রাজিয়ার ইচ্ছা ঘরসংসারের পাশাপাশি উপার্জনক্ষম কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ২০০০ সালে ফেসবুকে এক বন্ধু তাঁকে উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স) গ্রুপে যুক্ত করেন। অনলাইনে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও পণ্য বিক্রির কৌশল শেখানোর প্ল্যাটফর্ম এটি। এই গ্রুপে সফল নারী উদ্যোক্তাদের পোস্টে রাজিয়া অনুপ্রেরণা খুঁজে পান। অন্যদের দেখে তাঁর নিজের মধ্যেও উদ্যোক্তা হওয়ার তাগিদ জন্মায়।

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের নিয়ামতপুর মুন্সিপাড়ার গৃহবধূ রাজিয়া সুলতানা। স্বামী মালেকুজ্জামান পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁদের দুই ছেলে-মেয়ে। রাজিয়া একজন নারী কর্মচারী নিয়ে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন শুরু করেন। কখনো ইউটিউব দেখে, কখনোবা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন পাটজাত পণ্য তৈরির চেষ্টা করেন। পরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে পাটজাত পণ্য উৎপাদনের কাজ পুরোপুরি আয়ত্ব করে ফেলেন। এরপরই শুরু হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর পথচলা।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি শুরু করেন পাটের পণ্য উৎপাদনের কাজ। এ সময় তিনি বেচাকেনার সুবিধার্থে ‘নান্দনিক ক্রাফট’ নামে ফেসবুকে একটি পেজ খুলেন। প্রথম দিকে রাজিয়া শুধু পাটের ব্যাগ ও শিকে তৈরি করতেন। নিজের ফেসবুক পেজ ও উইয়ের অফিশিয়াল গ্রুপে পণ্যের প্রচারণা চালাতেন। ধীরে ধীরে তাঁর নান্দনিক ক্রাফট গ্রাহক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে নান্দনিক ক্রাফটের পাটপণ্যের মধ্যে রয়েছে ব্যাগ, পার্স, শোপিস, শিকে, টেবিল ম্যাট, মানিব্যাগ ও দোলনা। ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনে আরও আছে পাটের তৈরি রুম ডেকোরেট মিরর, ওয়ালমেট, ড্রিমক্যাচার, ম্যাগাজিন হোল্ডার, ফোন চার্জিং হোল্ডারসহ বিভিন্ন ব্যবহার্য দ্রব্য।

রাজিয়া সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (উদ্যোক্তা) হিসেবে আমার পথচলার শুরুটা উইয়ের মাধ্যমে। ব্যবসার সূচনালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত যত অর্ডার পেয়েছি, তার বেশির ভাগই উইয়ের কল্যাণে। দেশের বাইরে থেকেও পণ্যের চাহিদা আসছে। কিন্তু বর্তমানে কাঁচামালের দাম বেশি হওয়ায় পণ্যের দরদামের কারণে রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না।’

রাজিয়া আরও বলেন, ‘পাটজাত পণ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পাটের ওপর অন্যরকম একটা ভালো লাগা জন্মেছে। ভবিষ্যতে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আমাদের উৎপাদিত পাটপণ্য বিদেশের বাজারে রপ্তানি করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপমহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা বেগম জানান, নারীরা এখন আর শুধু গৃহকর্মী হিসেবে থাকতে চান না। বিগত তিন-চার বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে শহরের বিভিন্ন বাসায় এবং গ্রামের বাড়িতে এমন শতাধিক ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণে মজবুত হচ্ছে অর্থনীতির চাকা। নারী উদ্যোক্তার মাধ্যমে নারীদের কর্মক্ষেত্র যেমন তৈরি হচ্ছে, তেমনি সংসারে নারীদের সমৃদ্ধি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।