মাসুদ রানা
আজকের পত্রিকা: সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দেওয়ার পরও দেশের কোটি কোটি নাগরিকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা কীভাবে ঘটল?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ঘোষণা, সেটা কেবল সরকারের বক্তব্য হতে পারে না। বাংলাদেশের সব নাগরিককে ধীরে ধীরে এই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এটা আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই করতে হবে। এটা সারা পৃথিবীর মধ্যে একটা নতুন দ্বার উন্মুক্ত করার মতো ব্যাপার। সেই উদ্যোগ এখনো আমরা নিতে পারিনি। আমরা শুধু কথায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বলছি, কিন্তু এখনো তা হয়ে উঠতে পারিনি। আমাদের অধিকাংশ কাজ এখনো অ্যানালগ। কিছু কিছু কাজ ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করার সক্ষমতা অর্জন করার কারণে আমরা নিজেদের ডিজিটাল বলছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে একটা রাষ্ট্র ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য যে ধরনের দক্ষতা অর্জন, দক্ষ লোক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন হয়, এর কোনোটাই এখন পর্যন্ত আমরা অর্জন করতে পারিনি।
আমার নিজের দেখা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ইংল্যান্ডের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা শতভাগ ডিজিটালাইজড। কেউ যদি কখনো সেই সিস্টেমের কোনো কিছু হ্যাক করে, তখন পুরো শহর অন্ধকারে ডুবে যাবে। আর সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বুঝতে পারবেন যে কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে। সে হিসেবে তাঁরা ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আর রেলওয়ের পুরো নেটওয়ার্কটা ডিএলআর (ডকলান লাইট রেলওয়েস) নামে একটা পদ্ধতিতে করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় কোনো ড্রাইভার নেই। মাত্র দুটি বগি থাকে এবং পুরো ট্রেনের সিস্টেমটা চলে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে। এর মানে নেটওয়ার্ক কতটা উন্নত করা গেলে একটা রুমে বসে একজন ব্যক্তি পুরো ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারছেন। এ রকম ব্যবস্থা হয়তোবা আমরাও ভবিষ্যতে করতে পারব।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দেওয়ার পরও দেশের অধিকাংশ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গেল। আমাদের কর্তাব্যক্তিরা টেরই পেলেন না। আর আইসিটি প্রতিমন্ত্রী তো হ্যাক হওয়ার বিষয়টি স্বীকারই করলেন না; বরং তিনি সিস্টেমের দুর্বলতার কথা বললেন। তথ্য উন্মুক্ত ছিল বলে অন্য কেউ সেটা চুরি করেছে। এর মানে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিদের ডিজিটাল জ্ঞান কত নিম্নপর্যায়ের, এ ঘটনায় সেটা বোঝা গেল। ভাবা যায়, প্রায় ৫ কোটি মানুষের স্পর্শকাতর তথ্য, মানে সব ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে গেল! এটা হওয়ার পর নাগরিকের আর কোনো কিছুই গোপন থাকল না।
আজকের পত্রিকা: তথ্য ফাঁসের ঘটনায় দক্ষিণ আফ্রিকার একজন ব্যক্তি প্রথম আমাদের বিভিন্ন সংস্থাকে ই-মেইল করার পরও এটাকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হলো না। আবার আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ই-মেইল না পাওয়ার কথা বললেন। এটা কীভাবে সম্ভব?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: আমি প্রতিমন্ত্রীর বিভিন্ন বক্তব্যে জানতে পেরেছি, সবগুলো মেইল ইগনোর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে আমাদের আচরণের মধ্যে, দৈনন্দিন জীবনযাপনে এবং পেশাগত জীবনেও অনলাইনটাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। দেশের বাইরে থেকে যিনি মেইল করেছেন, তিনি তো ইনফো-মেইলে পাঠিয়েছেন। তাঁর কাছে তো আইসিটি বিভাগের মেইল আইডি থাকার কথা না। তারপরও তো তিনি একটা দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে হ্যাক হওয়ার ঘটনা জানাতে মেইল করেছিলেন। কিন্তু আমাদের আইসিটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি মেইল নিয়মিত চেক না করেন, সে সবের উত্তর না দেন, তাহলে মেইলকারীর পক্ষে সময়মতো তা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়মিত চেক করা যদি পেশার দায়িত্বের মধ্যে না থাকে, তাহলে তো আমাদেরই সমস্যা। আমি পাইনি, এটা বলার সুযোগ কম। যদি অ্যাড্রেস ভুল না হয় বা টাইপিংয়ে ভুল না থাকে, তাহলে তা না আসার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের গাফিলতি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটলে তা জনগণকে জানানোর নিয়ম আছে। কিন্তু এখানে সরকার কেন নীরব ভূমিকা পালন করছে?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রশ্ন। এর আগেও আমাদের সাত লাখ লোকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছিল। সিঙ্গাপুরে এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি তথ্যকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগও আছে। সেই সব ঘটনায় সেই দেশের সরকারকে দায়িত্ব নিতে দেখা গেছে।
আমরা এরশাদের শাসনামলের সমালোচনা করি, কিন্তু এরশাদের আমল পর্যন্ত যদি হিসাব করা যায় যে কোনো অঘটন ঘটলে সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হতো। কোনো উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটলে প্রেসনোটের মাধ্যমে বলা হতো, সেখানে কিছু কমন ধরা-বাঁধা কথা থাকলেও দায়িত্ববোধের জায়গাটা অন্তত ছিল। কিন্তু এরপর তথাকথিত গণতান্ত্রিক দাবিদার দলগুলো ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দায়বোধের জায়গাগুলোতে কোনো ধরনের উন্নতি ঘটেনি। যদি এ ঘটনায় জনগণকে জানানো, তাদের সতর্ক করা এবং কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তাহলেও বোঝা যেত যে তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও দায়িত্ববোধের উন্নতি ঘটেছে।
আজকের পত্রিকা: সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত। এ ঘটনায় সংবিধানের সেই ধারাটি লঙ্ঘন করা হয়েছে স্পষ্টত। আপনি কী বলেন?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ বিষয়ে ২০১০ সালের যে জাতীয় পরিচয়পত্রসংক্রান্ত আইন, সেটা সুস্পষ্টভাবে এ ঘটনায় লঙ্ঘন হয়েছে। কারণ এ ঘটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং ব্যক্তির অন্যান্য মাধ্যম থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে। সংবিধানের ৪৩ (খ) অনুচ্ছেদ ধারায় যোগাযোগ থেকে শুরু করে চিঠিপত্র আদান-প্রদান এবং ব্যক্তিগত—সবকিছুর গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে তথ্যের কথাটি সরাসরি উল্লেখ নেই, কিন্তু আমরা ব্যাখ্যা করে বলতে পারি, এ ধারাটায় আমাদের উপাত্তের সুরক্ষা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা আছে। যোগাযোগও তো উপাত্তের মধ্যে পড়ে। এ ঘটনায় এর লঙ্ঘন হয়েছে, সেটা বলা যাবে। আর জীবনের সঙ্গে তো অভিজ্ঞতাও জড়িত। কোনো ঘটনায় কোনো ব্যক্তির জীবন যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, সেটা তার ক্ষতিরও ব্যাপার। তাই এ ঘটনায় ব্যক্তির জীবনের যে কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা যে আছে, এটা আমরা বলতে পারি।
আজকের পত্রিকা: এত বড় ঘটনার দায় কি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে সরকারি প্রতিষ্ঠান এর দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা এর দায় এড়াতে পারে না। এ থেকে বলা যায়, তাঁরা দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। আমি আপনার কথার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত যে শুধু দায় আর দায়িত্ববোধের বিষয় নয়। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে যদি উন্মুক্ত করে দিয়ে তথ্য ফাঁসের ঘটনাটি ঘটে, তাহলে সেটা তাঁদের দুর্বলতা। এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? এটা শুধু ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপার নয়। সত্যিকার অর্থে ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারও বটে।
আমরা কয়েকজন আইনজীবী মোবাইলের সিম রেজিস্ট্রেশনের সময় আঙুলের ছাপ নেওয়ার বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা যখন এর বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম, তখন বলা হয়েছিল এরা জঙ্গি, না হলে এর বিরুদ্ধে কেন কথা বলবেন? এখন তো বোঝা গেল সিম রেজিস্ট্রেশনের তথ্য কিংবা পরে পুলিশ বাসা-বাড়ি থেকে ভাড়াটেদের কাছ থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছিল, সেগুলো নীলক্ষেতের অনেক ফটোকপির দোকানে পাওয়া গিয়েছিল। একই ব্যক্তি ৮০টির মতো সিম তুলেছিল। একই রকম ঘটনা সাভার ও আশুলিয়ায়ও ঘটেছিল। সে সময় এসব নিয়ে সংবাদপত্রে অনেক রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছিল। আমরা যা যা বলেছিলাম, সে সবই ঘটেছিল। যেকোনো ব্যক্তির তথ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে তার অনুমতি নেওয়ার ব্যাপার আছে। কিন্তু এখানে কোনো কিছুর নিয়ম মানা হচ্ছে না।
আবার পাসপোর্টের জন্য যাবতীয় তথ্য দিতে হচ্ছে। এমনকি ব্যক্তির চোখ ও আঙুলের ছাপও দিতে হচ্ছে। এখন যখন হ্যাক হচ্ছে, তখন ব্যক্তির নিরাপত্তা কোথায় থাকছে? এর দায় কে নেবে? এখনই জবাবদিহি তৈরি না করা গেলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে, তখন তো কিছু করার থাকবে না। এ জন্য জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু হওয়া দরকার। সরকার যখন বিষয়টাকে সিরিয়াসভাবে দেখবে, তখন ব্যাপারগুলো পরে ঘটার আশঙ্কা থাকবে না। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত সেটা করতে পারেনি। এখন জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার যে ফিলিংস, এটা আসলে কোনো আইন দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। যতই আশ্বাস দেওয়া হোক না কেন, মানুষ বিশ্বাস করবে না। আর ভবিষ্যতে এসব নিয়ে সাংঘর্ষিক ঘটনা ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
যতই আমরা আইনের শাসনের কথা বলি না কেন, তার জন্য তো যিনি অন্যায়, অপরাধ করছেন, তাঁকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যখন সাধারণ নাগরিকের কেউ ভুল বা অন্যায় করে, তাকে কীভাবে শাস্তি দেবে? এসব ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের সমতা তো থাকতে হবে।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দেওয়ার পরও দেশের কোটি কোটি নাগরিকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা কীভাবে ঘটল?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ঘোষণা, সেটা কেবল সরকারের বক্তব্য হতে পারে না। বাংলাদেশের সব নাগরিককে ধীরে ধীরে এই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এটা আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই করতে হবে। এটা সারা পৃথিবীর মধ্যে একটা নতুন দ্বার উন্মুক্ত করার মতো ব্যাপার। সেই উদ্যোগ এখনো আমরা নিতে পারিনি। আমরা শুধু কথায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বলছি, কিন্তু এখনো তা হয়ে উঠতে পারিনি। আমাদের অধিকাংশ কাজ এখনো অ্যানালগ। কিছু কিছু কাজ ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করার সক্ষমতা অর্জন করার কারণে আমরা নিজেদের ডিজিটাল বলছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে একটা রাষ্ট্র ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য যে ধরনের দক্ষতা অর্জন, দক্ষ লোক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন হয়, এর কোনোটাই এখন পর্যন্ত আমরা অর্জন করতে পারিনি।
আমার নিজের দেখা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ইংল্যান্ডের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা শতভাগ ডিজিটালাইজড। কেউ যদি কখনো সেই সিস্টেমের কোনো কিছু হ্যাক করে, তখন পুরো শহর অন্ধকারে ডুবে যাবে। আর সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বুঝতে পারবেন যে কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে। সে হিসেবে তাঁরা ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আর রেলওয়ের পুরো নেটওয়ার্কটা ডিএলআর (ডকলান লাইট রেলওয়েস) নামে একটা পদ্ধতিতে করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় কোনো ড্রাইভার নেই। মাত্র দুটি বগি থাকে এবং পুরো ট্রেনের সিস্টেমটা চলে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে। এর মানে নেটওয়ার্ক কতটা উন্নত করা গেলে একটা রুমে বসে একজন ব্যক্তি পুরো ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারছেন। এ রকম ব্যবস্থা হয়তোবা আমরাও ভবিষ্যতে করতে পারব।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দেওয়ার পরও দেশের অধিকাংশ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গেল। আমাদের কর্তাব্যক্তিরা টেরই পেলেন না। আর আইসিটি প্রতিমন্ত্রী তো হ্যাক হওয়ার বিষয়টি স্বীকারই করলেন না; বরং তিনি সিস্টেমের দুর্বলতার কথা বললেন। তথ্য উন্মুক্ত ছিল বলে অন্য কেউ সেটা চুরি করেছে। এর মানে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিদের ডিজিটাল জ্ঞান কত নিম্নপর্যায়ের, এ ঘটনায় সেটা বোঝা গেল। ভাবা যায়, প্রায় ৫ কোটি মানুষের স্পর্শকাতর তথ্য, মানে সব ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে গেল! এটা হওয়ার পর নাগরিকের আর কোনো কিছুই গোপন থাকল না।
আজকের পত্রিকা: তথ্য ফাঁসের ঘটনায় দক্ষিণ আফ্রিকার একজন ব্যক্তি প্রথম আমাদের বিভিন্ন সংস্থাকে ই-মেইল করার পরও এটাকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হলো না। আবার আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ই-মেইল না পাওয়ার কথা বললেন। এটা কীভাবে সম্ভব?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: আমি প্রতিমন্ত্রীর বিভিন্ন বক্তব্যে জানতে পেরেছি, সবগুলো মেইল ইগনোর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে আমাদের আচরণের মধ্যে, দৈনন্দিন জীবনযাপনে এবং পেশাগত জীবনেও অনলাইনটাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। দেশের বাইরে থেকে যিনি মেইল করেছেন, তিনি তো ইনফো-মেইলে পাঠিয়েছেন। তাঁর কাছে তো আইসিটি বিভাগের মেইল আইডি থাকার কথা না। তারপরও তো তিনি একটা দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে হ্যাক হওয়ার ঘটনা জানাতে মেইল করেছিলেন। কিন্তু আমাদের আইসিটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি মেইল নিয়মিত চেক না করেন, সে সবের উত্তর না দেন, তাহলে মেইলকারীর পক্ষে সময়মতো তা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়মিত চেক করা যদি পেশার দায়িত্বের মধ্যে না থাকে, তাহলে তো আমাদেরই সমস্যা। আমি পাইনি, এটা বলার সুযোগ কম। যদি অ্যাড্রেস ভুল না হয় বা টাইপিংয়ে ভুল না থাকে, তাহলে তা না আসার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের গাফিলতি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটলে তা জনগণকে জানানোর নিয়ম আছে। কিন্তু এখানে সরকার কেন নীরব ভূমিকা পালন করছে?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রশ্ন। এর আগেও আমাদের সাত লাখ লোকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছিল। সিঙ্গাপুরে এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি তথ্যকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগও আছে। সেই সব ঘটনায় সেই দেশের সরকারকে দায়িত্ব নিতে দেখা গেছে।
আমরা এরশাদের শাসনামলের সমালোচনা করি, কিন্তু এরশাদের আমল পর্যন্ত যদি হিসাব করা যায় যে কোনো অঘটন ঘটলে সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হতো। কোনো উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটলে প্রেসনোটের মাধ্যমে বলা হতো, সেখানে কিছু কমন ধরা-বাঁধা কথা থাকলেও দায়িত্ববোধের জায়গাটা অন্তত ছিল। কিন্তু এরপর তথাকথিত গণতান্ত্রিক দাবিদার দলগুলো ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দায়বোধের জায়গাগুলোতে কোনো ধরনের উন্নতি ঘটেনি। যদি এ ঘটনায় জনগণকে জানানো, তাদের সতর্ক করা এবং কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তাহলেও বোঝা যেত যে তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও দায়িত্ববোধের উন্নতি ঘটেছে।
আজকের পত্রিকা: সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত। এ ঘটনায় সংবিধানের সেই ধারাটি লঙ্ঘন করা হয়েছে স্পষ্টত। আপনি কী বলেন?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ বিষয়ে ২০১০ সালের যে জাতীয় পরিচয়পত্রসংক্রান্ত আইন, সেটা সুস্পষ্টভাবে এ ঘটনায় লঙ্ঘন হয়েছে। কারণ এ ঘটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং ব্যক্তির অন্যান্য মাধ্যম থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে। সংবিধানের ৪৩ (খ) অনুচ্ছেদ ধারায় যোগাযোগ থেকে শুরু করে চিঠিপত্র আদান-প্রদান এবং ব্যক্তিগত—সবকিছুর গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে তথ্যের কথাটি সরাসরি উল্লেখ নেই, কিন্তু আমরা ব্যাখ্যা করে বলতে পারি, এ ধারাটায় আমাদের উপাত্তের সুরক্ষা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা আছে। যোগাযোগও তো উপাত্তের মধ্যে পড়ে। এ ঘটনায় এর লঙ্ঘন হয়েছে, সেটা বলা যাবে। আর জীবনের সঙ্গে তো অভিজ্ঞতাও জড়িত। কোনো ঘটনায় কোনো ব্যক্তির জীবন যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, সেটা তার ক্ষতিরও ব্যাপার। তাই এ ঘটনায় ব্যক্তির জীবনের যে কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা যে আছে, এটা আমরা বলতে পারি।
আজকের পত্রিকা: এত বড় ঘটনার দায় কি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন?
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে সরকারি প্রতিষ্ঠান এর দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা এর দায় এড়াতে পারে না। এ থেকে বলা যায়, তাঁরা দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। আমি আপনার কথার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত যে শুধু দায় আর দায়িত্ববোধের বিষয় নয়। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে যদি উন্মুক্ত করে দিয়ে তথ্য ফাঁসের ঘটনাটি ঘটে, তাহলে সেটা তাঁদের দুর্বলতা। এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? এটা শুধু ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপার নয়। সত্যিকার অর্থে ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারও বটে।
আমরা কয়েকজন আইনজীবী মোবাইলের সিম রেজিস্ট্রেশনের সময় আঙুলের ছাপ নেওয়ার বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা যখন এর বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম, তখন বলা হয়েছিল এরা জঙ্গি, না হলে এর বিরুদ্ধে কেন কথা বলবেন? এখন তো বোঝা গেল সিম রেজিস্ট্রেশনের তথ্য কিংবা পরে পুলিশ বাসা-বাড়ি থেকে ভাড়াটেদের কাছ থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছিল, সেগুলো নীলক্ষেতের অনেক ফটোকপির দোকানে পাওয়া গিয়েছিল। একই ব্যক্তি ৮০টির মতো সিম তুলেছিল। একই রকম ঘটনা সাভার ও আশুলিয়ায়ও ঘটেছিল। সে সময় এসব নিয়ে সংবাদপত্রে অনেক রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছিল। আমরা যা যা বলেছিলাম, সে সবই ঘটেছিল। যেকোনো ব্যক্তির তথ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে তার অনুমতি নেওয়ার ব্যাপার আছে। কিন্তু এখানে কোনো কিছুর নিয়ম মানা হচ্ছে না।
আবার পাসপোর্টের জন্য যাবতীয় তথ্য দিতে হচ্ছে। এমনকি ব্যক্তির চোখ ও আঙুলের ছাপও দিতে হচ্ছে। এখন যখন হ্যাক হচ্ছে, তখন ব্যক্তির নিরাপত্তা কোথায় থাকছে? এর দায় কে নেবে? এখনই জবাবদিহি তৈরি না করা গেলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে, তখন তো কিছু করার থাকবে না। এ জন্য জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু হওয়া দরকার। সরকার যখন বিষয়টাকে সিরিয়াসভাবে দেখবে, তখন ব্যাপারগুলো পরে ঘটার আশঙ্কা থাকবে না। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত সেটা করতে পারেনি। এখন জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার যে ফিলিংস, এটা আসলে কোনো আইন দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। যতই আশ্বাস দেওয়া হোক না কেন, মানুষ বিশ্বাস করবে না। আর ভবিষ্যতে এসব নিয়ে সাংঘর্ষিক ঘটনা ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
যতই আমরা আইনের শাসনের কথা বলি না কেন, তার জন্য তো যিনি অন্যায়, অপরাধ করছেন, তাঁকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যখন সাধারণ নাগরিকের কেউ ভুল বা অন্যায় করে, তাকে কীভাবে শাস্তি দেবে? এসব ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের সমতা তো থাকতে হবে।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে