জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
একুশের সকালে ছাত্রদের মধ্যে ছিল অস্থিরতা, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ছিল উত্তেজনা। পুলিশি বাধার আশঙ্কা মাথায় রেখে ছাত্রনেতাদের কয়েকজন ভোরেই উপস্থিত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। গাজীউল হক, মোহাম্মদ সুলতান, এস এ বারী এটিরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে চিরকুট পাঠাতে শুরু করেছিলেন। সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। কেউ এসেছিলেন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের পাঁচিলের ভাঙা অংশ দিয়ে, কেউ পাঁচিল টপকে। একটু দূরেই মধুর ক্যানটিন, তার পাশেই আমতলা। রাস্তায় পুলিশও তৈরি।
২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আর্ট ইনস্টিটিউটের ইমদাদ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীররা যে পোস্টার এঁকেছিলেন, সেগুলো এরই মধ্যে লাগানো হয়ে যায়। ১০টা নাগাদ আমতলায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সমবেত। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুকুরপাড়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এম আর আখতার মুকুল সভাপতি হিসেবে গাজীউল হকের নাম প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন কমরুদ্দীন শহুদ।
আমতলার ছাত্রসভা শুরু হয় বেলা ১১টার দিকে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে শামসুল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করে, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য দেন আবদুল মতিন। এরপর সভাপতির ভাষণে গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরপরই রাস্তায় নামার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন ছাত্ররা।
সেই পরিস্থিতিতে হাবিবুর রহমান শেলীর নেতৃত্বে প্রথম ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী দলটি গেট থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামে। তিনি লিখছেন, ‘আমি যেহেতু আগের দিন ১৪৪ ধারা ভাঙার উপর জোর দিই, সেজন্য বন্ধুদের একটা প্রত্যাশা ছিল যে, আমি প্রথমে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার জন্য এগিয়ে যাব। যাঁরা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার জন্য এগিয়ে এলেন, মোহাম্মদ সুলতান তাঁদের নাম লিখে নিলেন। আমি তাকে বললাম: “তুই আমার পঙ্খীরাজটা (সাইকেল) দেখিস, আমি চললাম।” গলা ফাটিয়ে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে গেলাম কয়েকজনকে সাথে করে।’
১৪৪ ধারা ভঙ্গকারীদের প্রথম দলে ছিলেন বিশিষ্ট ফুটবল খেলোয়াড় আবদুল জলিল সরকার। দ্বিতীয় দলের নেতৃত্বে ছিলেন আবদুস সামাদ আজাদ ও ইব্রাহিম তাহা। তৃতীয় দলের নেতৃত্ব দেন আনোয়ারুল হক। ড. রফিকুল ইসলাম লিখছেন, ‘পঞ্চম দলটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের।’
ভাষাসংগ্রামী নেয়ামাল বাসির লিখেছেন, ‘মনে আছে ঐ দিন কে কার আগে যাবে তাই নিয়ে সাড়া পড়ে যায়, প্রতিযোগিতা হয়। আমিও চেয়েছিলাম ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারীদের প্রথম দলে থাকব। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও প্রথম দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারিনি।’
আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক লিখেছেন, ‘সভা শেষ হওয়ার পর, অস্বীকার করা চলে না যে, কিছুক্ষণ একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করতে দেখা গেছে। অর্থাৎ ঠিক কীভাবে কাজ শুরু করা হবে তাই নিয়ে কিছুটা অনিশ্চিত অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু হাবিবুর রহমান শেলী কয়েকজনের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার পর আরও কয়েকজন সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে যান স্লোগান দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। এরপর আর কোনো অসুবিধা হয়নি। তবু নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রথম ব্যাচ, দ্বিতীয় ব্যাচ, তৃতীয় ব্যাচ অমুক অমুকের নেতৃত্বে বেরিয়ে যাবে, এমন সুশৃঙ্খল অবস্থা তখন ছিল না।...এরপর বিক্ষোভ ও সংঘাতের ঘটনা প্রধানত রাস্তায়ই ঘটেছে। ছাত্ররা চেয়েছে পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে অন্ততপক্ষে মেডিকেল হোস্টেলে পৌঁছাতে, সেখান থেকে পরিষদ ভবনের সামনে।...গেটের দিকে মিছিল এগিয়ে যাচ্ছিল একটার পর একটা। বিরামহীন এই মিছিল ঠেকাতে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। ছাত্ররা শুরু করে ইটপাটকেল ছোড়া। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় তখন ছাত্রদের গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত। “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”, “চলো চলো অ্যাসেম্বলি চলো” স্লোগানের সঙ্গে যুক্ত হয় “পুলিশি জুলুম চলবে না” স্লোগানটিও।’
একদিকে সশস্ত্র পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, অন্যদিকে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল ছোড়ার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের নিক্ষিপ্ত শেল ধরে পাল্টা পুলিশের দিকে নিক্ষেপ। পুলিশ ক্রমেই মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তা থেকে সরে গিয়ে মেডিকেল হোস্টেল গেট ও জগন্নাথ হলের কাছাকাছি চৌরাস্তায় সমবেত হয়। টান টান উত্তেজনা সর্বত্র।
একুশের সকালে ছাত্রদের মধ্যে ছিল অস্থিরতা, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ছিল উত্তেজনা। পুলিশি বাধার আশঙ্কা মাথায় রেখে ছাত্রনেতাদের কয়েকজন ভোরেই উপস্থিত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। গাজীউল হক, মোহাম্মদ সুলতান, এস এ বারী এটিরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে চিরকুট পাঠাতে শুরু করেছিলেন। সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। কেউ এসেছিলেন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের পাঁচিলের ভাঙা অংশ দিয়ে, কেউ পাঁচিল টপকে। একটু দূরেই মধুর ক্যানটিন, তার পাশেই আমতলা। রাস্তায় পুলিশও তৈরি।
২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আর্ট ইনস্টিটিউটের ইমদাদ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীররা যে পোস্টার এঁকেছিলেন, সেগুলো এরই মধ্যে লাগানো হয়ে যায়। ১০টা নাগাদ আমতলায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সমবেত। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুকুরপাড়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এম আর আখতার মুকুল সভাপতি হিসেবে গাজীউল হকের নাম প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন কমরুদ্দীন শহুদ।
আমতলার ছাত্রসভা শুরু হয় বেলা ১১টার দিকে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে শামসুল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করে, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য দেন আবদুল মতিন। এরপর সভাপতির ভাষণে গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরপরই রাস্তায় নামার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন ছাত্ররা।
সেই পরিস্থিতিতে হাবিবুর রহমান শেলীর নেতৃত্বে প্রথম ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী দলটি গেট থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামে। তিনি লিখছেন, ‘আমি যেহেতু আগের দিন ১৪৪ ধারা ভাঙার উপর জোর দিই, সেজন্য বন্ধুদের একটা প্রত্যাশা ছিল যে, আমি প্রথমে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার জন্য এগিয়ে যাব। যাঁরা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার জন্য এগিয়ে এলেন, মোহাম্মদ সুলতান তাঁদের নাম লিখে নিলেন। আমি তাকে বললাম: “তুই আমার পঙ্খীরাজটা (সাইকেল) দেখিস, আমি চললাম।” গলা ফাটিয়ে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে গেলাম কয়েকজনকে সাথে করে।’
১৪৪ ধারা ভঙ্গকারীদের প্রথম দলে ছিলেন বিশিষ্ট ফুটবল খেলোয়াড় আবদুল জলিল সরকার। দ্বিতীয় দলের নেতৃত্বে ছিলেন আবদুস সামাদ আজাদ ও ইব্রাহিম তাহা। তৃতীয় দলের নেতৃত্ব দেন আনোয়ারুল হক। ড. রফিকুল ইসলাম লিখছেন, ‘পঞ্চম দলটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের।’
ভাষাসংগ্রামী নেয়ামাল বাসির লিখেছেন, ‘মনে আছে ঐ দিন কে কার আগে যাবে তাই নিয়ে সাড়া পড়ে যায়, প্রতিযোগিতা হয়। আমিও চেয়েছিলাম ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারীদের প্রথম দলে থাকব। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও প্রথম দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারিনি।’
আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক লিখেছেন, ‘সভা শেষ হওয়ার পর, অস্বীকার করা চলে না যে, কিছুক্ষণ একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করতে দেখা গেছে। অর্থাৎ ঠিক কীভাবে কাজ শুরু করা হবে তাই নিয়ে কিছুটা অনিশ্চিত অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু হাবিবুর রহমান শেলী কয়েকজনের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার পর আরও কয়েকজন সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে যান স্লোগান দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। এরপর আর কোনো অসুবিধা হয়নি। তবু নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রথম ব্যাচ, দ্বিতীয় ব্যাচ, তৃতীয় ব্যাচ অমুক অমুকের নেতৃত্বে বেরিয়ে যাবে, এমন সুশৃঙ্খল অবস্থা তখন ছিল না।...এরপর বিক্ষোভ ও সংঘাতের ঘটনা প্রধানত রাস্তায়ই ঘটেছে। ছাত্ররা চেয়েছে পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে অন্ততপক্ষে মেডিকেল হোস্টেলে পৌঁছাতে, সেখান থেকে পরিষদ ভবনের সামনে।...গেটের দিকে মিছিল এগিয়ে যাচ্ছিল একটার পর একটা। বিরামহীন এই মিছিল ঠেকাতে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। ছাত্ররা শুরু করে ইটপাটকেল ছোড়া। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় তখন ছাত্রদের গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত। “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”, “চলো চলো অ্যাসেম্বলি চলো” স্লোগানের সঙ্গে যুক্ত হয় “পুলিশি জুলুম চলবে না” স্লোগানটিও।’
একদিকে সশস্ত্র পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, অন্যদিকে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল ছোড়ার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের নিক্ষিপ্ত শেল ধরে পাল্টা পুলিশের দিকে নিক্ষেপ। পুলিশ ক্রমেই মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তা থেকে সরে গিয়ে মেডিকেল হোস্টেল গেট ও জগন্নাথ হলের কাছাকাছি চৌরাস্তায় সমবেত হয়। টান টান উত্তেজনা সর্বত্র।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে