ফুলের নাম পাখিফুল

চয়ন বিকাশ ভদ্র
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৮: ২৬

সুকুমার রায় লিখেছিলেন, ‘গোঁফ দিয়ে যায় চেনা’। কিন্তু কোনো কিছুর নাম দিয়ে তার চরিত্র বা আকার চেনা যায় কি না, সেটা লেখেননি। এই ধরুন, ভেনেজুয়েলা গোলাপ নামের ফুলটি কিন্তু আদতে গোলাপ নয়। আবার ধরুন, ভেনেজুয়েলা গোলাপ নামের সেই ফুল আমাদের দেশে পাখিফুল নামে পরিচিত। এই ফুল দেখতে পাখির মতো নয়। কাজেই গোঁফ দিয়ে চেনা গেলেও নাম দিয়ে না-ও চেনা যেতে পারে ফুলের বাহার।

সত্যি সত্যিই পাখিফুল নামের একটি ফুল আছে। আরও সত্যি কথা হলো, সেটি দেখতে পাখির মতো নয় একেবারেই। এ ফুলের এক থোকা কচি পাতা যখন ছোট নরম ডাল থেকে ঝুলে থাকে, তখন তাকে পাখির লেজ বা পালকের মতো মনে হয়। তাই লোকমুখে এই ফুলের নাম হয়েছে পাখিফুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম ব্রাউনিয়া ককসিনিয়া এবং এটি ফেবেসি গোত্রের উদ্ভিদ। ঢাকার প্রাচীনতম পাখিফুলের গাছটি রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের পাশে। ইদানীং রমনা পার্ক, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানে এই ফুলের নতুন নতুন গাছ লাগানো হয়েছে। আর আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং নাটোরের উত্তরা গণভবনের প্রবেশপথের ধারে। সেখানকার গাছ দুটি দেশের প্রাচীনতম এবং আকারে বেশ বড়সড়। চট্টগ্রামের বৌদ্ধবিহারগুলোতেও এ গাছ চোখে পড়ে। ময়মনসিংহের মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ক্যাম্পাসে, সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখার সামনে এবং রাঙামাটি বৌদ্ধবিহারে আমি গাছটি দেখেছি। ওখানকার শিবলিঙ্গ পানির ট্যাংকের পশ্চিম পাশে কয়েকটি পাখিফুলের গাছ আছে।

এ ফুলের আদি নিবাস ভেনেজুয়েলায়। এরা গোলাপ নামে পরিচিত। সেই অর্থে ফুলটিকে ভেনেজুয়েলার গোলাপও বলা যেতে পারে। পৃথিবীজুড়ে এদের কয়েকটি ধরন চোখে পড়ে। তবে একটির সঙ্গে অন্যটির পার্থক্য অতি সূক্ষ্ম।

এটি চিরসবুজ, ছোট আকারের উদ্ভিদ। ফুল সাধারণত গোলাপি ও লাল রঙের হয়। পাতা যৌগিক, একান্তর ও অগ্রভাগ সরু। প্রতিটি পাতায় ১০ থেকে ১৪টি পত্রক থাকে। পুষ্পমঞ্জরিতে প্রান্তিক ফুলগুলো আগে ফোটে এবং ক্রমে কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়। ফুল সাধারণত শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে দেখা যায়। অনেক সময় কাণ্ডের শীর্ষেও ফুল দেখা যায়। বসন্তকালে ফোটে গুচ্ছবদ্ধ পাখিফুল। এ ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত ফুটতে দেখা যায় এই সুন্দর কিন্তু সুগন্ধহীন ফুল। তবে শরৎকালসহ বছরের অন্যান্য সময়ে দু-চারটি ফুল ফোটাও বিচিত্র নয়। একসঙ্গে ৩০-৪০টি ফুলের ঠাসবুননে ভারী সুন্দর দেখায় এটি। সব ফুল নিয়ে ফুলের যে থোকা, তাকেও একটি পরিপূর্ণ ফুল মনে হয়। পাখিফুলের যৌগপত্র ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা, পত্রিকা ১০ থেকে ১৪টি। ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পথতরু হিসেবে এ গাছ আদর্শ।

পাখিফুলের গাছ ৫ থেকে ৭ মিটার উঁচু হতে পারে। দেখতে অনেকটা অশোকগাছের মতো। কচিপাতা শল্ক দিয়ে ঢাকা থাকে। শল্কের আবরণের ভেতর নতুন পাতার কুঁড়ি প্রথমে বেড়ে ওঠে। তারপর হঠাৎ পুরোপুরি বিকশিত হয়। কচি পাতার রং উজ্জ্বল বেগুনি। এক থোকা কচি পাতা যখন ছোট নরম ডাল থেকে ঝুলে থাকে, তখন তাকে পাখির লেজ বা পালকের মতো মনে হয়। ধীরে ধীরে এই পাতা সবুজ রং ধারণ করে।

পাখিফুলের বংশবৃদ্ধি ঘটে বীজের মাধ্যমে। তবে দাবা কলমের সাহায্যেও এর বংশবৃদ্ধি করা যায়। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এ গাছ ভালো জন্মে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম উদ্বোধন

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

বিসিএস নিয়োগ: নিজেই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন অনেকে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত