বগুড়ায় বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তালুকদার পরিবার থেকে দুই ব্যক্তি পাঁচ দফায় সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এমন চিত্র ছিল জেলার সংসদীয় ৩ নম্বর (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনে। স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিও ছিল এই পরিবারকেন্দ্রিক। কিন্তু মানবতাবিরোধী অভিযোগ ওঠায় পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন নেতা-কর্মীরা।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই পরিবারের কাউকে আবার মনোনয়ন না দিতে শীর্ষ পর্যায়ে তাঁরা দাবি জানাবেন। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সেটির ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।
অন্যদিকে নির্বাচন উপলক্ষে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। উচ্চপর্যায়ে চলছে তদবির। তবে ভোট নিয়ে আগ্রহ কম ভোটারদের।
দুপচাঁচিয়ার পিসিগাড়ি গ্রামের কৃষক নাজমুল হক, চা বিক্রেতা আব্দুস সালাম, আদমদীঘির ছাতিয়ান গ্রামের মশিউর রহমান, তোতা মিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি ভোট নিয়ে আলাপ হয়। তাঁদের ভাষ্য, বিগত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা ভোটদান নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন নিজেদের স্বার্থে। সমর্থন পেতে এসে কথা বলছেন। কিন্তু নির্বাচন এখনো অনেক দূরে। কে প্রার্থী হচ্ছেন, সেটি নিয়ে তাঁদের বিশেষ ভাবনা নেই।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে হাসান আলী তালুকদার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন বিএনপির আব্দুল মজিদ তালুকদার। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে আবারও আব্দুল মজিদ নির্বাচিত হন। ২০০১ ও ২০০৮ সালে মজিদ তালুকদারের ছেলে আব্দুল মোমেন তালুকদার এমপি হন। মাঝে ১৯৮৬ সালে জাসদ থেকে ও ১৯৮৮ সালে দল পাল্টে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে এমপি হন এ বি এম শাজাহান আলী। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের শরিক দল জাতীয় পার্টির হাতে। বর্তমান এমপি দুপচাঁচিয়া উপজেলা জাপার সভাপতি নুরুল ইসলাম তালুকদার।
মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে মজিদ তালুকদারের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে আছেন সাবেক এমপি আব্দুল মোমেন তালুকদার। তাঁর বাবা প্রয়াত মজিদ তালুকদারের নামেও অভিযোগ ছিল। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান মজিদ তালুকদারের আরেক ছেলে আব্দুল মুহিত তালুকদার। কিন্তু তিনি মাঠে নামার পরপরই সমালোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মুহিত তালুকদারকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ উল্লেখ করে ফাঁসির দাবিতে এলাকায় পোস্টার সাঁটানো হয়।
আদমদীঘির সান্তাহার পৌর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কামরুল হাসান বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কোনো পরিবার থেকে যেন মনোনয়ন দেওয়া না হয়। এ জন্য দলের শীর্ষ পর্যায়ে দাবি জানাবেন। মুহিত এমন পরিবার থেকেই বিএনপির রাজনীতি করছেন।
এ ব্যাপারে আব্দুল মুহিত তালুকদার বলেন, রাজনীতিতে যাঁরা তাঁকে পছন্দ করেন না, তাঁরাই এ ধরনের পোস্টারিং করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের ব্যানারে লাগানো পোস্টারের বিষয়ে সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা এ ধরনের পোস্টার ছাপেননি। এবার দল নির্বাচনে গেলে মনোনয়ন পাওয়ার আশা আছে।
বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও আছেন ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফজলুল বারী তালুকদার, বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী হিরু।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান আদমদীঘি উপজেলা কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশরাফুল ইসলাম মন্টু, শান্তাহার ইউপির চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি। এ ছাড়া জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার।
আওয়ামী লীগের দুপচাঁচিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির হলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। তবে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে ফোরামে দাবি জানানো হবে।
এ বিষয়ে এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, কোনো কাজেই আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিরোধ হয়নি। তাই আগামী নির্বাচনেও মহাজোট থাকলে তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে মহাজোট না থাকলে নির্বাচন করবেন কি না, তা পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন।