ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের নির্বাচনের আগে সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল হারুন আল রশিদ। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী টানা চারবার এই আসন থেকে এমপি হন। বার্ধক্যের কারণে তিনি আর সক্রিয় নেই।
এদিকে টানা তিনবার জিতে গদি ধরে রাখায় আসন নিয়ে বেশ ফুরফুরে আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীই তাঁদের শক্তির জায়গা। এই এক নেতাকে নিয়েই এবারের নির্বাচনের বৈতরণি পেরোতে চান স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। বিএনপিও অবশ্য একজন নেতাকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। ভোটাররাও বলছেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে এ দুজনই থাকবেন মূল আলোচনায়। তবে বিএনপি থেকে ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিলও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। মিথিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
একসময় আসনটি জাতীয় পার্টির (জাপা) দখলে ছিল। সাবেক উপমন্ত্রী জাপা নেতা অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু সেই দিন আগেই গত হয়েছে। এবার জাপা থেকে মনোনয়নের ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জেলা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ও শাহ জামাল রানা। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কল্যাণ পার্টির সভাপতি ইব্রাহিম খান সাদাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ আনোয়ার আহমদ মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি স্তরে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করেছে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সম্মেলন করে ইউনিয়ন কমিটি ও সম্মেলনের মাধ্যমে বিজয়নগর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বর্তমানে সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। টানা তিনবার বিজয়ী হয়ে তিনি এলাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছেন বলে দাবি। দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের মধ্যে শেখ হাসিনা সড়ক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বিজয়নগর উপজেলা বাস্তবায়ন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফ্লাইওভার, তিতাস নদী খনন, বিরাসার-লালপুর-সড়ক, হরষপুর সিঙ্গারবিল সড়ক, সুলতানপুর-চিনাইর সড়ক উল্লেখযোগ্য।
নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ, সুসংহত ও শক্তিশালী। শুধু সদর আসনই নয়, জেলার ৬টি আসনেই আমরা জিতব ইনশা আল্লাহ।’
বিএনপির খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, ‘আমরা বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। শেষ পর্যন্ত দল যদি নির্বাচনে যায়, তাহলে আমি মনোনয়ন চাইব।’ ইব্রাহিম খান সাদাত বলেন, তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। দল মনোনয়ন দিলে তিনি অবশ্যই নির্বাচন করবেন।
আসনের একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। কথা বলে জানা যায় ভিন্ন ভিন্ন কথা। কেউ বলছেন, বর্তমান সংসদ সদস্যের আমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আবার কোনো কোনো ভোটার বলছেন, আগের মতো এখন আর ভোটের পরিবেশ নেই। সদর উপজেলার এক ভোটার বলেন, এমপির আমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নেই। ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্দিহান বিজয়নগরের অনেক ভোটার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ও বিজয়নগর উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনে রয়েছে ১টি পৌরসভা এবং ২১টি ইউনিয়ন। এগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১ ইউনিয়ন ও বিজয়নগর উপজেলায় রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন। মোট ভোটার ৫ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৪ জন। তাঁদের মধ্যে পৌর এলাকায় ১ লাখ ২০ হাজার ৫০৪ জন, সদর উপজেলায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৬ জন এবং বিজয়নগর উপজেলায় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৬৪ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬২২ জন ও নারী ২ লাখ ৭০ হাজার ৭৬২ জন।
ভোটের মাঠ এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে। নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছে দলটি। নেতারা উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বিএনপি এতটা সক্রিয় না হলেও মাঠে আছে। তবে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে এখনো সংশয় থাকায় নেতা-কর্মীরা সহজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তেমনভাবে এগোচ্ছে না।