়ে বলি—আগে অবকাঠামো, তারপর জনবল অথবা ব্যবস্থাপনা আর এই অবকাঠামোকে যারা ব্যবহার করবে তাদের সংস্কৃতি।
দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে সর্বত্রই প্রশস্ত রাস্তা হচ্ছে। কিন্তু এই রাস্তার ব্যবহারে ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রণ সঠিক না হওয়ায় যানজট বাড়ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক তাজা প্রাণ রাজপথে মৃত্যুবরণ করছে। যতই পথঘাটের অবকাঠামো হচ্ছে, ততই দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে মানুষের যাতায়াত। ঢাকার রাজপথও অনেকাংশেই প্রশস্ত হয়েছে; বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে ঢাকার পথগুলো বেশ প্রশস্তই হয়েছে, কিন্তু তাতে লাভ কী হলো? যানজট বাড়ছেই।
দুদিন আগে বিমানবন্দর থেকে আমার ধানমন্ডির বাড়ি পর্যন্ত আসতে তিন ঘণ্টা লেগেছে। অথচ একই দূরত্বে কলকাতা শহরেই লাগে আধা ঘণ্টা। এটাই প্রমাণিত যে রাস্তাঘাটের চেয়েও ব্যবস্থাপনা সঠিক করলে সময় কমে আসে। ঢাকার রাস্তার চেয়ে হংকং বা লন্ডনের রাস্তা অনেক বেশি অপ্রশস্ত। কিন্তু সেখানে সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে যানজট কমে আসে। মানুষ রাস্তার যানজটের এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পায়।
বেশি দিনের কথা নয়—সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের এখানে অবকাঠামো নির্মাণের তোড়জোড় ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ২০-২৫ বছর আগে। এর আগে আশির দশকে অনেক বড় বড় হাইওয়ে নির্মিত হয়েছিল, যার ফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগটা সহজ হয়েছে। কিন্তু রাস্তা ব্যবহারকারী, চালক এবং রাস্তা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো ধরনের বোঝাপড়া গড়ে ওঠেনি। এই বোঝাপড়ার চেষ্টাটাও প্রবল দুর্নীতিতে ভরা। পরিবহনের মালিকদের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা। অথচ পৃথিবীর সব দেশেই পরিবহন মানেই সেবা। আর এই জনসেবার কারণে সরকার প্রচুর টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে। টাকা লগ্নির পরিমাণে মুনাফা ততটা আসে না।
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে পরিবহনে বাসই মুখ্য যানবাহন হিসেবে চলে এসেছে। স্বাধীনতার পরপরই রেল যোগাযোগের কথা জরুরিভাবে চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। কিন্তু ওই দশকের শেষেই মিনিবাস, বাস—এসবই মুখ্য পরিবহনের যানবাহন হিসেবে চলে আসে। সেই সঙ্গে চলে আসে ক্ষুদ্র মালিকানা। একটি বাসের মালিকানা পেয়েই সে মুনাফা খুঁজতে থাকে এবং এই মুনাফা খোঁজার লোকেরা একত্র হয়ে যাত্রী সাধারণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেশি বেশি তার ট্রিপ দরকার, ভাড়া বাড়ানো দরকার। যদি ১৯৭২ থেকে গত ৫১ বছরে ভাড়ার ক্রমবর্ধমান উল্লম্ফন দেখি, তাহলে অবাক হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার হবে। তার তুলনায় ট্রেনে ভাড়া এখনো অনেক কম। যাত্রী সাধারণের সঙ্গে পরিবহনশ্রমিকদের দ্বন্দ্ব দিন দিন সংঘাতে পরিণত হচ্ছে। আমাদের চোখের সামনেই ৪০ বছরে কলকাতায় ও দিল্লিতে শহরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রেন। বাস, মিনিবাস, স্কুটার—এসব ব্যবহৃত হচ্ছে ঘর থেকে রেলস্টেশনে যাওয়ার জন্য।
এখানে যে সমস্যা তা হলো, রাত-দিন পরিবহন নিয়ে ভাবনার মানুষ খুবই কম। যাঁরা ভাবেন, তাঁদের হাতে ক্ষমতা নেই। যাদের হাতে ক্ষমতা, তারা নানাভাবে ওই মুনাফালোভী এবং পরিবহন নেতৃত্ব দিয়ে পরিবৃত্ত হয়ে থাকে। আর পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার একটা হুমকিতে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীদের এই পরিবহন খাত থেকে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। ফলে চাঁদাবাজি আইন ভঙ্গ করা এসব পরিবহন সংস্কৃতির একটা বড় প্রয়োজন হিসেবে দেখা দেয়। সরকারিভাবে এই বিশাল পরিবহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুলিশের অদক্ষ সদস্যরা আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতেও অসমর্থ। আবার ক্ষমতাবানদের আইন ভঙ্গ করার একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে কোনো যুক্তি টেকে না। ঢাকা শহরের ক্ষমতাবানদের হাতে জিম্মি থাকে সব সড়ক ব্যবস্থাপনা।
এমন একটি রাজধানী শহর খুঁজে পাওয়া যাবে, যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই? বিবেকহীন ভিআইপিরা এই ট্রাফিক সিগন্যালটাও করতে দিচ্ছে না। ফলে কিছু কনস্টেবলের হাতে চলছে লাখ লাখ মানুষের চলাচলের ভাগ্য। এই দুর্ভাগ্য নিয়ে শিশুরা প্রাণ দিচ্ছে, মানুষের কর্মঘণ্টা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং এর পরিবর্তনের আশু সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে না। নাগরিকেরা নিজেদের অসহায় ভাবতে ভাবতে এর পরিবর্তনের আশা ত্যাগ করে, নানা অবৈধ পথে পরিবহন ব্যবহার করে থাকে। বিআরটিএ বলে বাংলাদেশের বড় বড় শহরে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। বর্তমানে তা ডিজিটাল হলেও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভিড় দেখে অনুমান করা যায়, সেখানে সবকিছু ঠিকমতো চলছে না। এ কথা দুঃখজনক যে আমাদের সংস্কৃতিতে শ্রমজীবীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গাড়ির চালক হিসেবে কোনো মধ্যবিত্ত শিক্ষিত যুবক এগিয়ে আসে না। নিরক্ষর, প্রশিক্ষণহীন চালকের হাতেই লাখ লাখ মানুষের জীবন নির্ভর করে। এই নির্ভরতা কমার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষায় কম হলেও সংস্কৃতিতে, নাগরিক চেতনায় একজন চালক সব জায়গায়ই শ্রদ্ধার মানুষ হিসেবে তার জায়গা করে নিতে পারে। পৃথিবীর কোনো বড় শহরেই গভীর রাতে নির্জন পথে কোনো চালক ট্রাফিক সিগন্যাল ভঙ্গ করে না। এখানে সুযোগ পেলেই একটুখানি সার্জেন্টের অন্যমনস্কতায় দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। ভিআইপি গাড়ির চালকেরা কিছুই পরোয়া করে না। সরকারি গাড়ির চালকেরাও একটা আলাদা ক্ষমতা নিয়ে গাড়ি চালায়। এই বেপরোয়া গাড়ি চালনায় ফলাফলে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলেও এক অদৃশ্য শক্তিতে তারা পার পেয়ে যায়। পরিবহন আইনেও দীর্ঘসূত্রতা আছে। বিচার নিষ্পত্তি শুধু যে দীর্ঘ সময় লাগে তা নয়, শাস্তির ব্যবস্থাও বেশ নমনীয়। আর পরিবহনশ্রমিকেরা তাদের সংগঠিত শক্তিতে আইন প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
আমাদের বিমানবন্দরে ঢোকার এবং বেরোনোর জায়গাগুলোতে একটা হাট বসে যায়। একজন যাত্রীর সঙ্গে বহু মানুষ এসে জড়ো হয় আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে। পুলিশ হিমশিম খেতে থাকে, নিষ্ফল বাঁশি বাজাতে থাকে কিন্তু মানুষের ভিড় তো কমেই না; বরং নানা দিক থেকে যানবাহনের চলাচলের পথও রুদ্ধ করে দেয়। যাত্রীদের বিদায় এবং আগমনকে কোনো নাগরিক দায়িত্ব দিয়ে কেউ বিচার করতে রাজি নয়। এই সংস্কৃতি পরিবর্তনে কোনো ব্যবস্থাও সরকার নেয়নি। কারণ, ক্ষমতাবানদের জন্য ভিআইপি ব্যবস্থা আছে সেখানে। তারা খুব সহজেই বিমানবন্দরে যাতায়াত করতে পারে।
এসব বিষয় রাজনীতিবিদদের কাছে একেবারেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। কারণ, সরকার ও সরকারবিরোধীরা শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। নির্বাচনের রূপরেখায় ভোটারদের আকর্ষণ করার জন্যও এসব কথা কোথাও বলা হয় না। শিক্ষা নিয়ে কথা নেই, স্বাস্থ্য নিয়ে কথা নেই; শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কিছু দুর্বোধ্য কথাবার্তা বলা হয়ে থাকে। একদল দেশপ্রেমী মানুষের সংখ্যা প্রায় শূন্য হতে চলেছে, যারা মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপনের জন্য একটা ব্যবস্থার কথা ভাববে। দলাদলি শুধু রাজনীতিতে, কিন্তু মানুষের জীবনের, ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য কোনো দল নেই। রাজনৈতিক দল ছাড়াও কিছু দল তো গড়ে উঠতে পারে। সে সম্ভাবনা কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
দুই শিক্ষার্থী গাড়িচাপায় মারা যাওয়ার পর শিশু-কিশোরদের মধ্যে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। তারা রাজপথের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নিয়েছিল। এই ঘটনা থেকে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। ওদের অভিভাবকেরা এমনি করেই হয়তো পথে নামবে। কিন্তু সবটাই উল্টো পথে চলে গেল। শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে গেল। কিছুই হলো না, হচ্ছেও না। শিক্ষার্থীদের সেই নির্দোষ স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করলে হয়তো নতুন কিছু বেরিয়ে আসত। কিন্তু সেই সুযোগ আমরা দিইনি; বরং সর্বত্র পেশিশক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। যুক্তি, মেধা ক্রমাগতভাবে পরাজিত হতে চলেছে। অবৈধ অর্থ ছাড়া কোথাও কিছু হওয়ার উপায় নেই। এই জগদ্দল থেকে একমাত্র রক্ষা করতে পারে যুক্তি এবং জ্ঞানের চর্চা। সে পথগুলোও রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে