স্বপ্না রেজা
আজকের লেখাটা গল্পে গল্পে হোক। কোনো কাল্পনিক গল্প নয়। সত্য ঘটনা অবলম্বনে গল্প উপস্থাপন। যে গল্পগুলোর বিষয়বস্তু বা প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো বর্তমান সামাজিক অবস্থা বা সমাজব্যবস্থার এক সারমর্ম বা সত্যভাষণ বলা যায়। আদর্শ, মূল্যবোধ কিংবা নৈতিকতার সিঁড়ি বেয়ে এখন কম মানুষই ওপরে উঠতে চায়। ওপরে উঠতে সবাই লিফট খোঁজে। এতে প্রতিনিয়ত ব্যক্তির চেতনার জায়গায় নানান ধরনের পরিবর্তন ঘটছে, চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। এই চাহিদা পূরণে সমাজে সৃষ্ট হচ্ছে চরম বৈপরীত্য ও দ্বৈততা—ব্যক্তির ভেতরে, গোষ্ঠীর ভেতরে। বিশেষ করে যারা দায়িত্বশীল, তাদের দায়িত্বহীনতা, হীন স্বার্থপরতা সমাজকে করে রাখছে ভারসাম্যহীন ও অস্থিতিশীল। উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার অভাবে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির প্রবেশ ঘটছে অবলীলায়। সামাজিক জীবনাচরণে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে; বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ছাপ নেই পোশাক-আশাকে, মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিতে। আধুনিকতা বলতে যা প্রচলিত তা হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলামুক্ত বেহিসেবি জীবনযাপন। একটু পড়ে দেখি তিনটি গল্প।
ছবি সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ
সুদূর কানাডা থেকে ফোন। প্রতিদিনই নিয়ম করে ফোন আসে এবং সেটা বাংলাদেশ সময়ে সকাল ৮টার দিকে। হোয়াটসঅ্যাপে ফোনের সুবিধা হলো, যিনি ফোন করেছেন তাঁর নাম ও ছবি (যদি কেউ তাঁর ছবি ব্যবহার করে থাকে) স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। নম্বর সেভ করা থাকলে সহজেই বোঝা সম্ভব, কে কল করেছেন। বহ্নি ফোন রিসিভ করে। ভাশুর কল করেছেন।
-হ্যালো। আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। বহ্নি! কেমন আছো বোন?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো। শোনো, আজ তোমাকে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলব।
-জি বলুন।
-হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তোমার ছবিটা সরিয়ে ফেলো।
ভাশুরের কথায় থমকে পড়ে বহ্নি। বলে কী মানুষটা! তৎক্ষণাৎ বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,
‘ওখানে তো ছেলের সঙ্গে আমার ছবি! মানে আমার ও আমার ছেলের ছবি!’
‘হ্যাঁ। ছেলের ছবি রেখে তোমার ছবি সরিয়ে ফেলো। কেটে ফেলো।’
কী সাংঘাতিক অনধিকারচর্চা ও আপত্তিকর কথা ভাশুরের!
-কী বলছেন এসব! আর কেনইবা বলছেন?
-ঠিক বলছি। তোমার ছবি অনেক পরপুরুষ দেখছে। দেখবে।
বহ্নির মাথায় শরীরের সমস্ত রক্ত তরতর করে উঠে বসে। কান গরম হয়ে যায়। ধৈর্য নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বহ্নি, ‘আমি যে অফিসে যাই, যাচ্ছি এত বছর ধরে, হাজার হাজার, শত শত পরপুরুষ কি আমাকে দেখেনি, দেখছে না কিংবা দেখবে না? সংসারের হাল ধরতে পরিপাটি হয়ে অফিসে গেলে কি শুধু আপন পুরুষই আমায় দেখে?’
-তুমি তো শালীনতা রেখে অফিসে যাও।
-মা ও ছেলের ছবিতে অশালীনতা কোথায় পেলেন? অফিস, পথেঘাটে তো লোকে আমাকে সশরীরে দেখে, তাই না? সন্তানের সঙ্গে মায়ের ছবি দেখে যদি কোনো পুরুষের মাথা নষ্ট হয়, তাহলে সেটা সেই পুরুষের সমস্যা, মায়ের নয়। মায়ের সঙ্গে ছেলের ছবির ইমোশনটা তো আপনি বুঝবেন না। বোঝার কথাও না। শুনুন, প্রত্যেক ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গিই বলে দেয়, সে কী দেখছে বা দেখবে।
-আহা! তুমি বুঝতে পারছ না বহ্নি! ধর্মে কিছু নিয়ম আছে। আমাদের মানতে হবে।
-সরি! সংসারের প্রয়োজনে তিরিশ বছর চাকরি করছি। ধর্মে সেই কথা আছে তো? হাজার, লক্ষ পুরুষ দেখেছি, পুরুষের সঙ্গে কাজ করেছি, আজও করছি। চোর, বদমাশ, লুচ্চা যেমন দেখেছি, তেমনি দেখেছি ভালো, উত্তম ও দায়িত্ববান পুরুষ। আপনি আপনার ধর্ম নিয়ে থাকুন।
ওয়াইফাই আছে তো?
ফাতেমার বয়স ১৫। নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় এসেছে। গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে সাহেরা বেগমের বাসায়। বেতন নির্ধারিত হওয়ার আগেই ফাতেমা আশ্বস্ত হতে চায়, এই বাসায় ওয়াইফাই সংযোগ আছে কি না। কারণ, তার মাসে ৮ জিবি নেট লাগে। সাহেরা বেগমের এত দিনের অভিজ্ঞতা ছিল, যারা গৃহকর্মে আসত, তাদের অনেকেরই পান খাওয়ার অভ্যাস থাকত। প্রতিদিন চার বেলা তাদের পান-সুপারি লাগত। আবার কারও কারও চাহিদা ছিল গুলের। কেউ কেউ তামাকপাতা কিংবা বিড়ির প্রতি তাদের আসক্তির কথা প্রকাশ করত। আবার বাসায় ডিশ কানেকশন আছে কি না, সেখানে জি-বাংলা দেখা যায় কি না, সেই সংবাদের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতো ওই বাসায় কাজ করা সম্ভব কি না। এ সবই পুরোনো কথা। এখন জমানা বদলে গেছে, এখন সবাই ওয়াইফাই খোঁজে। কারণ, কমবেশি সবার হাতে স্মার্ট ফোন। সাহেরা বেগম জানতে চান, ‘ওয়াইফাই কেন লাগে?’ ফাতেমার স্মার্ট উত্তর, ‘ভিডিও কল করতে হয়।’
গৃহকর্মী এখন পাওয়া যায় না বললেই চলে। বাসায় ওয়াইফাই থাকায় ফাতেমাকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় সাহেরা বেগমের। সমস্যা দেখা দেয় তার পরেই। ফাতেমা কানে এয়ারফোন লাগিয়েই রাখে যতক্ষণ সে জেগে থাকে। কাজ করছে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে। কেউ তাকে ডাকলে সহজে সে সেই ডাকের সাড়া দিতে পারে না। তা ছাড়া প্রায় গভীর রাতে সাহেরা বেগমের চোখে পড়ে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফাতেমা কারও সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছে। সকালে প্রশ্ন করে জানতে পারেন সাহেরা বেগম, গভীর রাতের আলাপচারিতার মানুষটি ফাতেমারই খালাতো ভাই। বিষয়টি ভালো ঠেকে না। সাহেরা বেগম বিষয়টি ফাতেমার মাকে জানায়। মা ও মেয়ের কথা হয়। তারপর সিদ্ধান্ত হয়, ফাতেমা আর কাজ করবে না সাহেরা বেগমের বাসায়। ফাতেমাকে বাসে তুলে দিলেই সে পৌঁছে যেতে পারবে নেত্রকোনায়—এমন আশ্বাস ও অভয়ে সাহেরা বেগম মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ফাতেমাকে বাসে তুলে দেন।
ফাতেমা সেই দিন আর নেত্রকোনায় পৌঁছায়নি। কারণ, সে বাস থেকে গাজীপুরে নেমে গেছে। সংবাদটা পেয়ে সাহেরা বেগম অজানা আশঙ্কায় কেঁপেছেন। অল্প বয়সের সুশ্রী মেয়েটার না জানি কী বিপদ হয়! ফাতেমার মায়ের কাছেইবা সাহেরা বেগম কী জবাব দেবেন! কিন্তু ফাতেমার মায়ের আবারও অভয়, ‘চিন্তা কইরেন না। ফাতেমা তার ট্রাকড্রাইভার বন্ধুর সঙ্গে আছে।’
প্রকল্পের খবর নেই, অথচ গাড়ি চলে
সরকারি প্রকল্প নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া রয়েছে জনমনে। বিশেষ করে বড় ও মাঝারি প্রকল্প বাস্তবায়নে। সরকারি কর্মকর্তারা প্রকল্পে ডেপুটেশনে যেতে বেশ আগ্রহী হয়ে থাকেন। কারণ তো আছেই। কেউ কেউ বলেন, প্রকল্প মানেই বরাদ্দ টাকার একটা অংশ পকেটে চলে আসা। গাড়ি-বাড়ির রাজকীয় সুবিধাও রয়েছে। একজন সিনিয়র মন্ত্রী একটি সভায় বেশ হতাশ কণ্ঠে বললেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের খবর নেই, অথচ প্রকল্পের গাড়ি কেনার জন্য তড়িঘড়ি লেগে যায়। নতুন নতুন ব্র্যান্ডের গাড়ি কেনা হয়। আর প্রকল্পের লোকজনও প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশে যান। অথচ প্রকল্পের খবর নেই। এই মানুষগুলোর জন্য ভালো ফলাফল অনেক সময় আমরা দেখতে পাই না।
এটা ঠিক যে, সত্য ও সঠিক কথা বলার লোক কমে গেছে। মানে হলো, ব্যক্তির ভেতরে যে চেতনা উঁকি মারে, তা ওই ব্যক্তির অর্জিত শিক্ষার ওপর ভর করেই। কে কতটুকু শিখছে, কী শিখছে তা আর কে দেখে? সংখ্যাগত অর্জনই এখন সন্তুষ্টির মূল জায়গায় পরিণত হয়েছে, ফলে গুণগত অর্জন কেউ আর গোনায় ধরে না। মন্ত্রী বেশ হতাশ।
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
আজকের লেখাটা গল্পে গল্পে হোক। কোনো কাল্পনিক গল্প নয়। সত্য ঘটনা অবলম্বনে গল্প উপস্থাপন। যে গল্পগুলোর বিষয়বস্তু বা প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো বর্তমান সামাজিক অবস্থা বা সমাজব্যবস্থার এক সারমর্ম বা সত্যভাষণ বলা যায়। আদর্শ, মূল্যবোধ কিংবা নৈতিকতার সিঁড়ি বেয়ে এখন কম মানুষই ওপরে উঠতে চায়। ওপরে উঠতে সবাই লিফট খোঁজে। এতে প্রতিনিয়ত ব্যক্তির চেতনার জায়গায় নানান ধরনের পরিবর্তন ঘটছে, চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। এই চাহিদা পূরণে সমাজে সৃষ্ট হচ্ছে চরম বৈপরীত্য ও দ্বৈততা—ব্যক্তির ভেতরে, গোষ্ঠীর ভেতরে। বিশেষ করে যারা দায়িত্বশীল, তাদের দায়িত্বহীনতা, হীন স্বার্থপরতা সমাজকে করে রাখছে ভারসাম্যহীন ও অস্থিতিশীল। উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার অভাবে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির প্রবেশ ঘটছে অবলীলায়। সামাজিক জীবনাচরণে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে; বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ছাপ নেই পোশাক-আশাকে, মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিতে। আধুনিকতা বলতে যা প্রচলিত তা হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলামুক্ত বেহিসেবি জীবনযাপন। একটু পড়ে দেখি তিনটি গল্প।
ছবি সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ
সুদূর কানাডা থেকে ফোন। প্রতিদিনই নিয়ম করে ফোন আসে এবং সেটা বাংলাদেশ সময়ে সকাল ৮টার দিকে। হোয়াটসঅ্যাপে ফোনের সুবিধা হলো, যিনি ফোন করেছেন তাঁর নাম ও ছবি (যদি কেউ তাঁর ছবি ব্যবহার করে থাকে) স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। নম্বর সেভ করা থাকলে সহজেই বোঝা সম্ভব, কে কল করেছেন। বহ্নি ফোন রিসিভ করে। ভাশুর কল করেছেন।
-হ্যালো। আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। বহ্নি! কেমন আছো বোন?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো। শোনো, আজ তোমাকে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলব।
-জি বলুন।
-হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তোমার ছবিটা সরিয়ে ফেলো।
ভাশুরের কথায় থমকে পড়ে বহ্নি। বলে কী মানুষটা! তৎক্ষণাৎ বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,
‘ওখানে তো ছেলের সঙ্গে আমার ছবি! মানে আমার ও আমার ছেলের ছবি!’
‘হ্যাঁ। ছেলের ছবি রেখে তোমার ছবি সরিয়ে ফেলো। কেটে ফেলো।’
কী সাংঘাতিক অনধিকারচর্চা ও আপত্তিকর কথা ভাশুরের!
-কী বলছেন এসব! আর কেনইবা বলছেন?
-ঠিক বলছি। তোমার ছবি অনেক পরপুরুষ দেখছে। দেখবে।
বহ্নির মাথায় শরীরের সমস্ত রক্ত তরতর করে উঠে বসে। কান গরম হয়ে যায়। ধৈর্য নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বহ্নি, ‘আমি যে অফিসে যাই, যাচ্ছি এত বছর ধরে, হাজার হাজার, শত শত পরপুরুষ কি আমাকে দেখেনি, দেখছে না কিংবা দেখবে না? সংসারের হাল ধরতে পরিপাটি হয়ে অফিসে গেলে কি শুধু আপন পুরুষই আমায় দেখে?’
-তুমি তো শালীনতা রেখে অফিসে যাও।
-মা ও ছেলের ছবিতে অশালীনতা কোথায় পেলেন? অফিস, পথেঘাটে তো লোকে আমাকে সশরীরে দেখে, তাই না? সন্তানের সঙ্গে মায়ের ছবি দেখে যদি কোনো পুরুষের মাথা নষ্ট হয়, তাহলে সেটা সেই পুরুষের সমস্যা, মায়ের নয়। মায়ের সঙ্গে ছেলের ছবির ইমোশনটা তো আপনি বুঝবেন না। বোঝার কথাও না। শুনুন, প্রত্যেক ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গিই বলে দেয়, সে কী দেখছে বা দেখবে।
-আহা! তুমি বুঝতে পারছ না বহ্নি! ধর্মে কিছু নিয়ম আছে। আমাদের মানতে হবে।
-সরি! সংসারের প্রয়োজনে তিরিশ বছর চাকরি করছি। ধর্মে সেই কথা আছে তো? হাজার, লক্ষ পুরুষ দেখেছি, পুরুষের সঙ্গে কাজ করেছি, আজও করছি। চোর, বদমাশ, লুচ্চা যেমন দেখেছি, তেমনি দেখেছি ভালো, উত্তম ও দায়িত্ববান পুরুষ। আপনি আপনার ধর্ম নিয়ে থাকুন।
ওয়াইফাই আছে তো?
ফাতেমার বয়স ১৫। নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় এসেছে। গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে সাহেরা বেগমের বাসায়। বেতন নির্ধারিত হওয়ার আগেই ফাতেমা আশ্বস্ত হতে চায়, এই বাসায় ওয়াইফাই সংযোগ আছে কি না। কারণ, তার মাসে ৮ জিবি নেট লাগে। সাহেরা বেগমের এত দিনের অভিজ্ঞতা ছিল, যারা গৃহকর্মে আসত, তাদের অনেকেরই পান খাওয়ার অভ্যাস থাকত। প্রতিদিন চার বেলা তাদের পান-সুপারি লাগত। আবার কারও কারও চাহিদা ছিল গুলের। কেউ কেউ তামাকপাতা কিংবা বিড়ির প্রতি তাদের আসক্তির কথা প্রকাশ করত। আবার বাসায় ডিশ কানেকশন আছে কি না, সেখানে জি-বাংলা দেখা যায় কি না, সেই সংবাদের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতো ওই বাসায় কাজ করা সম্ভব কি না। এ সবই পুরোনো কথা। এখন জমানা বদলে গেছে, এখন সবাই ওয়াইফাই খোঁজে। কারণ, কমবেশি সবার হাতে স্মার্ট ফোন। সাহেরা বেগম জানতে চান, ‘ওয়াইফাই কেন লাগে?’ ফাতেমার স্মার্ট উত্তর, ‘ভিডিও কল করতে হয়।’
গৃহকর্মী এখন পাওয়া যায় না বললেই চলে। বাসায় ওয়াইফাই থাকায় ফাতেমাকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় সাহেরা বেগমের। সমস্যা দেখা দেয় তার পরেই। ফাতেমা কানে এয়ারফোন লাগিয়েই রাখে যতক্ষণ সে জেগে থাকে। কাজ করছে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে। কেউ তাকে ডাকলে সহজে সে সেই ডাকের সাড়া দিতে পারে না। তা ছাড়া প্রায় গভীর রাতে সাহেরা বেগমের চোখে পড়ে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফাতেমা কারও সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছে। সকালে প্রশ্ন করে জানতে পারেন সাহেরা বেগম, গভীর রাতের আলাপচারিতার মানুষটি ফাতেমারই খালাতো ভাই। বিষয়টি ভালো ঠেকে না। সাহেরা বেগম বিষয়টি ফাতেমার মাকে জানায়। মা ও মেয়ের কথা হয়। তারপর সিদ্ধান্ত হয়, ফাতেমা আর কাজ করবে না সাহেরা বেগমের বাসায়। ফাতেমাকে বাসে তুলে দিলেই সে পৌঁছে যেতে পারবে নেত্রকোনায়—এমন আশ্বাস ও অভয়ে সাহেরা বেগম মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ফাতেমাকে বাসে তুলে দেন।
ফাতেমা সেই দিন আর নেত্রকোনায় পৌঁছায়নি। কারণ, সে বাস থেকে গাজীপুরে নেমে গেছে। সংবাদটা পেয়ে সাহেরা বেগম অজানা আশঙ্কায় কেঁপেছেন। অল্প বয়সের সুশ্রী মেয়েটার না জানি কী বিপদ হয়! ফাতেমার মায়ের কাছেইবা সাহেরা বেগম কী জবাব দেবেন! কিন্তু ফাতেমার মায়ের আবারও অভয়, ‘চিন্তা কইরেন না। ফাতেমা তার ট্রাকড্রাইভার বন্ধুর সঙ্গে আছে।’
প্রকল্পের খবর নেই, অথচ গাড়ি চলে
সরকারি প্রকল্প নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া রয়েছে জনমনে। বিশেষ করে বড় ও মাঝারি প্রকল্প বাস্তবায়নে। সরকারি কর্মকর্তারা প্রকল্পে ডেপুটেশনে যেতে বেশ আগ্রহী হয়ে থাকেন। কারণ তো আছেই। কেউ কেউ বলেন, প্রকল্প মানেই বরাদ্দ টাকার একটা অংশ পকেটে চলে আসা। গাড়ি-বাড়ির রাজকীয় সুবিধাও রয়েছে। একজন সিনিয়র মন্ত্রী একটি সভায় বেশ হতাশ কণ্ঠে বললেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের খবর নেই, অথচ প্রকল্পের গাড়ি কেনার জন্য তড়িঘড়ি লেগে যায়। নতুন নতুন ব্র্যান্ডের গাড়ি কেনা হয়। আর প্রকল্পের লোকজনও প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশে যান। অথচ প্রকল্পের খবর নেই। এই মানুষগুলোর জন্য ভালো ফলাফল অনেক সময় আমরা দেখতে পাই না।
এটা ঠিক যে, সত্য ও সঠিক কথা বলার লোক কমে গেছে। মানে হলো, ব্যক্তির ভেতরে যে চেতনা উঁকি মারে, তা ওই ব্যক্তির অর্জিত শিক্ষার ওপর ভর করেই। কে কতটুকু শিখছে, কী শিখছে তা আর কে দেখে? সংখ্যাগত অর্জনই এখন সন্তুষ্টির মূল জায়গায় পরিণত হয়েছে, ফলে গুণগত অর্জন কেউ আর গোনায় ধরে না। মন্ত্রী বেশ হতাশ।
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
১১ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
১১ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
১১ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
১২ ঘণ্টা আগে