স্বপ্না রেজা
আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। জাতির পিতার জন্ম দিবসের পাশাপাশি মার্চ মাস বাঙালি জাতির কাছে বেশ কটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য। মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে ডাক দিয়েছিলেন পরাধীনতা থেকে মুক্তির। নিরস্ত্র বাঙালি তাঁর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর এই ঘোষণায় মাত্র ৯ মাসে এই দেশ শত্রুমুক্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন মহান নেতা জন্মেছিলেন বলেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পেরেছে। এমন সত্যের কোনো বিকল্প নেই।
স্বাধীনতার মাস চলছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার ৫২ বছর কম নয়। একাত্তর সালে যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, সে এখন মধ্যবয়স্ক নারী কিংবা পুরুষ। পরিণত কেবল নয়, অভিজ্ঞতায় পূর্ণ বয়স। ঠিক তেমনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স। স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষের দ্বন্দ্ব আজও বিদ্যমান এবং এই দ্বন্দ্ব নিয়েই তার বয়স বাড়ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। যাই হোক, এই স্বাধীনতা বাংলা ভাষার, বাঙালি জাতির এবং বাংলাদেশের। স্বাধীনতা বাংলাদেশের, সার্বভৌমত্বের। এই স্বাধীনতার ফলেই একটা পবিত্র সংবিধানের সৃষ্টি, বাঙালি জাতির নিজস্ব সংবিধান পাওয়া। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে আজও বিরক্ত বোধ করে, পাশ কাটিয়ে চলে, তারা আর যাই হোক না কেন, কোনোভাবেই প্রাদেশিক চিন্তা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেনি এবং পারবেও না। অদ্ভুত এক মোহ আচ্ছাদিত করে রেখেছে তাদের। যদিও স্বাধীনতা অর্জিত না হলে তারা কী রকম জীবন যাপন করত, সেটা তাদের কাছে মুখ্য নয়। বলতেও পারে না। সেই বিশ্লেষণক্ষমতা নেই। এই শ্রেণির অধিকাংশই আবার লোকমুখে শুনে শুনে নিজেদের ধারণা ও শিক্ষাকে মজবুত করেছে। দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে। তারা এমন প্রচারে সক্রিয় থাকে যে, সেই আমলটাই ভালো ছিল। মানে, পরাধীন অবস্থায় তারা ভালো ছিল। গণতন্ত্রের জন্য এখন মরিয়া হলেও তৎকালীন পরাধীনতাকে তারা শ্রেয় মনে করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এদের কাছ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সেই তথ্য ও বোধ পৌঁছায়। পরবর্তী প্রজন্ম সেই ধারণা নিয়ে ডালপালা মেলে সমাজে বিস্তার লাভ করে। এভাবেই সমাজে, রাষ্ট্রে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ—এই দুই শক্তির সহাবস্থান ঘটছে।
একজন বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা নিয়ে যে কোনো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বা অনীহা কিংবা বিরক্তবোধ, তার জন্য শুধু প্রাদেশিক মোহাচ্ছন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠী কিংবা স্বাধীনতাবিরোধীরাই দায়ী নয়, এর জন্য রাজনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদারদের কারও কারও মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে না পারার ব্যর্থতাও রয়েছে। যেনতেন ও যত্রতত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। একজন ব্যক্তি যতটা সতর্কতার সঙ্গে তাঁর বংশ বা পিতৃপরিচয় দিয়ে থাকেন, ততটা করা হয় না মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিষয়ক কথা বলাতে। বিশেষ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে সশ্রদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যায় না। উপরন্তু, জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পথেঘাটে দেখেছি, এ বিষয়ে একটা অংশের জনগণের উদাসীনতা ও অনীহা তৈরি হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা বিষয়ে আগ্রহবোধ করে না। এটা যে কত বড় আতঙ্কের বিষয়, হতাশার কথা, এমনকি দুঃখজনক, তা বলে শেষ করা যাবে না। এতে কেবল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরূপ মনোভাবী ব্যক্তিই নয়, ভিন্ন আদর্শের একধরনের বোধ তৈরি হচ্ছে এবং তা অন্তরালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি রাজনৈতিক দলীয় স্বার্থে যতটা ব্যবহার করা হয়েছে, ততটা হয়নি সর্বজনীন কোনো বৃহত্তর স্বার্থে ও কল্যাণে। অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়টি সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখা হলে ভিন্ন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি বা মতবাদের সূচনা হতো না বলে অনেকের ধারণা। এর জন্য অবশ্য সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এটা কমবেশি সবাই জানে যে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ সঠিক ইতিহাস কোনো কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক উপস্থাপিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটা প্রজন্ম সেটাকেই সত্য বলে জেনেছে এবং তাদের চেতনাকে সেই অনুযায়ী গড়েছে। আজ যারা গায়ের জোরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে যে বিভ্রান্তকর কথা বলে, তারা সেই কার্যক্রমেরই ফলাফল। আবার এ প্রসঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রমের কথা বলাই বাহুল্য যে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আদতে কী শিখেছে ও শিখছে। শিক্ষক, পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম দেখলে বোঝা সম্ভব নয় যে, এসব মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় কতটা শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হচ্ছে। কেননা, এমন শিক্ষার্থীও রয়েছে, যে এসব নিয়ে কিছুই বলতে পারে না।আদতে সে জানে না। এটা কি আমাদের চরম ব্যর্থতা নয়?
আবার মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথা বলে, লিখে একশ্রেণির মানুষ যে কম লাভবান হয়েছে, তা নয়। বরং লাভবান হয়েছে বেশি। এদের চাটুকদার বললে বোধ হয় ভুল বলা হবে না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই লিখে এবং সেটা নিজের মনের মতো করে লিখে বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃষ্টি আকর্ষণে তারা যতটা ব্যস্ত হয়ে ওঠে বা তৎপর থাকে, ততটা ব্যস্ততা বা তৎপরতা কিন্তু ইতিহাসের সঠিক গল্প বা ইতিহাস সাধারণ পাঠকের হাতে বিনা মূল্যে তুলে দেওয়ার তাগাদায় থাকে না। তাদের কাছে এমন হিসাব আছে কি না, জানা নেই। তারা নিঃস্বার্থভাবে কতজনকে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার কথা শুনিয়ে তাদের দায় মিটিয়েছে। আবার আমার জানা নেই এমন কেউ আছেন কি না, যিনি বিনা মূল্যে ও বিনা পারিশ্রমিকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, গল্প তথা ইতিহাস জনগণকে অবহিত করার বড় ও মহৎ কাজটি করেছেন বা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন; অথবা অন্তত একবার ভেবেছেন যে কাজটি করা দরকার। তবে এটা বলা যায়, শহরে সেই রকম মানুষ চোখে না পড়লেও গ্রামগঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ব্যক্তি নিশ্চিত চোখে পড়ে। মাঝেমধ্যে পত্রিকার পাতায় এমন দু-চারটি ঘটনার কথা ফুটে ওঠে। যাঁরা গাছের নিচে, চায়ের দোকানে অথবা মাঠে শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। কেউবা কণ্ঠে সুর ধরে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। অন্য রকম পরিবেশ, অন্য রকম আবেশ। এমন দেশপ্রেমিক ব্যক্তিকে কেউ কিন্তু জোর করে বলে দেয় না—তোমার এই কাজ করা উচিত। এমন ব্যক্তি প্রকৃতির সরলতায় জন্মান, সক্রিয় থাকেন। হয়তো এ-ও দেখা যাবে যে, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার কোনো সনদ নেই। রাজনৈতিক পরিচয়ও নেই। রাজনৈতিক পরিচিতি ও সনদ নয়, এমন মানুষের বুক ভরে রয়েছে দেশপ্রেম।
স্বাধীনতা অর্জন বলতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কথাটাই জোরেশোরে ওঠে। কিন্তু এর নেপথ্যের ঘটনাগুলো, বাঙালি জাতির পরাধীনতাকালীন ঘটনাগুলো তেমনভাবে না আসায়, সবাই জানতে না পারায় ক্রমেই প্রাদেশিক চেতনার প্রসার ঘটে। জনগণের বিচারশক্তি লোপ পায়। তুলনা করার কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি মন্ত্রণালয় আমাদের আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত ছাড়া সম্ভবত তাদের বড় কোনো কাজ নেই। যদিও এই তালিকা করতে গিয়ে অনেক অঘটন, কেলেঙ্কারি ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকার স্থান পেয়েছে, আবার রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা হয়েছে। বিষয়টি কতটা অসতর্কতা ও অবহেলার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয় যথাযথ উপস্থাপন, অনুধাবন না হওয়াটা যেমন ঝুঁকির, তেমনি ঝুঁকির বিষয় হলো দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয় সমভাবে সমাদৃত না হওয়া, গুরুত্ব না পাওয়া।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। জাতির পিতার জন্ম দিবসের পাশাপাশি মার্চ মাস বাঙালি জাতির কাছে বেশ কটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য। মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে ডাক দিয়েছিলেন পরাধীনতা থেকে মুক্তির। নিরস্ত্র বাঙালি তাঁর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর এই ঘোষণায় মাত্র ৯ মাসে এই দেশ শত্রুমুক্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন মহান নেতা জন্মেছিলেন বলেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পেরেছে। এমন সত্যের কোনো বিকল্প নেই।
স্বাধীনতার মাস চলছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার ৫২ বছর কম নয়। একাত্তর সালে যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, সে এখন মধ্যবয়স্ক নারী কিংবা পুরুষ। পরিণত কেবল নয়, অভিজ্ঞতায় পূর্ণ বয়স। ঠিক তেমনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স। স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষের দ্বন্দ্ব আজও বিদ্যমান এবং এই দ্বন্দ্ব নিয়েই তার বয়স বাড়ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। যাই হোক, এই স্বাধীনতা বাংলা ভাষার, বাঙালি জাতির এবং বাংলাদেশের। স্বাধীনতা বাংলাদেশের, সার্বভৌমত্বের। এই স্বাধীনতার ফলেই একটা পবিত্র সংবিধানের সৃষ্টি, বাঙালি জাতির নিজস্ব সংবিধান পাওয়া। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে আজও বিরক্ত বোধ করে, পাশ কাটিয়ে চলে, তারা আর যাই হোক না কেন, কোনোভাবেই প্রাদেশিক চিন্তা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেনি এবং পারবেও না। অদ্ভুত এক মোহ আচ্ছাদিত করে রেখেছে তাদের। যদিও স্বাধীনতা অর্জিত না হলে তারা কী রকম জীবন যাপন করত, সেটা তাদের কাছে মুখ্য নয়। বলতেও পারে না। সেই বিশ্লেষণক্ষমতা নেই। এই শ্রেণির অধিকাংশই আবার লোকমুখে শুনে শুনে নিজেদের ধারণা ও শিক্ষাকে মজবুত করেছে। দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে। তারা এমন প্রচারে সক্রিয় থাকে যে, সেই আমলটাই ভালো ছিল। মানে, পরাধীন অবস্থায় তারা ভালো ছিল। গণতন্ত্রের জন্য এখন মরিয়া হলেও তৎকালীন পরাধীনতাকে তারা শ্রেয় মনে করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এদের কাছ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সেই তথ্য ও বোধ পৌঁছায়। পরবর্তী প্রজন্ম সেই ধারণা নিয়ে ডালপালা মেলে সমাজে বিস্তার লাভ করে। এভাবেই সমাজে, রাষ্ট্রে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ—এই দুই শক্তির সহাবস্থান ঘটছে।
একজন বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা নিয়ে যে কোনো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বা অনীহা কিংবা বিরক্তবোধ, তার জন্য শুধু প্রাদেশিক মোহাচ্ছন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠী কিংবা স্বাধীনতাবিরোধীরাই দায়ী নয়, এর জন্য রাজনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদারদের কারও কারও মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে না পারার ব্যর্থতাও রয়েছে। যেনতেন ও যত্রতত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। একজন ব্যক্তি যতটা সতর্কতার সঙ্গে তাঁর বংশ বা পিতৃপরিচয় দিয়ে থাকেন, ততটা করা হয় না মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিষয়ক কথা বলাতে। বিশেষ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে সশ্রদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যায় না। উপরন্তু, জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পথেঘাটে দেখেছি, এ বিষয়ে একটা অংশের জনগণের উদাসীনতা ও অনীহা তৈরি হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা বিষয়ে আগ্রহবোধ করে না। এটা যে কত বড় আতঙ্কের বিষয়, হতাশার কথা, এমনকি দুঃখজনক, তা বলে শেষ করা যাবে না। এতে কেবল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরূপ মনোভাবী ব্যক্তিই নয়, ভিন্ন আদর্শের একধরনের বোধ তৈরি হচ্ছে এবং তা অন্তরালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি রাজনৈতিক দলীয় স্বার্থে যতটা ব্যবহার করা হয়েছে, ততটা হয়নি সর্বজনীন কোনো বৃহত্তর স্বার্থে ও কল্যাণে। অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়টি সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখা হলে ভিন্ন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি বা মতবাদের সূচনা হতো না বলে অনেকের ধারণা। এর জন্য অবশ্য সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এটা কমবেশি সবাই জানে যে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ সঠিক ইতিহাস কোনো কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক উপস্থাপিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটা প্রজন্ম সেটাকেই সত্য বলে জেনেছে এবং তাদের চেতনাকে সেই অনুযায়ী গড়েছে। আজ যারা গায়ের জোরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে যে বিভ্রান্তকর কথা বলে, তারা সেই কার্যক্রমেরই ফলাফল। আবার এ প্রসঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রমের কথা বলাই বাহুল্য যে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আদতে কী শিখেছে ও শিখছে। শিক্ষক, পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম দেখলে বোঝা সম্ভব নয় যে, এসব মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় কতটা শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হচ্ছে। কেননা, এমন শিক্ষার্থীও রয়েছে, যে এসব নিয়ে কিছুই বলতে পারে না।আদতে সে জানে না। এটা কি আমাদের চরম ব্যর্থতা নয়?
আবার মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথা বলে, লিখে একশ্রেণির মানুষ যে কম লাভবান হয়েছে, তা নয়। বরং লাভবান হয়েছে বেশি। এদের চাটুকদার বললে বোধ হয় ভুল বলা হবে না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই লিখে এবং সেটা নিজের মনের মতো করে লিখে বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃষ্টি আকর্ষণে তারা যতটা ব্যস্ত হয়ে ওঠে বা তৎপর থাকে, ততটা ব্যস্ততা বা তৎপরতা কিন্তু ইতিহাসের সঠিক গল্প বা ইতিহাস সাধারণ পাঠকের হাতে বিনা মূল্যে তুলে দেওয়ার তাগাদায় থাকে না। তাদের কাছে এমন হিসাব আছে কি না, জানা নেই। তারা নিঃস্বার্থভাবে কতজনকে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার কথা শুনিয়ে তাদের দায় মিটিয়েছে। আবার আমার জানা নেই এমন কেউ আছেন কি না, যিনি বিনা মূল্যে ও বিনা পারিশ্রমিকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, গল্প তথা ইতিহাস জনগণকে অবহিত করার বড় ও মহৎ কাজটি করেছেন বা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন; অথবা অন্তত একবার ভেবেছেন যে কাজটি করা দরকার। তবে এটা বলা যায়, শহরে সেই রকম মানুষ চোখে না পড়লেও গ্রামগঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ব্যক্তি নিশ্চিত চোখে পড়ে। মাঝেমধ্যে পত্রিকার পাতায় এমন দু-চারটি ঘটনার কথা ফুটে ওঠে। যাঁরা গাছের নিচে, চায়ের দোকানে অথবা মাঠে শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। কেউবা কণ্ঠে সুর ধরে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। অন্য রকম পরিবেশ, অন্য রকম আবেশ। এমন দেশপ্রেমিক ব্যক্তিকে কেউ কিন্তু জোর করে বলে দেয় না—তোমার এই কাজ করা উচিত। এমন ব্যক্তি প্রকৃতির সরলতায় জন্মান, সক্রিয় থাকেন। হয়তো এ-ও দেখা যাবে যে, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার কোনো সনদ নেই। রাজনৈতিক পরিচয়ও নেই। রাজনৈতিক পরিচিতি ও সনদ নয়, এমন মানুষের বুক ভরে রয়েছে দেশপ্রেম।
স্বাধীনতা অর্জন বলতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কথাটাই জোরেশোরে ওঠে। কিন্তু এর নেপথ্যের ঘটনাগুলো, বাঙালি জাতির পরাধীনতাকালীন ঘটনাগুলো তেমনভাবে না আসায়, সবাই জানতে না পারায় ক্রমেই প্রাদেশিক চেতনার প্রসার ঘটে। জনগণের বিচারশক্তি লোপ পায়। তুলনা করার কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি মন্ত্রণালয় আমাদের আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত ছাড়া সম্ভবত তাদের বড় কোনো কাজ নেই। যদিও এই তালিকা করতে গিয়ে অনেক অঘটন, কেলেঙ্কারি ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকার স্থান পেয়েছে, আবার রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা হয়েছে। বিষয়টি কতটা অসতর্কতা ও অবহেলার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয় যথাযথ উপস্থাপন, অনুধাবন না হওয়াটা যেমন ঝুঁকির, তেমনি ঝুঁকির বিষয় হলো দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয় সমভাবে সমাদৃত না হওয়া, গুরুত্ব না পাওয়া।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে