বিভুরঞ্জন সরকার
এবারের কংগ্রেসের মূল স্লোগান কী?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: ‘দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও, বিকল্প গড়ো’ এই স্লোগান ধারণ করে সিপিবির দ্বাদশ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা, সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী পরিবর্তন সাধন এবং আওয়ামী লীগ–বিএনপিকেন্দ্রিক দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার কথা সিপিবি বলে আসছে। কাঙ্ক্ষিত প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির একটি পদক্ষেপ আমাদের এবারের কংগ্রেস।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: করোনা মহামারি গোটা বিশ্বের মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। এই মহামারি আরও একবার প্রমাণ করছে যে, বর্বর ও অমানবিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এ ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে অক্ষম। আমাদের দেশেও করোনাকালে যখন মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে, মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে, তখনো দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব থামেনি। এই সময়েও লুটেরা ধনিকশ্রেণি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে।
দেশে এখন লুটপাটের রাজত্ব বহাল আছে। শোষণ-বৈষম্য-অনাচার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। মানুষ আজ তার ভোটদানের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারটুকুও হারিয়েছে। শাসক দল আওয়ামী লীগ জনসমর্থন হারিয়ে প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, ছলে-বলে-কৌশলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে আছে।
সমাজদেহে ছড়িয়ে পড়েছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। আমরা বরাবরই এই অশুভ অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত আছি। স্পষ্টভাবে আবার ঘোষণা করছি যে, নিজস্ব শক্তি-সামর্থ্য নিয়োজিত করে এবং সমাজের সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।
বিএনপি বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপির সঙ্গে সিপিবির ঐক্যের সম্ভাবনা কতটুকু?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: এককথায় একেবারেই নেই। বিএনপি সিপিবির লক্ষ্যের সঙ্গে একমত হবে—সে আশা করা যায় না। আর শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য কোনো দলের সঙ্গে রাজনৈতিক জোটে সিপিবি শামিল হবে না। তা ছাড়া, বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা পালনে বিএনপির চরম ব্যর্থতা সবাই দেখছেন। তারা যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে জোটসঙ্গী করেছে। ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের দুর্নীতি-লুটপাট-দুঃশাসনের কথাও মানুষ ভোলেনি।
বিকল্প শক্তি গড়ে ওঠা এবং আন্দোলনের মাধ্যমে বিপ্লবী পরিবর্তন না আনা পর্যন্ত বর্তমান অবস্থা চলতে থাকবে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: এটা স্বীকার করতেই হবে যে দেশের রাজনীতিতে এখন একটি বিপজ্জনক শূন্যতা বিরাজ করছে। এই শূন্যতা পূরণ করতে আমাদের পার্টিকে প্রস্তুত হতে হবে। দেশের অন্য সব বামপন্থী ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং জনগণের সক্রিয় সমর্থনে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য অর্থপূর্ণ ও কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা সে জন্য দেশবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা চাই।
দেশের মানুষ কি আপনাদের সহযোগিতা করছে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: ১ শতাংশ লুটেরা শ্রেণি আজ নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতি। বাজার-অর্থনীতি জন্ম দিয়েছে বাজার রাজনীতির। চলছে বাণিজ্যিকীকরণ, পণ্যায়ন, প্রদর্শনবাদ, ভোগবাদ। একইসঙ্গে চলছে ‘হালুয়া-রুটির’ রাজনীতির দাপট। এসবের ফলে নীতি, আদর্শ সমাজে মূল্যবোধের বিপজ্জনক অধোগতি ঘটে চলেছে। হত্যা-খুন-ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে চলছে। নারী নির্যাতন বাড়ছে, বাড়ছে নারী ও শিশুহত্যার সংখ্যা। বিচার মিলছে না অপরাধের। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় একধরনের মাফিয়াতন্ত্র গড়ে উঠেছে। দলের পাণ্ডারা অঘোষিত ইনডেমনিটি পেয়ে চলছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন বেড়েই চলেছে। দেশে চলছে চরম অরাজকতাপূর্ণ এক রুগ্ণ পরিস্থিতি। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ও ‘কমিশনে’র লোভে বিভিন্ন জনস্বার্থবিরোধী শক্তির সঙ্গে সরকার গাঁটছড়া বেঁধেছে।
সিপিবির জন্য কাজের পরিস্থিতি মোটেও অনুকূল নয়। সরকার এবং বুর্জোয়া রাজনীতির ধারার অন্য পক্ষগুলো আমাদের পছন্দ করে না। আমরা গ্রেপ্তার-হামলার শিকার হচ্ছি। কংগ্রেসের প্রচারেও ছাত্রলীগ হামলা করেছে। এই খবরও কোনো গণমাধ্যমে ছাপা হয়নি। অর্থাৎ গণমাধ্যমও আমাদের সহযোগিতা করে না। তারপরও সিপিবি জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমাবেশ, পদযাত্রার আয়োজন করলে তাতে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের উপস্থিতি আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
একসময় সিপিবিকে আওয়ামী লীগের বি–টিম বলা হতো। আবারও কি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের ঐক্যের সম্ভাবনা আছে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: সিপিবির রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। আমাদের পার্টি মেহনতি মানুষের পার্টি, শোষিত নিপীড়িত মানুষের পার্টি, ইনসাফের পার্টি, বিপ্লবের পার্টি। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের বিপ্লবী মতাদর্শে পরিচালিত হয়ে মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সুমহান লক্ষ্যে পার্টি কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি এই পার্টি দেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতে লড়াই করেছে, অনেক ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। দেশের জন্য, দেশের মেহনতি মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য পার্টির অগণিত কমরেড জীবন দিয়েছেন, অনেকে নিজের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করেছেন, জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন।
বৃহত্তর রাজনৈতিক লক্ষ্য সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমরা কখনো কখনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ও আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যের নীতি নিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-প্রত্যাশা পূরণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য হয়েছে। তবে এখন আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের অমূল্য অর্জনগুলোর সঙ্গে একাত্ম নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বর্তমান সময়ে ঐক্যের সম্ভাবনা কম।
তা ছাড়া আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিক কারণেই জনসমর্থন হারিয়েছে। অথচ গোষ্ঠীগত লুটপাটের স্বার্থে এবং কৃত অপরাধের বিচার থেকে রেহাই পেতে তারা জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। জনসমর্থনের বদলে, এমনকি দলীয় রাজনৈতিক শক্তির ওপর নির্ভর করার বদলে, প্রধানত আমলাতন্ত্রসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবলম্বন করে তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আজ স্থাপন করেছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুন জারি করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। গুম, খুন, জেল, জুলুমের সন্ত্রাসী শাসন কায়েম করা হয়েছে। দেশে এখন ‘ভয় ও লোভের’ রাজত্ব চলছে। সামরিক কর্তৃত্বকে রক্ত দিয়ে প্রতিহত করে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলাম। গণতন্ত্রকে আজ হরণ করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনকে আজ প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।
আর একটি কথা আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কমিউনিস্ট পার্টি কারও ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।
সংকট গভীর। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সিপিবি কী করতে চায়?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: জনগণের সামনে এখন চারটি প্রধান বিপদ। সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, লুটপাটতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতা। বিচ্ছিন্নভাবে এই চার শত্রুকে মোকাবিলা করা সহজ নয়।
এই চার শত্রুর কোনোটিকে বেশি বা কোনোটিকে কম গুরুত্ব দেওয়ারও সুযোগ নেই, কেননা এরা একে অপরের পরিপূরক। এ জন্য এই চার শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের একই সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। দুই বুর্জোয়া দলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দ্বি-দলীয় কাঠামোর বাইরে বিকল্প বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে। সে কাজে আমাদের পার্টি তার উদ্যোগী ও অগ্রণী ভূমিকা আরও জোরদার করবে।
সমাজ ও রাজনীতিতে বিকল্প বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির দৃশ্যমান ও কার্যকর উপস্থিতি নিশ্চিত করা আজ জরুরি কর্তব্য। আজ সময় এসেছে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার ক্ষেত্র প্রস্তুতের কাজটিকে সুনির্দিষ্টভাবে ও গুরুত্বের সঙ্গে হাতে নেওয়ার। কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে আমাদের পার্টি আরও জোরেশোরে সেই কাজে নেমে পড়বে। বিকল্প গড়ার এই কাজে শামিল হওয়ার জন্য আমি দেশপ্রেমিক সব মানুষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
কংগ্রেসে কতজন প্রতিনিধি অংশ নেবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: জেলা থেকে ৪৮৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি। উদ্বোধনী অধিবেশনে ২২৯ জন প্রবীণ কমরেডকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। কংগ্রেস সফল করার জন্য ১৫টি উপপরিষদ গঠন করা হয়েছে। ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছেন।
বিদেশি কোনো প্রতিনিধি অংশ নেবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: করোনার কারণে বিদেশি কোনো প্রতিনিধি শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও ২৫টি ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের পার্টি কংগ্রেসের সাফল্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছে।
শেষে বিশেষ কিছু বলতে চান?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমরা তার অবমাননা মেনে নেব না। অন্যরা সে ঝান্ডা পরিত্যাগ করতে পারে কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ঝান্ডাকে সমুন্নত রেখেছে। ‘ভিশন মুক্তিযুদ্ধ’-কে বাস্তবায়ন করতে পার্টি দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাবে। সেই সংগ্রামে পার্টি নেতৃত্ব দেবে। গণমানুষ ও কমিউনিস্ট পার্টিই এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারার আসল চ্যাম্পিয়ন। এই ধারায় দেশকে নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
এবারের কংগ্রেসের মূল স্লোগান কী?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: ‘দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও, বিকল্প গড়ো’ এই স্লোগান ধারণ করে সিপিবির দ্বাদশ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা, সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী পরিবর্তন সাধন এবং আওয়ামী লীগ–বিএনপিকেন্দ্রিক দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার কথা সিপিবি বলে আসছে। কাঙ্ক্ষিত প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির একটি পদক্ষেপ আমাদের এবারের কংগ্রেস।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: করোনা মহামারি গোটা বিশ্বের মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। এই মহামারি আরও একবার প্রমাণ করছে যে, বর্বর ও অমানবিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এ ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে অক্ষম। আমাদের দেশেও করোনাকালে যখন মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে, মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে, তখনো দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব থামেনি। এই সময়েও লুটেরা ধনিকশ্রেণি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে।
দেশে এখন লুটপাটের রাজত্ব বহাল আছে। শোষণ-বৈষম্য-অনাচার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। মানুষ আজ তার ভোটদানের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারটুকুও হারিয়েছে। শাসক দল আওয়ামী লীগ জনসমর্থন হারিয়ে প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, ছলে-বলে-কৌশলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে আছে।
সমাজদেহে ছড়িয়ে পড়েছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। আমরা বরাবরই এই অশুভ অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত আছি। স্পষ্টভাবে আবার ঘোষণা করছি যে, নিজস্ব শক্তি-সামর্থ্য নিয়োজিত করে এবং সমাজের সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।
বিএনপি বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপির সঙ্গে সিপিবির ঐক্যের সম্ভাবনা কতটুকু?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: এককথায় একেবারেই নেই। বিএনপি সিপিবির লক্ষ্যের সঙ্গে একমত হবে—সে আশা করা যায় না। আর শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য কোনো দলের সঙ্গে রাজনৈতিক জোটে সিপিবি শামিল হবে না। তা ছাড়া, বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা পালনে বিএনপির চরম ব্যর্থতা সবাই দেখছেন। তারা যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে জোটসঙ্গী করেছে। ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের দুর্নীতি-লুটপাট-দুঃশাসনের কথাও মানুষ ভোলেনি।
বিকল্প শক্তি গড়ে ওঠা এবং আন্দোলনের মাধ্যমে বিপ্লবী পরিবর্তন না আনা পর্যন্ত বর্তমান অবস্থা চলতে থাকবে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: এটা স্বীকার করতেই হবে যে দেশের রাজনীতিতে এখন একটি বিপজ্জনক শূন্যতা বিরাজ করছে। এই শূন্যতা পূরণ করতে আমাদের পার্টিকে প্রস্তুত হতে হবে। দেশের অন্য সব বামপন্থী ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং জনগণের সক্রিয় সমর্থনে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য অর্থপূর্ণ ও কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা সে জন্য দেশবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা চাই।
দেশের মানুষ কি আপনাদের সহযোগিতা করছে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: ১ শতাংশ লুটেরা শ্রেণি আজ নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতি। বাজার-অর্থনীতি জন্ম দিয়েছে বাজার রাজনীতির। চলছে বাণিজ্যিকীকরণ, পণ্যায়ন, প্রদর্শনবাদ, ভোগবাদ। একইসঙ্গে চলছে ‘হালুয়া-রুটির’ রাজনীতির দাপট। এসবের ফলে নীতি, আদর্শ সমাজে মূল্যবোধের বিপজ্জনক অধোগতি ঘটে চলেছে। হত্যা-খুন-ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে চলছে। নারী নির্যাতন বাড়ছে, বাড়ছে নারী ও শিশুহত্যার সংখ্যা। বিচার মিলছে না অপরাধের। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় একধরনের মাফিয়াতন্ত্র গড়ে উঠেছে। দলের পাণ্ডারা অঘোষিত ইনডেমনিটি পেয়ে চলছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন বেড়েই চলেছে। দেশে চলছে চরম অরাজকতাপূর্ণ এক রুগ্ণ পরিস্থিতি। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ও ‘কমিশনে’র লোভে বিভিন্ন জনস্বার্থবিরোধী শক্তির সঙ্গে সরকার গাঁটছড়া বেঁধেছে।
সিপিবির জন্য কাজের পরিস্থিতি মোটেও অনুকূল নয়। সরকার এবং বুর্জোয়া রাজনীতির ধারার অন্য পক্ষগুলো আমাদের পছন্দ করে না। আমরা গ্রেপ্তার-হামলার শিকার হচ্ছি। কংগ্রেসের প্রচারেও ছাত্রলীগ হামলা করেছে। এই খবরও কোনো গণমাধ্যমে ছাপা হয়নি। অর্থাৎ গণমাধ্যমও আমাদের সহযোগিতা করে না। তারপরও সিপিবি জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমাবেশ, পদযাত্রার আয়োজন করলে তাতে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের উপস্থিতি আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
একসময় সিপিবিকে আওয়ামী লীগের বি–টিম বলা হতো। আবারও কি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের ঐক্যের সম্ভাবনা আছে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: সিপিবির রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। আমাদের পার্টি মেহনতি মানুষের পার্টি, শোষিত নিপীড়িত মানুষের পার্টি, ইনসাফের পার্টি, বিপ্লবের পার্টি। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের বিপ্লবী মতাদর্শে পরিচালিত হয়ে মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সুমহান লক্ষ্যে পার্টি কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি এই পার্টি দেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতে লড়াই করেছে, অনেক ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। দেশের জন্য, দেশের মেহনতি মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য পার্টির অগণিত কমরেড জীবন দিয়েছেন, অনেকে নিজের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করেছেন, জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন।
বৃহত্তর রাজনৈতিক লক্ষ্য সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমরা কখনো কখনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ও আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যের নীতি নিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-প্রত্যাশা পূরণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য হয়েছে। তবে এখন আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের অমূল্য অর্জনগুলোর সঙ্গে একাত্ম নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বর্তমান সময়ে ঐক্যের সম্ভাবনা কম।
তা ছাড়া আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিক কারণেই জনসমর্থন হারিয়েছে। অথচ গোষ্ঠীগত লুটপাটের স্বার্থে এবং কৃত অপরাধের বিচার থেকে রেহাই পেতে তারা জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। জনসমর্থনের বদলে, এমনকি দলীয় রাজনৈতিক শক্তির ওপর নির্ভর করার বদলে, প্রধানত আমলাতন্ত্রসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবলম্বন করে তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আজ স্থাপন করেছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুন জারি করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। গুম, খুন, জেল, জুলুমের সন্ত্রাসী শাসন কায়েম করা হয়েছে। দেশে এখন ‘ভয় ও লোভের’ রাজত্ব চলছে। সামরিক কর্তৃত্বকে রক্ত দিয়ে প্রতিহত করে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলাম। গণতন্ত্রকে আজ হরণ করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনকে আজ প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।
আর একটি কথা আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কমিউনিস্ট পার্টি কারও ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।
সংকট গভীর। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সিপিবি কী করতে চায়?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: জনগণের সামনে এখন চারটি প্রধান বিপদ। সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, লুটপাটতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতা। বিচ্ছিন্নভাবে এই চার শত্রুকে মোকাবিলা করা সহজ নয়।
এই চার শত্রুর কোনোটিকে বেশি বা কোনোটিকে কম গুরুত্ব দেওয়ারও সুযোগ নেই, কেননা এরা একে অপরের পরিপূরক। এ জন্য এই চার শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের একই সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। দুই বুর্জোয়া দলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দ্বি-দলীয় কাঠামোর বাইরে বিকল্প বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে। সে কাজে আমাদের পার্টি তার উদ্যোগী ও অগ্রণী ভূমিকা আরও জোরদার করবে।
সমাজ ও রাজনীতিতে বিকল্প বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির দৃশ্যমান ও কার্যকর উপস্থিতি নিশ্চিত করা আজ জরুরি কর্তব্য। আজ সময় এসেছে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার ক্ষেত্র প্রস্তুতের কাজটিকে সুনির্দিষ্টভাবে ও গুরুত্বের সঙ্গে হাতে নেওয়ার। কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে আমাদের পার্টি আরও জোরেশোরে সেই কাজে নেমে পড়বে। বিকল্প গড়ার এই কাজে শামিল হওয়ার জন্য আমি দেশপ্রেমিক সব মানুষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
কংগ্রেসে কতজন প্রতিনিধি অংশ নেবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: জেলা থেকে ৪৮৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি। উদ্বোধনী অধিবেশনে ২২৯ জন প্রবীণ কমরেডকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। কংগ্রেস সফল করার জন্য ১৫টি উপপরিষদ গঠন করা হয়েছে। ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছেন।
বিদেশি কোনো প্রতিনিধি অংশ নেবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: করোনার কারণে বিদেশি কোনো প্রতিনিধি শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও ২৫টি ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের পার্টি কংগ্রেসের সাফল্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছে।
শেষে বিশেষ কিছু বলতে চান?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমরা তার অবমাননা মেনে নেব না। অন্যরা সে ঝান্ডা পরিত্যাগ করতে পারে কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ঝান্ডাকে সমুন্নত রেখেছে। ‘ভিশন মুক্তিযুদ্ধ’-কে বাস্তবায়ন করতে পার্টি দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাবে। সেই সংগ্রামে পার্টি নেতৃত্ব দেবে। গণমানুষ ও কমিউনিস্ট পার্টিই এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারার আসল চ্যাম্পিয়ন। এই ধারায় দেশকে নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে