অর্চি হক, ঢাকা
বিশ্বের প্রধান ডেঙ্গুপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে টানা তিন বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। আর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে গত বছর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু বেশি হওয়ার পেছনে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে প্রকাশিত এক পর্যালোচনামূলক নিবন্ধে।
‘বাংলাদেশ রেকর্ডস পারসিসটেন্টলি ইনক্রিসড নাম্বার অব ডেঙ্গু ডেথস ইন রিসেন্ট ইয়ার্স: ডিসেকটিং দ্য শর্টকামিংস অ্যান্ড মিনস টু রিসলভ’ শীর্ষক নিবন্ধটি গত ২৪ জুন প্রকাশ পায় আন্তর্জাতিক সাময়িকী আইজেআইডি রিজিওনসে। বিশ্বব্যাপী সংক্রামক রোগের ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর ইনফেকসাস ডিজিজেস (আইএসআইডি) এই সাময়িকী প্রকাশ করে।
আইজেআইডি রিজিওনসে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য ডেঙ্গুপ্রবণ দেশের তুলনায় বেশি। বিশ্বের প্রধান ডেঙ্গু আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে টানা তিন বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বেশি। ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ, যা আগের ২৩ বছরের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মোট ৮৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর বিপরীতে শুধু ২০২৩ সালেই মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জনের।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে প্রাণহানির এমন চিত্রের প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ওই নিবন্ধে। এতে বলা হয়, ডেঙ্গু রোগীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, যা আরও প্রাণহানির কারণ হতে পারে। এ অবস্থায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু রোধে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ প্রয়োজন।
গবেষণায় পাঁচটি সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত দেশ—বাংলাদেশ, ব্রাজিল, মেক্সিকো, পেরু ও ফিলিপাইন থেকে সংগৃহীত ডেঙ্গু তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ডেঙ্গুর ঘটনা এবং মৃত্যু বিশ্লেষণ করা হয়েছে এতে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে আক্রান্তের দিক থেকে ২০২৩ সালে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। দেশটিতে ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ২২৩ জন। এরপরেই রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে এ দেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এরপর যথাক্রমে মেক্সিকোতে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৬৩ জন, পেরুতে ২ লাখ ৭৪ হাজার ২২৭ জন এবং ফিলিপাইনে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬০৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। তবে ২০২৩ সালে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর সংখ্যায় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রথম স্থানে রয়েছে। গত বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের, ব্রাজিলে ১ হাজার ১৬৩ জনের, ফিলিপাইনে ৬৫৭ জনের, পেরুতে ৪৪১ জনের এবং মেক্সিকোতে ২০৩ জনের।
অর্থাৎ মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। গত পাঁচ বছরে এই পাঁচটি দেশের মহামারিসংক্রান্ত তথ্যের তুলনা করলে দেখা যায়, ব্রাজিলে শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ কেস ফ্যাটালিটি রেট বা মৃত্যুহারের বিপরীতে ১০ মিলিয়নের বেশি ডেঙ্গু রোগী রেকর্ড করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ মৃত্যুহারের বিপরীতে প্রায় শূন্য দশমিক ৫ মিলিয়ন ডেঙ্গু রোগী নথিভুক্ত হয়।
পর্যালোচনামূলক ওই নিবন্ধের যৌথ লেখক হলেন— বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন, ঢাকা ও জাপানের ওইতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাকিরুল খান, শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, মামুন আল মাহতাব, তাকাকি ইয়াহিরো, তাকেহিরো হাসিমোটো, কাজুনোরি কিমিতসুকি ও আকিরা নিশিযোনো।
নিবন্ধে বলা হয়, জলবায়ুর পরিবর্তন—যেমন তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার পরিবর্তন ডেঙ্গু সংক্রমণ চক্রকে উৎসাহিত করে। ডেঙ্গু সংক্রমিত অন্যান্য দেশের মতো, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে এতে বলা হয়, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে করোনার সময় থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহব্যবস্থার বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
করোনাকালে ভাইরাসের ডায়াগনস্টিক সুবিধা এবং নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও করোনার মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর ক্রমাগত বৃদ্ধির সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ গুরুতর রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যাসহ পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী স্যালাইন এবং উন্নত চিকিৎসার সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যা অনেক মৃত্যুর কারণ হতে পারে। গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষিত চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মীর অভাব প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে উচ্চ ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুহারের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এর মধ্যে সঠিক পদক্ষেপের অভাবের সঙ্গে অনেক ব্যর্থতা এবং অব্যবস্থাপনা জড়িত। বারবার প্রাদুর্ভাব এবং পর্যাপ্ত সতর্কতা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রায়ই তার পদ্ধতিতে সক্রিয় হওয়ার পরিবর্তে প্রতিক্রিয়াশীল হয়েছে, যা ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ বিষয়ে নিবন্ধটির অন্যতম লেখক মামুন আল মাহতাব বলেন, ‘এটা আমাদের কোন নিজস্ব গবেষণা নয়, নিজস্ব মতামত নয়, এটা পর্যালোচনামূলক নিবন্ধ। পাঁচটি দেশের সরকার , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন জার্নালে যা উঠে এসেছে সেটার পর্যালোচনা করেছি আমরা।’
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার জন্য প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও করেছেন নিবন্ধের লেখকেরা। তাঁরা মনে করেন, আগামী দিনে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু কমানোর জন্য বাংলাদেশের অবিলম্বে দীর্ঘমেয়াদি বহুমুখী কার্যকর পদ্ধতির প্রয়োজন। সাম্প্রতিক বছরগুলোর ব্যর্থতা এবং অব্যবস্থাপনা দূর করে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসাসুবিধা নিশ্চিত করতে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার প্রয়োজন। গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের সেবায় প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রচুর স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন হয়। তাই ডেঙ্গু পরিস্থিতি উন্নতির জন্য প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের ঘাটতি পূরণ করা অপরিহার্য। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং ফলপ্রসূ চিকিৎসা নির্দেশিকা হালনাগাদ করা যেতে পারে। এ ছাড়া ডেঙ্গু টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলো আরেকটি হাতিয়ার, যা বাংলাদেশে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু রোধ করতে পারে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক দিক নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বেশি হওয়ার দু-তিনটি কারণ হতে পারে। গতবার ঢাকার বাইরে অনেক রোগী ছিল। ঢাকায় আসতে প্রস্তুতি, পথের দূরত্ব অতিক্রম করা, এসে হাসপাতালে শয্যা পাওয়া—সব মিলিয়ে একটা বড় সময় গেছে। গ্রামে রোগী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেশি ফ্লুয়িড অথবা অল্প ফ্লুয়িড দেওয়া হয়েছে, দুটোই ক্ষতিকর। আরেকটা কারণেও মৃত্যুহার বেশি। আমাদের হিসাবটা হলো, যারা কেবল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তাদের মধ্যে কতজন মারা যাচ্ছে, সেটার পরিসংখ্যান রাখা হয়। যারা ভর্তি হচ্ছে না, এ রকমও অনেক রোগী আছে। এই সংখ্যাটা ট্রেস করা গেলে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হতো এবং সিএফআর (মৃত্যুহার) কমে যেত।
বিশ্বের প্রধান ডেঙ্গুপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে টানা তিন বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। আর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে গত বছর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু বেশি হওয়ার পেছনে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে প্রকাশিত এক পর্যালোচনামূলক নিবন্ধে।
‘বাংলাদেশ রেকর্ডস পারসিসটেন্টলি ইনক্রিসড নাম্বার অব ডেঙ্গু ডেথস ইন রিসেন্ট ইয়ার্স: ডিসেকটিং দ্য শর্টকামিংস অ্যান্ড মিনস টু রিসলভ’ শীর্ষক নিবন্ধটি গত ২৪ জুন প্রকাশ পায় আন্তর্জাতিক সাময়িকী আইজেআইডি রিজিওনসে। বিশ্বব্যাপী সংক্রামক রোগের ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর ইনফেকসাস ডিজিজেস (আইএসআইডি) এই সাময়িকী প্রকাশ করে।
আইজেআইডি রিজিওনসে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য ডেঙ্গুপ্রবণ দেশের তুলনায় বেশি। বিশ্বের প্রধান ডেঙ্গু আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে টানা তিন বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বেশি। ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ, যা আগের ২৩ বছরের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মোট ৮৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর বিপরীতে শুধু ২০২৩ সালেই মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জনের।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে প্রাণহানির এমন চিত্রের প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ওই নিবন্ধে। এতে বলা হয়, ডেঙ্গু রোগীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, যা আরও প্রাণহানির কারণ হতে পারে। এ অবস্থায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু রোধে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ প্রয়োজন।
গবেষণায় পাঁচটি সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত দেশ—বাংলাদেশ, ব্রাজিল, মেক্সিকো, পেরু ও ফিলিপাইন থেকে সংগৃহীত ডেঙ্গু তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ডেঙ্গুর ঘটনা এবং মৃত্যু বিশ্লেষণ করা হয়েছে এতে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে আক্রান্তের দিক থেকে ২০২৩ সালে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। দেশটিতে ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ২২৩ জন। এরপরেই রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে এ দেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এরপর যথাক্রমে মেক্সিকোতে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৬৩ জন, পেরুতে ২ লাখ ৭৪ হাজার ২২৭ জন এবং ফিলিপাইনে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬০৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। তবে ২০২৩ সালে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর সংখ্যায় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রথম স্থানে রয়েছে। গত বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের, ব্রাজিলে ১ হাজার ১৬৩ জনের, ফিলিপাইনে ৬৫৭ জনের, পেরুতে ৪৪১ জনের এবং মেক্সিকোতে ২০৩ জনের।
অর্থাৎ মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। গত পাঁচ বছরে এই পাঁচটি দেশের মহামারিসংক্রান্ত তথ্যের তুলনা করলে দেখা যায়, ব্রাজিলে শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ কেস ফ্যাটালিটি রেট বা মৃত্যুহারের বিপরীতে ১০ মিলিয়নের বেশি ডেঙ্গু রোগী রেকর্ড করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ মৃত্যুহারের বিপরীতে প্রায় শূন্য দশমিক ৫ মিলিয়ন ডেঙ্গু রোগী নথিভুক্ত হয়।
পর্যালোচনামূলক ওই নিবন্ধের যৌথ লেখক হলেন— বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন, ঢাকা ও জাপানের ওইতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাকিরুল খান, শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, মামুন আল মাহতাব, তাকাকি ইয়াহিরো, তাকেহিরো হাসিমোটো, কাজুনোরি কিমিতসুকি ও আকিরা নিশিযোনো।
নিবন্ধে বলা হয়, জলবায়ুর পরিবর্তন—যেমন তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার পরিবর্তন ডেঙ্গু সংক্রমণ চক্রকে উৎসাহিত করে। ডেঙ্গু সংক্রমিত অন্যান্য দেশের মতো, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে এতে বলা হয়, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে করোনার সময় থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহব্যবস্থার বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
করোনাকালে ভাইরাসের ডায়াগনস্টিক সুবিধা এবং নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও করোনার মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর ক্রমাগত বৃদ্ধির সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ গুরুতর রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যাসহ পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী স্যালাইন এবং উন্নত চিকিৎসার সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যা অনেক মৃত্যুর কারণ হতে পারে। গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষিত চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মীর অভাব প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে উচ্চ ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুহারের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এর মধ্যে সঠিক পদক্ষেপের অভাবের সঙ্গে অনেক ব্যর্থতা এবং অব্যবস্থাপনা জড়িত। বারবার প্রাদুর্ভাব এবং পর্যাপ্ত সতর্কতা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রায়ই তার পদ্ধতিতে সক্রিয় হওয়ার পরিবর্তে প্রতিক্রিয়াশীল হয়েছে, যা ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ বিষয়ে নিবন্ধটির অন্যতম লেখক মামুন আল মাহতাব বলেন, ‘এটা আমাদের কোন নিজস্ব গবেষণা নয়, নিজস্ব মতামত নয়, এটা পর্যালোচনামূলক নিবন্ধ। পাঁচটি দেশের সরকার , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন জার্নালে যা উঠে এসেছে সেটার পর্যালোচনা করেছি আমরা।’
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার জন্য প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও করেছেন নিবন্ধের লেখকেরা। তাঁরা মনে করেন, আগামী দিনে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু কমানোর জন্য বাংলাদেশের অবিলম্বে দীর্ঘমেয়াদি বহুমুখী কার্যকর পদ্ধতির প্রয়োজন। সাম্প্রতিক বছরগুলোর ব্যর্থতা এবং অব্যবস্থাপনা দূর করে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসাসুবিধা নিশ্চিত করতে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার প্রয়োজন। গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের সেবায় প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রচুর স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন হয়। তাই ডেঙ্গু পরিস্থিতি উন্নতির জন্য প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের ঘাটতি পূরণ করা অপরিহার্য। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং ফলপ্রসূ চিকিৎসা নির্দেশিকা হালনাগাদ করা যেতে পারে। এ ছাড়া ডেঙ্গু টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলো আরেকটি হাতিয়ার, যা বাংলাদেশে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু রোধ করতে পারে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক দিক নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বেশি হওয়ার দু-তিনটি কারণ হতে পারে। গতবার ঢাকার বাইরে অনেক রোগী ছিল। ঢাকায় আসতে প্রস্তুতি, পথের দূরত্ব অতিক্রম করা, এসে হাসপাতালে শয্যা পাওয়া—সব মিলিয়ে একটা বড় সময় গেছে। গ্রামে রোগী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেশি ফ্লুয়িড অথবা অল্প ফ্লুয়িড দেওয়া হয়েছে, দুটোই ক্ষতিকর। আরেকটা কারণেও মৃত্যুহার বেশি। আমাদের হিসাবটা হলো, যারা কেবল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তাদের মধ্যে কতজন মারা যাচ্ছে, সেটার পরিসংখ্যান রাখা হয়। যারা ভর্তি হচ্ছে না, এ রকমও অনেক রোগী আছে। এই সংখ্যাটা ট্রেস করা গেলে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হতো এবং সিএফআর (মৃত্যুহার) কমে যেত।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে