কামরুল হাসান
তখন ইন্টারনেট আসেনি, মোবাইল ফোন ছিল না। মার্ক জাকারবার্গের ‘অনাথ আশ্রম’ ফেসবুকের নামও শোনেনি কেউ। তখন ছিলেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতাকে তখন ভালোবাসত মানুষ।
ভ্রমণে গেলে নিকটজনের মতো কাছে এসে কুশল জানতেন, বিস্ময়ভরা চোখে জিজ্ঞাসা করতেন—এত খবর পান কী করে! অনেক বছর পর ফিরে এল সেই সব দিনরাত্রি। গেল পাঁচ দিন আমরা ছিলাম ইন্টারনেটবিহীন, তথাকথিত পিছিয়ে পড়ার যুগে।
কিন্তু আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা কি বলতে পারব, কতটা এগিয়ে গেছে দেশের মানুষ? এই যে সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন, দূরকে নিকট করার প্রাণপণ চেষ্টা, তার নিট ফলটা কী?
ফল হলো, মোবাইল ফোনের নরম অক্ষরগুলো সবার মাথার ভেতরে বাসা বাঁধছে, তারপর ডিম পাড়ছে, সেই ডিমফোটা অক্ষর শাবক বিপুল তরঙ্গ হয়ে ঠোকরাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত করছে। সেই তরঙ্গে ভেসে যাচ্ছে মানুষ, ক্রমেই একা হয়ে যাচ্ছে। যেন মানুষকে একা করার এ এক ভয়ানক জাদুকলম। একা হওয়ার সেই এক্কাদোক্কায় একদিন হঠাৎ বাজ পড়ল, বন্ধ হয়ে গেল সাধের ইন্টারনেট।
সেটা ছিল ১৮ জুলাই রাত। আমরা সবাই ব্যস্ত রোজকার কাজ নিয়ে। রাজধানীসহ সারা দেশ তখন কোটার আগুনে জ্বলছে। সন্ধ্যায় খবর এল, যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইন্টারনেট। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বন্ধ হয়েও গেল।
আজকের পত্রিকার অনলাইন বিভাগ থেকে চিৎকার এল, এখন কী হবে? নিমেষে সাদা হয়ে গেল সিএমএসের ড্যাশ বোর্ড। বন্ধ হয়ে গেল অনলাইন সম্প্রচার। বার্তাকক্ষে উদ্বেগ। সবার মুখে একই কথা—কাল কাগজ বের হবে কী করে!
নেট বন্ধ হওয়ার ঢেউ পুরোনো স্মৃতিকে উসকে দিল। নিমেষে ফিরে গেলাম ৩০ বছর আগে—সংবাদপত্রের নিউজরুমে। ইন্টারনেট তো দূর অস্ত, তখন খবরের কাগজের নিউজরুমে টেলিফোনই ছিল হাতে গোনা, একটি বা দুটি। তার একটি থাকত প্রধান প্রতিবেদকের টেবিলে। প্রতিবেদকদের সবার জন্য একটিমাত্র ফোন, সেটাও ছিল অ্যানালগ ল্যান্ডফোন। সেই ফোনে খবর আসত ঢাকার বাইরে থেকে। ডেস্কের কর্মীদের কাজ ছিল টেলিফোনে খবর শুনে লিখে নেওয়া। ফোনে কখনো কথা শোনা যেত, কখনো না। তবু নিউজরুম ছিল প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। তারপর এল ফ্যাক্সের যুগ। খবরের সঙ্গে ছবিও আসতে শুরু হলো একের পর এক। ঢাকার বাইরে বড় কাগজগুলো রিপোর্টারদের ফ্যাক্স দিল। ঢাকার রিপোর্টাররা তখন খবর লিখতেন হাতে-কলমে, উচ্ছিষ্ট নিউজপ্রিন্টে। সেই হাতের লেখা কম্পোজ করতেন কম্পিউটার বিভাগের কর্মীরা। রিপোর্টারদের টেবিলে কম্পিউটার এসেছে অনেক পরে। প্রথম দিকে পুরো নিউজরুমে ছিল একটা বা দুটি কম্পিউটার। তারপর টেবিলে টেবিলে। কেউ কেউ ল্যাপটপও নিয়ে এলেন। শুরু হলো ই-মেইল, ইন্টারনেটের যুগ। ই-মেইলে এল ছবি, তারপর ভিডিও। কম্পিউটারের সঙ্গে বদলে গেল ফোনও। ল্যান্ডফোনের চেয়ে বাড়তি সুবিধা নিয়ে চালু হলো মোবাইল ফোন। প্রথমে সিডিএমই, তারপর জিএসএম। বাড়ি বা অফিসের ফোন উঠে গেল হাতে হাতে। টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জি, ফাইভ-জি থেকে বাড়তে থাকল জেনারেশনের বংশক্রম। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক চলে এল মুঠোয়। জীবনের সব আয়োজন যেন ঢুকে গেল মোবাইল ফোনে। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ল সংবাদপত্রে। কম্পিউটারের যাবতীয় সুবিধা ঢুকে গেল সাংবাদিকদের টেবিলে।
পৃথিবীর দখল চলে গেল ফেসবুক বা গুগল নামের রাঘববোয়ালের হাতে।
এরপর আমরাও সেই দাসত্বে কেমন করে যেন অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। এখন আমাদের কাছে নতুন বলে, বিস্ময় বলে আর কিছু নেই। মোবাইল ফোনে সবই যেন দেখে ফেলেছি, শুনে ফেলেছি। সংবাদপত্রেও এখন এক্সক্লুসিভ খবর মানে কপি-পেস্টের ব্যবধানের সময়টুকু। কিন্তু ওই যে কথায় আছে, ‘মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অন্তর্যামী...।’ তা-ই হলো।
ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে নিউজরুমের কর্মীদের মুখের হাসিও উবে গেল। মাথার ভেতর আমন ধানের খই ফুটছে! সিদ্ধান্ত হলো, সব কর্মীকে ফোন নিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। তাঁরা ফোন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা সংবাদদাতাদের কাছ থেকে খবর শুনে লিখে নেবেন। শুরু হলো সেই কাজ। সে এক মহাযজ্ঞ। এবার সমস্যা হলো ছবি নিয়ে। পরের দিন আবারও সেই একই যুদ্ধ, ইন্টারনেট নেই। শহরজুড়ে নানা ঘটনা, কিন্তু অফিসে বসে কিছুই বুঝে ওঠার উপায় নেই। মাঠে থাকা সাংবাদিকেরা অফিসে আসার পরই বোঝা গেল শহরের অবস্থা।
এবার সমস্যা অন্যত্র। ফোন করে দেশের খবর পাওয়া যাবে, কিন্তু বিদেশের খবর জোগাড় হবে কী করে? বিকল্প ব্যবস্থা হলো। অনলাইন কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হলো বিবিসি, সিএনএন দেখে দেখে নিউজ তৈরি করে দিতে। পরের দিন থেকে অবশ্য বিদেশি গণমাধ্যমের ঢাকা অফিস থেকে পেনড্রাইভে করে ছবি ও নিউজ আনা হলো।
আজকের পত্রিকার অনলাইন তখন মৃত। সবার উৎকণ্ঠা, কী করে অনলাইন চালু করা যাবে। এর মধ্যে একজন খবর দিলেন, দেশের দুটি টেলিভিশন চ্যানেল সীমান্ত এলাকার ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তাতে নাকি তাদের অনলাইনও চলছে। আমরাও একজনকে পাঠালাম পরিস্থিতি দেখতে। কিন্তু কপালে না থাকলে যা হয়। তিনি ফিরে এলেন ব্যর্থ হয়ে।
তবে ঢাকা থেকে যেখানে উড়োজাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা ছিল, সেখান থেকে খবর জোগাড় হয়েছে সহজে। আমাদের প্রতিনিধিরা ছবি ও নিউজ পেনড্রাইভে করে তুলে দিয়েছেন উড়োজাহাজের ক্রুর হাতে। বিমানবন্দরে গিয়ে সেটা আনা হয়েছে।
এর মধ্যে সোমবার বিকেলে জানা গেল আরেক খবর। দেশের একটি জাতীয় দৈনিক ইন্টারনেট ব্যবহার না করেও তাদের প্রতিনিধিদের খবর পাচ্ছে। আজকের পত্রিকার আইটি বিভাগ লেগে গেল সেই কাজে। মাত্র দুই ঘণ্টায় তারা বিকল্প ব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে ফেলল। সারা দেশের সংবাদদাতাদের ফোন করে লিংক দেওয়া হলো। দেশের প্রায় সব জেলার ছবি ও খবর এসে গেল নিমেষে। এভাবে চলতে থাকল। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে খবর এল, সীমিত আকারে ইন্টারনেট দেওয়া হবে। খবর শুনে সবাই হইহই করে উঠলেন—যেন চাদের পিঠ ছুঁয়ে ফিরে এল চন্দ্রযান, আর আমরা ফিরে গেলাম আরেক নতুন স্বাভাবিকে।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইন্টারনেট থাকবে সীমিত। তাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ থাকবে। এ সিদ্ধান্ত হয়তো সাময়িক, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাওয়াই। তারপর আবার চালু হবে ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটকের ইতরপনা! তাতে আবারও বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে মনের কর্ষণে বাঁধা পড়বে। প্রকৃতির সংস্পর্শ-বিবর্জিত চোখ থাকবে শুধুই স্মার্টফোনের স্ক্রিনে। এই বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায়ও তো খুঁজে বের করতে হবে।
এখন মনে হচ্ছে, যে কটা দিন ইন্টারনেটবিহীন ছিলাম, ভালোই ছিলাম। যখন সেলফি ছিল না, তখন মননে, মগজে ছবি আঁকতেন লালন ফকির। যখন ইউটিউব ছিল না, তখন জবাকুসুম ভোরে সাধক রামপ্রসাদ গেয়ে ওঠেন, ‘এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলতো সোনা...।’
‘আমরা কি তাঁর মতো কবিতার কথা বলতে পারব?’
লেখক: কামরুল হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
তখন ইন্টারনেট আসেনি, মোবাইল ফোন ছিল না। মার্ক জাকারবার্গের ‘অনাথ আশ্রম’ ফেসবুকের নামও শোনেনি কেউ। তখন ছিলেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতাকে তখন ভালোবাসত মানুষ।
ভ্রমণে গেলে নিকটজনের মতো কাছে এসে কুশল জানতেন, বিস্ময়ভরা চোখে জিজ্ঞাসা করতেন—এত খবর পান কী করে! অনেক বছর পর ফিরে এল সেই সব দিনরাত্রি। গেল পাঁচ দিন আমরা ছিলাম ইন্টারনেটবিহীন, তথাকথিত পিছিয়ে পড়ার যুগে।
কিন্তু আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা কি বলতে পারব, কতটা এগিয়ে গেছে দেশের মানুষ? এই যে সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন, দূরকে নিকট করার প্রাণপণ চেষ্টা, তার নিট ফলটা কী?
ফল হলো, মোবাইল ফোনের নরম অক্ষরগুলো সবার মাথার ভেতরে বাসা বাঁধছে, তারপর ডিম পাড়ছে, সেই ডিমফোটা অক্ষর শাবক বিপুল তরঙ্গ হয়ে ঠোকরাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত করছে। সেই তরঙ্গে ভেসে যাচ্ছে মানুষ, ক্রমেই একা হয়ে যাচ্ছে। যেন মানুষকে একা করার এ এক ভয়ানক জাদুকলম। একা হওয়ার সেই এক্কাদোক্কায় একদিন হঠাৎ বাজ পড়ল, বন্ধ হয়ে গেল সাধের ইন্টারনেট।
সেটা ছিল ১৮ জুলাই রাত। আমরা সবাই ব্যস্ত রোজকার কাজ নিয়ে। রাজধানীসহ সারা দেশ তখন কোটার আগুনে জ্বলছে। সন্ধ্যায় খবর এল, যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইন্টারনেট। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বন্ধ হয়েও গেল।
আজকের পত্রিকার অনলাইন বিভাগ থেকে চিৎকার এল, এখন কী হবে? নিমেষে সাদা হয়ে গেল সিএমএসের ড্যাশ বোর্ড। বন্ধ হয়ে গেল অনলাইন সম্প্রচার। বার্তাকক্ষে উদ্বেগ। সবার মুখে একই কথা—কাল কাগজ বের হবে কী করে!
নেট বন্ধ হওয়ার ঢেউ পুরোনো স্মৃতিকে উসকে দিল। নিমেষে ফিরে গেলাম ৩০ বছর আগে—সংবাদপত্রের নিউজরুমে। ইন্টারনেট তো দূর অস্ত, তখন খবরের কাগজের নিউজরুমে টেলিফোনই ছিল হাতে গোনা, একটি বা দুটি। তার একটি থাকত প্রধান প্রতিবেদকের টেবিলে। প্রতিবেদকদের সবার জন্য একটিমাত্র ফোন, সেটাও ছিল অ্যানালগ ল্যান্ডফোন। সেই ফোনে খবর আসত ঢাকার বাইরে থেকে। ডেস্কের কর্মীদের কাজ ছিল টেলিফোনে খবর শুনে লিখে নেওয়া। ফোনে কখনো কথা শোনা যেত, কখনো না। তবু নিউজরুম ছিল প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। তারপর এল ফ্যাক্সের যুগ। খবরের সঙ্গে ছবিও আসতে শুরু হলো একের পর এক। ঢাকার বাইরে বড় কাগজগুলো রিপোর্টারদের ফ্যাক্স দিল। ঢাকার রিপোর্টাররা তখন খবর লিখতেন হাতে-কলমে, উচ্ছিষ্ট নিউজপ্রিন্টে। সেই হাতের লেখা কম্পোজ করতেন কম্পিউটার বিভাগের কর্মীরা। রিপোর্টারদের টেবিলে কম্পিউটার এসেছে অনেক পরে। প্রথম দিকে পুরো নিউজরুমে ছিল একটা বা দুটি কম্পিউটার। তারপর টেবিলে টেবিলে। কেউ কেউ ল্যাপটপও নিয়ে এলেন। শুরু হলো ই-মেইল, ইন্টারনেটের যুগ। ই-মেইলে এল ছবি, তারপর ভিডিও। কম্পিউটারের সঙ্গে বদলে গেল ফোনও। ল্যান্ডফোনের চেয়ে বাড়তি সুবিধা নিয়ে চালু হলো মোবাইল ফোন। প্রথমে সিডিএমই, তারপর জিএসএম। বাড়ি বা অফিসের ফোন উঠে গেল হাতে হাতে। টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জি, ফাইভ-জি থেকে বাড়তে থাকল জেনারেশনের বংশক্রম। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক চলে এল মুঠোয়। জীবনের সব আয়োজন যেন ঢুকে গেল মোবাইল ফোনে। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ল সংবাদপত্রে। কম্পিউটারের যাবতীয় সুবিধা ঢুকে গেল সাংবাদিকদের টেবিলে।
পৃথিবীর দখল চলে গেল ফেসবুক বা গুগল নামের রাঘববোয়ালের হাতে।
এরপর আমরাও সেই দাসত্বে কেমন করে যেন অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। এখন আমাদের কাছে নতুন বলে, বিস্ময় বলে আর কিছু নেই। মোবাইল ফোনে সবই যেন দেখে ফেলেছি, শুনে ফেলেছি। সংবাদপত্রেও এখন এক্সক্লুসিভ খবর মানে কপি-পেস্টের ব্যবধানের সময়টুকু। কিন্তু ওই যে কথায় আছে, ‘মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অন্তর্যামী...।’ তা-ই হলো।
ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে নিউজরুমের কর্মীদের মুখের হাসিও উবে গেল। মাথার ভেতর আমন ধানের খই ফুটছে! সিদ্ধান্ত হলো, সব কর্মীকে ফোন নিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। তাঁরা ফোন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা সংবাদদাতাদের কাছ থেকে খবর শুনে লিখে নেবেন। শুরু হলো সেই কাজ। সে এক মহাযজ্ঞ। এবার সমস্যা হলো ছবি নিয়ে। পরের দিন আবারও সেই একই যুদ্ধ, ইন্টারনেট নেই। শহরজুড়ে নানা ঘটনা, কিন্তু অফিসে বসে কিছুই বুঝে ওঠার উপায় নেই। মাঠে থাকা সাংবাদিকেরা অফিসে আসার পরই বোঝা গেল শহরের অবস্থা।
এবার সমস্যা অন্যত্র। ফোন করে দেশের খবর পাওয়া যাবে, কিন্তু বিদেশের খবর জোগাড় হবে কী করে? বিকল্প ব্যবস্থা হলো। অনলাইন কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হলো বিবিসি, সিএনএন দেখে দেখে নিউজ তৈরি করে দিতে। পরের দিন থেকে অবশ্য বিদেশি গণমাধ্যমের ঢাকা অফিস থেকে পেনড্রাইভে করে ছবি ও নিউজ আনা হলো।
আজকের পত্রিকার অনলাইন তখন মৃত। সবার উৎকণ্ঠা, কী করে অনলাইন চালু করা যাবে। এর মধ্যে একজন খবর দিলেন, দেশের দুটি টেলিভিশন চ্যানেল সীমান্ত এলাকার ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তাতে নাকি তাদের অনলাইনও চলছে। আমরাও একজনকে পাঠালাম পরিস্থিতি দেখতে। কিন্তু কপালে না থাকলে যা হয়। তিনি ফিরে এলেন ব্যর্থ হয়ে।
তবে ঢাকা থেকে যেখানে উড়োজাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা ছিল, সেখান থেকে খবর জোগাড় হয়েছে সহজে। আমাদের প্রতিনিধিরা ছবি ও নিউজ পেনড্রাইভে করে তুলে দিয়েছেন উড়োজাহাজের ক্রুর হাতে। বিমানবন্দরে গিয়ে সেটা আনা হয়েছে।
এর মধ্যে সোমবার বিকেলে জানা গেল আরেক খবর। দেশের একটি জাতীয় দৈনিক ইন্টারনেট ব্যবহার না করেও তাদের প্রতিনিধিদের খবর পাচ্ছে। আজকের পত্রিকার আইটি বিভাগ লেগে গেল সেই কাজে। মাত্র দুই ঘণ্টায় তারা বিকল্প ব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে ফেলল। সারা দেশের সংবাদদাতাদের ফোন করে লিংক দেওয়া হলো। দেশের প্রায় সব জেলার ছবি ও খবর এসে গেল নিমেষে। এভাবে চলতে থাকল। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে খবর এল, সীমিত আকারে ইন্টারনেট দেওয়া হবে। খবর শুনে সবাই হইহই করে উঠলেন—যেন চাদের পিঠ ছুঁয়ে ফিরে এল চন্দ্রযান, আর আমরা ফিরে গেলাম আরেক নতুন স্বাভাবিকে।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইন্টারনেট থাকবে সীমিত। তাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ থাকবে। এ সিদ্ধান্ত হয়তো সাময়িক, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাওয়াই। তারপর আবার চালু হবে ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটকের ইতরপনা! তাতে আবারও বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে মনের কর্ষণে বাঁধা পড়বে। প্রকৃতির সংস্পর্শ-বিবর্জিত চোখ থাকবে শুধুই স্মার্টফোনের স্ক্রিনে। এই বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায়ও তো খুঁজে বের করতে হবে।
এখন মনে হচ্ছে, যে কটা দিন ইন্টারনেটবিহীন ছিলাম, ভালোই ছিলাম। যখন সেলফি ছিল না, তখন মননে, মগজে ছবি আঁকতেন লালন ফকির। যখন ইউটিউব ছিল না, তখন জবাকুসুম ভোরে সাধক রামপ্রসাদ গেয়ে ওঠেন, ‘এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলতো সোনা...।’
‘আমরা কি তাঁর মতো কবিতার কথা বলতে পারব?’
লেখক: কামরুল হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে