আলম শাইন
আমাজন একটি রহস্যময় জঙ্গল, সেখানকার জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময়। জঙ্গলে রয়েছে ১ হাজার ২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন প্রজাতির পোকামাকড় ও ২ হাজার ২০০ প্রজাতির মাছ। এ ছাড়া প্রায় ৪০ হাজার প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। হরেক জীববৈচিত্র্য এবং হাজার হাজার প্রজাতির প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন গাছপালার সমাহারের কারণে আমাজনকে বলা হয় ‘মহাবন’। আবার ‘বিশ্বের ফুসফুস’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছে আমাজনকে। অথচ সেই আমাজন আমাদের চোখের সামনেই নানা দুর্যোগের কবলে পড়ছে।
আমাজনে দফায় দফায় আগুন লাগানো হচ্ছে; দাবানলেও পুড়ছে। ফলে বছরে ২২৮ মেগাটন কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে; অর্থাৎ একদিকে বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে ওজোনস্তর রক্ষা করছে আমাজন, অন্যদিকে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে আগুন লাগানোর কারণে। যার জন্য প্রকৃতি দায়ী নয়, অধিকাংশই দায়ী হচ্ছে স্থানীয় লোকজন; বিশেষ করে আমাজনে আগুন লাগানোর জন্য বেশির ভাগই দায়ী হচ্ছে ব্রাজিল। আমাজন জঙ্গলের ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে ৬০ শতাংশ পড়েছে ব্রাজিল সীমানায়, যা সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি। সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, ব্রাজিলের এনজিও সংস্থার লোকেরা এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত; যেখানে দেশটির সরকারের স্বার্থও জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। ব্রাজিল সরকার তাই সব সময় বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দাবানলের কারণেই জঙ্গল পুড়ছে। আবার বলা হচ্ছে, কৃষকেরা আগুন লাগিয়েছেন চাষাবাদ করার জন্য। তারা এনজিওগুলোর বিষয়টি সম্পূর্ণ চেপে যাচ্ছে। তবে বিশ্ব গণমাধ্যম সোচ্চার থাকায় ব্রাজিলের সেই অপচেষ্টা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বারবার।
সর্বশেষ বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে। পরিবেশবাদী সংস্থা ‘গ্রিনপিস’ জানিয়েছে, ওই সময় প্রথম ১০ দিনে ১০ হাজার ১৩৬টি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় এই অগ্নিকাণ্ড ১৭ শতাংশ বেশি ছিল। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিনই কম-বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে আমাজন জঙ্গলে, যা অনেক সময় জরিপে আসে না অথবা গণমাধ্যমে প্রচার হয় না। তবে দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা যতগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাজনে ঘটেছে, তার সবগুলোর নেপথ্যের কারণ অস্বীকার করছে ব্রাজিল সরকার। ২০১৯ সালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ব্রাজিল সরকারের মিথ্যাচারের চিত্রও তুলে ধরেছিল গণমাধ্যম সংস্থা বিবিসি।
বিশ্বের অন্যান্য গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিবিসি বাংলা ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়েছে, ‘বন উজাড় করা আর দাবানলের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলে ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলের খরা থেকে আগুনের সূত্রপাতের তত্ত্বটিকে আবার ভুল হিসেবে ধরে নিতে হবে।’
ওই গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে শুষ্ক মৌসুমে এ রকম ব্যাপকভাবে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে খরার সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা সামান্যই, যেখানে অন্যবারের চেয়ে এবার খরার তীব্রতাও কম। গবেষণায় আরও উদ্ধৃত করা হয়েছে, ‘সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আগুনের ঘটনা যে ১০টি মিউনিসিপ্যালিটিতে হয়েছে, সেখানেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় বন উজাড় করা হয়েছে। ২০১৯ সালের আগুনের ৩৭ শতাংশ ঘটেছে এই ১০টি স্থান থেকে, আর ওই বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট উজাড় করা বনের ৪৩ শতাংশ ঘটেছে এসব এলাকায়। নতুন করে বৃক্ষহীন হওয়া ও কিছুটা খরায় ভুগতে থাকা এলাকায় দাবানলের ব্যাপকতা আগুনের চরিত্রের একটি বিষয়ের দিকেই ইঙ্গিত করে। কোনো এলাকা বৃক্ষহীন করে ফেললে, সেটা নতুন ওই এলাকাকে জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করে।’
গবেষকেরা তিনটি আলাদা সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন।২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের বন উজাড় করার তথ্য এবং বছরের শুরু থেকে আগস্টের ১৪ তারিখ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দাবানলগুলোর তথ্য আমলে নেওয়া হয়েছে গবেষণাটিতে।
গবেষণায় দাবি করা হয়, ‘২০১৯ সালে আমাজনে যে পরিমাণ আগুনের ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু শুষ্ক মৌসুমের কারণে নয়। অধিকাংশ রাজ্যেই আগুনের ঘটনা গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ঘটেছে। আগস্টের ১৪ তারিখ পর্যন্ত আগুনের ঘটনা ঘটেছে ৩২ হাজার ৭২৮টি, যা একই সময়ে তিন বছরের গড়ের চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি।’
মূলত যারা বা যে দেশ এ ধরনের নাশকতা ঘটাচ্ছে, তারা জঙ্গলে আগুন লাগানোর ক্ষয়ক্ষতির বিষয় নিয়ে মোটেও ভাবেনি। ভাবেনি এতে মানবজাতির কতটা সর্বনাশ করছে তারা, সে সবও! কতটা চরম হুমকির মুখে ফেলছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যকে, সেটাও মাথায় নেয়নি। মাথায় নেয়নি বন্য প্রাণীরা আবাসস্থল হারাচ্ছে, আর বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ, পোকামাকড়, অণুজীব পুড়ে ছারখার হচ্ছে, সেসবও মাথায় নেয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে ভাবলে বোধকরি তারা সজ্ঞানে আগুন লাগিয়ে এমন ধ্বংসাত্মক কাণ্ড ঘটানোর সাহস পেত না। অবাক করা তথ্য হচ্ছে, আমাজন বনের গাছপালা থেকেই সমগ্র বিশ্বের ২০ শতাংশ অক্সিজেনের চাহিদা মিটছে! অথচ ওই অঞ্চলের লোকজন তার কদর করছে না; বরং পুড়িয়ে ছারখার করছে। কতটা নির্দয় হলে মানুষ এমন জঘন্য কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।
প্রসঙ্গ ক্রমে আরেকটি কথা বলতে হচ্ছে, আগুন শুধু প্রাকৃতিক জঙ্গলে লাগানো হচ্ছে না। অনেকে নিজস্ব মালিকানাধীন জঙ্গলে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে থাকে; যা বাংলাদেশেও ঘটছে। বাংলাদেশে সাধারণত তিনটি কারণে আগুন লাগানো হচ্ছে। প্রথমত, নাশকতা। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সাশ্রয় ও সময়ের তাগিদ। তৃতীয়ত, দুর্গম দুর্ভেদ্যতার কারণ; বিশেষ করে বাংলাদেশের জুমচাষিরা এ কাজ বেশি করছে। মাঝেমধ্যে দুর্বৃত্তরাও ঝোপ-জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।
যাঁরা নিজের মালিকানাধীন জঙ্গলে আগুন লাগাচ্ছেন, তাঁদের ধারণা, এতে অন্যের ক্ষতির কারণ কোথায়! আসলে যে ওই ব্যক্তি নিজেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছেন জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে, তা তিনি অবগত নন বিধায় এসব ভাবছেন। সে বিষয়টিও আসলে অনেকের অজানা। তাই আমাদের উচিত, এ ব্যাপারে সবাইকে বিশদভাবে জানানো। জানানো উচিত, এটি একটি অনুচিত ও গর্হিত কাজ। বিষয়টি লোকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে জানানো সম্ভব নয় বিধায় প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার; বিশেষ করে বাংলাদেশের জুমচাষিদের আগুন লাগানোর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে স্পষ্ট করে জানাতে হবে, যাতে বন-পাহাড়ে আগুন লাগানো থেকে বিরত থাকে তারা। তাতে যেমন সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি রক্ষা পাবে জীববৈচিত্র্যও। সর্বোপরি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর কাছে আমাদের দাবি, এ ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রাখার; যাতে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সরকার তথা প্রশাসনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
আমাজন একটি রহস্যময় জঙ্গল, সেখানকার জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময়। জঙ্গলে রয়েছে ১ হাজার ২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন প্রজাতির পোকামাকড় ও ২ হাজার ২০০ প্রজাতির মাছ। এ ছাড়া প্রায় ৪০ হাজার প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। হরেক জীববৈচিত্র্য এবং হাজার হাজার প্রজাতির প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন গাছপালার সমাহারের কারণে আমাজনকে বলা হয় ‘মহাবন’। আবার ‘বিশ্বের ফুসফুস’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছে আমাজনকে। অথচ সেই আমাজন আমাদের চোখের সামনেই নানা দুর্যোগের কবলে পড়ছে।
আমাজনে দফায় দফায় আগুন লাগানো হচ্ছে; দাবানলেও পুড়ছে। ফলে বছরে ২২৮ মেগাটন কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে; অর্থাৎ একদিকে বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে ওজোনস্তর রক্ষা করছে আমাজন, অন্যদিকে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে আগুন লাগানোর কারণে। যার জন্য প্রকৃতি দায়ী নয়, অধিকাংশই দায়ী হচ্ছে স্থানীয় লোকজন; বিশেষ করে আমাজনে আগুন লাগানোর জন্য বেশির ভাগই দায়ী হচ্ছে ব্রাজিল। আমাজন জঙ্গলের ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে ৬০ শতাংশ পড়েছে ব্রাজিল সীমানায়, যা সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি। সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, ব্রাজিলের এনজিও সংস্থার লোকেরা এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত; যেখানে দেশটির সরকারের স্বার্থও জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। ব্রাজিল সরকার তাই সব সময় বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দাবানলের কারণেই জঙ্গল পুড়ছে। আবার বলা হচ্ছে, কৃষকেরা আগুন লাগিয়েছেন চাষাবাদ করার জন্য। তারা এনজিওগুলোর বিষয়টি সম্পূর্ণ চেপে যাচ্ছে। তবে বিশ্ব গণমাধ্যম সোচ্চার থাকায় ব্রাজিলের সেই অপচেষ্টা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বারবার।
সর্বশেষ বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে। পরিবেশবাদী সংস্থা ‘গ্রিনপিস’ জানিয়েছে, ওই সময় প্রথম ১০ দিনে ১০ হাজার ১৩৬টি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় এই অগ্নিকাণ্ড ১৭ শতাংশ বেশি ছিল। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিনই কম-বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে আমাজন জঙ্গলে, যা অনেক সময় জরিপে আসে না অথবা গণমাধ্যমে প্রচার হয় না। তবে দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা যতগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাজনে ঘটেছে, তার সবগুলোর নেপথ্যের কারণ অস্বীকার করছে ব্রাজিল সরকার। ২০১৯ সালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ব্রাজিল সরকারের মিথ্যাচারের চিত্রও তুলে ধরেছিল গণমাধ্যম সংস্থা বিবিসি।
বিশ্বের অন্যান্য গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিবিসি বাংলা ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়েছে, ‘বন উজাড় করা আর দাবানলের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলে ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলের খরা থেকে আগুনের সূত্রপাতের তত্ত্বটিকে আবার ভুল হিসেবে ধরে নিতে হবে।’
ওই গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে শুষ্ক মৌসুমে এ রকম ব্যাপকভাবে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে খরার সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা সামান্যই, যেখানে অন্যবারের চেয়ে এবার খরার তীব্রতাও কম। গবেষণায় আরও উদ্ধৃত করা হয়েছে, ‘সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আগুনের ঘটনা যে ১০টি মিউনিসিপ্যালিটিতে হয়েছে, সেখানেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় বন উজাড় করা হয়েছে। ২০১৯ সালের আগুনের ৩৭ শতাংশ ঘটেছে এই ১০টি স্থান থেকে, আর ওই বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট উজাড় করা বনের ৪৩ শতাংশ ঘটেছে এসব এলাকায়। নতুন করে বৃক্ষহীন হওয়া ও কিছুটা খরায় ভুগতে থাকা এলাকায় দাবানলের ব্যাপকতা আগুনের চরিত্রের একটি বিষয়ের দিকেই ইঙ্গিত করে। কোনো এলাকা বৃক্ষহীন করে ফেললে, সেটা নতুন ওই এলাকাকে জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করে।’
গবেষকেরা তিনটি আলাদা সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন।২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের বন উজাড় করার তথ্য এবং বছরের শুরু থেকে আগস্টের ১৪ তারিখ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দাবানলগুলোর তথ্য আমলে নেওয়া হয়েছে গবেষণাটিতে।
গবেষণায় দাবি করা হয়, ‘২০১৯ সালে আমাজনে যে পরিমাণ আগুনের ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু শুষ্ক মৌসুমের কারণে নয়। অধিকাংশ রাজ্যেই আগুনের ঘটনা গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ঘটেছে। আগস্টের ১৪ তারিখ পর্যন্ত আগুনের ঘটনা ঘটেছে ৩২ হাজার ৭২৮টি, যা একই সময়ে তিন বছরের গড়ের চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি।’
মূলত যারা বা যে দেশ এ ধরনের নাশকতা ঘটাচ্ছে, তারা জঙ্গলে আগুন লাগানোর ক্ষয়ক্ষতির বিষয় নিয়ে মোটেও ভাবেনি। ভাবেনি এতে মানবজাতির কতটা সর্বনাশ করছে তারা, সে সবও! কতটা চরম হুমকির মুখে ফেলছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যকে, সেটাও মাথায় নেয়নি। মাথায় নেয়নি বন্য প্রাণীরা আবাসস্থল হারাচ্ছে, আর বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ, পোকামাকড়, অণুজীব পুড়ে ছারখার হচ্ছে, সেসবও মাথায় নেয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে ভাবলে বোধকরি তারা সজ্ঞানে আগুন লাগিয়ে এমন ধ্বংসাত্মক কাণ্ড ঘটানোর সাহস পেত না। অবাক করা তথ্য হচ্ছে, আমাজন বনের গাছপালা থেকেই সমগ্র বিশ্বের ২০ শতাংশ অক্সিজেনের চাহিদা মিটছে! অথচ ওই অঞ্চলের লোকজন তার কদর করছে না; বরং পুড়িয়ে ছারখার করছে। কতটা নির্দয় হলে মানুষ এমন জঘন্য কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।
প্রসঙ্গ ক্রমে আরেকটি কথা বলতে হচ্ছে, আগুন শুধু প্রাকৃতিক জঙ্গলে লাগানো হচ্ছে না। অনেকে নিজস্ব মালিকানাধীন জঙ্গলে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে থাকে; যা বাংলাদেশেও ঘটছে। বাংলাদেশে সাধারণত তিনটি কারণে আগুন লাগানো হচ্ছে। প্রথমত, নাশকতা। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সাশ্রয় ও সময়ের তাগিদ। তৃতীয়ত, দুর্গম দুর্ভেদ্যতার কারণ; বিশেষ করে বাংলাদেশের জুমচাষিরা এ কাজ বেশি করছে। মাঝেমধ্যে দুর্বৃত্তরাও ঝোপ-জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।
যাঁরা নিজের মালিকানাধীন জঙ্গলে আগুন লাগাচ্ছেন, তাঁদের ধারণা, এতে অন্যের ক্ষতির কারণ কোথায়! আসলে যে ওই ব্যক্তি নিজেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছেন জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে, তা তিনি অবগত নন বিধায় এসব ভাবছেন। সে বিষয়টিও আসলে অনেকের অজানা। তাই আমাদের উচিত, এ ব্যাপারে সবাইকে বিশদভাবে জানানো। জানানো উচিত, এটি একটি অনুচিত ও গর্হিত কাজ। বিষয়টি লোকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে জানানো সম্ভব নয় বিধায় প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার; বিশেষ করে বাংলাদেশের জুমচাষিদের আগুন লাগানোর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে স্পষ্ট করে জানাতে হবে, যাতে বন-পাহাড়ে আগুন লাগানো থেকে বিরত থাকে তারা। তাতে যেমন সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি রক্ষা পাবে জীববৈচিত্র্যও। সর্বোপরি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর কাছে আমাদের দাবি, এ ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রাখার; যাতে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সরকার তথা প্রশাসনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে