ফারুক মেহেদী
অর্থনীতির নানান বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. সাদিক আহমেদ আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহকারী সম্পাদক ফারুক মেহেদী।
করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. সাদিক আহমেদ: কোভিডের আগপর্যন্ত অর্থনীতি ভালো চলছিল। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অনেক উঁচুতে ছিল। অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতি বলা হচ্ছিল বাংলাদেশকে। মানবসম্পদসহ সব সূচকই ইতিবাচক ছিল। কোভিড আসার পর জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি, দারিদ্র্যের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ল। এটা একটা বৈশ্বিক সংকট ছিল। এতে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের কম ক্ষতি হয়। বিবিএস ২০১৯-২০ অর্থবছরে বলেছে, সাড়ে ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বৈশ্বিক তুলনায় এটা ভালো। ভারতে নেতিবাচক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভিয়েতনামে কমেছে। একপর্যায়ে সবকিছু খুলে দেওয়ায় ক্ষতির মাত্রাটা কমেছে। জিডিপিও বাড়ছে। বিবিএস ২০২০-২১ অর্থবছরে সাড়ে ৫ শতাংশ অর্জিত হওয়ার কথা বলছে। রপ্তানি বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং অর্থনৈতিক কার্যক্রম বলা যেতে পারে ভালোর দিকে। রেমিট্যান্স আগে ভালো ছিল, তবে কিছুদিন ধরে একটু নেতিবাচক। এটা প্রত্যাশিত ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের নীতি-কৌশল কেমন হওয়া উচিত?
ড. সাদিক আহমেদ: বেসরকারি বিনিয়োগ কিছুটা ফিরেছে। যতটা হওয়া উচিত, সেটা হয়নি। আর সাপ্লাই চেইনে যে সমস্যাটা দেখা যাচ্ছে, সেটা হলো চীন, ইউরোপ এবং আমেরিকায়ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ঠিকমতো হচ্ছে না। বৈশ্বিকভাবে পণ্যমূল্য বাড়ছে। জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেড়েছে। নির্মাণসামগ্রী ও শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এটা ব্যয়ের ওপর চাপ তৈরি করছে। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তাই আমি মনে করি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। একটি মিশ্র অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। মুদ্রা ও রাজস্বনীতিতে ভারসাম্য আনতে হবে। ঋণপ্রবাহ যদি ১২-১৪ শতাংশের মধ্যে হয়, তাহলে ঠিক আছে। রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশ, এটাও ঠিক আছে। খরচ বাড়ার ফলে কিছু নেতিবাচক প্রভাব তো থাকবেই। তবে সরকার যে ভর্তুকি দিয়ে সব আটকে রাখবে, এটা সম্ভব নয়।
করোনার ক্ষত না কাটতেই জ্বালানির দাম বাড়ানো কতটা ঠিক হলো?
ড. সাদিক আহমেদ: ডিজেলে সরকারের ভর্তুকি ছিল। বৈশ্বিক দাম বাড়ার ফলে সরকার যে সমন্বয় করছে, এটা ঠিকই আছে। তবে আমি মনে করি, দাম সমন্বয়ের বিষয়টির একটি পদ্ধতিগত সংস্কার প্রয়োজন। অ্যাডহক বেসিসে সরকার কেন দাম নির্ধারণ করবে? ভারতও কিন্তু সরকারের হাতে রাখেনি। এটার নিয়ন্ত্রণ যদি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, জ্বালানি ও অর্থ মন্ত্রণালয় মতামত দেবে। তবে মূল বিষয়টি বিইআরসি দেখভাল করবে। চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হবে। এভাবে করলে দাম নিয়ে প্রশ্ন আসবে না। সরকার প্রয়োজন মনে করলে ভ্যাট, ট্যাক্স বা শুল্ক কমিয়ে দিতে পারে। ট্যাক্স পলিসি দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সুতরাং আমি মনে করি, পণ্যমূল্য বা জ্বালানি তেলের দাম সরকারের হাত থেকে ছেড়ে দিতে হবে।
সরকারের অ্যাডহক ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ কতটা যৌক্তিক?
ড. সাদিক আহমেদ: যদি বাজারভিত্তিক হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানেও বাড়বে, দাম কমলে এখানেও কমবে। এটা হলো সবচেয়ে উত্তম নীতি। এ সিস্টেম তো আমাদের নেই। নেই বলেই এটাকে প্রশাসনিক দাম বলা হচ্ছে। যেহেতু এটি স্ট্র্যাটেজিক পণ্য, তাই পণ্যটির দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সরকার ট্যাক্স পলিসি দিয়ে হস্তক্ষেপ করবে। সার্বিকভাবে আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামের যে চাপ, তা আমাদের সহ্য করতে হবে।
করোনায় দারিদ্র্য বাড়ছে বলা হচ্ছে। এটা কমানোর জন্য করণীয় কী হতে পারে?
ড. সাদিক আহমেদ: এটা ঠিক যে, সময়ের পরিক্রমায় দারিদ্র্য কমেছে, জিডিপি বেড়েছে; তবে একই সঙ্গে আয়বৈষম্যও বেড়েছে। আমরা জানি, ২০ শতাংশের বেশি দরিদ্র মানুষ রয়েছে। কোভিডের ফলে এই হার কিছুটা বেড়েছে। এ ধরনের আয়বৈষম্য কমানোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কৌশল নেওয়া হয়। বাংলাদেশেও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে। তবে সম্পদের সীমাবদ্ধতার জন্য এটা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। এটাকে ব্যাপক পরিসরে করতে হবে। এ জন্য সরকারকে করের ওপর জোর দিতে হবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের কর জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশকে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এতেই বোঝা যায়, আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। কর সেভাবে বাড়েনি। করব্যবস্থায় একটা সংস্কার এনে কিছু সম্পদ স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ করা যাবে। অবশ্যই সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। তার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও করতে হবে।
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী বা ধনীরা সেরা করদাতার তালিকায় নেই কেন?
ড. সাদিক আহমেদ: এ জন্যই সংস্কারের কথা বলছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ভলান্টারি কমপ্লায়েন্স। এটা ছাড়া এনবিআরের লোকজন পাঠিয়ে ধরাধরি করে হবে না। করব্যবস্থা সহজ করতে হবে। ভলান্টারিভাবে আয় থেকে কর জমা হবে। এনবিআর পরে সিলেকটিভ অডিট করবে। সবার ফাইল দেখার প্রয়োজন নেই। আমরা তো জানি, বেশি আয়ের মানুষ কোথায় আছে। আমরা যদি মনে করি, ওঁদের কর ঠিকমতো আসছে না, সেখানে অডিট করা যায়।
বৈশ্বিক যেসব উত্তম চর্চা আছে, সেগুলো আমরা কেন করছি না?
ড. সাদিক আহমেদ: আমরা বলছি যে, করনীতি এবং কর আদায় দুটোকে আলাদা করে দিতে হবে। কর প্রশাসনকে আধুনিক করতে হলে সবকিছু কম্পিউটারাইজড করতে হবে। অনলাইনে যেন রিটার্ন দিতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। টার্গেট করে সিলেকটিভ ও প্রোডাকটিভ অডিট করতে হবে। একটা কম্পিউটারাইজড মডেল থাকবে যে, এই ক্রাইটেরিয়া থাকলে এ ধরনের অডিট করা যাবে। আমি মনে করি, দৃশ্যমান উচ্চবিত্তদের করের বিষয়টি আগে দেখা যেতে পারে।
করোনায় দারিদ্র্যের হার বেড়েছে শোনা গেলেও সরকার বলছে কমছে। আপনি কী বলেন?
ড. সাদিক আহমেদ: আমাদের কাছে দারিদ্র্যের সঠিক তথ্য নেই। ধারণা থেকে যেটা বলা যায়, কোভিডের আগে আমাদের দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছিল ১৯ শতাংশে। দারিদ্র্য কিসের ওপর নির্ভর করে? প্রবৃদ্ধি, আয়, রেমিট্যান্স, কর্মসংস্থানের ওপর। বাংলাদেশে কোভিডের ফলে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। কিন্তু নেতিবাচক তো হয়নি। আর রেমিট্যান্স তো ৩০ শতাংশের মতো বেড়েছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়নি, রপ্তানিও ভালো ছিল। সুতরাং দারিদ্র্য বাড়ার কথা নয়। সাময়িকভাবে যদিও কোভিড শুরুর দিকে দারিদ্র্যের হার কিছুটা বেড়েছিল, তবে বছরভিত্তিক হিসাবে তা খুব বাড়েনি বলে আমার ধারণা।
এত কিছুর মধ্যেও অর্থনীতির জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
ড. সাদিক আহমেদ: আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। সেখানে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে সাড়ে ৮ বা ৯ শতাংশ। ২০৩১ সালের মধ্যে আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে যাব। অতি দারিদ্র্য শূন্য হয়ে যাবে। ২০৪১ সালে আমরা উচ্চ আয়ের দেশ হব—সরকারের এসব লক্ষ্যমাত্রা কোভিডের কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছে। প্রবৃদ্ধি কমেছে, দারিদ্র্য যেভাবে কমার কথা, কমেনি। সুতরাং প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন অর্জনে অনেক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অবকাঠামো, দারিদ্র্য বিমোচনে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি নিতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়ানোও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ৫-৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আমরা এমনিতেই অর্জন করতে পারব। কিন্তু যদি এটাকে ৮-৯ শতাংশে নিতে হয়, তাহলে আমাদের রিফর্ম করতেই হবে।
বিনিয়োগ লাগবে। কিন্তু পরিবেশ কতটা অনুকূলে আছে?
ড. সাদিক আহমেদ: বিনিয়োগে সবচেয়ে বড় বাধা ট্রানজেকশন কস্ট। দেখা যায়, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ সহজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে ব্যাংক ক্রাপসি বা কন্টাক্ট এনফোর্সমেন্টের আইনগত ব্যবস্থার প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। বিনিয়োগ অনুমোদন বা এর প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘসূত্র, জমি পেতে সমস্যা আছে—এ রকম অনেক সমস্যা আছে। কোর্টের সমস্যা। কর দিতে জটিলতা। এসব ইস্যু চিহ্নিত হয়েছে এবং তা সরকারও জানে। সরকার যদি এগুলোর সমাধান করতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। বাংলাদেশ অত্যন্ত লাভজনক গন্তব্য। এখন যদি জরুরি সংস্কারগুলো করা যায়, ট্রেড প্রোটেকশন কমিয়ে এফডিআই নিয়ে আসা, প্রযুক্তি সংযোজন বাড়ানো, ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট, মুদ্রার বিনিময় হারে নজর দেওয়া যায়, তাহলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আরও সহজ হবে। সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনের যে ঝুঁকি, সেটা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমাতে হবে।
অর্থনীতির নানান বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. সাদিক আহমেদ আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহকারী সম্পাদক ফারুক মেহেদী।
করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. সাদিক আহমেদ: কোভিডের আগপর্যন্ত অর্থনীতি ভালো চলছিল। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অনেক উঁচুতে ছিল। অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতি বলা হচ্ছিল বাংলাদেশকে। মানবসম্পদসহ সব সূচকই ইতিবাচক ছিল। কোভিড আসার পর জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি, দারিদ্র্যের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ল। এটা একটা বৈশ্বিক সংকট ছিল। এতে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের কম ক্ষতি হয়। বিবিএস ২০১৯-২০ অর্থবছরে বলেছে, সাড়ে ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বৈশ্বিক তুলনায় এটা ভালো। ভারতে নেতিবাচক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভিয়েতনামে কমেছে। একপর্যায়ে সবকিছু খুলে দেওয়ায় ক্ষতির মাত্রাটা কমেছে। জিডিপিও বাড়ছে। বিবিএস ২০২০-২১ অর্থবছরে সাড়ে ৫ শতাংশ অর্জিত হওয়ার কথা বলছে। রপ্তানি বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং অর্থনৈতিক কার্যক্রম বলা যেতে পারে ভালোর দিকে। রেমিট্যান্স আগে ভালো ছিল, তবে কিছুদিন ধরে একটু নেতিবাচক। এটা প্রত্যাশিত ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের নীতি-কৌশল কেমন হওয়া উচিত?
ড. সাদিক আহমেদ: বেসরকারি বিনিয়োগ কিছুটা ফিরেছে। যতটা হওয়া উচিত, সেটা হয়নি। আর সাপ্লাই চেইনে যে সমস্যাটা দেখা যাচ্ছে, সেটা হলো চীন, ইউরোপ এবং আমেরিকায়ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ঠিকমতো হচ্ছে না। বৈশ্বিকভাবে পণ্যমূল্য বাড়ছে। জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেড়েছে। নির্মাণসামগ্রী ও শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এটা ব্যয়ের ওপর চাপ তৈরি করছে। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তাই আমি মনে করি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। একটি মিশ্র অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। মুদ্রা ও রাজস্বনীতিতে ভারসাম্য আনতে হবে। ঋণপ্রবাহ যদি ১২-১৪ শতাংশের মধ্যে হয়, তাহলে ঠিক আছে। রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশ, এটাও ঠিক আছে। খরচ বাড়ার ফলে কিছু নেতিবাচক প্রভাব তো থাকবেই। তবে সরকার যে ভর্তুকি দিয়ে সব আটকে রাখবে, এটা সম্ভব নয়।
করোনার ক্ষত না কাটতেই জ্বালানির দাম বাড়ানো কতটা ঠিক হলো?
ড. সাদিক আহমেদ: ডিজেলে সরকারের ভর্তুকি ছিল। বৈশ্বিক দাম বাড়ার ফলে সরকার যে সমন্বয় করছে, এটা ঠিকই আছে। তবে আমি মনে করি, দাম সমন্বয়ের বিষয়টির একটি পদ্ধতিগত সংস্কার প্রয়োজন। অ্যাডহক বেসিসে সরকার কেন দাম নির্ধারণ করবে? ভারতও কিন্তু সরকারের হাতে রাখেনি। এটার নিয়ন্ত্রণ যদি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, জ্বালানি ও অর্থ মন্ত্রণালয় মতামত দেবে। তবে মূল বিষয়টি বিইআরসি দেখভাল করবে। চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হবে। এভাবে করলে দাম নিয়ে প্রশ্ন আসবে না। সরকার প্রয়োজন মনে করলে ভ্যাট, ট্যাক্স বা শুল্ক কমিয়ে দিতে পারে। ট্যাক্স পলিসি দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সুতরাং আমি মনে করি, পণ্যমূল্য বা জ্বালানি তেলের দাম সরকারের হাত থেকে ছেড়ে দিতে হবে।
সরকারের অ্যাডহক ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ কতটা যৌক্তিক?
ড. সাদিক আহমেদ: যদি বাজারভিত্তিক হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানেও বাড়বে, দাম কমলে এখানেও কমবে। এটা হলো সবচেয়ে উত্তম নীতি। এ সিস্টেম তো আমাদের নেই। নেই বলেই এটাকে প্রশাসনিক দাম বলা হচ্ছে। যেহেতু এটি স্ট্র্যাটেজিক পণ্য, তাই পণ্যটির দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সরকার ট্যাক্স পলিসি দিয়ে হস্তক্ষেপ করবে। সার্বিকভাবে আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামের যে চাপ, তা আমাদের সহ্য করতে হবে।
করোনায় দারিদ্র্য বাড়ছে বলা হচ্ছে। এটা কমানোর জন্য করণীয় কী হতে পারে?
ড. সাদিক আহমেদ: এটা ঠিক যে, সময়ের পরিক্রমায় দারিদ্র্য কমেছে, জিডিপি বেড়েছে; তবে একই সঙ্গে আয়বৈষম্যও বেড়েছে। আমরা জানি, ২০ শতাংশের বেশি দরিদ্র মানুষ রয়েছে। কোভিডের ফলে এই হার কিছুটা বেড়েছে। এ ধরনের আয়বৈষম্য কমানোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কৌশল নেওয়া হয়। বাংলাদেশেও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে। তবে সম্পদের সীমাবদ্ধতার জন্য এটা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। এটাকে ব্যাপক পরিসরে করতে হবে। এ জন্য সরকারকে করের ওপর জোর দিতে হবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের কর জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশকে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এতেই বোঝা যায়, আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। কর সেভাবে বাড়েনি। করব্যবস্থায় একটা সংস্কার এনে কিছু সম্পদ স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ করা যাবে। অবশ্যই সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। তার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও করতে হবে।
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী বা ধনীরা সেরা করদাতার তালিকায় নেই কেন?
ড. সাদিক আহমেদ: এ জন্যই সংস্কারের কথা বলছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ভলান্টারি কমপ্লায়েন্স। এটা ছাড়া এনবিআরের লোকজন পাঠিয়ে ধরাধরি করে হবে না। করব্যবস্থা সহজ করতে হবে। ভলান্টারিভাবে আয় থেকে কর জমা হবে। এনবিআর পরে সিলেকটিভ অডিট করবে। সবার ফাইল দেখার প্রয়োজন নেই। আমরা তো জানি, বেশি আয়ের মানুষ কোথায় আছে। আমরা যদি মনে করি, ওঁদের কর ঠিকমতো আসছে না, সেখানে অডিট করা যায়।
বৈশ্বিক যেসব উত্তম চর্চা আছে, সেগুলো আমরা কেন করছি না?
ড. সাদিক আহমেদ: আমরা বলছি যে, করনীতি এবং কর আদায় দুটোকে আলাদা করে দিতে হবে। কর প্রশাসনকে আধুনিক করতে হলে সবকিছু কম্পিউটারাইজড করতে হবে। অনলাইনে যেন রিটার্ন দিতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। টার্গেট করে সিলেকটিভ ও প্রোডাকটিভ অডিট করতে হবে। একটা কম্পিউটারাইজড মডেল থাকবে যে, এই ক্রাইটেরিয়া থাকলে এ ধরনের অডিট করা যাবে। আমি মনে করি, দৃশ্যমান উচ্চবিত্তদের করের বিষয়টি আগে দেখা যেতে পারে।
করোনায় দারিদ্র্যের হার বেড়েছে শোনা গেলেও সরকার বলছে কমছে। আপনি কী বলেন?
ড. সাদিক আহমেদ: আমাদের কাছে দারিদ্র্যের সঠিক তথ্য নেই। ধারণা থেকে যেটা বলা যায়, কোভিডের আগে আমাদের দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছিল ১৯ শতাংশে। দারিদ্র্য কিসের ওপর নির্ভর করে? প্রবৃদ্ধি, আয়, রেমিট্যান্স, কর্মসংস্থানের ওপর। বাংলাদেশে কোভিডের ফলে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। কিন্তু নেতিবাচক তো হয়নি। আর রেমিট্যান্স তো ৩০ শতাংশের মতো বেড়েছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়নি, রপ্তানিও ভালো ছিল। সুতরাং দারিদ্র্য বাড়ার কথা নয়। সাময়িকভাবে যদিও কোভিড শুরুর দিকে দারিদ্র্যের হার কিছুটা বেড়েছিল, তবে বছরভিত্তিক হিসাবে তা খুব বাড়েনি বলে আমার ধারণা।
এত কিছুর মধ্যেও অর্থনীতির জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
ড. সাদিক আহমেদ: আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। সেখানে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে সাড়ে ৮ বা ৯ শতাংশ। ২০৩১ সালের মধ্যে আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে যাব। অতি দারিদ্র্য শূন্য হয়ে যাবে। ২০৪১ সালে আমরা উচ্চ আয়ের দেশ হব—সরকারের এসব লক্ষ্যমাত্রা কোভিডের কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছে। প্রবৃদ্ধি কমেছে, দারিদ্র্য যেভাবে কমার কথা, কমেনি। সুতরাং প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন অর্জনে অনেক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অবকাঠামো, দারিদ্র্য বিমোচনে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি নিতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়ানোও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ৫-৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আমরা এমনিতেই অর্জন করতে পারব। কিন্তু যদি এটাকে ৮-৯ শতাংশে নিতে হয়, তাহলে আমাদের রিফর্ম করতেই হবে।
বিনিয়োগ লাগবে। কিন্তু পরিবেশ কতটা অনুকূলে আছে?
ড. সাদিক আহমেদ: বিনিয়োগে সবচেয়ে বড় বাধা ট্রানজেকশন কস্ট। দেখা যায়, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ সহজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে ব্যাংক ক্রাপসি বা কন্টাক্ট এনফোর্সমেন্টের আইনগত ব্যবস্থার প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। বিনিয়োগ অনুমোদন বা এর প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘসূত্র, জমি পেতে সমস্যা আছে—এ রকম অনেক সমস্যা আছে। কোর্টের সমস্যা। কর দিতে জটিলতা। এসব ইস্যু চিহ্নিত হয়েছে এবং তা সরকারও জানে। সরকার যদি এগুলোর সমাধান করতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। বাংলাদেশ অত্যন্ত লাভজনক গন্তব্য। এখন যদি জরুরি সংস্কারগুলো করা যায়, ট্রেড প্রোটেকশন কমিয়ে এফডিআই নিয়ে আসা, প্রযুক্তি সংযোজন বাড়ানো, ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট, মুদ্রার বিনিময় হারে নজর দেওয়া যায়, তাহলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আরও সহজ হবে। সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনের যে ঝুঁকি, সেটা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমাতে হবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে