চট্টগ্রামের হাসপালগুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬৫ জন রোগী। এর মধ্যে কলেরা হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে এক শিফটে (৮ ঘণ্টা) ভর্তি হয়েছেন ২৫ জন রোগী।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল টপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত দু-এক মাসের তুলনায় এখন আমাদের হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেশি। গতকাল (সোমবার) রাতে এক শিফটে এখানে ২৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। যা এর আগে আর হয়নি। এত রোগী একসঙ্গে ভর্তি এটাই প্রথম।’

গত দুই মাসের চিত্র তুলে ধরে ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, এ মাসের গত চার দিনে এখানে রোগী ভর্তি হয়েছেন ১০৯ জন। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে ভর্তি হয়েছেন ৪৫২ জন। মার্চ মাসে ভর্তি হয়েছেন ৬৯২ জন।

শুধু বিআইটিআইডি নয়, গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর অন্যান্য হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। এদিন নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ জন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মঙ্গলবার ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত মাত্র দুই ঘণ্টায় ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে বয়স্ক রোগী বেশি। তাদের মধ্যে কয়েকজন কলেরায়ও আক্রান্ত আছেন।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইটিআইড হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘গত কয়েক দিন আমাদের এখানে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে ৭-৮ জনের মধ্যে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা ব্যাকটেরিয়াজনিত জীবাণু থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন।’ এ জন্য তিনি সবাইকে বাসি খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি খেতে বলেছেন।

বর্তমানে হাসপাতালে কতজন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমাদের এখানে একাধিক জায়গায় ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে আমি আপনাকে কতজন রোগী ভর্তি আছেন সেই তথ্য বলতে পারছি না। তবে বিক্ষিপ্তভাবে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আগের তুলনায় এখন প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’

চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক বলেন, ‘আমাদের এখানে এখন প্রায় ৫০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় এখানে অন্য রোগীরা কম ভর্তি হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আমাদের এখানে সাতজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।’

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডায়রিয়া নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের এখানে এখনো ঢাকার মতো অবস্থা হয়নি। প্রতি বছর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা একটু বাড়ে। বাড়তি রোগীদের চিকিৎসা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’