মাসুদ উর রহমান
দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়ে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হতে বাঙালি মুসলিম সমাজে যে আগ্রহের আতিশয্য দেখা গিয়েছিল তা ম্রিয়মাণ হতে বেশি সময় লাগেনি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, পীড়ন আর বঞ্চনার ক্রমবর্ধমান কার্যক্রমে হতাশ হয়ে মোহভঙ্গ হয় আপামর জনসাধারণের। আন্দোলন-সংগ্রাম দানা বাঁধতে শুরু করে এবং যার চূড়ান্ত পরিণতি আমাদের গৌরবময় মহান মুক্তিযুদ্ধ। আমরা অর্জন করি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং উড্ডীন করতে সক্ষম হই একটি লাল-সবুজ পতাকা।
যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পুরো দেশ এক হয়েছিল একাত্তরে, অকুতোভয় হয়েছিল মুক্তিকামী জনতা, সেই চেতনা লোপ পেতে শুরু করে এ দেশে রয়ে যাওয়া পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের প্রতিশোধপরায়ণতার মধ্য দিয়ে। পঁচাত্তরের পর উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে বাঙালির ইতিহাস, মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠতে শুরু করে পুরোনো শকুনেরা। আঘাত আসতে শুরু করে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর। চতুরতার সঙ্গে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির চর্চা শুরু হয়, বাড়তে থাকে ধর্মান্ধতা।
দীর্ঘ দুই দশকের এই অপরাজনীতির সুযোগে অধিকাংশ মানুষের মন-মগজে ভারতবিদ্বেষী মনোভাব উন্মেষিত হয়। তারা এই মনোভাব পোষণ করে যে পাকিস্তান নামের মুসলিম রাষ্ট্রটিকে ভেঙে ফেলার নেপথ্যের কারিগর ভারত এবং সেটি করে নিজ স্বার্থে। তারই সংস্করণ মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠকেরা ছিলেন ভারতের দালাল।
পঁচাত্তর থেকে ছিয়ানব্বই—এই দুই দশকে বড় হওয়া প্রজন্ম আজ মাঝ বয়সী। অধিকাংশের বয়স ৫০ থেকে ৬০-এর মধ্যে। তাঁদের সন্তানসন্ততিদের বয়স ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে এবং কারও কারও আছে ১৫-২০ বছরের নাতি-নাতনি! ফলে পাকিস্তান-অনুরাগী যে সংখ্যাটি একাত্তরে ছিল ৫ থেকে ১০ ভাগের মধ্যে, পারিবারিক আবহের কারণে সেই সংখ্যা যদি বলি আজ ৪০ ছুঁই ছুঁই, তাহলে বোধকরি ভুল বলা হবে না। ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ এবং বিপক্ষ শক্তি খুঁজতে হয় আমাদের। এটা বড় দুঃখজনক, ভীষণ লজ্জার।
এই যে পাকিস্তানি ভাবাধারার এই দর্শন ছড়িয়ে পড়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, মূলত তারাই তীব্র ভারতবিদ্বেষী এবং এই তারাই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের হারে উল্লসিত হয়েছে, কুরুচিপূর্ণ কমেন্ট করে, কনটেন্ট বানিয়ে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে সংগত কারণেই ভারতের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকেরা কষ্ট পেয়েছেন। পাওয়ারই কথা।
ভারতীয়দের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে নিচের তথ্যটি জানলে। ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলা হয় তখনো এই বাংলাদেশি মোড়কে পাকিস্তানপ্রেমীরা পাকিস্তানের জয়ে উল্লসিত হয়। তাদের বেহায়াপনা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে একসময় এই তথাকথিত বাংলাদেশিদের পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে গ্যালারিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হয়েছিল। তবে উল্লাসের প্রকাশ থেমে যায়নি। লোকলজ্জার ভয়েই হোক বা বিধিনিষেধে, তা ফেসবুকে না চললেও, বুনো উল্লাস চলে কমেন্ট, কনটেন্ট, ইনবক্সে!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্রিকেটে কি অস্ট্রেলিয়াকে সাপোর্ট করা যাবে না? বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ না হলে, নিশ্চয়ই করা যাবে। এই বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে যেমনটি আমি করেছি। দেশের প্রতি ম্যাক্সওয়েলের এমন ডেডিকেশন, দাপুটে, দুর্দান্ত ইনিংস দেখার পর আমি মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম ট্রফিটি তাঁর হাতেই উঠুক।
এই চল্লিশ ভাগ মানুষের বাইরে অন্তত আরও দশ ভাগ মানুষ ছিল যারা ভারতের হারে খুশি হয়েছে। তবে তাদের খুশি মাত্রা ছাড়ায়নি। তাদের খুশির কারণ আইসিসিতে ভারতের মোড়লিপনা, কয়েকজন ক্রিকেটারের আত্ম-অহমিকা, অক্রিকেটীয় ও দৃষ্টিকটু আচরণ! আর কিছুটা দ্বিপক্ষীয় পাওয়া না-পাওয়ার হতাশায়। এ কথা অনস্বীকার্য যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ছিল অপরিসীম। সেই ঋণ অবশিষ্ট ৬০ ভাগ মানুষ যেমন কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে, তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবেও সেই কৃতজ্ঞতা আমরা প্রকাশ করি সতত-সর্বত্র।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ভারতীয় সৈনিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের আত্মত্যাগ এ দুটি দেশেরই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সাল থেকে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের অবদান স্মরণ করার এবং তাদের সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১১ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। এই প্রক্রিয়াতেই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি এবং রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
আর ওই যে বললাম হতাশা! এর কারণ উল্লেখ করলে বলতে হয়—যে অন্যায্যতায় হতাশ হয়ে আমরা পাকিস্তানবিমুখ হয়েছিলাম, একই কারণ যদি বর্তমানেও ঘটতে থাকে তাহলেই আস্থার সংকট তৈরি হয়, কমতে থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।
প্রতিবেশী ৭টি দেশের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি (১ হাজার ১৭০ কোটি ডলার) সবচেয়ে বেশি। যদিও এ সময়টায় ট্রানজিট থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করার সুযোগসহ অনেক কিছু পেয়েছে ভারত। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক কেবলই দেওয়ার। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’
ভারতকে এত কিছু দেওয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, শুল্ক, আধা শুল্ক ও অশুল্ক প্রাচীর অপসারণ করে বাণিজ্যঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস। সীমান্তে বিএসএফ নির্বিচারে গুলি করে বাংলাদেশিদের মারছে। অথচ ভারতের সীমান্তবর্তী দেশ পাকিস্তান, চীন কিংবা নেপালের সঙ্গে সেসব ঘটছে না। এ ক্ষেত্রে গরু চোরাচালানের দোহাই দেওয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, তেমন কিছুর জন্য তারা জেল দিতে পারে, জরিমানা করতে পারে, হত্যা করবে কেন?
রাজ্য সরকারের দোহাই দিয়ে অন্যায়ভাবে ভারত আমাদের তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এটি হয়? হতে পারে? না হওয়া উচিত? তিস্তা থেকে বাংলাদেশ এক কলসি পানিও আনতে পারেনি। উপরন্তু গঙ্গাচুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের যতটুকু পানি পাওয়ার কথা ছিল, বাংলাদেশ এখন তার অনেক কম পানি পাচ্ছে। ভারতের মতো বিশাল দেশে বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের পরিমাণ সীমিত। তারপরও যে পরিমাণ পণ্য ভারতের আমদানি করার কথা ছিল, সেই পরিমাণ পণ্য তারা আমদানিও করছে না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় ধরলে এই তালিকা আরও দীর্ঘ!
এখন পর্যন্ত ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তির বিষয়টি সেভাবে দৃশ্যমান নয়। সে কারণেই একটা ধারণা বেশ জোরালো যে প্রায় একতরফাভাবে এসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কাজেই তিস্তাসহ ৫৩টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে সুরাহা না হওয়া, সীমান্তে হত্যা শূন্যতে নামাতে না পারাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা না হওয়ায় জনগোষ্ঠীর অসন্তোষ থাকতেই পারে। বিপরীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতায় ভারতের কিছু মানুষও কিন্তু পিছিয়ে ছিল না।
কাজেই সামগ্রিকতার বিচারে দুপক্ষকেই সংযমী হতে হবে। ঠুনকো বিষয়ে বৃহৎ স্বার্থে আঁচড় পড়ুক তা কারোরই কাম্য হওয়া উচিত নয়। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র যত বেশি পারস্পরিক সহযোগিতায় অবতীর্ণ হবে, ততই মঙ্গল। শুধু দ্বিপক্ষীয় বা আঞ্চলিক শান্তি রক্ষার প্রয়োজনে নয়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়ে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হতে বাঙালি মুসলিম সমাজে যে আগ্রহের আতিশয্য দেখা গিয়েছিল তা ম্রিয়মাণ হতে বেশি সময় লাগেনি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, পীড়ন আর বঞ্চনার ক্রমবর্ধমান কার্যক্রমে হতাশ হয়ে মোহভঙ্গ হয় আপামর জনসাধারণের। আন্দোলন-সংগ্রাম দানা বাঁধতে শুরু করে এবং যার চূড়ান্ত পরিণতি আমাদের গৌরবময় মহান মুক্তিযুদ্ধ। আমরা অর্জন করি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং উড্ডীন করতে সক্ষম হই একটি লাল-সবুজ পতাকা।
যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পুরো দেশ এক হয়েছিল একাত্তরে, অকুতোভয় হয়েছিল মুক্তিকামী জনতা, সেই চেতনা লোপ পেতে শুরু করে এ দেশে রয়ে যাওয়া পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের প্রতিশোধপরায়ণতার মধ্য দিয়ে। পঁচাত্তরের পর উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে বাঙালির ইতিহাস, মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠতে শুরু করে পুরোনো শকুনেরা। আঘাত আসতে শুরু করে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর। চতুরতার সঙ্গে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির চর্চা শুরু হয়, বাড়তে থাকে ধর্মান্ধতা।
দীর্ঘ দুই দশকের এই অপরাজনীতির সুযোগে অধিকাংশ মানুষের মন-মগজে ভারতবিদ্বেষী মনোভাব উন্মেষিত হয়। তারা এই মনোভাব পোষণ করে যে পাকিস্তান নামের মুসলিম রাষ্ট্রটিকে ভেঙে ফেলার নেপথ্যের কারিগর ভারত এবং সেটি করে নিজ স্বার্থে। তারই সংস্করণ মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠকেরা ছিলেন ভারতের দালাল।
পঁচাত্তর থেকে ছিয়ানব্বই—এই দুই দশকে বড় হওয়া প্রজন্ম আজ মাঝ বয়সী। অধিকাংশের বয়স ৫০ থেকে ৬০-এর মধ্যে। তাঁদের সন্তানসন্ততিদের বয়স ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে এবং কারও কারও আছে ১৫-২০ বছরের নাতি-নাতনি! ফলে পাকিস্তান-অনুরাগী যে সংখ্যাটি একাত্তরে ছিল ৫ থেকে ১০ ভাগের মধ্যে, পারিবারিক আবহের কারণে সেই সংখ্যা যদি বলি আজ ৪০ ছুঁই ছুঁই, তাহলে বোধকরি ভুল বলা হবে না। ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ এবং বিপক্ষ শক্তি খুঁজতে হয় আমাদের। এটা বড় দুঃখজনক, ভীষণ লজ্জার।
এই যে পাকিস্তানি ভাবাধারার এই দর্শন ছড়িয়ে পড়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, মূলত তারাই তীব্র ভারতবিদ্বেষী এবং এই তারাই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের হারে উল্লসিত হয়েছে, কুরুচিপূর্ণ কমেন্ট করে, কনটেন্ট বানিয়ে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে সংগত কারণেই ভারতের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকেরা কষ্ট পেয়েছেন। পাওয়ারই কথা।
ভারতীয়দের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে নিচের তথ্যটি জানলে। ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলা হয় তখনো এই বাংলাদেশি মোড়কে পাকিস্তানপ্রেমীরা পাকিস্তানের জয়ে উল্লসিত হয়। তাদের বেহায়াপনা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে একসময় এই তথাকথিত বাংলাদেশিদের পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে গ্যালারিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হয়েছিল। তবে উল্লাসের প্রকাশ থেমে যায়নি। লোকলজ্জার ভয়েই হোক বা বিধিনিষেধে, তা ফেসবুকে না চললেও, বুনো উল্লাস চলে কমেন্ট, কনটেন্ট, ইনবক্সে!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্রিকেটে কি অস্ট্রেলিয়াকে সাপোর্ট করা যাবে না? বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ না হলে, নিশ্চয়ই করা যাবে। এই বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে যেমনটি আমি করেছি। দেশের প্রতি ম্যাক্সওয়েলের এমন ডেডিকেশন, দাপুটে, দুর্দান্ত ইনিংস দেখার পর আমি মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম ট্রফিটি তাঁর হাতেই উঠুক।
এই চল্লিশ ভাগ মানুষের বাইরে অন্তত আরও দশ ভাগ মানুষ ছিল যারা ভারতের হারে খুশি হয়েছে। তবে তাদের খুশি মাত্রা ছাড়ায়নি। তাদের খুশির কারণ আইসিসিতে ভারতের মোড়লিপনা, কয়েকজন ক্রিকেটারের আত্ম-অহমিকা, অক্রিকেটীয় ও দৃষ্টিকটু আচরণ! আর কিছুটা দ্বিপক্ষীয় পাওয়া না-পাওয়ার হতাশায়। এ কথা অনস্বীকার্য যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ছিল অপরিসীম। সেই ঋণ অবশিষ্ট ৬০ ভাগ মানুষ যেমন কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে, তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবেও সেই কৃতজ্ঞতা আমরা প্রকাশ করি সতত-সর্বত্র।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ভারতীয় সৈনিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের আত্মত্যাগ এ দুটি দেশেরই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সাল থেকে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের অবদান স্মরণ করার এবং তাদের সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১১ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। এই প্রক্রিয়াতেই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি এবং রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
আর ওই যে বললাম হতাশা! এর কারণ উল্লেখ করলে বলতে হয়—যে অন্যায্যতায় হতাশ হয়ে আমরা পাকিস্তানবিমুখ হয়েছিলাম, একই কারণ যদি বর্তমানেও ঘটতে থাকে তাহলেই আস্থার সংকট তৈরি হয়, কমতে থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।
প্রতিবেশী ৭টি দেশের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি (১ হাজার ১৭০ কোটি ডলার) সবচেয়ে বেশি। যদিও এ সময়টায় ট্রানজিট থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করার সুযোগসহ অনেক কিছু পেয়েছে ভারত। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক কেবলই দেওয়ার। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’
ভারতকে এত কিছু দেওয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, শুল্ক, আধা শুল্ক ও অশুল্ক প্রাচীর অপসারণ করে বাণিজ্যঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস। সীমান্তে বিএসএফ নির্বিচারে গুলি করে বাংলাদেশিদের মারছে। অথচ ভারতের সীমান্তবর্তী দেশ পাকিস্তান, চীন কিংবা নেপালের সঙ্গে সেসব ঘটছে না। এ ক্ষেত্রে গরু চোরাচালানের দোহাই দেওয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, তেমন কিছুর জন্য তারা জেল দিতে পারে, জরিমানা করতে পারে, হত্যা করবে কেন?
রাজ্য সরকারের দোহাই দিয়ে অন্যায়ভাবে ভারত আমাদের তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এটি হয়? হতে পারে? না হওয়া উচিত? তিস্তা থেকে বাংলাদেশ এক কলসি পানিও আনতে পারেনি। উপরন্তু গঙ্গাচুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের যতটুকু পানি পাওয়ার কথা ছিল, বাংলাদেশ এখন তার অনেক কম পানি পাচ্ছে। ভারতের মতো বিশাল দেশে বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের পরিমাণ সীমিত। তারপরও যে পরিমাণ পণ্য ভারতের আমদানি করার কথা ছিল, সেই পরিমাণ পণ্য তারা আমদানিও করছে না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় ধরলে এই তালিকা আরও দীর্ঘ!
এখন পর্যন্ত ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তির বিষয়টি সেভাবে দৃশ্যমান নয়। সে কারণেই একটা ধারণা বেশ জোরালো যে প্রায় একতরফাভাবে এসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কাজেই তিস্তাসহ ৫৩টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে সুরাহা না হওয়া, সীমান্তে হত্যা শূন্যতে নামাতে না পারাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা না হওয়ায় জনগোষ্ঠীর অসন্তোষ থাকতেই পারে। বিপরীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতায় ভারতের কিছু মানুষও কিন্তু পিছিয়ে ছিল না।
কাজেই সামগ্রিকতার বিচারে দুপক্ষকেই সংযমী হতে হবে। ঠুনকো বিষয়ে বৃহৎ স্বার্থে আঁচড় পড়ুক তা কারোরই কাম্য হওয়া উচিত নয়। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র যত বেশি পারস্পরিক সহযোগিতায় অবতীর্ণ হবে, ততই মঙ্গল। শুধু দ্বিপক্ষীয় বা আঞ্চলিক শান্তি রক্ষার প্রয়োজনে নয়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩৩ মিনিট আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩৯ মিনিট আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
১ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ ঘণ্টা আগে