জাহীদ রেজা নূর
দুবাইয়ে একটি অলংকারের দোকান উদ্বোধন করতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সবচেয়ে মেধাবী খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। খুনের মামলার একজন পলাতক আসামির এ দোকানটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও কিছুসংখ্যক তারকা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও নিশ্চয় আরাভ খানের অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন এবং তাঁরাও সে জন্য কিছু অর্থকড়ির মালিক হয়েছেন। কিন্তু সাকিব আল হাসানের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি তাঁদের নেই। এ কারণে যত নিন্দা, তা এই ক্রিকেটারকে ঘিরেই।
এরই মধ্যে দুবাই থেকে ফিরে এসে আবার ক্রিকেট মাঠে নেমেছেন সাকিব। আয়ারল্যান্ডকে প্রথম এক দিনের ম্যাচে নাকানি-চুবানি খাওয়ানোর মূলে তিনি। ফলে তাঁর ক্রিকেট সফলতা নিয়ে তৃপ্ত হচ্ছে মানুষ।
সাকিবের পক্ষ নিয়ে আমি তাঁর সাফাই গাইছি না, কিংবা তাঁকে তোপের মুখে উড়িয়েও দিচ্ছি না। বলতে চাইছি, এই ঘটনা থেকে আরও দূরের একটি বিষয় নিয়ে, যা সাকিবের এই কাণ্ড-কারখানার কিছুটা ব্যাখ্যা দেয়। সংক্ষেপে বললে তা হলো, মানুষের মধ্যে যে মূল্যবোধ থাকে, সেটা তৈরি হয় আশপাশের আচরিত বিশ্বাস ও বাস্তবতা থেকে। সেখানে যদি সুদৃষ্টান্ত থাকে, তাহলে একভাবে গড়ে ওঠে মানুষ, আর সেখানে পঙ্কিলতা থাকলে সেটাই রপ্ত করে নেয় সে। সাকিব আল হাসানের বিষয়টি আলোচনা করার সময় সেই মানদণ্ডটিকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। সেটা নিয়েই কথা বলব। তবে তার আগে ক্রিকেট তারকা হওয়ার পর সাকিব আল হাসানের আরও কিছু ঘটনা-দুর্ঘটনার কথা পাঠককে স্মরণ করিয়ে দেওয়া সংগত হবে।
দুই. যাঁরা সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ভাবেন, তাঁকে পছন্দ করেন, ক্রিকেট মাঠে তাঁর পারফরম্যান্স দেখে আশায় বুক বাঁধেন, তাঁরা সবাই জানেন সাকিবকে নিয়ে এটাই প্রথম বিতর্ক নয়। এর আগেও ক্রিকেট জুয়া, বিতর্কিত কোম্পানির সঙ্গে শেয়ারবাজারে আঁতাত ইত্যাদি নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর যুক্ততা পাওয়া গেছে। মনে হয়েছে, ক্রিকেট এবং ক্রিকেটের বাইরে টাকা-পয়সার প্রসঙ্গ এলে সাকিব আল হাসান কোনো বাছ-বিচার করেন না। লাভবান হওয়ার ‘মওকা’ এলে তিনি বেমালুম সেই প্রস্তাব গিলে ফেলেন। ধরা পড়লে সরে আসবেন, ধরা না পড়লে সেটা ‘জায়েজ’ হয়ে যাবে, সেটাও হয়তো তাঁর ভাবনায় থাকে। এই মনে হওয়াটা অমূলক নয়।
বেটউইনার নিউজের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের চুক্তি নিয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সেগুলো স্মরণ করা যাক। গত বছরের মাঝামাঝির ঘটনা সেটা। বাংলাদেশের আইনে যেকোনো ধরনের বাজি নিষিদ্ধ। দেশের আইনে যা নিষিদ্ধ, সে রকম একটি বেটিং প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছা দূত হওয়ার কথা কী করে সাকিব ভাবলেন, সে প্রশ্নটি তখনই উঠেছিল। প্রবল আপত্তির মুখে এবং বিসিবির শক্ত অবস্থানের কারণে সাকিব সরে এসেছিলেন সেই চুক্তি থেকে। বিসিবি সাকিব আল হাসানকে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দিয়ে সে যাত্রা রক্ষা করেছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠকেরা বারবার যে প্রশ্নগুলো তুলছিলেন, তার সারমর্ম হলো, সাকিব কি না জেনেশুনেই এ রকম একটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন? সেটা তো হতে পারে না।
এত বড় একজন খেলোয়াড়, দেশের আইন না জেনেই জুয়া প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হন কী করে? এর একটা ব্যাখ্যা তাঁর দেওয়া উচিত। বিসিবির ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেয়ে সাকিব নিশ্চয়ই আর ব্যাখ্যা-ট্যাখ্যা দেওয়ার কথা ভাবেননি। কাজটি যে গর্হিত, সেটাও হয়তো বা মনে করেননি। কারণ তিনি তো এক অর্থে বিনা বিচারে মুক্তি পেয়ে গিয়েছিলেন। তারও আগে ঘটা আরেকটি ঘটনাও সাকিবের মনস্তত্ত্ব বোঝার জন্য সহায়ক হবে। ২০১৯ সালে ভারতের এক জুয়াড়ির সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চালানো কথোপকথনের কারণে সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হতে বসেছিল। দীপক আগারওয়াল নামে সেই জুয়াড়ির সঙ্গে ২০১৭ সাল থেকেই হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ ছিল সাকিবের। সাকিব তাঁকে টিমের অভ্যন্তরীণ তথ্য দেননি বটে, কিন্তু এই মেসেজ বা বার্তা চালাচালির বিষয়টি আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট বা আকসুকে জানাননি। এ জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞার সামনে পড়েছিলেন তিনি।
কেন সেই জুয়াড়ির সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করার কথা ভেবেছিলেন সাকিব, তার উত্তর যা-ই হোক না কেন, তিনি যে তাঁর নিজের শরীর থেকে সন্দেহের চাদরটি খুলে রাখতে পারেননি, সে কথা বলা যায়।
পুরোনো দুটো প্রসঙ্গ টেনে আনার কারণ আছে। আমাদের দেশে এখন আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। ক্রিকেট-বিশ্ব সাকিব আল হাসানকে একনামে চেনে। কিন্তু একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে তিনি যে দৃষ্টান্ত রাখছেন, তা কারও জন্য সুখপ্রদ নয়।
তিন. সুদৃষ্টান্তের কথা শুরুতেই বলেছিলাম। মূলত সে কথা বলার জন্যই সাকিব-প্রসঙ্গ টেনে আনা। কে না জানে, যাঁরা তারকা-মহাতারকা, তাঁদের থাকে ভক্তকুল। তারকার একটা কথা ভক্তের জীবনকে অনুপ্রাণিত করে। চারদিকের উদভ্রান্ত অনিয়মের মাঝে দৃষ্টান্তমূলক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল সাকিব আল হাসানের। তিনি চাইলেই তাঁর বলা কথায়, তাঁর আচরণে, তাঁর দেহভাষায় হয়ে উঠতে পারতেন দৃষ্টান্তস্থানীয় ব্যক্তি। তাঁর অনুসারীরাও তাতে অনুপ্রাণিত হতো এবং নিজেদের আচরণে সেই শুভবোধকে জায়গা করে দিতে পারত।
কিন্তু ওপরে ওঠার সিঁড়ি খুঁজে পাওয়ার পর মানুষের ভাবনা-চিন্তায় যে পরিবর্তন আসে, তা সব সময় ঠিক পথ হয়তো অনুসরণ করে না, কিংবা তারকা হওয়ার আগেই যদি কেউ দেখে, চারপাশের পরিবেশে সুবিধাবাদ, চুরি-বাটপারি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার দাপটে সততা, শিক্ষা, মানবতা, রুচি, সংস্কৃতিবোধ ইত্যাদি অগ্রাহ্য করে অনেক ওপরে উঠে গেছে, তাহলে হঠাৎ করে (সেটা পরিশ্রমসাপেক্ষে হতে পারে, পরিশ্রমহীনও হতে পারে) আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়া মানুষের পক্ষে নিজেকে নিয়ে কী করবে, তা বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
আরাভ-কাণ্ডে কী করতে পারতেন সাকিব? তিনি বলতে পারতেন, ‘আরাভ যে একজন পলাতক আসামি, সেটা জানার পর আমি দুবাই যাওয়া বন্ধ করেছি। তাঁর কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। নিলেও ফেরত দিয়েছি। কোনো ধরনের অনৈতিক কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত হতে চাই না।’
তিনি তা বলেননি। তিনি পুলিশের কাছ থেকে আরাভ খান সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার পরও উপস্থিত হয়েছেন আরাভের অলংকারের দোকান উদ্বোধন করতে। টাকার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন।আক্ষেপ এই, আমাদের সামনে রোল মডেল নেই একেবারেই। যার মধ্যে রোল মডেল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে, তিনিও বাজার আর পণ্যের সঙ্গী হয়ে উঠে সম্ভাবনাটুকুর টুঁটি চেপে ধরেন। আমাদের দেশের মানুষের একটা অংশের, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে সাকিব আল হাসান অবশ্যই রোল মডেল। কিন্তু রোল মডেল যদি তাঁর আচরণের মাধ্যমে ভুল সংকেত দেন, তাহলে এই অসংখ্য ভক্তও ভুল পথে পরিচালিত হন, যার পরিণতি হয় ভয়াবহ। যেকোনো অঘটনকেই কুযুক্তি দিয়ে জায়েজ করে নেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয় তাতে।
সব সময় নিয়ম-নীতির নিগড়ে নিজেকে বেঁধে রাখতে হবে, এমন কোনো দিব্যি দেননি সাকিব আল হাসান; বরং কখনো কখনো ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে গেলেই সৃজনশীলতা পরিপক্ব হয়ে ওঠে। কিন্তু সেটাও হতে হয় পরিশীলিত। অন্যকে তা শেখায়। আর যদি তা অন্যকে বিপথে পরিচালিত করে, তাহলে সেটা সৃজনশীল হয়ে ওঠে না।
সাকিব আল হাসান তারকা হয়ে ওঠার পর এমন কয়েকটি অঘটন ঘটিয়েছেন, যা তাঁকে তারকাই বানিয়েছে শুধু, কিন্তু অন্যের জন্য তা কোনো অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেনি। নিজের কাজের মাধ্যমে সবার রোল মডেল যদি হতে পারতেন সাকিব, তাহলে সেটাই হতো কাঙ্ক্ষিত। খেলার মাঠে মনকাড়া পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে গেলেন ঠিকই, কিন্তু নানাভাবে যে অঘটনগুলোর সঙ্গে নিজেকে জড়ালেন, তাতে তাঁকে নিয়ে গর্ব করার সময়ও মনটা খুঁতখুঁতে হয়ে রইবে।
মনের সবটা উজাড় করে দিয়ে কি তাঁকে আর ভালোবাসা যাবে?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দুবাইয়ে একটি অলংকারের দোকান উদ্বোধন করতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সবচেয়ে মেধাবী খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। খুনের মামলার একজন পলাতক আসামির এ দোকানটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও কিছুসংখ্যক তারকা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও নিশ্চয় আরাভ খানের অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন এবং তাঁরাও সে জন্য কিছু অর্থকড়ির মালিক হয়েছেন। কিন্তু সাকিব আল হাসানের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি তাঁদের নেই। এ কারণে যত নিন্দা, তা এই ক্রিকেটারকে ঘিরেই।
এরই মধ্যে দুবাই থেকে ফিরে এসে আবার ক্রিকেট মাঠে নেমেছেন সাকিব। আয়ারল্যান্ডকে প্রথম এক দিনের ম্যাচে নাকানি-চুবানি খাওয়ানোর মূলে তিনি। ফলে তাঁর ক্রিকেট সফলতা নিয়ে তৃপ্ত হচ্ছে মানুষ।
সাকিবের পক্ষ নিয়ে আমি তাঁর সাফাই গাইছি না, কিংবা তাঁকে তোপের মুখে উড়িয়েও দিচ্ছি না। বলতে চাইছি, এই ঘটনা থেকে আরও দূরের একটি বিষয় নিয়ে, যা সাকিবের এই কাণ্ড-কারখানার কিছুটা ব্যাখ্যা দেয়। সংক্ষেপে বললে তা হলো, মানুষের মধ্যে যে মূল্যবোধ থাকে, সেটা তৈরি হয় আশপাশের আচরিত বিশ্বাস ও বাস্তবতা থেকে। সেখানে যদি সুদৃষ্টান্ত থাকে, তাহলে একভাবে গড়ে ওঠে মানুষ, আর সেখানে পঙ্কিলতা থাকলে সেটাই রপ্ত করে নেয় সে। সাকিব আল হাসানের বিষয়টি আলোচনা করার সময় সেই মানদণ্ডটিকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। সেটা নিয়েই কথা বলব। তবে তার আগে ক্রিকেট তারকা হওয়ার পর সাকিব আল হাসানের আরও কিছু ঘটনা-দুর্ঘটনার কথা পাঠককে স্মরণ করিয়ে দেওয়া সংগত হবে।
দুই. যাঁরা সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ভাবেন, তাঁকে পছন্দ করেন, ক্রিকেট মাঠে তাঁর পারফরম্যান্স দেখে আশায় বুক বাঁধেন, তাঁরা সবাই জানেন সাকিবকে নিয়ে এটাই প্রথম বিতর্ক নয়। এর আগেও ক্রিকেট জুয়া, বিতর্কিত কোম্পানির সঙ্গে শেয়ারবাজারে আঁতাত ইত্যাদি নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর যুক্ততা পাওয়া গেছে। মনে হয়েছে, ক্রিকেট এবং ক্রিকেটের বাইরে টাকা-পয়সার প্রসঙ্গ এলে সাকিব আল হাসান কোনো বাছ-বিচার করেন না। লাভবান হওয়ার ‘মওকা’ এলে তিনি বেমালুম সেই প্রস্তাব গিলে ফেলেন। ধরা পড়লে সরে আসবেন, ধরা না পড়লে সেটা ‘জায়েজ’ হয়ে যাবে, সেটাও হয়তো তাঁর ভাবনায় থাকে। এই মনে হওয়াটা অমূলক নয়।
বেটউইনার নিউজের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের চুক্তি নিয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সেগুলো স্মরণ করা যাক। গত বছরের মাঝামাঝির ঘটনা সেটা। বাংলাদেশের আইনে যেকোনো ধরনের বাজি নিষিদ্ধ। দেশের আইনে যা নিষিদ্ধ, সে রকম একটি বেটিং প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছা দূত হওয়ার কথা কী করে সাকিব ভাবলেন, সে প্রশ্নটি তখনই উঠেছিল। প্রবল আপত্তির মুখে এবং বিসিবির শক্ত অবস্থানের কারণে সাকিব সরে এসেছিলেন সেই চুক্তি থেকে। বিসিবি সাকিব আল হাসানকে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দিয়ে সে যাত্রা রক্ষা করেছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠকেরা বারবার যে প্রশ্নগুলো তুলছিলেন, তার সারমর্ম হলো, সাকিব কি না জেনেশুনেই এ রকম একটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন? সেটা তো হতে পারে না।
এত বড় একজন খেলোয়াড়, দেশের আইন না জেনেই জুয়া প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হন কী করে? এর একটা ব্যাখ্যা তাঁর দেওয়া উচিত। বিসিবির ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেয়ে সাকিব নিশ্চয়ই আর ব্যাখ্যা-ট্যাখ্যা দেওয়ার কথা ভাবেননি। কাজটি যে গর্হিত, সেটাও হয়তো বা মনে করেননি। কারণ তিনি তো এক অর্থে বিনা বিচারে মুক্তি পেয়ে গিয়েছিলেন। তারও আগে ঘটা আরেকটি ঘটনাও সাকিবের মনস্তত্ত্ব বোঝার জন্য সহায়ক হবে। ২০১৯ সালে ভারতের এক জুয়াড়ির সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চালানো কথোপকথনের কারণে সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হতে বসেছিল। দীপক আগারওয়াল নামে সেই জুয়াড়ির সঙ্গে ২০১৭ সাল থেকেই হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ ছিল সাকিবের। সাকিব তাঁকে টিমের অভ্যন্তরীণ তথ্য দেননি বটে, কিন্তু এই মেসেজ বা বার্তা চালাচালির বিষয়টি আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট বা আকসুকে জানাননি। এ জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞার সামনে পড়েছিলেন তিনি।
কেন সেই জুয়াড়ির সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করার কথা ভেবেছিলেন সাকিব, তার উত্তর যা-ই হোক না কেন, তিনি যে তাঁর নিজের শরীর থেকে সন্দেহের চাদরটি খুলে রাখতে পারেননি, সে কথা বলা যায়।
পুরোনো দুটো প্রসঙ্গ টেনে আনার কারণ আছে। আমাদের দেশে এখন আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। ক্রিকেট-বিশ্ব সাকিব আল হাসানকে একনামে চেনে। কিন্তু একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে তিনি যে দৃষ্টান্ত রাখছেন, তা কারও জন্য সুখপ্রদ নয়।
তিন. সুদৃষ্টান্তের কথা শুরুতেই বলেছিলাম। মূলত সে কথা বলার জন্যই সাকিব-প্রসঙ্গ টেনে আনা। কে না জানে, যাঁরা তারকা-মহাতারকা, তাঁদের থাকে ভক্তকুল। তারকার একটা কথা ভক্তের জীবনকে অনুপ্রাণিত করে। চারদিকের উদভ্রান্ত অনিয়মের মাঝে দৃষ্টান্তমূলক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল সাকিব আল হাসানের। তিনি চাইলেই তাঁর বলা কথায়, তাঁর আচরণে, তাঁর দেহভাষায় হয়ে উঠতে পারতেন দৃষ্টান্তস্থানীয় ব্যক্তি। তাঁর অনুসারীরাও তাতে অনুপ্রাণিত হতো এবং নিজেদের আচরণে সেই শুভবোধকে জায়গা করে দিতে পারত।
কিন্তু ওপরে ওঠার সিঁড়ি খুঁজে পাওয়ার পর মানুষের ভাবনা-চিন্তায় যে পরিবর্তন আসে, তা সব সময় ঠিক পথ হয়তো অনুসরণ করে না, কিংবা তারকা হওয়ার আগেই যদি কেউ দেখে, চারপাশের পরিবেশে সুবিধাবাদ, চুরি-বাটপারি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার দাপটে সততা, শিক্ষা, মানবতা, রুচি, সংস্কৃতিবোধ ইত্যাদি অগ্রাহ্য করে অনেক ওপরে উঠে গেছে, তাহলে হঠাৎ করে (সেটা পরিশ্রমসাপেক্ষে হতে পারে, পরিশ্রমহীনও হতে পারে) আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়া মানুষের পক্ষে নিজেকে নিয়ে কী করবে, তা বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
আরাভ-কাণ্ডে কী করতে পারতেন সাকিব? তিনি বলতে পারতেন, ‘আরাভ যে একজন পলাতক আসামি, সেটা জানার পর আমি দুবাই যাওয়া বন্ধ করেছি। তাঁর কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। নিলেও ফেরত দিয়েছি। কোনো ধরনের অনৈতিক কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত হতে চাই না।’
তিনি তা বলেননি। তিনি পুলিশের কাছ থেকে আরাভ খান সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার পরও উপস্থিত হয়েছেন আরাভের অলংকারের দোকান উদ্বোধন করতে। টাকার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন।আক্ষেপ এই, আমাদের সামনে রোল মডেল নেই একেবারেই। যার মধ্যে রোল মডেল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে, তিনিও বাজার আর পণ্যের সঙ্গী হয়ে উঠে সম্ভাবনাটুকুর টুঁটি চেপে ধরেন। আমাদের দেশের মানুষের একটা অংশের, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে সাকিব আল হাসান অবশ্যই রোল মডেল। কিন্তু রোল মডেল যদি তাঁর আচরণের মাধ্যমে ভুল সংকেত দেন, তাহলে এই অসংখ্য ভক্তও ভুল পথে পরিচালিত হন, যার পরিণতি হয় ভয়াবহ। যেকোনো অঘটনকেই কুযুক্তি দিয়ে জায়েজ করে নেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয় তাতে।
সব সময় নিয়ম-নীতির নিগড়ে নিজেকে বেঁধে রাখতে হবে, এমন কোনো দিব্যি দেননি সাকিব আল হাসান; বরং কখনো কখনো ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে গেলেই সৃজনশীলতা পরিপক্ব হয়ে ওঠে। কিন্তু সেটাও হতে হয় পরিশীলিত। অন্যকে তা শেখায়। আর যদি তা অন্যকে বিপথে পরিচালিত করে, তাহলে সেটা সৃজনশীল হয়ে ওঠে না।
সাকিব আল হাসান তারকা হয়ে ওঠার পর এমন কয়েকটি অঘটন ঘটিয়েছেন, যা তাঁকে তারকাই বানিয়েছে শুধু, কিন্তু অন্যের জন্য তা কোনো অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেনি। নিজের কাজের মাধ্যমে সবার রোল মডেল যদি হতে পারতেন সাকিব, তাহলে সেটাই হতো কাঙ্ক্ষিত। খেলার মাঠে মনকাড়া পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে গেলেন ঠিকই, কিন্তু নানাভাবে যে অঘটনগুলোর সঙ্গে নিজেকে জড়ালেন, তাতে তাঁকে নিয়ে গর্ব করার সময়ও মনটা খুঁতখুঁতে হয়ে রইবে।
মনের সবটা উজাড় করে দিয়ে কি তাঁকে আর ভালোবাসা যাবে?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে