মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী নানা নামের নানা সংগঠনের উত্থান ঘটার কথা দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখে আসছি। হিন্দাল শারক্বীয়ার নাম এবং সেই সংগঠনের আহ্বানে ‘হিজরত’ করার আমন্ত্রণে বেশ কিছু তরুণের ঘর ছাড়ার অবিশ্বাস্য কথা শুনে অনেকেই চমকিত হয়েছিলেন। বয়সে একেবারেই কিশোর কিংবা তরুণেরাই এ পথে পা বাড়িয়েছিল। বছরখানেক আগে এই সংগঠনের নাম যখন উচ্চারিত হয়েছিল, তখন তারা বান্দরবানের কেএনএফের সঙ্গে যৌথভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ইসলামি বিপ্লব ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই সংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরতে সক্ষম হয়। যদিও দুই নেতা আদালত থেকে পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। এই সংগঠনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণে আনতে না আনতেই মাত্র কদিন আগে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার নিভৃত টিলায় ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে আরেক জঙ্গিবাদী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ধরার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেই সংগঠনের ১৭ জন নেতা-কর্মীকে স্থানীয় জনসাধারণই ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে। এর থেকে কিছু দূরে তাদেরই আস্তানায় মাটির নিচ থেকে গোলাবারুদ, গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এরাও হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছেন। এদের মধ্যে কেউ ডাক্তার, কেউ প্রকৌশলী, অনেকে ছাত্র, নারী-পুরুষ শিশুও রয়েছে। তারা জমি কিনে ঘর তৈরি করে সেখানে বসবাস শুরু করেছিল। অথচ এদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়।
এই সংগঠনের ১০ জনকে যেদিন আটক করা হয়েছিল, সেই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ১৩ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জঙ্গিদের ধরার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘যখন আন্দোলন জমে উঠতে থাকে, ঠিক তার আগে জঙ্গি নাটক অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমা বিশ্বকে আবার সেই জুজুর ভয় দেখাবে যে, এই দেখো, বাংলাদেশে আমরা যদি না থাকি, তাহলে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’ এর আগে কখনোই বিএনপি জঙ্গি দমনের ব্যাপারে সিটিটিসির কোনো উদ্যোগকেই সমর্থন জানায়নি, অনেক সময় নীরবতাও পালন করেছে, আবার অনেক সময় একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বিএনপির অবস্থান জঙ্গিবাদের সঙ্গে কতটা আছে কি নেই, তা বোধ হয় সচেতন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বলে বিশ্বাস করানোর প্রয়োজন পড়ে না। এসব জঙ্গিবাদী সংগঠনের অর্থ ও অস্ত্রদাতা কারা, তা সব সময় না জানা গেলেও দেশের অভ্যন্তরেই রাজনৈতিকভাবে সমর্থিত কোনো না কোনো ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এর জোগান দিয়ে থাকেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
যেসব ছেলেমেয়ে বা পেশাজীবী নারী-পুরুষ এতে অংশ নেয়, তারা কতটা ধর্মান্ধতায় আচ্ছন্ন হলে ঘর-সংসার ও পেশা ত্যাগ করে এভাবে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হতে পারে, তা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ধর্মান্ধতার চশমা চোখে থাকলে পৃথিবীর দৃশ্য তাদের দৃষ্টিতে পড়ে না, জ্ঞান তাদের প্রভাবিত করতেও পারে না। কিন্তু এসব জঙ্গিবাদী সংগঠনের নেতৃত্ব যারা দিয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা ছাত্রশিবির বা জামায়াতের সাবেক নেতা-কর্মী। খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝাই যায় এরা জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন স্তরের সহযোগী সংগঠন হিসেবেই ৮০-৯০-এর দশকের পর থেকে ভিন্ন ভিন্ন নামে আবির্ভূত হয়েছে, এখনো হচ্ছে। রাজনীতিকে যাঁরা সরলভাবে দেখেন, বোঝেন, তাঁরা এ ধরনের জঙ্গি সংগঠনের আদি উৎস ও কেন্দ্রবিন্দু সম্পর্কে বুঝতে চাইবেন না। আবার যারা সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন, ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত নয়, তারা যে দলই করুক না কেন, তারা এদের বিষয়টি মোটেও রাজনীতিসচেতনতার অবস্থান থেকে দেখার কথা নয়, বরং তারা দেশের মোটাদাগের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে এদের ব্যবহার করতে বা সমর্থন পেতে মোটেও দ্বিধা করে না।
এর ফল যে কী ভয়ানক হতে পারে, তার আলামত কেবল ২০০১-০৬ সালে পাওয়া গেছে। তবে পাকিস্তানের আজকের পরিণতি আরও যে খারাপের দিকে যাচ্ছে, সেটি সে দেশের রাজনীতির এসব সুবিধাবাদিতা, আপসকামিতা, উগ্র জঙ্গিবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সঙ্গী করার পরিণতি হিসেবেই দেখতে হবে। বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব জঙ্গিবাদী সম্পর্কে বড় কোনো দলের শীর্ষ পদ থেকে যখন এমন ‘মহাবিজ্ঞের’ মতো কথা বলা হয়, তখন বুঝতে হবে এদের দুর্বলতা, আশ্রয়-প্রশ্রয় কাদের প্রতি। তাদের মূল শত্রু যে আসলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশই, তা বুঝতে রাজনীতিসচেতন মানুষের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এখানেই আমাদের জাতীয় রাজনীতির বিভাজনের এপাশ এবং ওপাশের মতাদর্শগত শক্তির অবস্থান দেখার বিষয়।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ ও ১৫ আগস্ট যে তাণ্ডব চালিয়েছিল, তা এরই মধ্যে সবারই জানা বিষয়। ঢাকার বাইরে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চকরিয়ায় তারা ব্যাপক শক্তি প্রদর্শনে মাঠে নেমেছিল। চকরিয়ায় তারা ইউএনও, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড ও ওসির গাড়িতে হামলা করছিল। সেখানে তারা গায়েবানা জানাজার নামে ব্যাপক শক্তি প্রদর্শনে নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষকে সমবেত করার নানা কৌশল ব্যবহার করেছিল। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও তারা লিপ্ত হয়েছিল। সংঘর্ষে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি পথচারী এবং পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। কিন্তু পুলিশ সেখানে কোনো ধরনের গুলি চালায়নি। ফলে যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, তার গায়ে গুলি লাগার বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাসপাতালেও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, সাঈদীর লাশবাহী গাড়ি ভাঙচুর এবং তাঁর জানাজা নিয়ে বিলম্ব করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় জড়ো করার একটি দূরবর্তী কূটকৌশল ছিল।
একটি হাসপাতালের ভেতরে জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার কর্মী জড়ো হয়ে তাণ্ডব, ভাঙচুর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া, হামলা করা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে চরম উগ্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দেখিয়ে, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটিয়ে যে সংযম প্রদর্শন করেছে, সেটি নিশ্চয়ই স্বস্তির বিষয়। জামায়াত-শিবির যে সাঈদীর লাশ নিয়ে বড় ধরনের কিছু একটা করতে চেয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, চরিত্র বদলায়নি জামায়াত-শিবিরের। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তারদের প্রাণনাশের হুমকি এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা চালানোর মধ্যেও তাদের সন্ত্রাসী চরিত্রের অতীত ধারারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ডিএমপি তাদের পেশাদারত্বের সর্বোচ্চ কৌশল প্রয়োগ করেই সাঈদীর লাশ তাঁর বাড়ি পিরোজপুরে দাফনের ব্যবস্থা করেছে।
তবে সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু জামায়াত-শিবিরই নয়, বরং বিএনপি, আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী তাঁকে নানাভাবে ‘মহিমান্বিত’ করার চেষ্টা করেছে। এবার অবশ্য তাঁকে চাঁদে কিংবা সূর্য অথবা ভিন্ন কোনো গ্রহ-উপগ্রহে পাঠিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার বা দেশে হানাহানি সৃষ্টির কোনো সুযোগ পায়নি। তবে বিএনপি তাদের লন্ডনস্থ নেতার অনুমতি নিয়ে মৃত্যুর চার ঘণ্টা পর দলের পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছে। এ নিয়ে তারা গণমাধ্যমে নানা ব্যাখ্যাও দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে যা-ই বলা হোক না কেন, তার আড়ালে রয়েছে জামায়াত-বিএনপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির গূঢ় বন্ধন। ভেঙে দেওয়া ২০ দলীয় জোটের আরও কিছু দল, নেতা, হেফাজতে ইসলাম এবং বর্তমানে যুগপৎ আন্দোলনকারী গজিয়ে ওঠা কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে শোকবার্তা জানানো হয়েছে।
তবে যেটি সারা দেশেই লক্ষ করা গেছে, তা হচ্ছে জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মী, তাদের পেশাজীবী সংগঠন এবং ধর্মান্ধ বিভিন্ন দলের সমর্থকদের অনেকেই সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে ‘সহমতের’ অবস্থান প্রদর্শন করেছে। মনে রাখার বিষয় হচ্ছে, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হওয়া সত্ত্বেও জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বত্র জাতীয় শোক দিবসের বিষয়টিকে চাপা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিল। সর্বত্র প্রচার-প্রচারণা রাতের বেলায়ই সাঈদীর পক্ষে চালানো হয়েছিল। শোক দিবসের অনুষ্ঠান যাতে ম্লান হয়ে যায়, সেটিও তাদের পরিকল্পনায় ছিল বলে মনে হয়। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, জঙ্গিবাদ এবং উগ্র হঠকারী মতাদর্শগত নানা গোষ্ঠীর অবস্থান এখন কত কাছাকাছি চলে এসেছে, তার একটি জানান যেন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। সরকারে এখন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ থাকায় তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেনি। তবে চেষ্টা কম করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্র এবং আধুনিক বাংলাদেশ সম্পর্কে যাঁরা সচেতনভাবে ভাবেন, তাঁদের এসব ঘটনার ভেতরে লুকিয়ে থাকা অপশক্তির চেহারাটা ভালো করে বুঝে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটা জরুরি, তা বুঝতেই হবে। শুধু বুঝলেই হবে না, কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে জোটবদ্ধ অপশক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে এবং মানুষের চেতনার মান বাড়াতে হবে, সেই কর্মপরিকল্পনা এখন গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী নানা নামের নানা সংগঠনের উত্থান ঘটার কথা দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখে আসছি। হিন্দাল শারক্বীয়ার নাম এবং সেই সংগঠনের আহ্বানে ‘হিজরত’ করার আমন্ত্রণে বেশ কিছু তরুণের ঘর ছাড়ার অবিশ্বাস্য কথা শুনে অনেকেই চমকিত হয়েছিলেন। বয়সে একেবারেই কিশোর কিংবা তরুণেরাই এ পথে পা বাড়িয়েছিল। বছরখানেক আগে এই সংগঠনের নাম যখন উচ্চারিত হয়েছিল, তখন তারা বান্দরবানের কেএনএফের সঙ্গে যৌথভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ইসলামি বিপ্লব ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই সংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরতে সক্ষম হয়। যদিও দুই নেতা আদালত থেকে পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। এই সংগঠনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণে আনতে না আনতেই মাত্র কদিন আগে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার নিভৃত টিলায় ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে আরেক জঙ্গিবাদী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ধরার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেই সংগঠনের ১৭ জন নেতা-কর্মীকে স্থানীয় জনসাধারণই ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে। এর থেকে কিছু দূরে তাদেরই আস্তানায় মাটির নিচ থেকে গোলাবারুদ, গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এরাও হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছেন। এদের মধ্যে কেউ ডাক্তার, কেউ প্রকৌশলী, অনেকে ছাত্র, নারী-পুরুষ শিশুও রয়েছে। তারা জমি কিনে ঘর তৈরি করে সেখানে বসবাস শুরু করেছিল। অথচ এদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়।
এই সংগঠনের ১০ জনকে যেদিন আটক করা হয়েছিল, সেই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ১৩ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জঙ্গিদের ধরার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘যখন আন্দোলন জমে উঠতে থাকে, ঠিক তার আগে জঙ্গি নাটক অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমা বিশ্বকে আবার সেই জুজুর ভয় দেখাবে যে, এই দেখো, বাংলাদেশে আমরা যদি না থাকি, তাহলে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’ এর আগে কখনোই বিএনপি জঙ্গি দমনের ব্যাপারে সিটিটিসির কোনো উদ্যোগকেই সমর্থন জানায়নি, অনেক সময় নীরবতাও পালন করেছে, আবার অনেক সময় একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বিএনপির অবস্থান জঙ্গিবাদের সঙ্গে কতটা আছে কি নেই, তা বোধ হয় সচেতন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বলে বিশ্বাস করানোর প্রয়োজন পড়ে না। এসব জঙ্গিবাদী সংগঠনের অর্থ ও অস্ত্রদাতা কারা, তা সব সময় না জানা গেলেও দেশের অভ্যন্তরেই রাজনৈতিকভাবে সমর্থিত কোনো না কোনো ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এর জোগান দিয়ে থাকেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
যেসব ছেলেমেয়ে বা পেশাজীবী নারী-পুরুষ এতে অংশ নেয়, তারা কতটা ধর্মান্ধতায় আচ্ছন্ন হলে ঘর-সংসার ও পেশা ত্যাগ করে এভাবে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হতে পারে, তা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ধর্মান্ধতার চশমা চোখে থাকলে পৃথিবীর দৃশ্য তাদের দৃষ্টিতে পড়ে না, জ্ঞান তাদের প্রভাবিত করতেও পারে না। কিন্তু এসব জঙ্গিবাদী সংগঠনের নেতৃত্ব যারা দিয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা ছাত্রশিবির বা জামায়াতের সাবেক নেতা-কর্মী। খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝাই যায় এরা জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন স্তরের সহযোগী সংগঠন হিসেবেই ৮০-৯০-এর দশকের পর থেকে ভিন্ন ভিন্ন নামে আবির্ভূত হয়েছে, এখনো হচ্ছে। রাজনীতিকে যাঁরা সরলভাবে দেখেন, বোঝেন, তাঁরা এ ধরনের জঙ্গি সংগঠনের আদি উৎস ও কেন্দ্রবিন্দু সম্পর্কে বুঝতে চাইবেন না। আবার যারা সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন, ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত নয়, তারা যে দলই করুক না কেন, তারা এদের বিষয়টি মোটেও রাজনীতিসচেতনতার অবস্থান থেকে দেখার কথা নয়, বরং তারা দেশের মোটাদাগের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে এদের ব্যবহার করতে বা সমর্থন পেতে মোটেও দ্বিধা করে না।
এর ফল যে কী ভয়ানক হতে পারে, তার আলামত কেবল ২০০১-০৬ সালে পাওয়া গেছে। তবে পাকিস্তানের আজকের পরিণতি আরও যে খারাপের দিকে যাচ্ছে, সেটি সে দেশের রাজনীতির এসব সুবিধাবাদিতা, আপসকামিতা, উগ্র জঙ্গিবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সঙ্গী করার পরিণতি হিসেবেই দেখতে হবে। বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব জঙ্গিবাদী সম্পর্কে বড় কোনো দলের শীর্ষ পদ থেকে যখন এমন ‘মহাবিজ্ঞের’ মতো কথা বলা হয়, তখন বুঝতে হবে এদের দুর্বলতা, আশ্রয়-প্রশ্রয় কাদের প্রতি। তাদের মূল শত্রু যে আসলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশই, তা বুঝতে রাজনীতিসচেতন মানুষের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এখানেই আমাদের জাতীয় রাজনীতির বিভাজনের এপাশ এবং ওপাশের মতাদর্শগত শক্তির অবস্থান দেখার বিষয়।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ ও ১৫ আগস্ট যে তাণ্ডব চালিয়েছিল, তা এরই মধ্যে সবারই জানা বিষয়। ঢাকার বাইরে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চকরিয়ায় তারা ব্যাপক শক্তি প্রদর্শনে মাঠে নেমেছিল। চকরিয়ায় তারা ইউএনও, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড ও ওসির গাড়িতে হামলা করছিল। সেখানে তারা গায়েবানা জানাজার নামে ব্যাপক শক্তি প্রদর্শনে নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষকে সমবেত করার নানা কৌশল ব্যবহার করেছিল। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও তারা লিপ্ত হয়েছিল। সংঘর্ষে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি পথচারী এবং পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। কিন্তু পুলিশ সেখানে কোনো ধরনের গুলি চালায়নি। ফলে যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, তার গায়ে গুলি লাগার বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাসপাতালেও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, সাঈদীর লাশবাহী গাড়ি ভাঙচুর এবং তাঁর জানাজা নিয়ে বিলম্ব করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় জড়ো করার একটি দূরবর্তী কূটকৌশল ছিল।
একটি হাসপাতালের ভেতরে জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার কর্মী জড়ো হয়ে তাণ্ডব, ভাঙচুর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া, হামলা করা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে চরম উগ্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দেখিয়ে, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটিয়ে যে সংযম প্রদর্শন করেছে, সেটি নিশ্চয়ই স্বস্তির বিষয়। জামায়াত-শিবির যে সাঈদীর লাশ নিয়ে বড় ধরনের কিছু একটা করতে চেয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, চরিত্র বদলায়নি জামায়াত-শিবিরের। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তারদের প্রাণনাশের হুমকি এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা চালানোর মধ্যেও তাদের সন্ত্রাসী চরিত্রের অতীত ধারারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ডিএমপি তাদের পেশাদারত্বের সর্বোচ্চ কৌশল প্রয়োগ করেই সাঈদীর লাশ তাঁর বাড়ি পিরোজপুরে দাফনের ব্যবস্থা করেছে।
তবে সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু জামায়াত-শিবিরই নয়, বরং বিএনপি, আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী তাঁকে নানাভাবে ‘মহিমান্বিত’ করার চেষ্টা করেছে। এবার অবশ্য তাঁকে চাঁদে কিংবা সূর্য অথবা ভিন্ন কোনো গ্রহ-উপগ্রহে পাঠিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার বা দেশে হানাহানি সৃষ্টির কোনো সুযোগ পায়নি। তবে বিএনপি তাদের লন্ডনস্থ নেতার অনুমতি নিয়ে মৃত্যুর চার ঘণ্টা পর দলের পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছে। এ নিয়ে তারা গণমাধ্যমে নানা ব্যাখ্যাও দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে যা-ই বলা হোক না কেন, তার আড়ালে রয়েছে জামায়াত-বিএনপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির গূঢ় বন্ধন। ভেঙে দেওয়া ২০ দলীয় জোটের আরও কিছু দল, নেতা, হেফাজতে ইসলাম এবং বর্তমানে যুগপৎ আন্দোলনকারী গজিয়ে ওঠা কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে শোকবার্তা জানানো হয়েছে।
তবে যেটি সারা দেশেই লক্ষ করা গেছে, তা হচ্ছে জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মী, তাদের পেশাজীবী সংগঠন এবং ধর্মান্ধ বিভিন্ন দলের সমর্থকদের অনেকেই সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে ‘সহমতের’ অবস্থান প্রদর্শন করেছে। মনে রাখার বিষয় হচ্ছে, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হওয়া সত্ত্বেও জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বত্র জাতীয় শোক দিবসের বিষয়টিকে চাপা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিল। সর্বত্র প্রচার-প্রচারণা রাতের বেলায়ই সাঈদীর পক্ষে চালানো হয়েছিল। শোক দিবসের অনুষ্ঠান যাতে ম্লান হয়ে যায়, সেটিও তাদের পরিকল্পনায় ছিল বলে মনে হয়। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, জঙ্গিবাদ এবং উগ্র হঠকারী মতাদর্শগত নানা গোষ্ঠীর অবস্থান এখন কত কাছাকাছি চলে এসেছে, তার একটি জানান যেন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। সরকারে এখন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ থাকায় তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেনি। তবে চেষ্টা কম করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্র এবং আধুনিক বাংলাদেশ সম্পর্কে যাঁরা সচেতনভাবে ভাবেন, তাঁদের এসব ঘটনার ভেতরে লুকিয়ে থাকা অপশক্তির চেহারাটা ভালো করে বুঝে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটা জরুরি, তা বুঝতেই হবে। শুধু বুঝলেই হবে না, কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে জোটবদ্ধ অপশক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে এবং মানুষের চেতনার মান বাড়াতে হবে, সেই কর্মপরিকল্পনা এখন গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে