হাসান মামুন
রমজানে নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যপণ্যের দামই কেবল নতুন করে বাড়ে। বাড়তি চাহিদাই এ জন্য প্রধানত দায়ী। চাহিদা থিতিয়ে এলে দামও কমে যায়। যেমনটা বরাবরই ঘটে বেগুনের ক্ষেত্রে। রমজানের শুরুতে এর দাম অনেক বেড়ে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই কমতে থাকে। এবার রমজানের আগ দিয়ে লেবুর দামও অনেক বেড়েছিল। এর কারণ মূলত ছিল লেবুর অফ সিজনে রমজান শুরু হওয়া। লেবুর দামও ইতিমধ্যে কমে এসেছে। এর কারণ যত না সরবরাহ বৃদ্ধি; তার চেয়ে বেশি বোধকরি চাহিদা কমে আসা। দাম অত্যধিক বলে অনেকে লেবু খাওয়া কমিয়েছে নিশ্চয়ই। শসার দামও কমে এসেছে।
কথা হলো, বেগুন, লেবু ও শসার উৎপাদকেরা ভালো দাম পাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে এসব পণ্যের দামও অনেকখানি নেমে গেছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন ছিল আজকের পত্রিকায়। গোটা প্রতিবেদনেই এসব কৃষিপণ্য উৎপাদকের হতাশার বর্ণনা রয়েছে। আগেও রমজানের মধ্যভাগে এমন চিত্র কমবেশি দেখা যেত। উৎপাদক ও ভোক্তার মাঝে পণ্য হাতবদলকারীরা অবশ্য এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন না। চাহিদার চাপ কমে এলে তাঁদের অতিমুনাফার সুযোগ কেবল কিছুটা কমে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন উৎপাদকেরা। চাহিদা কমায় শুধু নয়, ‘অসময়ে’ আমদানির কারণেও ভালো দাম পান না কৃষক। বিপুলসংখ্যক ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় সরকার অনেক সময় চারদিক না ভেবেই আমদানির সুযোগ করে দেয়। তাতে হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে গিয়ে দেশীয় পণ্যের দাম যায় কমে। ‘আমদানির খবরেই’ অনেক সময় দামে ধস নামে।
রমজানের সপ্তাহখানেক পরেই এবার এটি ঘটতে দেখা গেল পেঁয়াজের বাজারে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে বলে খবরেই এর দাম কমে গেল উল্লেখযোগ্যভাবে। বাজারে এখন কিন্তু দেশি পেঁয়াজই বেশি। এ অবস্থায় আমদানির খবরে দাম পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে বেচে দিচ্ছিলেন কৃষক। গেল মৌসুমের অভিজ্ঞতায় তাঁরা উৎসাহভরে পেঁয়াজ ফলিয়েছিলেন ভালো দাম পাওয়ার আশায়।
এর মধ্যে মুনাফার প্রবণতা থাকা তো দোষের নয়। উপকরণের দাম বাড়ায় কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ও কি বাড়েনি? এ অবস্থায় একটা লাভজনক দাম পাওয়ার আশায় তার আচরণ পণ্যটির ফলন কমিয়ে দিলেও এর নিন্দা করা যাবে না। কৃষকের হাতের কাছে পেঁয়াজ সংরক্ষণের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থাও তো পৌঁছানো যায়নি। সিংহভাগ ক্ষেত্রে তাঁর আর্থিক অবস্থাও এমন যে কৃষিপণ্য তুলেই সেটা বেচে দিতে হয়।
পেঁয়াজ তোলার সময়টায় আমদানির ব্যবস্থা না হলে অবশ্য কৃষক ভিন্ন আচরণ করতেন। ভালো দামও পেতেন। তবে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন এতে। রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা অনেক বাড়ে, এর মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ। আমদানি করে দাম কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া না হলে অগত্যা ভোক্তাকে এর ‘চাহিদা কর্তন’ করতে হতো। তাতে দাম কিছুটা কমলেও বেশি কমত না। পেঁয়াজের উচ্চ চাহিদা থাকবে কোরবানির ঈদেও। এখন উৎপাদকদের জন্য পরিস্থিতি কিঞ্চিৎ সুবিধাজনক থাকবে আমদানিটা সুনিয়ন্ত্রিতভাবে হলে। এ অবস্থায় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা নতুন করে বাড়িয়েছে বলে খবর দেশের কৃষকের জন্য ইতিবাচক হলো। ‘বিশেষ সুবিধা’য় পেঁয়াজ এলেও সম্ভবত আসবে ধীরে এবং বিপুল পরিমাণে নয়। এ অবস্থায় পেঁয়াজের বাজারে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যেটা যাচ্ছে ক্রেতাস্বার্থের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি কিছুটা টালমাটাল।
রমজানের বাকি সময়ে পেঁয়াজের দাম যেমনই থাকুক–এ প্রশ্নটা সচেতন মানুষের মন থেকে যাবে না যে এর বাজার কেন এত অস্থির হয়েছিল। উৎপাদন (অপচয়সহ) পর্যাপ্ত ছিল কি? নাকি সেটা কেবল প্রদর্শিত হয়েছিল তথ্যে? আলুর বাজারও কম অস্থির হয়নি। এর চাপে সরকারকে আলু আমদানির প্রায় নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এর আগে দাম নির্ধারণের মতো ‘বাজারবিরোধী কাজ’ও করেছিল কর্তৃপক্ষ। দাম বেঁধে দেওয়ার পর তারা সুফল পেয়েছে কেবল ডিমে। সেটা আসলে ঘটে সরবরাহ বাড়ায়। রমজানেও ডিমের দাম কিন্তু বাড়েনি। এ ক্ষেত্রে রয়েছে বরং কিছুটা নিম্নগতি। রমজানে ডিমের চাহিদা হ্রাসের তো কারণ দেখি না। প্রোটিনের অন্যান্য উৎস, যেমন মাংস ও মাছের দাম নতুন করে বেড়ে যাওয়ায় ডিমের চাহিদা বরং বাড়ার কথা। তরল দুধের দামও আগের জায়গায় আছে–সম্ভবত সরবরাহ ঠিকঠাক আছে বলে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ২৯টি পণ্যের ‘যৌক্তিক দাম’ স্থির করে দিয়েছিল রমজানে। এর সপ্তাহখানেক পর মিডিয়া খোঁজ নিয়ে দেখল, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই অধিদপ্তরের স্থির করা দামে পণ্য মিলছে না। কোনো কোনোটার দাম এর কাছাকাছি হয়তো; কিন্তু সেটা বাজারের নিয়ম তথা চাহিদা ও জোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে। এতে কর্তৃপক্ষের কৃতিত্ব নেই বললেই চলে। ওভাবে দাম কমানো গেলে তো অন্যান্য বাজার অর্থনীতির দেশও একই বুদ্ধি প্রয়োগ করত। বাংলাদেশের মতো আরও যেসব দেশে মূল্যস্ফীতি হানা দিয়েছে–সেই সব দেশ কিন্তু সেটা মোকাবিলা করছে আর্থিক ও রাজস্বনীতি দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে দুইয়ের সমন্বয়ে।
এ দেশেও মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্য ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু সেটা অর্জনে সমন্বিত কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপ নিতেও দেখা যাচ্ছে। যেমন রমজানের আগ দিয়ে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানো। আবার সুযোগ থাকলেও জ্বালানি তেল, বিশেষ করে ডিজেলের দাম সেভাবে না কমানো। এখন যে রমজানের মধ্যেও চালের দাম নতুন করে বাড়ছে, এর কারণ হিসেবে কিন্তু বলা হচ্ছে চালকলে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাওয়ার কথা। গ্রীষ্মের আগেই গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে লোডশেডিংও। এদিকে সেচ খরচ বেড়েছে ডিজেল ‘উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল’ থাকায়। এর প্রভাব থাকবে মাঠে যে বোরো ফসল রয়েছে, এর উৎপাদনে। আর সেটা ওঠার আগ পর্যন্ত নাকি চালের দাম কমছে না!
রমজানে আটা-ময়দার দাম অবশ্য নতুন করে বাড়েনি। সেটা ঘটলেও কেউ অবাক হতো না। তবে খোঁজখবর রাখা সবাই জানেন, বিশ্ববাজারে গমের দাম কমে এলেও আমরা এর সুফল নিতে ব্যর্থ নিজেদের কারণে। প্রায় সব আমদানি পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপিত রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে চলছে ডলার-সংকট। তাতে আমদানি ব্যয় কমানো যাচ্ছে না। সেটা করা গেলে আমদানি করা কিছু পণ্যের দাম নিশ্চয়ই কমানো যেত। যেমন রমজান শুরুর আগে সুখবর ছিল সয়াবিন তেলের বাজারে। ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে এর লিটারপ্রতি দাম ১০ টাকা কমাতে পেরেছে। তবে একইভাবে নির্ধারিত চিনির দাম কার্যকর করা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলের চিনিও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ববাজারে চিনির দাম কিন্তু কম এখন। সরকার একাধিকবার শুল্ক ছাড় দিয়েও কেন এর দাম কমাতে পারছে না, সেটাও প্রশ্ন।
এ ক্ষেত্রে অনেকে ‘সিন্ডিকেটের কারসাজি’র কথা তোলেন। চিনি, ভোজ্যতেল ও আটা-ময়দার বাজারে আমদানিকারক (তথা উৎপাদক) কম বলে সিন্ডিকেট বা ‘কার্টেল’ গড়ার সুযোগ রয়েছে অবশ্য। সেটা রোধে কর্তৃপক্ষও তো রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের কথা আমরা জানি। তার কাজই তো পণ্য ও সেবার বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখা এবং কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া। এ ছাড়া বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেল ও চিনির মতো পণ্যের দাম নির্ধারণে বরাবরই রাখে ভূমিকা। তারা কি তবে ব্যর্থ উপযুক্ত দাম নির্ধারণে? ওষুধের দাম সহনীয় রাখতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অবশ্য ব্যর্থ বলেই বর্ণনা করা হচ্ছে। রমজানের আগে থেকেই কিন্তু বেশ কিছু ওষুধের দাম বাড়ছে। এ সময়ে ওষুধের বিক্রি কমে যাওয়ার খবরও মেলে। এ অবস্থায় দাম বৃদ্ধির কারণে ওষুধ সেবন স্থায়ীভাবে কমে গিয়ে জনস্বাস্থ্যে বিপর্যয় ঘটে কি না, কে জানে!
রমজান শেষে এই সবকিছু মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির যে খবর মিলবে, তা হতাশাজনক হওয়ার কারণ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘কার্যকর চাহিদা’ হ্রাসের ঘটনাও ঘটে থাকে। পণ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে ক্রয়ক্ষমতার অভাবে ওই চাহিদা কমে গেলে ঘটবে উৎপাদন ও ব্যবসার সংকোচন। কর্মসংস্থান আরও কমে যাবে। উৎসবগুলো অবশ্য সাধারণভাবে কিছু ইতিবাচক ভূমিকা রাখার কথা। এ সময়ে দেশে রেমিট্যান্স আরও বেড়ে যাবে এবং এর একটা সুপ্রভাব থাকবে এমনকি গ্রামীণ অর্থনীতিতে। শহরাঞ্চল থেকেও অর্থ যাবে গ্রামে। তবে রমজানেও যারা আছে অর্থকষ্টে; ধারকর্জ করে চলছে উচ্চসুদে এবং খাদ্যপণ্যের চাহিদাও কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে, তাদের কথা মাথায় রাখতে হবে। বেগুন, শসা, লেবু নয়; গোমাংসও নয়–তাদের জন্য জরুরি হলো ব্রয়লার মুরগি, চাষের মাছ, সবজি, ভোজ্যতেল ও ডালের দাম। নতুন করে চালের দাম বৃদ্ধির খবর এ সময়ে তাদের উদ্বেগ আরও বাড়াবে।
লেখক: হাসান মামুন, সাংবাদিক, বিশ্লেষক
রমজানে নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যপণ্যের দামই কেবল নতুন করে বাড়ে। বাড়তি চাহিদাই এ জন্য প্রধানত দায়ী। চাহিদা থিতিয়ে এলে দামও কমে যায়। যেমনটা বরাবরই ঘটে বেগুনের ক্ষেত্রে। রমজানের শুরুতে এর দাম অনেক বেড়ে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই কমতে থাকে। এবার রমজানের আগ দিয়ে লেবুর দামও অনেক বেড়েছিল। এর কারণ মূলত ছিল লেবুর অফ সিজনে রমজান শুরু হওয়া। লেবুর দামও ইতিমধ্যে কমে এসেছে। এর কারণ যত না সরবরাহ বৃদ্ধি; তার চেয়ে বেশি বোধকরি চাহিদা কমে আসা। দাম অত্যধিক বলে অনেকে লেবু খাওয়া কমিয়েছে নিশ্চয়ই। শসার দামও কমে এসেছে।
কথা হলো, বেগুন, লেবু ও শসার উৎপাদকেরা ভালো দাম পাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে এসব পণ্যের দামও অনেকখানি নেমে গেছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন ছিল আজকের পত্রিকায়। গোটা প্রতিবেদনেই এসব কৃষিপণ্য উৎপাদকের হতাশার বর্ণনা রয়েছে। আগেও রমজানের মধ্যভাগে এমন চিত্র কমবেশি দেখা যেত। উৎপাদক ও ভোক্তার মাঝে পণ্য হাতবদলকারীরা অবশ্য এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন না। চাহিদার চাপ কমে এলে তাঁদের অতিমুনাফার সুযোগ কেবল কিছুটা কমে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন উৎপাদকেরা। চাহিদা কমায় শুধু নয়, ‘অসময়ে’ আমদানির কারণেও ভালো দাম পান না কৃষক। বিপুলসংখ্যক ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় সরকার অনেক সময় চারদিক না ভেবেই আমদানির সুযোগ করে দেয়। তাতে হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে গিয়ে দেশীয় পণ্যের দাম যায় কমে। ‘আমদানির খবরেই’ অনেক সময় দামে ধস নামে।
রমজানের সপ্তাহখানেক পরেই এবার এটি ঘটতে দেখা গেল পেঁয়াজের বাজারে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে বলে খবরেই এর দাম কমে গেল উল্লেখযোগ্যভাবে। বাজারে এখন কিন্তু দেশি পেঁয়াজই বেশি। এ অবস্থায় আমদানির খবরে দাম পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে বেচে দিচ্ছিলেন কৃষক। গেল মৌসুমের অভিজ্ঞতায় তাঁরা উৎসাহভরে পেঁয়াজ ফলিয়েছিলেন ভালো দাম পাওয়ার আশায়।
এর মধ্যে মুনাফার প্রবণতা থাকা তো দোষের নয়। উপকরণের দাম বাড়ায় কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ও কি বাড়েনি? এ অবস্থায় একটা লাভজনক দাম পাওয়ার আশায় তার আচরণ পণ্যটির ফলন কমিয়ে দিলেও এর নিন্দা করা যাবে না। কৃষকের হাতের কাছে পেঁয়াজ সংরক্ষণের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থাও তো পৌঁছানো যায়নি। সিংহভাগ ক্ষেত্রে তাঁর আর্থিক অবস্থাও এমন যে কৃষিপণ্য তুলেই সেটা বেচে দিতে হয়।
পেঁয়াজ তোলার সময়টায় আমদানির ব্যবস্থা না হলে অবশ্য কৃষক ভিন্ন আচরণ করতেন। ভালো দামও পেতেন। তবে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন এতে। রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা অনেক বাড়ে, এর মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ। আমদানি করে দাম কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া না হলে অগত্যা ভোক্তাকে এর ‘চাহিদা কর্তন’ করতে হতো। তাতে দাম কিছুটা কমলেও বেশি কমত না। পেঁয়াজের উচ্চ চাহিদা থাকবে কোরবানির ঈদেও। এখন উৎপাদকদের জন্য পরিস্থিতি কিঞ্চিৎ সুবিধাজনক থাকবে আমদানিটা সুনিয়ন্ত্রিতভাবে হলে। এ অবস্থায় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা নতুন করে বাড়িয়েছে বলে খবর দেশের কৃষকের জন্য ইতিবাচক হলো। ‘বিশেষ সুবিধা’য় পেঁয়াজ এলেও সম্ভবত আসবে ধীরে এবং বিপুল পরিমাণে নয়। এ অবস্থায় পেঁয়াজের বাজারে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যেটা যাচ্ছে ক্রেতাস্বার্থের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি কিছুটা টালমাটাল।
রমজানের বাকি সময়ে পেঁয়াজের দাম যেমনই থাকুক–এ প্রশ্নটা সচেতন মানুষের মন থেকে যাবে না যে এর বাজার কেন এত অস্থির হয়েছিল। উৎপাদন (অপচয়সহ) পর্যাপ্ত ছিল কি? নাকি সেটা কেবল প্রদর্শিত হয়েছিল তথ্যে? আলুর বাজারও কম অস্থির হয়নি। এর চাপে সরকারকে আলু আমদানির প্রায় নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এর আগে দাম নির্ধারণের মতো ‘বাজারবিরোধী কাজ’ও করেছিল কর্তৃপক্ষ। দাম বেঁধে দেওয়ার পর তারা সুফল পেয়েছে কেবল ডিমে। সেটা আসলে ঘটে সরবরাহ বাড়ায়। রমজানেও ডিমের দাম কিন্তু বাড়েনি। এ ক্ষেত্রে রয়েছে বরং কিছুটা নিম্নগতি। রমজানে ডিমের চাহিদা হ্রাসের তো কারণ দেখি না। প্রোটিনের অন্যান্য উৎস, যেমন মাংস ও মাছের দাম নতুন করে বেড়ে যাওয়ায় ডিমের চাহিদা বরং বাড়ার কথা। তরল দুধের দামও আগের জায়গায় আছে–সম্ভবত সরবরাহ ঠিকঠাক আছে বলে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ২৯টি পণ্যের ‘যৌক্তিক দাম’ স্থির করে দিয়েছিল রমজানে। এর সপ্তাহখানেক পর মিডিয়া খোঁজ নিয়ে দেখল, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই অধিদপ্তরের স্থির করা দামে পণ্য মিলছে না। কোনো কোনোটার দাম এর কাছাকাছি হয়তো; কিন্তু সেটা বাজারের নিয়ম তথা চাহিদা ও জোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে। এতে কর্তৃপক্ষের কৃতিত্ব নেই বললেই চলে। ওভাবে দাম কমানো গেলে তো অন্যান্য বাজার অর্থনীতির দেশও একই বুদ্ধি প্রয়োগ করত। বাংলাদেশের মতো আরও যেসব দেশে মূল্যস্ফীতি হানা দিয়েছে–সেই সব দেশ কিন্তু সেটা মোকাবিলা করছে আর্থিক ও রাজস্বনীতি দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে দুইয়ের সমন্বয়ে।
এ দেশেও মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্য ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু সেটা অর্জনে সমন্বিত কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপ নিতেও দেখা যাচ্ছে। যেমন রমজানের আগ দিয়ে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানো। আবার সুযোগ থাকলেও জ্বালানি তেল, বিশেষ করে ডিজেলের দাম সেভাবে না কমানো। এখন যে রমজানের মধ্যেও চালের দাম নতুন করে বাড়ছে, এর কারণ হিসেবে কিন্তু বলা হচ্ছে চালকলে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাওয়ার কথা। গ্রীষ্মের আগেই গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে লোডশেডিংও। এদিকে সেচ খরচ বেড়েছে ডিজেল ‘উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল’ থাকায়। এর প্রভাব থাকবে মাঠে যে বোরো ফসল রয়েছে, এর উৎপাদনে। আর সেটা ওঠার আগ পর্যন্ত নাকি চালের দাম কমছে না!
রমজানে আটা-ময়দার দাম অবশ্য নতুন করে বাড়েনি। সেটা ঘটলেও কেউ অবাক হতো না। তবে খোঁজখবর রাখা সবাই জানেন, বিশ্ববাজারে গমের দাম কমে এলেও আমরা এর সুফল নিতে ব্যর্থ নিজেদের কারণে। প্রায় সব আমদানি পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপিত রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে চলছে ডলার-সংকট। তাতে আমদানি ব্যয় কমানো যাচ্ছে না। সেটা করা গেলে আমদানি করা কিছু পণ্যের দাম নিশ্চয়ই কমানো যেত। যেমন রমজান শুরুর আগে সুখবর ছিল সয়াবিন তেলের বাজারে। ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে এর লিটারপ্রতি দাম ১০ টাকা কমাতে পেরেছে। তবে একইভাবে নির্ধারিত চিনির দাম কার্যকর করা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলের চিনিও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ববাজারে চিনির দাম কিন্তু কম এখন। সরকার একাধিকবার শুল্ক ছাড় দিয়েও কেন এর দাম কমাতে পারছে না, সেটাও প্রশ্ন।
এ ক্ষেত্রে অনেকে ‘সিন্ডিকেটের কারসাজি’র কথা তোলেন। চিনি, ভোজ্যতেল ও আটা-ময়দার বাজারে আমদানিকারক (তথা উৎপাদক) কম বলে সিন্ডিকেট বা ‘কার্টেল’ গড়ার সুযোগ রয়েছে অবশ্য। সেটা রোধে কর্তৃপক্ষও তো রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের কথা আমরা জানি। তার কাজই তো পণ্য ও সেবার বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখা এবং কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া। এ ছাড়া বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেল ও চিনির মতো পণ্যের দাম নির্ধারণে বরাবরই রাখে ভূমিকা। তারা কি তবে ব্যর্থ উপযুক্ত দাম নির্ধারণে? ওষুধের দাম সহনীয় রাখতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অবশ্য ব্যর্থ বলেই বর্ণনা করা হচ্ছে। রমজানের আগে থেকেই কিন্তু বেশ কিছু ওষুধের দাম বাড়ছে। এ সময়ে ওষুধের বিক্রি কমে যাওয়ার খবরও মেলে। এ অবস্থায় দাম বৃদ্ধির কারণে ওষুধ সেবন স্থায়ীভাবে কমে গিয়ে জনস্বাস্থ্যে বিপর্যয় ঘটে কি না, কে জানে!
রমজান শেষে এই সবকিছু মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির যে খবর মিলবে, তা হতাশাজনক হওয়ার কারণ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘কার্যকর চাহিদা’ হ্রাসের ঘটনাও ঘটে থাকে। পণ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে ক্রয়ক্ষমতার অভাবে ওই চাহিদা কমে গেলে ঘটবে উৎপাদন ও ব্যবসার সংকোচন। কর্মসংস্থান আরও কমে যাবে। উৎসবগুলো অবশ্য সাধারণভাবে কিছু ইতিবাচক ভূমিকা রাখার কথা। এ সময়ে দেশে রেমিট্যান্স আরও বেড়ে যাবে এবং এর একটা সুপ্রভাব থাকবে এমনকি গ্রামীণ অর্থনীতিতে। শহরাঞ্চল থেকেও অর্থ যাবে গ্রামে। তবে রমজানেও যারা আছে অর্থকষ্টে; ধারকর্জ করে চলছে উচ্চসুদে এবং খাদ্যপণ্যের চাহিদাও কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে, তাদের কথা মাথায় রাখতে হবে। বেগুন, শসা, লেবু নয়; গোমাংসও নয়–তাদের জন্য জরুরি হলো ব্রয়লার মুরগি, চাষের মাছ, সবজি, ভোজ্যতেল ও ডালের দাম। নতুন করে চালের দাম বৃদ্ধির খবর এ সময়ে তাদের উদ্বেগ আরও বাড়াবে।
লেখক: হাসান মামুন, সাংবাদিক, বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে