মোনায়েম সরকার
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমাদের দেশের অন্যতম দুটি বড় ও জনপ্রিয় দল। তবে দল দুটির জীবনবৃত্তান্ত এক রকম নয়। আওয়ামী লীগের জন্ম মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের মধ্য থেকে। আর বিএনপির জন্ম ক্ষমতার বৃত্তে থেকে ক্ষমতালোভীদের প্রয়োজনে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। বিএনপির জন্ম স্বাধীনতার পর, সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমান এই দলের প্রতিষ্ঠাতা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুই দলেরই দেশ শাসনের অভিজ্ঞতা আছে। এর বাইরে আরেকটি শাসক দল আরেক সামরিক একনায়ক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি। এখন দেশের মানুষ মূলত হয় আওয়ামী লীগ, না হয় বিএনপির সমর্থক। এর বাইরে আরও অনেক রাজনৈতিক দল আছে, কিন্তু সেই সব দলের জনসমর্থন তেমন নেই। বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে একসময় সিপিবির জনসমর্থন দৃশ্যমান হয়ে উঠলেও এখন এই দলের শক্তিসামর্থ্য ক্রমহ্রাসমান। সিপিবি ছাড়াও দেশে আরও বামপন্থী দল আছে। তবে সবগুলোরই বনসাই দশা।
স্বাধীনতার পর দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হলেও জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দেশে অনেক ইসলামি দল জন্ম নিয়েছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী জামায়াত-মুসলিম লীগের মতো দলও এখন রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা দলগুলো একটি দলের ছাতার নিচে এলে তাদের শক্তি খুব উপেক্ষা করার মতো হতো না বলেই আমার ধারণা।
দেশের রাজনীতি এখন মোটা দাগে দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, অন্য ভাগের নেতৃত্বে বিএনপি। ডানপন্থী ও বামপন্থী দলগুলো এ দুই দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাববলয়ে আছে। কোনো কোনো দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে সমদূরত্বের নীতির কথা বললেও তাদের রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবে হয় আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়, না হলে বিএনপির। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও দলগুলোর এই চিত্রই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত ২৬টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আর বাকিগুলোর অবস্থান ভোটের বিরুদ্ধে।
নির্বাচনে ছোট দলগুলোর মধ্যে কারা অংশ নিচ্ছে বা নিচ্ছে না, তা নিয়ে দেশের মানুষের খুব আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। মানুষের আগ্রহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিয়ে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ভোট নিয়ে মানুষের উৎসাহ একটু কম হওয়ারই কথা। তবে এবার ভোটের হাওয়া গরম হয়ে উঠবে অন্য কিছু কারণে। প্রথম কারণ জোট বা মহাজোটের ব্যানারে ভোট হবে কি না। হলে মিত্রদের জন্য আওয়ামী লীগ কতটা আসন ছাড়বে। দ্বিতীয় আরেকটি কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার অপবাদ ঘোচাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করায় যত স্বতন্ত্র প্রার্থী দেখা যাচ্ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত দলের মনোনীত প্রার্থীদের নাকানিচুবানি অবস্থা না হয়! মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর আসল চিত্রটা ফুটে উঠবে। তখন না হয় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাবে। আজকের আলোচনাটা সীমাবদ্ধ রাখি বড় দুই দল নিয়ে।
বিএনপি ক্ষমতার রাজনীতি করা দল। অথচ দলটি ক্ষমতার বাইরে আছে ১৭ বছর। এবারও নির্বাচনে না যাওয়ায় এটা বলা যায় যে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘ হবে। আন্দোলন করে সরকারপতনের আশায় আছে বিএনপি। আন্দোলনে বিএনপির জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। কারণ বিএনপি আন্দোলনের দল নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দলের ঝুলিতে কোনো সফল গণ-আন্দোলন করার রেকর্ড নেই। বিএনপি এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। আগামী নির্বাচন বিএনপি ঠেকাতে পারবে বলেও মনে হয় না। অকার্যকর ও দুর্বল অবরোধ-হরতাল দিয়ে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। নেতা-কর্মীরা যেভাবে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাতে আন্দোলনে আর গতি সঞ্চারের আশু কোনো সম্ভাবনা নেই।
তাই বিএনপিকে আপাতত পরাজয় স্বীকার করে পরবর্তী কৌশল সাজাতে হবে। কিন্তু তাতে দ্রুত সুফল পাওয়ার কোনো আশা নেই।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে বিএনপির মূল শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর আপসহীন ভাবমূর্তি বিএনপির জন্য বড় পুঁজি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সেই পুঁজি নিঃশেষ হয়েছে আগেই। এখন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। শারীরিক অসুস্থতা, আইনি জটিলতাসহ পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি রাজনীতিতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন, সেটা নিশ্চিত নয়। খালেদা জিয়ার অবর্তমানে একক কর্তৃত্ব ধরে রেখে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আইনের দৃষ্টিতে ‘পলাতক’ তারেক রহমান। তিনিও দণ্ডিত আসামি। দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে আছেন। দেশে ফিরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার অবস্থায় তিনি আছেন বলে শোনা যায় না। এই অবস্থায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল, সন্দেহ-সংশয় ও সমন্বয়হীনতার বিষয়টি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে অস্পষ্ট নয়।
সে জন্যই এখন কারও কারও মনে প্রশ্ন উঠছে, বিএনপির কি আর উত্থানের সম্ভাবনা নেই? অথবা বিএনপি কি মুসলিম লীগের পরিণতি বরণ করবে? আমরা সবাই জানি, মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেও পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বাঙালির স্বার্থবিরোধী অবস্থান নিয়ে মুসলিম লীগ দ্রুতই এই ভূখণ্ডে নিজের কবর রচনা করে। তারপর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। মুসলিম লীগ নামে দল বাংলাদেশে এখনো আছে, কিন্তু একেবারেই নাম ও সাইনবোর্ডসর্বস্ব।
বিএনপির জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার বিষয়টি একটু ফিরে দেখা যেতে পারে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনি প্রথম ব্যক্তি, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সেনাপতি থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার সৌভাগ্যের অধিকারী। শুধু তা-ই নয়, ’৭৫-পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধারার রাজনীতি চলছে, বলতে গেলে তার প্রায় সবকিছুর সূচনা করেছেন তিনি। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হয়েও বিভিন্ন বিপরীতমুখী আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলমতের লোক নিয়ে একটি রাজনৈতিক ‘ককটেল’ পার্টি গড়ে তোলেন, যার নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তিনিই প্রথম নানা ধরনের সুবিধাবাদীদের ধরে এনে বসান রাজনৈতিক উচ্চাসনে। রাজনীতিকে পরিণত করেন ক্যারিকেচারে।
জিয়া রাষ্ট্রপতি হিসেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন ১৯৭৮ সালের ৩ জুন, জেনারেল ওসমানীকে পরাজিত করে। সেই ভোটেও কারচুপি হয়েছিল। তবে কারচুপি না হলেও জিততেন হয়তো জিয়াই। কারণ তত দিনে দেশবাসীর কাছে ভারসাম্যের নীতির মানুষ হিসেবে একটি বিশেষ ‘ইমেজ’ সৃষ্টি করে ফেলেছেন জিয়া।
একদিকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ভাবমূর্তিকে পুরোপুরি ব্যবহার করেন, অন্যদিকে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রসারের দুয়ার খুলে দেন। অরাজনৈতিক ব্যক্তি, সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, সরকারি আমলাদের মন্ত্রী বানানোর প্রক্রিয়া তিনিই শুরু করেন। যাঁরা জীবনে কোনো দিন মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন না, রাজনীতির ময়দানে বিচরণ করবেন বলে ভাবতেন না, জিয়াউর রহমান তাঁদের কুড়িয়ে এনে মন্ত্রী বানিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতা বানিয়েছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালির শীর্ষ ও খ্যাতিমান নেতারা এই দলের গৌরবের পতাকা বহন করছেন। সব থেকে বড় কথা, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই দলের নাড়ি পোঁতা হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ এখন অবিভাজ্য নাম। আওয়ামী লীগের বিকাশ ও উত্থান অনেক বন্ধুর পথ ধরেই হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের নাম মুছে ফলার যে ঘৃণ্য নীলনকশা তৈরি করা হয়েছিল, তা প্রতিহত ও বানচাল করা সম্ভব হয়েছে।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক; মহাসচিব, বিএফডিআর
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমাদের দেশের অন্যতম দুটি বড় ও জনপ্রিয় দল। তবে দল দুটির জীবনবৃত্তান্ত এক রকম নয়। আওয়ামী লীগের জন্ম মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের মধ্য থেকে। আর বিএনপির জন্ম ক্ষমতার বৃত্তে থেকে ক্ষমতালোভীদের প্রয়োজনে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। বিএনপির জন্ম স্বাধীনতার পর, সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমান এই দলের প্রতিষ্ঠাতা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুই দলেরই দেশ শাসনের অভিজ্ঞতা আছে। এর বাইরে আরেকটি শাসক দল আরেক সামরিক একনায়ক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি। এখন দেশের মানুষ মূলত হয় আওয়ামী লীগ, না হয় বিএনপির সমর্থক। এর বাইরে আরও অনেক রাজনৈতিক দল আছে, কিন্তু সেই সব দলের জনসমর্থন তেমন নেই। বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে একসময় সিপিবির জনসমর্থন দৃশ্যমান হয়ে উঠলেও এখন এই দলের শক্তিসামর্থ্য ক্রমহ্রাসমান। সিপিবি ছাড়াও দেশে আরও বামপন্থী দল আছে। তবে সবগুলোরই বনসাই দশা।
স্বাধীনতার পর দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হলেও জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দেশে অনেক ইসলামি দল জন্ম নিয়েছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী জামায়াত-মুসলিম লীগের মতো দলও এখন রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা দলগুলো একটি দলের ছাতার নিচে এলে তাদের শক্তি খুব উপেক্ষা করার মতো হতো না বলেই আমার ধারণা।
দেশের রাজনীতি এখন মোটা দাগে দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, অন্য ভাগের নেতৃত্বে বিএনপি। ডানপন্থী ও বামপন্থী দলগুলো এ দুই দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাববলয়ে আছে। কোনো কোনো দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে সমদূরত্বের নীতির কথা বললেও তাদের রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবে হয় আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়, না হলে বিএনপির। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও দলগুলোর এই চিত্রই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তত ২৬টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আর বাকিগুলোর অবস্থান ভোটের বিরুদ্ধে।
নির্বাচনে ছোট দলগুলোর মধ্যে কারা অংশ নিচ্ছে বা নিচ্ছে না, তা নিয়ে দেশের মানুষের খুব আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। মানুষের আগ্রহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিয়ে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ভোট নিয়ে মানুষের উৎসাহ একটু কম হওয়ারই কথা। তবে এবার ভোটের হাওয়া গরম হয়ে উঠবে অন্য কিছু কারণে। প্রথম কারণ জোট বা মহাজোটের ব্যানারে ভোট হবে কি না। হলে মিত্রদের জন্য আওয়ামী লীগ কতটা আসন ছাড়বে। দ্বিতীয় আরেকটি কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার অপবাদ ঘোচাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করায় যত স্বতন্ত্র প্রার্থী দেখা যাচ্ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত দলের মনোনীত প্রার্থীদের নাকানিচুবানি অবস্থা না হয়! মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর আসল চিত্রটা ফুটে উঠবে। তখন না হয় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাবে। আজকের আলোচনাটা সীমাবদ্ধ রাখি বড় দুই দল নিয়ে।
বিএনপি ক্ষমতার রাজনীতি করা দল। অথচ দলটি ক্ষমতার বাইরে আছে ১৭ বছর। এবারও নির্বাচনে না যাওয়ায় এটা বলা যায় যে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘ হবে। আন্দোলন করে সরকারপতনের আশায় আছে বিএনপি। আন্দোলনে বিএনপির জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। কারণ বিএনপি আন্দোলনের দল নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দলের ঝুলিতে কোনো সফল গণ-আন্দোলন করার রেকর্ড নেই। বিএনপি এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। আগামী নির্বাচন বিএনপি ঠেকাতে পারবে বলেও মনে হয় না। অকার্যকর ও দুর্বল অবরোধ-হরতাল দিয়ে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। নেতা-কর্মীরা যেভাবে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাতে আন্দোলনে আর গতি সঞ্চারের আশু কোনো সম্ভাবনা নেই।
তাই বিএনপিকে আপাতত পরাজয় স্বীকার করে পরবর্তী কৌশল সাজাতে হবে। কিন্তু তাতে দ্রুত সুফল পাওয়ার কোনো আশা নেই।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে বিএনপির মূল শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর আপসহীন ভাবমূর্তি বিএনপির জন্য বড় পুঁজি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সেই পুঁজি নিঃশেষ হয়েছে আগেই। এখন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। শারীরিক অসুস্থতা, আইনি জটিলতাসহ পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি রাজনীতিতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন, সেটা নিশ্চিত নয়। খালেদা জিয়ার অবর্তমানে একক কর্তৃত্ব ধরে রেখে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আইনের দৃষ্টিতে ‘পলাতক’ তারেক রহমান। তিনিও দণ্ডিত আসামি। দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে আছেন। দেশে ফিরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার অবস্থায় তিনি আছেন বলে শোনা যায় না। এই অবস্থায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল, সন্দেহ-সংশয় ও সমন্বয়হীনতার বিষয়টি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে অস্পষ্ট নয়।
সে জন্যই এখন কারও কারও মনে প্রশ্ন উঠছে, বিএনপির কি আর উত্থানের সম্ভাবনা নেই? অথবা বিএনপি কি মুসলিম লীগের পরিণতি বরণ করবে? আমরা সবাই জানি, মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেও পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বাঙালির স্বার্থবিরোধী অবস্থান নিয়ে মুসলিম লীগ দ্রুতই এই ভূখণ্ডে নিজের কবর রচনা করে। তারপর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। মুসলিম লীগ নামে দল বাংলাদেশে এখনো আছে, কিন্তু একেবারেই নাম ও সাইনবোর্ডসর্বস্ব।
বিএনপির জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার বিষয়টি একটু ফিরে দেখা যেতে পারে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনি প্রথম ব্যক্তি, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সেনাপতি থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার সৌভাগ্যের অধিকারী। শুধু তা-ই নয়, ’৭৫-পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধারার রাজনীতি চলছে, বলতে গেলে তার প্রায় সবকিছুর সূচনা করেছেন তিনি। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হয়েও বিভিন্ন বিপরীতমুখী আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলমতের লোক নিয়ে একটি রাজনৈতিক ‘ককটেল’ পার্টি গড়ে তোলেন, যার নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তিনিই প্রথম নানা ধরনের সুবিধাবাদীদের ধরে এনে বসান রাজনৈতিক উচ্চাসনে। রাজনীতিকে পরিণত করেন ক্যারিকেচারে।
জিয়া রাষ্ট্রপতি হিসেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন ১৯৭৮ সালের ৩ জুন, জেনারেল ওসমানীকে পরাজিত করে। সেই ভোটেও কারচুপি হয়েছিল। তবে কারচুপি না হলেও জিততেন হয়তো জিয়াই। কারণ তত দিনে দেশবাসীর কাছে ভারসাম্যের নীতির মানুষ হিসেবে একটি বিশেষ ‘ইমেজ’ সৃষ্টি করে ফেলেছেন জিয়া।
একদিকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ভাবমূর্তিকে পুরোপুরি ব্যবহার করেন, অন্যদিকে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রসারের দুয়ার খুলে দেন। অরাজনৈতিক ব্যক্তি, সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, সরকারি আমলাদের মন্ত্রী বানানোর প্রক্রিয়া তিনিই শুরু করেন। যাঁরা জীবনে কোনো দিন মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন না, রাজনীতির ময়দানে বিচরণ করবেন বলে ভাবতেন না, জিয়াউর রহমান তাঁদের কুড়িয়ে এনে মন্ত্রী বানিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতা বানিয়েছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালির শীর্ষ ও খ্যাতিমান নেতারা এই দলের গৌরবের পতাকা বহন করছেন। সব থেকে বড় কথা, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই দলের নাড়ি পোঁতা হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ এখন অবিভাজ্য নাম। আওয়ামী লীগের বিকাশ ও উত্থান অনেক বন্ধুর পথ ধরেই হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের নাম মুছে ফলার যে ঘৃণ্য নীলনকশা তৈরি করা হয়েছিল, তা প্রতিহত ও বানচাল করা সম্ভব হয়েছে।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক; মহাসচিব, বিএফডিআর
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ ঘণ্টা আগে