নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা এবং ফুলছড়ি ও সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
ভোটের দিনের আমেজ বলতে যা বোঝায়, তার পুরোটাই ছিল। সেসব রেওয়াজের হেরফের হয়নি এতটুকু। ভোট দিয়ে দিনের কাজ শুরু করতে সকাল-সকাল ভোটকেন্দ্রে গেছেন পুরুষ ভোটাররা। আবার গৃহস্থালি সেরে হালকা সাজগোজে খানিকটা বেলা করে ভোটকেন্দ্রের দিকে পা বাড়িয়েছেন নারী ভোটাররাও।
ভোটকেন্দ্রে ছিল ভোটারদের দীর্ঘ সারি, কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প, কর্মী-সমর্থক, ভোটার এবং উৎসুক জনতার ভিড়—খালি চোখে ধরা পড়েনি তেমন কোনো বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা। কিন্তু সকালের সূর্য হেলে পড়তে না পড়তেই উৎসবের আয়োজনে ছেদ পড়ল। সবাই বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন তুলল, কেন বাতিল হলো নির্বাচন? তাহলে কি বাইরে সব ঠিকঠাক রেখে ভেতরে-ভেতরে কারসাজি হচ্ছিল?
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের নির্বাচনে কী এমন হয়েছিল যে ভোট বাতিল করতে হলো, আজকের পত্রিকার দুজন স্থানীয় প্রতিনিধি এ নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন। তাঁরা কথা বলেছেন প্রার্থী, ভোটারসহ ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা লোকজনের সঙ্গে। কেউ বলেছেন, বাইরে সবকিছু ঠিকঠাক দেখালেও বুথের ভেতরে জালিয়াতি হয়েছে। মানুষ নিজের ভোট পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও ইসির কথায় পাত্তা দেননি। আবার কেউ বলেছেন, ইভিএম প্রতিষ্ঠা করতে এটি ইসির কারসাজি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন আপনারাও দেখেছেন, আমরাও দেখেছি। এ নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা নিয়ে জনগণের মনে বিভ্রান্তি থাকতে পারে। কেউ আনন্দ পেয়েছেন, কেউ ব্যথিত হয়েছেন, কেউ সাধুবাদ জানিয়েছেন। আমরা সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ করেছি। সে বিষয়টা হয়তো অনেকের জানা নেই। আমরা হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
১২ অক্টোবর এই ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল আটটায়। মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে অর্ধশত কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে অনিয়ম দেখতে পায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয় তৎক্ষণাৎ। বেলা আড়াইটার দিকে ‘পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়ায় সম্পূর্ণ নির্বাচনটিই স্থগিত করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
ওই দিন সকাল আটটায় ফুলছড়ি উপজেলার কাঠুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ছিলেন আজকের পত্রিকার ফুলছড়ি প্রতিনিধি। তিনি বাইরে থেকে দেখেন, সুশৃঙ্খলভাবে সারিতে দাঁড়িয়েছেন ভোটাররা। পুরুষ ও নারী ভোটারদের জন্য ছিল আলাদা সারি। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের (আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি) বাইরে অন্য প্রার্থীর এজেন্টরাও ছিলেন যথারীতি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনেকে প্রথমবার ভোট দিয়েছেন, আবার জটিলতার কারণে কেউ কেউ ভোট না দেওয়ার কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এই কেন্দ্রে আসা ভোটার আব্দুল মজিদ প্রধান বললেন, ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোট দেওয়া অনেক সহজ। আবার ভোট দিতে এসে আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি পূর্ব ছালুয়া গ্রামের আয়শা বেগম (৬৫)। তিনি বলেন, ‘আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারছি না। স্যারদের কথায় হাত ধুয়ে এলাম, তবু হলো না।’
ভোট স্থগিতের নির্দেশনা আসা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ২ হাজার ৩৬৯ জন ভোটারের মধ্যে ৯১১ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার বুড়াইল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সারি না মেনে অনেকে ভোটকেন্দ্রের সামনে জটলা তৈরি করছেন। পরে ভোটারদের সারির ব্যবস্থা করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিন্টু মিয়া। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু লাইচ মো. ইলিয়াস জিকু আধা ঘণ্টা অবস্থান করে চলে যান।
বুড়াইল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিন্টু মিয়া সেদিন আজকের পত্রিকা বলেন, ভোটকক্ষের সামনে জটলা দেখে নির্বাচন কমিশন থেকে ফোন দিয়েছিল। এরপর সারি ঠিক করে দেন।
বেলা ১১টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারেন, ভোট জালিয়াতির কারণে ফুলছড়ি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের জটলা। ওই কেন্দ্রের নিচতলায় নারী ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে। নারীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। দোতলায় উঠে পুরুষ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের জিজ্ঞেস করতেই বললেন, নির্বাচন কমিশন ভোট স্থগিত করে দিয়েছে।
ফুলছড়ি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাড়ে নয়টার দিকে আমাকে নির্বাচন কমিশন থেকে ফোন করে বলা হয়, আপনার কেন্দ্রের ৪ নম্বর বুথে একজন ভোটারের সঙ্গে দুজন লোক ঢুকছে। আমি দেখি, তারা দুজনেই ওই কক্ষের ভোটার। কিন্তু একসঙ্গে বুথে ঢুকেছে। এ সময় আমি একজনকে সেখান থেকে বের করে দিই। এর কিছুক্ষণ পর নির্বাচন কমিশন থেকে আমাকে ফোন করে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখার কথা বলা হয়। তাই ভোট গ্রহণ স্থগিত রেখেছি।’
একজনের ভোট অন্যজন দিচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে দুজন একসঙ্গে বুথে ঢুকেছিল।
ওই কেন্দ্রের ৪ নম্বর কক্ষের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অর্চনা রানী মণ্ডল বলেন, একজন ভোটারের সঙ্গে আরেকজন গিয়েছিল, এটা তেমন কোনো অন্যায় নয়।
কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে ফোন করে ভোট বন্ধ করেছে, আর কোনো ঝামেলা হয়নি।
ফুলছড়ি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ভিড় করা ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে ভোট দিতে না পেরে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। আলম মিয়া (৫০) নামের এক ভোটার বলেন, প্রথমে তারা বলল, মেশিনে সমস্যা হয়েছে, পরে বলল স্থগিত করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জিহাদুর রহমান মওলা বলেন, ‘আমরা শুনতে পেলাম, দুজন লোক একসঙ্গে বুথে ঢোকার কারণে ভোট বন্ধ করেছে। এটা ভোট বন্ধের কোনো কারণ হতে পারে না।’
ভোট স্থগিতের ঘটনায় সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ভোটারদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। ভোটারদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ভোটকেন্দ্রে তো কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি। হঠাৎ ভোট বন্ধ হলো কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা জানান, ভোটকেন্দ্রে তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। ওপরের নির্দেশে তাঁদের কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়েছে।
এদিকে ভোট স্থগিত ঘোষণা করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া চার প্রার্থী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে নৌকা মার্কায় ভোট দিচ্ছিলেন। এটা প্রতিপক্ষের প্রার্থীরা বুঝতে পেরে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের মিথ্যা অভিযোগ তুলে চার প্রার্থী একযোগে নির্বাচন বর্জন করেন। আর নির্বাচন কমিশন তাঁদের খুশি করতে ভোট বন্ধ ঘোষণা করে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু সেদিন বলেছিলেন, ‘ইভিএম অকেজো হয়ে যাওয়ায় নিজের ভোট দিতে পারিনি। ভোট না দিয়েই ফিরে এসেছি।’ উপনির্বাচন স্থগিতের এক দিন পর বিরোধী দলের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমি আমার ভোট দেওয়ার জন্য সকালে কাজী আজাহার উচ্চবিদ্যালয়ে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, আমার বুথে অনেক লোক। কে ভোটার, কে এজেন্ট, কে নির্বাচন কর্মকর্তা—বোঝার উপায় নেই। বুথে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সেখানে ভোট দেওয়ার মতো কোনো পরিবেশও ছিল না।’
ফুলছড়ির একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেদিনই বিবিসিকে বলেন, তাঁর কেন্দ্রে ২ হাজার ৩০০ ভোটার রয়েছেন। কিন্তু বেলা দেড়টা পর্যন্ত ৫৪০টি ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সকাল ১০টার পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন, তাঁদের সঙ্গে পুলিশ ছিল। তাঁরা এসে অন্য প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেন।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন যে এখানে একটা পেশিশক্তি কাজ করছে। আমাদের করার কিছুই থাকছে না।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইভিএমের বিষয়ে আগেও বলেছি। এটা প্রযুক্তিগত জায়গা থেকে দুর্বল মেশিন। এ যন্ত্রে যেকোনোভাবে কারচুপি করা সম্ভব। গাইবান্ধায় যা ঘটেছে, সেটা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। আমার কাছে মনে হয়েছে, এখানে ইসির কারসাজি রয়েছে। ইভিএমকে পুনর্বাসন করতেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি।’
ভোটের দিনের আমেজ বলতে যা বোঝায়, তার পুরোটাই ছিল। সেসব রেওয়াজের হেরফের হয়নি এতটুকু। ভোট দিয়ে দিনের কাজ শুরু করতে সকাল-সকাল ভোটকেন্দ্রে গেছেন পুরুষ ভোটাররা। আবার গৃহস্থালি সেরে হালকা সাজগোজে খানিকটা বেলা করে ভোটকেন্দ্রের দিকে পা বাড়িয়েছেন নারী ভোটাররাও।
ভোটকেন্দ্রে ছিল ভোটারদের দীর্ঘ সারি, কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প, কর্মী-সমর্থক, ভোটার এবং উৎসুক জনতার ভিড়—খালি চোখে ধরা পড়েনি তেমন কোনো বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা। কিন্তু সকালের সূর্য হেলে পড়তে না পড়তেই উৎসবের আয়োজনে ছেদ পড়ল। সবাই বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন তুলল, কেন বাতিল হলো নির্বাচন? তাহলে কি বাইরে সব ঠিকঠাক রেখে ভেতরে-ভেতরে কারসাজি হচ্ছিল?
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের নির্বাচনে কী এমন হয়েছিল যে ভোট বাতিল করতে হলো, আজকের পত্রিকার দুজন স্থানীয় প্রতিনিধি এ নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন। তাঁরা কথা বলেছেন প্রার্থী, ভোটারসহ ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা লোকজনের সঙ্গে। কেউ বলেছেন, বাইরে সবকিছু ঠিকঠাক দেখালেও বুথের ভেতরে জালিয়াতি হয়েছে। মানুষ নিজের ভোট পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও ইসির কথায় পাত্তা দেননি। আবার কেউ বলেছেন, ইভিএম প্রতিষ্ঠা করতে এটি ইসির কারসাজি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন আপনারাও দেখেছেন, আমরাও দেখেছি। এ নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা নিয়ে জনগণের মনে বিভ্রান্তি থাকতে পারে। কেউ আনন্দ পেয়েছেন, কেউ ব্যথিত হয়েছেন, কেউ সাধুবাদ জানিয়েছেন। আমরা সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ করেছি। সে বিষয়টা হয়তো অনেকের জানা নেই। আমরা হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
১২ অক্টোবর এই ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল আটটায়। মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে অর্ধশত কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে অনিয়ম দেখতে পায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয় তৎক্ষণাৎ। বেলা আড়াইটার দিকে ‘পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়ায় সম্পূর্ণ নির্বাচনটিই স্থগিত করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
ওই দিন সকাল আটটায় ফুলছড়ি উপজেলার কাঠুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ছিলেন আজকের পত্রিকার ফুলছড়ি প্রতিনিধি। তিনি বাইরে থেকে দেখেন, সুশৃঙ্খলভাবে সারিতে দাঁড়িয়েছেন ভোটাররা। পুরুষ ও নারী ভোটারদের জন্য ছিল আলাদা সারি। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের (আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি) বাইরে অন্য প্রার্থীর এজেন্টরাও ছিলেন যথারীতি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনেকে প্রথমবার ভোট দিয়েছেন, আবার জটিলতার কারণে কেউ কেউ ভোট না দেওয়ার কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এই কেন্দ্রে আসা ভোটার আব্দুল মজিদ প্রধান বললেন, ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোট দেওয়া অনেক সহজ। আবার ভোট দিতে এসে আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি পূর্ব ছালুয়া গ্রামের আয়শা বেগম (৬৫)। তিনি বলেন, ‘আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারছি না। স্যারদের কথায় হাত ধুয়ে এলাম, তবু হলো না।’
ভোট স্থগিতের নির্দেশনা আসা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ২ হাজার ৩৬৯ জন ভোটারের মধ্যে ৯১১ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার বুড়াইল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সারি না মেনে অনেকে ভোটকেন্দ্রের সামনে জটলা তৈরি করছেন। পরে ভোটারদের সারির ব্যবস্থা করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিন্টু মিয়া। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু লাইচ মো. ইলিয়াস জিকু আধা ঘণ্টা অবস্থান করে চলে যান।
বুড়াইল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিন্টু মিয়া সেদিন আজকের পত্রিকা বলেন, ভোটকক্ষের সামনে জটলা দেখে নির্বাচন কমিশন থেকে ফোন দিয়েছিল। এরপর সারি ঠিক করে দেন।
বেলা ১১টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারেন, ভোট জালিয়াতির কারণে ফুলছড়ি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের জটলা। ওই কেন্দ্রের নিচতলায় নারী ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে। নারীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। দোতলায় উঠে পুরুষ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের জিজ্ঞেস করতেই বললেন, নির্বাচন কমিশন ভোট স্থগিত করে দিয়েছে।
ফুলছড়ি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাড়ে নয়টার দিকে আমাকে নির্বাচন কমিশন থেকে ফোন করে বলা হয়, আপনার কেন্দ্রের ৪ নম্বর বুথে একজন ভোটারের সঙ্গে দুজন লোক ঢুকছে। আমি দেখি, তারা দুজনেই ওই কক্ষের ভোটার। কিন্তু একসঙ্গে বুথে ঢুকেছে। এ সময় আমি একজনকে সেখান থেকে বের করে দিই। এর কিছুক্ষণ পর নির্বাচন কমিশন থেকে আমাকে ফোন করে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখার কথা বলা হয়। তাই ভোট গ্রহণ স্থগিত রেখেছি।’
একজনের ভোট অন্যজন দিচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে দুজন একসঙ্গে বুথে ঢুকেছিল।
ওই কেন্দ্রের ৪ নম্বর কক্ষের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অর্চনা রানী মণ্ডল বলেন, একজন ভোটারের সঙ্গে আরেকজন গিয়েছিল, এটা তেমন কোনো অন্যায় নয়।
কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে ফোন করে ভোট বন্ধ করেছে, আর কোনো ঝামেলা হয়নি।
ফুলছড়ি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ভিড় করা ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে ভোট দিতে না পেরে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। আলম মিয়া (৫০) নামের এক ভোটার বলেন, প্রথমে তারা বলল, মেশিনে সমস্যা হয়েছে, পরে বলল স্থগিত করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জিহাদুর রহমান মওলা বলেন, ‘আমরা শুনতে পেলাম, দুজন লোক একসঙ্গে বুথে ঢোকার কারণে ভোট বন্ধ করেছে। এটা ভোট বন্ধের কোনো কারণ হতে পারে না।’
ভোট স্থগিতের ঘটনায় সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ভোটারদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। ভোটারদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ভোটকেন্দ্রে তো কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি। হঠাৎ ভোট বন্ধ হলো কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা জানান, ভোটকেন্দ্রে তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। ওপরের নির্দেশে তাঁদের কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়েছে।
এদিকে ভোট স্থগিত ঘোষণা করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া চার প্রার্থী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে নৌকা মার্কায় ভোট দিচ্ছিলেন। এটা প্রতিপক্ষের প্রার্থীরা বুঝতে পেরে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের মিথ্যা অভিযোগ তুলে চার প্রার্থী একযোগে নির্বাচন বর্জন করেন। আর নির্বাচন কমিশন তাঁদের খুশি করতে ভোট বন্ধ ঘোষণা করে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু সেদিন বলেছিলেন, ‘ইভিএম অকেজো হয়ে যাওয়ায় নিজের ভোট দিতে পারিনি। ভোট না দিয়েই ফিরে এসেছি।’ উপনির্বাচন স্থগিতের এক দিন পর বিরোধী দলের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমি আমার ভোট দেওয়ার জন্য সকালে কাজী আজাহার উচ্চবিদ্যালয়ে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, আমার বুথে অনেক লোক। কে ভোটার, কে এজেন্ট, কে নির্বাচন কর্মকর্তা—বোঝার উপায় নেই। বুথে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সেখানে ভোট দেওয়ার মতো কোনো পরিবেশও ছিল না।’
ফুলছড়ির একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেদিনই বিবিসিকে বলেন, তাঁর কেন্দ্রে ২ হাজার ৩০০ ভোটার রয়েছেন। কিন্তু বেলা দেড়টা পর্যন্ত ৫৪০টি ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সকাল ১০টার পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন, তাঁদের সঙ্গে পুলিশ ছিল। তাঁরা এসে অন্য প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেন।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন যে এখানে একটা পেশিশক্তি কাজ করছে। আমাদের করার কিছুই থাকছে না।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইভিএমের বিষয়ে আগেও বলেছি। এটা প্রযুক্তিগত জায়গা থেকে দুর্বল মেশিন। এ যন্ত্রে যেকোনোভাবে কারচুপি করা সম্ভব। গাইবান্ধায় যা ঘটেছে, সেটা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। আমার কাছে মনে হয়েছে, এখানে ইসির কারসাজি রয়েছে। ইভিএমকে পুনর্বাসন করতেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে