মামুনুর রশীদ
সাধারণত পালা-পার্বণগুলো হয়ে থাকে শীতকালে অথবা শরতে। কিন্তু একমাত্র বর্ষ শুরু বা আমাদের প্রিয় পয়লা বৈশাখ হয়ে থাকে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের সময়। কারণটা সবারই জানা। ফসলি সনের প্রচলন করেছিলেন সম্রাট আকবর। সেটি বাঙালিরা একসময় মেনে নিয়েছে বাংলা সন হিসেবে। সন প্রবর্তনের হিসাব-নিকাশটা ছিল মূলত গম উৎপাদনের। কারণ, মোগল আমলে খাজনা আদায় হতো ফসল বা দ্রব্যের বিনিময়ে। হয়তোবা সে সময় বাংলাতেও প্রচুর গম উৎপাদিত হতো এবং খাজনা দিতে হতো গম দিয়েই। কিন্তু অনুমান করি, আজ থেকে প্রায় ছয় শ বছর আগে বহু ধর্ম ও সংস্কৃতির দেশ ভারতবর্ষে এক অনাবিল-অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ বিরাজ করত। এর ঢেউ গিয়ে লেগে ছিল সুদূর থাইল্যান্ডে। তখনকার শ্যামদেশ (বর্তমান থাইল্যান্ড), সেখানেও ৩০ চৈত্র চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব পালিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যেও বৈসাবি বা বিজু উৎসব ওই দিনই পালিত হয়। এর সঙ্গে নববর্ষের সম্পর্ক আছে কি না, তা ঠিক আমার জানা নেই। তবে বহুকাল ধরে সম্ভবত মোগলদের রাজত্বকালে পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে।
এই দিনের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে প্রকৃতিরও একটা যোগসাজশ আছে। ৬০-৭০ বছর আগে দেখেছি ৩০ চৈত্র এবং পয়লা বৈশাখে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়। কিন্তু এই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও বাংলাদেশে চৈত্রে বা বৈশাখী মেলা পালিত হয়েছে একেবারে জাতীয়ভাবে। এই মেলায় কৃষি উপকরণ, গৃহস্থালির নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে তন্তুবায়ি সম্প্রদায়ের হস্তচালিত গুণ থেকে গামছা, শাড়ি, লুঙ্গিসহ নানান বস্ত্র উপকরণও মিলত। শুধু তা-ই নয়, শিশুদের জন্য তৈরি নানান ধরনের খেলনা ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা হতো। বিনোদনের জন্য ছিল নানান ধরনের খেলা—পুতুলনাচ, জাদু এই সব। বাঙালির ঘরে ঘরে এই দিন সকালবেলায় নানা ধরনের খাবার রান্না হতো, যার পরিসর দুপুর গড়িয়ে যেত।
এই উৎসব যেহেতু সম্পূর্ণই অসাম্প্রদায়িক, তাই এই দিনটি সব ধর্মের মানুষের এক মিলনমেলায় পরিণত হতো। ২৫-৩০ বছর ধরে গ্রামীণ সংস্কৃতিতে অনেক পরিবর্তন আসায় মেলার যে সনাতন ভাবনা তাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু পরিবর্তন যেখানে আসেনি সেই জায়গাটা হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা। ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের রমনা বটমূলে প্রভাতে গানের আসর বসে এবং হাজারো বাঙালি সেখানে উপস্থিত হয়ে বাংলার গান গায়। আর এখানেই সংকট। সেই দ্বিজাতি তত্ত্বের সমর্থকেরা এই বাঙালিত্বের মিলনকে কোনো দিন মেনে নিতে পারেনি। কখনো এরা সংখ্যালঘু আবার কখনো এরা সংখ্যাগুরু। বাঙালির এই অব্যাহত অসাম্প্রদায়িকতার জোয়ারকে যখন রুখতে পারে না, তখনই ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেয়। রমনার বটমূলে স্মরণকালের এক ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাঙালি নিধন এবং বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার প্রয়াসে তারা মেতে উঠেছিল। তাতে উপস্থিত কিছু মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন। কিন্তু জনজোয়ার বন্ধ করতে পারেনি।
শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পয়লা বৈশাখের জমায়েত ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে চলছেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নববর্ষের প্রথম প্রহরে সর্বত্র মঙ্গল শোভাযাত্রা। মানুষের মঙ্গল কামনা ও কুগ্রহের ধ্বংস কামনার একটি সুদীর্ঘ শোভাযাত্রা বিভিন্ন জনপদে মানুষকে জাগ্রত করে। দৃশ্যত এই সব আয়োজন অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক এবং উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করলেও এর গূঢ় অর্থ দুটি। একটি হচ্ছে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষ নতুন করে নববর্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়। দুই. কৃষিনির্ভর বাংলায় উৎপাদনের সঙ্গে জনজীবন সম্পৃক্ত হয়ে বাংলা সালকে স্মরণ করে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কৃষক ও মহাজনের কাছে কৃষি অর্থনীতিটাও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। যদিও আজকের দিনে কৃষক ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে নিঃস্ব হওয়ার প্রক্রিয়ায় চলছেন। গ্রামীণ মহাজনের চরিত্র পাল্টে গিয়ে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে; তবু বাংলার মেরুদণ্ড কৃষকেরাই ধরে রেখেছেন।
এই পয়লা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতার উৎসবের মধ্যে দেশের অর্থনীতির একটা হিসাব-নিকাশও হওয়া উচিত। বিপুল পরিমাণ কৃষিশ্রমিক গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামে এখন কৃষিশ্রমিকের বড়ই অভাব। অভাব এমন এক পর্যায়ে এসেছে যে অনেক জায়গায়ই কৃষিকাজ লাভজনক তো দূরের কথা, নিজেদের জীবনযাপনের জন্যও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবু জীবনব্যবস্থা হিসেবে কিছু কৃষক বুকের পাঁজরভাঙা শ্রম দিয়ে কৃষিকে রক্ষা করছেন। তাঁদের উৎপাদিত খাদ্য দিয়েই আমরা জীবনধারণ করছি। বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা, রিসোর্ট ইত্যাদি নির্মাণের নামে। যেখানে কলকারখানার জন্য উর্বর জমির প্রয়োজন নেই, কিছু অদূরদর্শী কারখানার মালিক সেসব জায়গায় কারখানা স্থাপন করে উর্বর জমিকে বিনষ্ট করে ফেলছেন। বাংলাদেশে এখনো বিভিন্ন স্থান অনাবাদি রয়ে গেছে। জমির উর্বরতা শক্তি অত্যন্ত কম এবং আশপাশে নদ-নদী, সমুদ্র ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও সেই জায়গাগুলোতে কারখানা বসানো হচ্ছে না। ঢাকা শহরে অনেকেরই প্রাসাদোপম বাড়ি থাকার পরও গ্রামে বিশাল বিশাল বাগানবাড়ির শৌখিনতা পেয়ে বসেছে। হয়তো সারা বছরে কালেভদ্রে দু-একবার তাঁদের ওই বাড়িতে যাওয়া হয়। দেশের সরকার কৃষিজমিকে বাঁচানোর জন্য এবং অকারণ এসব বিলাসিতা রোধ করার জন্য আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর আইন করতে সমর্থ হয়নি।
নদীর ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। বাংলাদেশ গাঙ্গেয় বদ্বীপের সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এক ভূখণ্ড। নদীর নাব্যতা এবং নদী থেকে আহরিত পানির সুষম ব্যবহার এই ভূখণ্ডকে চিরদিন শস্য-শ্যামলা করে রেখেছে। ভুল পরিকল্পনায় নদীর সঙ্গে বৈরী স্থাপন করে দেশটাকে বিদেশি উপদেষ্টাদের কথামতো মরুভূমিতে পরিণত করছে। হাজার বছরের প্রচলিত নদীর পানি দিয়ে সেচের ব্যবস্থা না করে ষাটের দশক থেকে ভূগর্ভস্থ পানিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আসছে সার-কীটনাশকসহ নানান ব্যবস্থা। মাটি তার উৎপাদন ক্ষমতায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে নানা ক্ষতিকর উপকরণে। তাই কৃষিতে ওই সব উপকরণ আনতে অর্থ লগ্নি লাগছে প্রচুর, যা কৃষকের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই কৃষককে বাধ্য হয়ে জমি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। জমির মালিক তখন দিনমজুর নিয়োগ করে এই সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন। এখন কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার আসতে শুরু করেছে। তাতে কৃষকের সংখ্যা ক্রমাগতই কমতে থাকছে। আর এই বিপুল অর্থ লগ্নি হওয়ায় কৃষিব্যবস্থায় কৃষিজাত দ্রব্যের মূল্য এমনভাবে বাড়তে থাকছে, যা ক্রমাগত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
বৈশাখ যেহেতু কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই রাষ্ট্রকে কৃষি ভাবনার ওপর জোর দেওয়া উচিত। কিন্তু এই কৃষি ভাবনাই আমাদের অসাম্প্রদায়িকতার মতো একটি মহৎ ভাবনার ওপর দাঁড় করিয়েছে। সম্প্রতি বাঙালির সংস্কৃতির মূলে আঘাত দেওয়ার মতো কিছু কিছু ঘটনাও ঘটেছে। বাঙালি নারীদের টিপ পরার মতো একটি সংস্কৃতিকে আঘাত করা হয়েছে। এ আঘাত কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, যারা রমনার বটমূলে, উদীচীর অনুষ্ঠানে এবং আত্মঘাতী নানান আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু বাঙালির চিরাচরিত যে দুর্বলতা, যেমন পয়লা বৈশাখের পরেই বছরে অন্যদিনগুলোতে আর এই দিনটির কথা মনে পড়ে না বা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করার পর সারা বছর আর বাংলা ভাষার কথা মনে থাকে না। সেই অবস্থা থেকে বাঙালিকে ফিরে আসতে হবে। অস্থিমজ্জায়, অন্তরে পয়লা বৈশাখকে চেতনায় ধারণ করাই হবে আমাদের মুখ্য কর্তব্য। যে আনন্দে আমাদের পয়লা বৈশাখে জাগরণ হয়, সেই আনন্দ যেন আমরা সারা বছরই বাংলাকে কেন্দ্র করে উদ্যাপন করি।
সাধারণত পালা-পার্বণগুলো হয়ে থাকে শীতকালে অথবা শরতে। কিন্তু একমাত্র বর্ষ শুরু বা আমাদের প্রিয় পয়লা বৈশাখ হয়ে থাকে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের সময়। কারণটা সবারই জানা। ফসলি সনের প্রচলন করেছিলেন সম্রাট আকবর। সেটি বাঙালিরা একসময় মেনে নিয়েছে বাংলা সন হিসেবে। সন প্রবর্তনের হিসাব-নিকাশটা ছিল মূলত গম উৎপাদনের। কারণ, মোগল আমলে খাজনা আদায় হতো ফসল বা দ্রব্যের বিনিময়ে। হয়তোবা সে সময় বাংলাতেও প্রচুর গম উৎপাদিত হতো এবং খাজনা দিতে হতো গম দিয়েই। কিন্তু অনুমান করি, আজ থেকে প্রায় ছয় শ বছর আগে বহু ধর্ম ও সংস্কৃতির দেশ ভারতবর্ষে এক অনাবিল-অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ বিরাজ করত। এর ঢেউ গিয়ে লেগে ছিল সুদূর থাইল্যান্ডে। তখনকার শ্যামদেশ (বর্তমান থাইল্যান্ড), সেখানেও ৩০ চৈত্র চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব পালিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যেও বৈসাবি বা বিজু উৎসব ওই দিনই পালিত হয়। এর সঙ্গে নববর্ষের সম্পর্ক আছে কি না, তা ঠিক আমার জানা নেই। তবে বহুকাল ধরে সম্ভবত মোগলদের রাজত্বকালে পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে।
এই দিনের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে প্রকৃতিরও একটা যোগসাজশ আছে। ৬০-৭০ বছর আগে দেখেছি ৩০ চৈত্র এবং পয়লা বৈশাখে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়। কিন্তু এই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও বাংলাদেশে চৈত্রে বা বৈশাখী মেলা পালিত হয়েছে একেবারে জাতীয়ভাবে। এই মেলায় কৃষি উপকরণ, গৃহস্থালির নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে তন্তুবায়ি সম্প্রদায়ের হস্তচালিত গুণ থেকে গামছা, শাড়ি, লুঙ্গিসহ নানান বস্ত্র উপকরণও মিলত। শুধু তা-ই নয়, শিশুদের জন্য তৈরি নানান ধরনের খেলনা ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা হতো। বিনোদনের জন্য ছিল নানান ধরনের খেলা—পুতুলনাচ, জাদু এই সব। বাঙালির ঘরে ঘরে এই দিন সকালবেলায় নানা ধরনের খাবার রান্না হতো, যার পরিসর দুপুর গড়িয়ে যেত।
এই উৎসব যেহেতু সম্পূর্ণই অসাম্প্রদায়িক, তাই এই দিনটি সব ধর্মের মানুষের এক মিলনমেলায় পরিণত হতো। ২৫-৩০ বছর ধরে গ্রামীণ সংস্কৃতিতে অনেক পরিবর্তন আসায় মেলার যে সনাতন ভাবনা তাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু পরিবর্তন যেখানে আসেনি সেই জায়গাটা হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা। ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের রমনা বটমূলে প্রভাতে গানের আসর বসে এবং হাজারো বাঙালি সেখানে উপস্থিত হয়ে বাংলার গান গায়। আর এখানেই সংকট। সেই দ্বিজাতি তত্ত্বের সমর্থকেরা এই বাঙালিত্বের মিলনকে কোনো দিন মেনে নিতে পারেনি। কখনো এরা সংখ্যালঘু আবার কখনো এরা সংখ্যাগুরু। বাঙালির এই অব্যাহত অসাম্প্রদায়িকতার জোয়ারকে যখন রুখতে পারে না, তখনই ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেয়। রমনার বটমূলে স্মরণকালের এক ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাঙালি নিধন এবং বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার প্রয়াসে তারা মেতে উঠেছিল। তাতে উপস্থিত কিছু মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন। কিন্তু জনজোয়ার বন্ধ করতে পারেনি।
শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পয়লা বৈশাখের জমায়েত ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে চলছেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নববর্ষের প্রথম প্রহরে সর্বত্র মঙ্গল শোভাযাত্রা। মানুষের মঙ্গল কামনা ও কুগ্রহের ধ্বংস কামনার একটি সুদীর্ঘ শোভাযাত্রা বিভিন্ন জনপদে মানুষকে জাগ্রত করে। দৃশ্যত এই সব আয়োজন অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক এবং উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করলেও এর গূঢ় অর্থ দুটি। একটি হচ্ছে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষ নতুন করে নববর্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়। দুই. কৃষিনির্ভর বাংলায় উৎপাদনের সঙ্গে জনজীবন সম্পৃক্ত হয়ে বাংলা সালকে স্মরণ করে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কৃষক ও মহাজনের কাছে কৃষি অর্থনীতিটাও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। যদিও আজকের দিনে কৃষক ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে নিঃস্ব হওয়ার প্রক্রিয়ায় চলছেন। গ্রামীণ মহাজনের চরিত্র পাল্টে গিয়ে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে; তবু বাংলার মেরুদণ্ড কৃষকেরাই ধরে রেখেছেন।
এই পয়লা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতার উৎসবের মধ্যে দেশের অর্থনীতির একটা হিসাব-নিকাশও হওয়া উচিত। বিপুল পরিমাণ কৃষিশ্রমিক গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামে এখন কৃষিশ্রমিকের বড়ই অভাব। অভাব এমন এক পর্যায়ে এসেছে যে অনেক জায়গায়ই কৃষিকাজ লাভজনক তো দূরের কথা, নিজেদের জীবনযাপনের জন্যও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবু জীবনব্যবস্থা হিসেবে কিছু কৃষক বুকের পাঁজরভাঙা শ্রম দিয়ে কৃষিকে রক্ষা করছেন। তাঁদের উৎপাদিত খাদ্য দিয়েই আমরা জীবনধারণ করছি। বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা, রিসোর্ট ইত্যাদি নির্মাণের নামে। যেখানে কলকারখানার জন্য উর্বর জমির প্রয়োজন নেই, কিছু অদূরদর্শী কারখানার মালিক সেসব জায়গায় কারখানা স্থাপন করে উর্বর জমিকে বিনষ্ট করে ফেলছেন। বাংলাদেশে এখনো বিভিন্ন স্থান অনাবাদি রয়ে গেছে। জমির উর্বরতা শক্তি অত্যন্ত কম এবং আশপাশে নদ-নদী, সমুদ্র ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও সেই জায়গাগুলোতে কারখানা বসানো হচ্ছে না। ঢাকা শহরে অনেকেরই প্রাসাদোপম বাড়ি থাকার পরও গ্রামে বিশাল বিশাল বাগানবাড়ির শৌখিনতা পেয়ে বসেছে। হয়তো সারা বছরে কালেভদ্রে দু-একবার তাঁদের ওই বাড়িতে যাওয়া হয়। দেশের সরকার কৃষিজমিকে বাঁচানোর জন্য এবং অকারণ এসব বিলাসিতা রোধ করার জন্য আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর আইন করতে সমর্থ হয়নি।
নদীর ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। বাংলাদেশ গাঙ্গেয় বদ্বীপের সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এক ভূখণ্ড। নদীর নাব্যতা এবং নদী থেকে আহরিত পানির সুষম ব্যবহার এই ভূখণ্ডকে চিরদিন শস্য-শ্যামলা করে রেখেছে। ভুল পরিকল্পনায় নদীর সঙ্গে বৈরী স্থাপন করে দেশটাকে বিদেশি উপদেষ্টাদের কথামতো মরুভূমিতে পরিণত করছে। হাজার বছরের প্রচলিত নদীর পানি দিয়ে সেচের ব্যবস্থা না করে ষাটের দশক থেকে ভূগর্ভস্থ পানিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আসছে সার-কীটনাশকসহ নানান ব্যবস্থা। মাটি তার উৎপাদন ক্ষমতায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে নানা ক্ষতিকর উপকরণে। তাই কৃষিতে ওই সব উপকরণ আনতে অর্থ লগ্নি লাগছে প্রচুর, যা কৃষকের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই কৃষককে বাধ্য হয়ে জমি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। জমির মালিক তখন দিনমজুর নিয়োগ করে এই সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন। এখন কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার আসতে শুরু করেছে। তাতে কৃষকের সংখ্যা ক্রমাগতই কমতে থাকছে। আর এই বিপুল অর্থ লগ্নি হওয়ায় কৃষিব্যবস্থায় কৃষিজাত দ্রব্যের মূল্য এমনভাবে বাড়তে থাকছে, যা ক্রমাগত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
বৈশাখ যেহেতু কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই রাষ্ট্রকে কৃষি ভাবনার ওপর জোর দেওয়া উচিত। কিন্তু এই কৃষি ভাবনাই আমাদের অসাম্প্রদায়িকতার মতো একটি মহৎ ভাবনার ওপর দাঁড় করিয়েছে। সম্প্রতি বাঙালির সংস্কৃতির মূলে আঘাত দেওয়ার মতো কিছু কিছু ঘটনাও ঘটেছে। বাঙালি নারীদের টিপ পরার মতো একটি সংস্কৃতিকে আঘাত করা হয়েছে। এ আঘাত কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, যারা রমনার বটমূলে, উদীচীর অনুষ্ঠানে এবং আত্মঘাতী নানান আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু বাঙালির চিরাচরিত যে দুর্বলতা, যেমন পয়লা বৈশাখের পরেই বছরে অন্যদিনগুলোতে আর এই দিনটির কথা মনে পড়ে না বা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করার পর সারা বছর আর বাংলা ভাষার কথা মনে থাকে না। সেই অবস্থা থেকে বাঙালিকে ফিরে আসতে হবে। অস্থিমজ্জায়, অন্তরে পয়লা বৈশাখকে চেতনায় ধারণ করাই হবে আমাদের মুখ্য কর্তব্য। যে আনন্দে আমাদের পয়লা বৈশাখে জাগরণ হয়, সেই আনন্দ যেন আমরা সারা বছরই বাংলাকে কেন্দ্র করে উদ্যাপন করি।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে