মো. রফিকুজামান
বাংলা সাহিত্যে ও সংগীতে এক অতিপরিচিত, অনন্য ও উজ্জ্বল নাম অতুলপ্রসাদ সেন। হাজার বছরের বাংলা গানের ধারায় বাণী ও সুরে তিনি সঞ্চার করেছেন একটি স্বকীয় মাত্রা। কেবল গীতিকার হিসেবেই নন—রাজনীতিবিদ, সমাজ-সংস্কারক, শিক্ষানুরাগী, সাহিত্য-সংগঠক, আইনজ্ঞ এবং সর্বোপরি একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবেও বাঙালির কাছে তিনি সমধিক পরিচিত। তাঁর গানের সংখ্যা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো বিপুল নয়; মাত্র ২০৮টি গানের রচয়িতা তিনি। তবু এই স্বল্পসংখ্যক গানের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয়েছে অতুল প্রতিভার স্বকীয়তা। দুঃখ-যন্ত্রণা আর প্রবঞ্চনা-প্রতারণাপীড়িত বাঙালিকে তিনি শুনিয়েছেন বেদনাবিজয়ী সান্ত্বনা সংগীত। সেইসব সংগীত প্রতিভাসিত হয় আশা আর আশ্বাস, সান্ত্বনা আর শুশ্রূষা আর ধৈর্যের এক অফুরান উৎসরূপে।
বাঙালি পঞ্চকবির অন্যতম অতুলপ্রসাদের জন্ম ১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর, ঢাকায় তাঁর মাতুলালয়ে। খুব অল্প বয়সে পিতৃহারা হওয়ার পর থেকে মাতামহের সান্নিধ্যে বেড়ে উঠতে থাকেন। আর মাতামহের প্রভাবেই তাঁর নিজের মধ্যে গড়ে ওঠে সংগীতপ্রীতি।
লন্ডন থেকে আইন পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৯৪ সালে তিনি বাংলায় ফিরে আসেন এবং রংপুর ও কলকাতায় অনুশীলন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি লক্ষ্ণৌতে চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ী হন। লক্ষ্ণৌতে তিনি যেখানে বাস করতেন, সেখানকার রাস্তার নামকরণ করা হয় তাঁর নামে, আর সেটা করা হয় তাঁর জীবদ্দশাতেই। অতুলপ্রসাদের উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ তিনি স্থানীয় জনসাধারণের সেবায় ব্যয় করেন। তাঁর বাড়ি এবং গ্রন্থস্বত্বও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করে গেছেন।
ব্যারিস্টার হিসেবে নয়, বাংলাভাষীদের কাছে অতুলপ্রসাদ সেন প্রধানত একজন সংগীতজ্ঞ ও সুরকার হিসেবেই পরিচিত। মূলত স্বদেশি সংগীত, ভক্তিগীতি ও প্রেমের গান—এই তিন ধারায় তাঁর গানগুলো বিভক্ত। তবে তাঁর ব্যক্তিজীবনের বেদনা সব ধরনের গানেই কম-বেশি প্রভাব ফেলেছে। এ জন্য তাঁর অধিকাংশ গানই হয়ে উঠেছে করুণ-রসপ্রধান।
অতুলপ্রসাদ খেয়াল, ঠুমরি এবং দাদরার মতো দ্রুতগতির হিন্দুস্তানি সুরগুলো দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন। বাংলা সংগীতে ঠুমরি শৈলী প্রবর্তনের কৃতিত্ব তাঁর। তিনি বাংলা ভাষায় গজল প্রবর্তনেরও পথপ্রদর্শক। উর্দু ও ফার্সি গজলের ওস্তাদদের সঙ্গে অতুলপ্রসাদের পরিচিতি তাঁকে এই বিশেষ শৈলীটি বাংলা সংগীতে আনার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি বাংলায় প্রায় ছয় বা সাতটি গজল তৈরি করেন এবং বাংলা সংগীতের একটি ধারার পথিকৃৎ করেন যা পরবর্তী সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের অবদানে বেশ সমৃদ্ধ হয়।
তাঁর গানগুলো ‘অতুলপ্রসাদের গান’ নামে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত। অতুলপ্রসাদ রচিত ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’ গানটি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়া উপলক্ষে ১৯১৩ সালে লেখা এই গানটিতে তিনি বাঙালি এবং বাংলা ভাষার প্রতি গভীর প্রেম ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মাতৃভাষার প্রতি প্রেমপূর্ণ সংগীতটি বাঙালির প্রাণে আজও ভাষাপ্রেমে গভীর উদ্দীপনা সঞ্চার করে এবং গানটির আবেদন আজও অম্লান। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, বাউল, কীর্তন, ঠুমরি, রাগপ্রধান সব ধরনের সুর, তাল ও লয়ের সমন্বয়ে আজন্ম তিনি এক স্বতন্ত্র সংগীতের সাধনা করেছেন। সে কারণেই সমকালীন গীতিকারদের তুলনায় সীমিতসংখ্যক সংগীত রচনা করেও বাংলা গানের জগতে অতুলপ্রসাদ নিজস্ব একটি আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন।
অতুলপ্রসাদ ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট মারা যান লক্ষ্ণৌতে। সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য হয়। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন কাওরাইদ (কাওরাদি) ব্রহ্ম মন্দিরের পাশে সমাধিস্থলে তাঁর চিতাভস্ম সমাহিত করা হয়। এখানে একটি স্মৃতিফলক আছে, যেখানে লেখা ছিল—‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা! /তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!’ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তখনকার স্মৃতিফলকটি পাকিস্তানি সেনারা ভেঙে ফেলে। পরে আবার নতুন করে স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করা হয়।
মো. রফিকুজামান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও রেজিস্ট্রার, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি
বাংলা সাহিত্যে ও সংগীতে এক অতিপরিচিত, অনন্য ও উজ্জ্বল নাম অতুলপ্রসাদ সেন। হাজার বছরের বাংলা গানের ধারায় বাণী ও সুরে তিনি সঞ্চার করেছেন একটি স্বকীয় মাত্রা। কেবল গীতিকার হিসেবেই নন—রাজনীতিবিদ, সমাজ-সংস্কারক, শিক্ষানুরাগী, সাহিত্য-সংগঠক, আইনজ্ঞ এবং সর্বোপরি একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবেও বাঙালির কাছে তিনি সমধিক পরিচিত। তাঁর গানের সংখ্যা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো বিপুল নয়; মাত্র ২০৮টি গানের রচয়িতা তিনি। তবু এই স্বল্পসংখ্যক গানের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয়েছে অতুল প্রতিভার স্বকীয়তা। দুঃখ-যন্ত্রণা আর প্রবঞ্চনা-প্রতারণাপীড়িত বাঙালিকে তিনি শুনিয়েছেন বেদনাবিজয়ী সান্ত্বনা সংগীত। সেইসব সংগীত প্রতিভাসিত হয় আশা আর আশ্বাস, সান্ত্বনা আর শুশ্রূষা আর ধৈর্যের এক অফুরান উৎসরূপে।
বাঙালি পঞ্চকবির অন্যতম অতুলপ্রসাদের জন্ম ১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর, ঢাকায় তাঁর মাতুলালয়ে। খুব অল্প বয়সে পিতৃহারা হওয়ার পর থেকে মাতামহের সান্নিধ্যে বেড়ে উঠতে থাকেন। আর মাতামহের প্রভাবেই তাঁর নিজের মধ্যে গড়ে ওঠে সংগীতপ্রীতি।
লন্ডন থেকে আইন পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৯৪ সালে তিনি বাংলায় ফিরে আসেন এবং রংপুর ও কলকাতায় অনুশীলন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি লক্ষ্ণৌতে চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ী হন। লক্ষ্ণৌতে তিনি যেখানে বাস করতেন, সেখানকার রাস্তার নামকরণ করা হয় তাঁর নামে, আর সেটা করা হয় তাঁর জীবদ্দশাতেই। অতুলপ্রসাদের উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ তিনি স্থানীয় জনসাধারণের সেবায় ব্যয় করেন। তাঁর বাড়ি এবং গ্রন্থস্বত্বও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করে গেছেন।
ব্যারিস্টার হিসেবে নয়, বাংলাভাষীদের কাছে অতুলপ্রসাদ সেন প্রধানত একজন সংগীতজ্ঞ ও সুরকার হিসেবেই পরিচিত। মূলত স্বদেশি সংগীত, ভক্তিগীতি ও প্রেমের গান—এই তিন ধারায় তাঁর গানগুলো বিভক্ত। তবে তাঁর ব্যক্তিজীবনের বেদনা সব ধরনের গানেই কম-বেশি প্রভাব ফেলেছে। এ জন্য তাঁর অধিকাংশ গানই হয়ে উঠেছে করুণ-রসপ্রধান।
অতুলপ্রসাদ খেয়াল, ঠুমরি এবং দাদরার মতো দ্রুতগতির হিন্দুস্তানি সুরগুলো দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন। বাংলা সংগীতে ঠুমরি শৈলী প্রবর্তনের কৃতিত্ব তাঁর। তিনি বাংলা ভাষায় গজল প্রবর্তনেরও পথপ্রদর্শক। উর্দু ও ফার্সি গজলের ওস্তাদদের সঙ্গে অতুলপ্রসাদের পরিচিতি তাঁকে এই বিশেষ শৈলীটি বাংলা সংগীতে আনার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি বাংলায় প্রায় ছয় বা সাতটি গজল তৈরি করেন এবং বাংলা সংগীতের একটি ধারার পথিকৃৎ করেন যা পরবর্তী সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের অবদানে বেশ সমৃদ্ধ হয়।
তাঁর গানগুলো ‘অতুলপ্রসাদের গান’ নামে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত। অতুলপ্রসাদ রচিত ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’ গানটি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়া উপলক্ষে ১৯১৩ সালে লেখা এই গানটিতে তিনি বাঙালি এবং বাংলা ভাষার প্রতি গভীর প্রেম ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মাতৃভাষার প্রতি প্রেমপূর্ণ সংগীতটি বাঙালির প্রাণে আজও ভাষাপ্রেমে গভীর উদ্দীপনা সঞ্চার করে এবং গানটির আবেদন আজও অম্লান। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, বাউল, কীর্তন, ঠুমরি, রাগপ্রধান সব ধরনের সুর, তাল ও লয়ের সমন্বয়ে আজন্ম তিনি এক স্বতন্ত্র সংগীতের সাধনা করেছেন। সে কারণেই সমকালীন গীতিকারদের তুলনায় সীমিতসংখ্যক সংগীত রচনা করেও বাংলা গানের জগতে অতুলপ্রসাদ নিজস্ব একটি আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন।
অতুলপ্রসাদ ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট মারা যান লক্ষ্ণৌতে। সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য হয়। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন কাওরাইদ (কাওরাদি) ব্রহ্ম মন্দিরের পাশে সমাধিস্থলে তাঁর চিতাভস্ম সমাহিত করা হয়। এখানে একটি স্মৃতিফলক আছে, যেখানে লেখা ছিল—‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা! /তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!’ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তখনকার স্মৃতিফলকটি পাকিস্তানি সেনারা ভেঙে ফেলে। পরে আবার নতুন করে স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করা হয়।
মো. রফিকুজামান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও রেজিস্ট্রার, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে