রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে অতিপরিচিত একটি শব্দ হলো ‘ভীমরতি’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটি প্রয়োগ করেছি। ভীমরতি নিয়ে একটি বাগধারাও রয়েছে। বুড়ো বয়সে ভীমরতির কথা আমরা কে না শুনেছি? কিন্তু এই ভীমরতি আসলে কী? এটি কি কেবল বুড়ো বয়সেই হয়ে থাকে? আবার মহাভারতোক্ত মধ্যম পাণ্ডব ভীমের কথা আমরা সবাই জানি। তবে কি তাঁর সঙ্গে ভীমরতির কোনো সম্পর্ক রয়েছে? তবে চলুন আজ জানব ভীমরতির আদ্যোপান্ত।
ভীমরতি শব্দটি সংস্কৃত ‘ভীমরাত্রি’ থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে। এটি বিশেষ্য পদ। ভীমরতি শব্দের আভিধানিক ও প্রচলিত অর্থ হলো বার্ধক্যজনিত বুদ্ধিভ্রংশতা, কাণ্ডজ্ঞানহীনতা। ভীমরতি শব্দের মূল অর্থ (বর্তমানে অপ্রচলিত) হলো সাতাত্তর বছর সাত মাস বয়সের সপ্তম রাত্রি। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ অভিধানে শব্দটির ব্যুৎপত্তি নির্দেশ করেছেন [ভীমরাত্রী > ভীমরত্তী > বা. ভীমরতী > ভীমরথী]। ভীমরতির অর্থে যে সংস্কৃত শ্লোক উদ্ধৃত করা হয়েছে, তা হলো ‘সপ্তসপ্ততিতমে বর্ষে সপ্তমে মাসি সপ্তমি/রাত্রিভীমরথীনাম নরণাংদুরতিক্রমা’ (অর্থাৎ এই রাত্রি ভীষণ, কারণ ইহা দুরতিক্রম্য, অর্থাৎ সাধারণে এরূপ দীর্ঘজীবী হয় না)। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, মানবজীবনের সাতাত্তর বছর, সাত মাস, সাত রাত কাটলে ভীমরতি দশা আসে। এই বয়স পার হওয়া মানে পুণ্যবান হওয়া।
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস তাঁর ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’-এ ভীমরতি শব্দের প্রথম অর্থে বলেছেন, ‘হিন্দুর বিশ্বাসমতে এই দশার পর মানব জীবিত থাকলে প্রতিদিন তাহার পক্ষে শত সুবর্ণ দক্ষিণাপদ যজ্ঞের তুল্য হয়। সে ইচ্ছামতো গমন করিলে বিষ্ণুকে প্রদক্ষিণ করার ফল হয়, কথা বলিলে মন্ত্র জপ করা হয়, নিদ্রা তার ধ্যান এবং অন্ন তার পক্ষে সুধাতুল্য বিবেচিত হয়।’ আর দ্বিতীয় অর্থে বলেছেন, অতিশয় বার্ধক্যবশত বুদ্ধিভ্রংশতা। নগেন্দ্রনাথ বসু তাঁর ‘বিশ্বকোষ’ গ্রন্থে ভীমরতির বেশ কয়েকটি অর্থ লিপিবদ্ধ করেছেন। এর প্রথম অর্থটি হলো ‘সাতাত্তর বৎসরের সপ্তম মাসের সপ্তমী রাত্রির নাম ভীমরতি, এই দিন মনুষ্যদিগের দুরতিক্রমণীয়। যেসব ব্যক্তি এই বয়স অতিক্রম করিয়া জীবিত থাকে, তাহারা অতিশয় পুণ্যাত্মা।’
ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত ব্যাখ্যা অনুসারে বলা যায়, বয়স সাতাত্তর বছর সাত মাসের সপ্তম রাত্রির নাম হলো ভীমরতি। কেননা, ধারণা করা হয়, এই রাতের পর মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসে। সাধারণত এই বয়সে অধিকাংশ মানুষ একদিকে যেমন শিশুর মতো অবোধ, অন্যদিকে কাণ্ডজ্ঞানহীন যুবকের মতো নির্বোধ আচরণ শুরু করেন। ওই বয়সী ব্যক্তির সামগ্রিক চালচলনে একটি অস্বাভাবিকতা দৃষ্টিগোচর হয়। যদিও প্রাসঙ্গিকভাবে বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও দুটি শব্দের কথা আমরা এখানে উল্লেখ করতে পারি। শব্দ দুটো হলো ‘চালশে’ ও ‘বাহাত্তরে’। বয়স চল্লিশ পার করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চোখের দৃষ্টিশক্তি কিছুটা হ্রাস পেতে শুরু করে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা সচরাচর চশমা পরতে শুরু করি। দৃষ্টিশক্তির এই অবস্থাকেই বলা হয় চালশে।
অন্যদিকে বয়স সত্তর পার হওয়ার পর থেকেই কারও কারও স্মৃতিভ্রংশতা এবং স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। এ অবস্থায় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্যহেতু দৈহিক শক্তি ও বুদ্ধি লোপ পায়। সুতরাং দেখা যায়, বাহাত্তরে পাওয়ার পরের ধাপ হলো ভীমরতিগ্রস্ত হওয়া। কেননা, বয়স বিবেচনায় প্রথমটি বাহাত্তর আর দ্বিতীয়টি সাতাত্তর। তবে নিঃসন্দেহে উভয়ই বিপজ্জনক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ইঙ্গিত প্রদান করে।
আমাদের যাপিত জীবনে বুড়ো বয়সে ভীমরতির নানা ঘটনা আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষ করে থাকি। এই ভীমরতিতে যাঁরা আক্রান্ত, কখনো কখনো তাঁদের ভীষণ রকম রতিশক্তি বাড়লেও (বলা হয়ে থাকে সত্তর-বাহাত্তর বছর বয়সে পুরুষের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যায়। তখন পুরুষালি হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণে নিঃসারিত হয়। ফলে কারও কারও রতিশক্তি বাড়ে।) যেটি পাল্লা দিয়ে হ্রাস পায় তা হলো সামাজিক কাণ্ডজ্ঞান। সুতরাং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় ভীমরতিগ্রস্ত না হয়ে যথাসময়ে চিকিৎসকের সুপরামর্শ গ্রহণ করুন।
লেখক: রাজীব কুমার সাহা
আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে অতিপরিচিত একটি শব্দ হলো ‘ভীমরতি’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটি প্রয়োগ করেছি। ভীমরতি নিয়ে একটি বাগধারাও রয়েছে। বুড়ো বয়সে ভীমরতির কথা আমরা কে না শুনেছি? কিন্তু এই ভীমরতি আসলে কী? এটি কি কেবল বুড়ো বয়সেই হয়ে থাকে? আবার মহাভারতোক্ত মধ্যম পাণ্ডব ভীমের কথা আমরা সবাই জানি। তবে কি তাঁর সঙ্গে ভীমরতির কোনো সম্পর্ক রয়েছে? তবে চলুন আজ জানব ভীমরতির আদ্যোপান্ত।
ভীমরতি শব্দটি সংস্কৃত ‘ভীমরাত্রি’ থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে। এটি বিশেষ্য পদ। ভীমরতি শব্দের আভিধানিক ও প্রচলিত অর্থ হলো বার্ধক্যজনিত বুদ্ধিভ্রংশতা, কাণ্ডজ্ঞানহীনতা। ভীমরতি শব্দের মূল অর্থ (বর্তমানে অপ্রচলিত) হলো সাতাত্তর বছর সাত মাস বয়সের সপ্তম রাত্রি। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ অভিধানে শব্দটির ব্যুৎপত্তি নির্দেশ করেছেন [ভীমরাত্রী > ভীমরত্তী > বা. ভীমরতী > ভীমরথী]। ভীমরতির অর্থে যে সংস্কৃত শ্লোক উদ্ধৃত করা হয়েছে, তা হলো ‘সপ্তসপ্ততিতমে বর্ষে সপ্তমে মাসি সপ্তমি/রাত্রিভীমরথীনাম নরণাংদুরতিক্রমা’ (অর্থাৎ এই রাত্রি ভীষণ, কারণ ইহা দুরতিক্রম্য, অর্থাৎ সাধারণে এরূপ দীর্ঘজীবী হয় না)। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, মানবজীবনের সাতাত্তর বছর, সাত মাস, সাত রাত কাটলে ভীমরতি দশা আসে। এই বয়স পার হওয়া মানে পুণ্যবান হওয়া।
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস তাঁর ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’-এ ভীমরতি শব্দের প্রথম অর্থে বলেছেন, ‘হিন্দুর বিশ্বাসমতে এই দশার পর মানব জীবিত থাকলে প্রতিদিন তাহার পক্ষে শত সুবর্ণ দক্ষিণাপদ যজ্ঞের তুল্য হয়। সে ইচ্ছামতো গমন করিলে বিষ্ণুকে প্রদক্ষিণ করার ফল হয়, কথা বলিলে মন্ত্র জপ করা হয়, নিদ্রা তার ধ্যান এবং অন্ন তার পক্ষে সুধাতুল্য বিবেচিত হয়।’ আর দ্বিতীয় অর্থে বলেছেন, অতিশয় বার্ধক্যবশত বুদ্ধিভ্রংশতা। নগেন্দ্রনাথ বসু তাঁর ‘বিশ্বকোষ’ গ্রন্থে ভীমরতির বেশ কয়েকটি অর্থ লিপিবদ্ধ করেছেন। এর প্রথম অর্থটি হলো ‘সাতাত্তর বৎসরের সপ্তম মাসের সপ্তমী রাত্রির নাম ভীমরতি, এই দিন মনুষ্যদিগের দুরতিক্রমণীয়। যেসব ব্যক্তি এই বয়স অতিক্রম করিয়া জীবিত থাকে, তাহারা অতিশয় পুণ্যাত্মা।’
ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত ব্যাখ্যা অনুসারে বলা যায়, বয়স সাতাত্তর বছর সাত মাসের সপ্তম রাত্রির নাম হলো ভীমরতি। কেননা, ধারণা করা হয়, এই রাতের পর মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসে। সাধারণত এই বয়সে অধিকাংশ মানুষ একদিকে যেমন শিশুর মতো অবোধ, অন্যদিকে কাণ্ডজ্ঞানহীন যুবকের মতো নির্বোধ আচরণ শুরু করেন। ওই বয়সী ব্যক্তির সামগ্রিক চালচলনে একটি অস্বাভাবিকতা দৃষ্টিগোচর হয়। যদিও প্রাসঙ্গিকভাবে বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও দুটি শব্দের কথা আমরা এখানে উল্লেখ করতে পারি। শব্দ দুটো হলো ‘চালশে’ ও ‘বাহাত্তরে’। বয়স চল্লিশ পার করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চোখের দৃষ্টিশক্তি কিছুটা হ্রাস পেতে শুরু করে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা সচরাচর চশমা পরতে শুরু করি। দৃষ্টিশক্তির এই অবস্থাকেই বলা হয় চালশে।
অন্যদিকে বয়স সত্তর পার হওয়ার পর থেকেই কারও কারও স্মৃতিভ্রংশতা এবং স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। এ অবস্থায় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্যহেতু দৈহিক শক্তি ও বুদ্ধি লোপ পায়। সুতরাং দেখা যায়, বাহাত্তরে পাওয়ার পরের ধাপ হলো ভীমরতিগ্রস্ত হওয়া। কেননা, বয়স বিবেচনায় প্রথমটি বাহাত্তর আর দ্বিতীয়টি সাতাত্তর। তবে নিঃসন্দেহে উভয়ই বিপজ্জনক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ইঙ্গিত প্রদান করে।
আমাদের যাপিত জীবনে বুড়ো বয়সে ভীমরতির নানা ঘটনা আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষ করে থাকি। এই ভীমরতিতে যাঁরা আক্রান্ত, কখনো কখনো তাঁদের ভীষণ রকম রতিশক্তি বাড়লেও (বলা হয়ে থাকে সত্তর-বাহাত্তর বছর বয়সে পুরুষের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যায়। তখন পুরুষালি হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণে নিঃসারিত হয়। ফলে কারও কারও রতিশক্তি বাড়ে।) যেটি পাল্লা দিয়ে হ্রাস পায় তা হলো সামাজিক কাণ্ডজ্ঞান। সুতরাং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় ভীমরতিগ্রস্ত না হয়ে যথাসময়ে চিকিৎসকের সুপরামর্শ গ্রহণ করুন।
লেখক: রাজীব কুমার সাহা
আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে