একেএম শামসুদ্দিন
কী বর্ণময় জীবনই না ছিল পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের। পেশার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি আত্মমর্যাদার সঙ্গে দিন কাটিয়েছেন। পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ সার্ভিসের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদেই তিনি চাকরি করেছেন।
চাকরিজীবনের সুদীর্ঘ সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। শুধু সরকারে থাকাকালে নয়, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলেও ছিল, তখনো তিনি একই সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে বেনজীর অবসরে যাওয়া অবধি ঢাকায় চাকরি করেছেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় সব চাহিদাই মিটিয়েছেন।
তিনি যে আওয়ামী লীগের বিশেষ পছন্দের লোক ছিলেন, তা তাঁর গত ১৫ বছরের চাকরির প্রোফাইল দেখলেই বোঝা যায়। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও যে তিনি মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগের ছিলেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ কথা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন। পুলিশের অনেক আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সমাবেশে, পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি তাঁর যে বিশেষ দুর্বলতা আছে, তা তিনি নির্দ্বিধায় প্রকাশও করেছেন।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সরকারপ্রধানের বিশেষ পছন্দের লোক না হলে কেউ পুলিশের মহাপরিদর্শক হতে পারেন না। ঠিক একই কথা সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গত বেশ কয়েকটি নিয়োগ-প্রক্রিয়া দেখে, সাধারণ মানুষের এ ধারণাই হয়েছে যে আমাদের দেশে বাহিনীপ্রধান হতে হলে শুধু পেশাগত যোগ্যতা থাকলেই হয় না, রাজনৈতিক আনুগত্যও থাকতে হয়। কয়েক দশক ধরেই রাজনৈতিক আনুগত্যও যোগ্যতার মাপকাঠি ধরা হচ্ছে।
আবার দেখা গেছে, কারও পেশাগত যোগ্যতারও প্রয়োজন পড়েনি, শুধু আনুগত্য দেখিয়েই বৈতরণি পার হয়ে গেছেন। দেশের মানুষ মনে করেন, যিনি বা যাঁরা এসব পদে নিয়োগ দেন, তাঁরা দেখেন তাঁদের অভিপ্রায় পূরণ করার মতো মানসিকতা আছে কি না। এসব ক্ষেত্রে পেশাদার যোগ্য ব্যক্তিকে অতিক্রম করে হলেও সেই ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাবাহিনীপ্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর থেকে মূল ধারার সংবাদমাধ্যম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয় নিয়ে মুখরোচক অনেক আলোচনাই হচ্ছে।
এসব আলোচনায় এ দুজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত সততা ও পেশাগত যোগ্যতার পাশাপাশি তাঁদের পরিণতি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, সরকারের প্রয়োজনে এসব ব্যক্তিকে ব্যবহার করে, প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতেই তাদের ছুড়ে ফেলা হচ্ছে; বিশেষ করে বেনজীর আহমেদকে নিয়ে গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। এর মধ্যে একটি, ‘বেনজীর কেন খরচের খাতায়’। অন্য আরেকটি শিরোনাম দেখেছি, ‘প্রবল প্রতাপশালী বেনজীর আহমেদ কি এখন বলির পাঁঠা!’
ওপরে উল্লিখিত শিরোনাম দুটো দেখলেই বোঝা যায়, বেনজীর এখন আর বর্তমান সরকারের ভালো নজরে নেই। এর অবশ্য কারণও আছে। বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির ফিরিস্তি যখন একের পর এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে থাকে, এরই মাঝে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত যখন বেনজীরের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ ও ক্রয়কৃত জমির দলিল জব্দ করার আদেশ দেন, তখন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের মাধ্যমেই বেনজীর সম্পর্কে সরকারের বর্তমান মনোভাবের কথা মানুষ জানতে পারে। ২৪ মে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ব্যক্তি যত প্রভাবশালী হোক, অপরাধ করতে পারে, অপকর্ম করতে পারে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন, দুদক স্বাধীন। সেখানে যদি অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয় কেউ, আমরা তাকে প্রোটেকশন দিতে যাব কেন? তিনি সাবেক আইজিপি হোন আর সাবেক সেনাপ্রধান হোন। আমাদের দেশের প্রচলিত আইন তাঁদের শাস্তির কাছে সমর্পণ করবে। এ কারণে সরকারের কাউকে কোনো প্রকার প্রোটেকশন দেওয়ার বিষয় নেই।’
ওবায়দুল কাদের অবশ্য আজিজ আহমেদ সম্পর্কে সরাসরিই বলেছেন, ‘দুদক চাইলেই সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে পারে।’ দুর্নীতির অভিযোগ শুধু এই দুজনের বিরুদ্ধে নয়। আরও অনেকের বিরুদ্ধেই শোনা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এ দেশে বেনজীর কি একজনই? নাকি আরও বেনজীর আছেন? ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতিকে যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে, তাতে অনুমান করা যায়, এমন বেনজীরের সংখ্যা এ দেশে আরও আছে। গণমাধ্যমে খবর হলেই কেবল আমরা দেখতে পাই, তাঁদের নিয়ে তখন ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এমন অনেকেই যে এখনো সরকারের সুনজরে আছেন, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তাঁদের দু-একজনকে দেখে মনে হয় তাঁরাও বেনজীরের মতো দুর্দান্ত প্রতাপশালী, রক্ত হিমশীতল করা ভয়ংকর ব্যক্তি। ভিন্নমতাবলম্বী নেতা পিটিয়ে সরকারের নজরে এসেছেন। তাঁদের অনেককেই এখন মানুষের সঙ্গে মিষ্টি ব্যবহার করতে দেখা যায়। মিডিয়ায় ঘন ঘন হাজির হয়ে বেনজীরের মতোই সততার গল্প শোনান।
তবে এটাও সত্য, বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও ভোগ-বিলাসের চিত্র প্রকাশ করেছে সরকারপন্থী একটি পত্রিকা। এমন না যে বেনজীরের ‘অপকর্ম’ সম্পর্কে মানুষের কিছু জানা ছিল না। এদিক-ওদিক কান পাতলেই বেনজীরের নানা অপকর্মের কথা শোনা যেত।
নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে অবৈধ সম্পদ গড়ার অনেক গুঞ্জনই তখন হাওয়ায় ভেসে বেড়াত। কিন্তু সাহস করে কেউ প্রকাশ করতে পারেনি। এর সত্যতা পাওয়া যায় সম্প্রতি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামের এক বক্তব্যে। তিনি একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘বেনজীরের যে কুকর্ম আমরা মিডিয়ায় জানতাম, কিন্তু রিপোর্ট করতে সাহস পেতাম না। কারণ ওই সময়ে সে যে পাওয়ারফুল আইজিপি ছিল, সে সাংবাদিকদের তখন কী না করতে পারত। ওই সময় যদি (রিপোর্ট) করত, তাহলে সরকার কি পাশে এসে দাঁড়াত?’
অনেকেই মনে করছেন, পত্রিকাটি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ নিয়ে নিউজ করেছে, তার পেছনে সরকারের হয়তো কোনো সায় থাকতে পারে। তবে এ কথা ঠিক, বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করা মানে সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়া। কারণ এ কথা সবারই জানা, বেনজীর বর্তমান সরকারেরই লালিত ও পালিত বলেই এত দূর আসতে পেরেছেন। বেনজীর বিশাল বিত্তশালী পরিবারের সদস্য ছিলেন—এমনটিও নয়।
অনেকেরই ধারণা, বেনজীরকে এখন হয়তো আওয়ামী লীগের দরকার নেই; বরং নানামুখী চাপে থাকা সরকার, বেনজীরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বহির্বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল সরকারের এই ভোল পাল্টানোকে কতটুকু সুনজরে দেখছে, সেটাই প্রশ্ন! অর্থ পাচার থেকে ব্যাংক লুটপাট, এমন অভিযোগ আরও অনেকের বিরুদ্ধেই আছে। সরকার কি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিই আন্তরিক কি না, তা বোঝা যাবে সরকার কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে আর কাদের ব্যাপারে চুপ করে থাকছে, তার ওপর।
তবে বেনজীরের এ ঘটনা অনেক সরকারি কর্মকর্তার চোখ খুলে দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, বর্তমানে কর্মরত উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা এই ঘটনার পর নিজ নিজ আসনে নড়েচড়ে বসেছেন। সরকারের সুনজরে আসার জন্য, সরকারের এতটুকু সহানুভূতি পাওয়ার আশায়, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা না হয়ে যাঁরা দলীয় সরকারের কর্মকর্তা হওয়ার মধ্যে গর্ব খুঁজে পেয়েছেন, তাঁদের জন্য এ ঘটনা এক সতর্কবার্তা। রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত সরকারি কর্মকর্তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে যে ছুড়ে ফেলা হয়, বেনজীরের এ ঘটনা সবার জন্য ‘নজির’ হয়ে থাকবে। মনে রাখতে হবে, সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট বয়সসীমা পর অবসরে যেতে হয়। চাকরিকালীন যে ক্ষমতা তাঁদের হাতে থাকে, অবসরে যাওয়ার পর তা আর থাকে না।
কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো পালাক্রমে ক্ষমতায় টিকে থাকে। কাজেই চাকরিকালে যদি কেউ দলীয় সরকারের খেদমত করার সুযোগ নিয়ে কুকর্ম করেন এবং ভাগ্য যদি সহায়ক না হয়, তাহলে তাঁদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমার প্রত্যাশা, আর কেউ যেন বেনজীরের ভাগ্যবরণ না করে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
কী বর্ণময় জীবনই না ছিল পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের। পেশার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি আত্মমর্যাদার সঙ্গে দিন কাটিয়েছেন। পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ সার্ভিসের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদেই তিনি চাকরি করেছেন।
চাকরিজীবনের সুদীর্ঘ সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। শুধু সরকারে থাকাকালে নয়, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলেও ছিল, তখনো তিনি একই সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে বেনজীর অবসরে যাওয়া অবধি ঢাকায় চাকরি করেছেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় সব চাহিদাই মিটিয়েছেন।
তিনি যে আওয়ামী লীগের বিশেষ পছন্দের লোক ছিলেন, তা তাঁর গত ১৫ বছরের চাকরির প্রোফাইল দেখলেই বোঝা যায়। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও যে তিনি মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগের ছিলেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ কথা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন। পুলিশের অনেক আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সমাবেশে, পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি তাঁর যে বিশেষ দুর্বলতা আছে, তা তিনি নির্দ্বিধায় প্রকাশও করেছেন।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সরকারপ্রধানের বিশেষ পছন্দের লোক না হলে কেউ পুলিশের মহাপরিদর্শক হতে পারেন না। ঠিক একই কথা সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গত বেশ কয়েকটি নিয়োগ-প্রক্রিয়া দেখে, সাধারণ মানুষের এ ধারণাই হয়েছে যে আমাদের দেশে বাহিনীপ্রধান হতে হলে শুধু পেশাগত যোগ্যতা থাকলেই হয় না, রাজনৈতিক আনুগত্যও থাকতে হয়। কয়েক দশক ধরেই রাজনৈতিক আনুগত্যও যোগ্যতার মাপকাঠি ধরা হচ্ছে।
আবার দেখা গেছে, কারও পেশাগত যোগ্যতারও প্রয়োজন পড়েনি, শুধু আনুগত্য দেখিয়েই বৈতরণি পার হয়ে গেছেন। দেশের মানুষ মনে করেন, যিনি বা যাঁরা এসব পদে নিয়োগ দেন, তাঁরা দেখেন তাঁদের অভিপ্রায় পূরণ করার মতো মানসিকতা আছে কি না। এসব ক্ষেত্রে পেশাদার যোগ্য ব্যক্তিকে অতিক্রম করে হলেও সেই ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাবাহিনীপ্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর থেকে মূল ধারার সংবাদমাধ্যম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয় নিয়ে মুখরোচক অনেক আলোচনাই হচ্ছে।
এসব আলোচনায় এ দুজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত সততা ও পেশাগত যোগ্যতার পাশাপাশি তাঁদের পরিণতি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, সরকারের প্রয়োজনে এসব ব্যক্তিকে ব্যবহার করে, প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতেই তাদের ছুড়ে ফেলা হচ্ছে; বিশেষ করে বেনজীর আহমেদকে নিয়ে গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। এর মধ্যে একটি, ‘বেনজীর কেন খরচের খাতায়’। অন্য আরেকটি শিরোনাম দেখেছি, ‘প্রবল প্রতাপশালী বেনজীর আহমেদ কি এখন বলির পাঁঠা!’
ওপরে উল্লিখিত শিরোনাম দুটো দেখলেই বোঝা যায়, বেনজীর এখন আর বর্তমান সরকারের ভালো নজরে নেই। এর অবশ্য কারণও আছে। বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির ফিরিস্তি যখন একের পর এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে থাকে, এরই মাঝে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত যখন বেনজীরের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ ও ক্রয়কৃত জমির দলিল জব্দ করার আদেশ দেন, তখন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের মাধ্যমেই বেনজীর সম্পর্কে সরকারের বর্তমান মনোভাবের কথা মানুষ জানতে পারে। ২৪ মে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ব্যক্তি যত প্রভাবশালী হোক, অপরাধ করতে পারে, অপকর্ম করতে পারে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন, দুদক স্বাধীন। সেখানে যদি অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয় কেউ, আমরা তাকে প্রোটেকশন দিতে যাব কেন? তিনি সাবেক আইজিপি হোন আর সাবেক সেনাপ্রধান হোন। আমাদের দেশের প্রচলিত আইন তাঁদের শাস্তির কাছে সমর্পণ করবে। এ কারণে সরকারের কাউকে কোনো প্রকার প্রোটেকশন দেওয়ার বিষয় নেই।’
ওবায়দুল কাদের অবশ্য আজিজ আহমেদ সম্পর্কে সরাসরিই বলেছেন, ‘দুদক চাইলেই সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে পারে।’ দুর্নীতির অভিযোগ শুধু এই দুজনের বিরুদ্ধে নয়। আরও অনেকের বিরুদ্ধেই শোনা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এ দেশে বেনজীর কি একজনই? নাকি আরও বেনজীর আছেন? ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতিকে যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে, তাতে অনুমান করা যায়, এমন বেনজীরের সংখ্যা এ দেশে আরও আছে। গণমাধ্যমে খবর হলেই কেবল আমরা দেখতে পাই, তাঁদের নিয়ে তখন ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এমন অনেকেই যে এখনো সরকারের সুনজরে আছেন, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তাঁদের দু-একজনকে দেখে মনে হয় তাঁরাও বেনজীরের মতো দুর্দান্ত প্রতাপশালী, রক্ত হিমশীতল করা ভয়ংকর ব্যক্তি। ভিন্নমতাবলম্বী নেতা পিটিয়ে সরকারের নজরে এসেছেন। তাঁদের অনেককেই এখন মানুষের সঙ্গে মিষ্টি ব্যবহার করতে দেখা যায়। মিডিয়ায় ঘন ঘন হাজির হয়ে বেনজীরের মতোই সততার গল্প শোনান।
তবে এটাও সত্য, বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও ভোগ-বিলাসের চিত্র প্রকাশ করেছে সরকারপন্থী একটি পত্রিকা। এমন না যে বেনজীরের ‘অপকর্ম’ সম্পর্কে মানুষের কিছু জানা ছিল না। এদিক-ওদিক কান পাতলেই বেনজীরের নানা অপকর্মের কথা শোনা যেত।
নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে অবৈধ সম্পদ গড়ার অনেক গুঞ্জনই তখন হাওয়ায় ভেসে বেড়াত। কিন্তু সাহস করে কেউ প্রকাশ করতে পারেনি। এর সত্যতা পাওয়া যায় সম্প্রতি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামের এক বক্তব্যে। তিনি একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘বেনজীরের যে কুকর্ম আমরা মিডিয়ায় জানতাম, কিন্তু রিপোর্ট করতে সাহস পেতাম না। কারণ ওই সময়ে সে যে পাওয়ারফুল আইজিপি ছিল, সে সাংবাদিকদের তখন কী না করতে পারত। ওই সময় যদি (রিপোর্ট) করত, তাহলে সরকার কি পাশে এসে দাঁড়াত?’
অনেকেই মনে করছেন, পত্রিকাটি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ নিয়ে নিউজ করেছে, তার পেছনে সরকারের হয়তো কোনো সায় থাকতে পারে। তবে এ কথা ঠিক, বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করা মানে সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়া। কারণ এ কথা সবারই জানা, বেনজীর বর্তমান সরকারেরই লালিত ও পালিত বলেই এত দূর আসতে পেরেছেন। বেনজীর বিশাল বিত্তশালী পরিবারের সদস্য ছিলেন—এমনটিও নয়।
অনেকেরই ধারণা, বেনজীরকে এখন হয়তো আওয়ামী লীগের দরকার নেই; বরং নানামুখী চাপে থাকা সরকার, বেনজীরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বহির্বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল সরকারের এই ভোল পাল্টানোকে কতটুকু সুনজরে দেখছে, সেটাই প্রশ্ন! অর্থ পাচার থেকে ব্যাংক লুটপাট, এমন অভিযোগ আরও অনেকের বিরুদ্ধেই আছে। সরকার কি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিই আন্তরিক কি না, তা বোঝা যাবে সরকার কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে আর কাদের ব্যাপারে চুপ করে থাকছে, তার ওপর।
তবে বেনজীরের এ ঘটনা অনেক সরকারি কর্মকর্তার চোখ খুলে দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, বর্তমানে কর্মরত উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা এই ঘটনার পর নিজ নিজ আসনে নড়েচড়ে বসেছেন। সরকারের সুনজরে আসার জন্য, সরকারের এতটুকু সহানুভূতি পাওয়ার আশায়, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা না হয়ে যাঁরা দলীয় সরকারের কর্মকর্তা হওয়ার মধ্যে গর্ব খুঁজে পেয়েছেন, তাঁদের জন্য এ ঘটনা এক সতর্কবার্তা। রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত সরকারি কর্মকর্তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে যে ছুড়ে ফেলা হয়, বেনজীরের এ ঘটনা সবার জন্য ‘নজির’ হয়ে থাকবে। মনে রাখতে হবে, সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট বয়সসীমা পর অবসরে যেতে হয়। চাকরিকালীন যে ক্ষমতা তাঁদের হাতে থাকে, অবসরে যাওয়ার পর তা আর থাকে না।
কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো পালাক্রমে ক্ষমতায় টিকে থাকে। কাজেই চাকরিকালে যদি কেউ দলীয় সরকারের খেদমত করার সুযোগ নিয়ে কুকর্ম করেন এবং ভাগ্য যদি সহায়ক না হয়, তাহলে তাঁদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমার প্রত্যাশা, আর কেউ যেন বেনজীরের ভাগ্যবরণ না করে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে