প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কাল, প্রশ্নকর্তা যোগাযোগের বাইরে

উবায়দুল্লাহ বাদল ও রাহুল শর্মা, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ৫৭

বরিশাল, রংপুর ও সিলেট বিভাগের ১৮ জেলার ৭২টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৭৭২টি পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এসব পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৩ লাখ ৬০ হাজার প্রার্থী। প্রতি পদের জন্য লড়বেন ১৩০ জন।

আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় ৫০৩টি কেন্দ্রে একযোগে এক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) হবে। লিখিত পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রশ্নপত্র চূড়ান্তকারী কর্মকর্তা একটি নির্দিষ্ট স্থানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকবেন। প্রশ্ন প্রণয়নের শুরু থেকে তিনি সেলফোনসহ সব ধরনের যোগাযোগের বাইরে আছেন। লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাকে মুক্ত করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

এদিকে হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে এই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছেন এক প্রার্থী। ‘প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ-২০২৩ (প্রথম ধাপ) পরীক্ষার্থীদের পক্ষে’ প্রার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম গতকাল বুধবার এই আবেদন করেন। ইসি কর্মকর্তারা আবেদনটি গ্রহণ করে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেনে। 
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমবারের মতো এবার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় বিদ্যোৎসাহী সদস্যের নামে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বোর্ডে রাখা হচ্ছে না।

এমনকি মৌখিক পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের মধ্যে প্রার্থী শিক্ষাগত সনদের ফলের ওপর পাবেন ১০ নম্বর। বাকি ১৫ নম্বরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৬ এবং সর্বোচ্চ ১৪ নম্বর দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া প্রার্থীর অবশ্যই শিক্ষাজীবনের প্রতিটি পরীক্ষার ফলে প্রথম শ্রেণি থাকতে হবে। 

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং রাজনৈতিক তদবির ও প্রভাবশালীদের চাপ বন্ধ করতে ভাইভা বোর্ডে বিদ্যোৎসাহী সদস্যের নামে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা নেতাকে বোর্ডে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ 
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগে প্রায় প্রতিবারই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। গত বছরও প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের ৬০ সদস্যকে আটক করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের কাজে নিয়োজিত বিশেষ ধরনের ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তারা স্বীকার করেন, চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি চাকরিপ্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাশ করানো এবং চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিত। আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইস দেওয়া হতো এবং তাদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে ১-২ লাখ টাকা জামানত নেওয়া হতো। অবশিষ্ট টাকা চাকরি পাওয়ার পর পরিশোধ করার চুক্তি করা হতো। এসব বিষয় বিবেচনায় এবার কঠোর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ গতকাল বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো বুয়েটের কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে তাদের প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়েছে। প্রতি জেলায় একটি করে মোট ১৮ সেট প্রশ্ন প্রণয়ন করার পর সেখান থেকে দৈবচয়নের মাধ্যমে একজন কর্মকর্তাকে প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বাইরের। ওই প্রশ্নকারী কর্মকর্তাকে সেলফোনসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসমুক্ত করে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। পরীক্ষা পর্যন্ত তাকে এ অবস্থায় রাখা হবে।’ 

সচিব জানান, এক ঘণ্টায় ৭৫ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা শুরুর মাত্র ১৫ মিনিট আগে বুয়েটের নির্দিষ্ট কোড পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্কের সিলগালা খোলা হবে। এ সময় মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা থাকবেন। পরীক্ষার পর মাত্র ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। এর এক মাসের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা হবে।

পরীক্ষা স্থগিত চেয়ে আবেদনকারী আশরাফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুক্রবার আমাদের পরীক্ষা। ওই দিন ভোর পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা অবরোধ চলবে। কিন্তু অনেক প্রার্থী পড়াশোনা বা চাকরির প্রস্তুতির জন্য বাইরের জেলায় বা ঢাকায়ও থাকেন। তাদের এ অবরোধের মধ্যে জেলার কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছাতে হবে। এটা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সাতটি ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সেটা কিন্তু স্থগিত করা হয়েছে।’ 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘এখনো পরীক্ষা পেছানো বা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশন কিংবা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত