অরুণ কর্মকার
শেষ পর্যন্ত রাজনীতিই নাকি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কখনো কখনো অবশ্য রাজনীতিকেও নিয়ন্ত্রিত হতে হয়। সেই নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা থাকে অর্থনীতির। স্থান-কালভেদে এবং পরিস্থিতির গভীরতা বিবেচনায় সেই অবস্থাকে জটিল, সঙিন কিংবা নিদেনপক্ষে বেকায়দায় পড়া বলা যায়। বর্তমান পৃথিবীর প্রতিটি দেশ এই তিনটির কোনো না কোনো একটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সমগ্র ইউরোপ এখন অর্থনৈতিক সংকটের পথযাত্রী। যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে তা প্রকট হয়ে উঠেছে। আমেরিকার শরীর অনেক বড় কাপড়ে আবৃত। তাই কোনো দিকে কমতি হলে অন্যদিক থেকে কাপড় টেনেটুনে ঢাকা দেওয়া সম্ভব। তবে শিগগিরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কিছু একটা সুরাহা না হলে আমেরিকার অনাবৃত শরীর দৃশ্যমান হওয়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়।
আমাদের দেশও এই বিশ্ব পরিস্থিতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের বড় আশঙ্কার বিষয় খাদ্য ও জ্বালানির দাম এবং ডলারের সংকট। এর কোনোটিরই গতি-প্রকৃতি ভালো নয়। তবে দেশে এসব আশঙ্কার বিষয়ে ভয়-ভাবনা আপাতত কম; বরং সবচেয়ে বড় ভাবনার জায়গাজুড়ে আছে রাজনীতি। সুষ্ঠু নির্বাচন।
কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন: সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি সর্বজনীন আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রথম পূর্বশর্ত হলো—গণতন্ত্র ও নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ। কিন্তু বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ শর্তসাপেক্ষ করেছে। ফলে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এসেছে। আবার আইনি প্রক্রিয়ায় সেই ব্যবস্থার অবসানও হয়েছে। এ নিয়েও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ সন্ত্রাস-অগ্নিসংযোগে অনেক নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। বহু মানুষের প্রাণ গেছে। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত এখনো বহাল আছে।
আগামী নির্বাচনে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও তার বলয়ভুক্ত দলগুলোর শর্ত—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন নয়। কিন্তু সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বিলোপ করা হয়েছে আগেই। তাই ওই দাবি মানতে হলে সংবিধানের বিপরীত সংশোধনী দরকার। আওয়ামী লীগ সেটা কেন করবে! বিএনপি ও তার বলয়ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো কি আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ওই পথে নিতে সক্ষম? বিদেশি কূটনীতিকদের প্রভাব কিংবা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেও কি তা সম্ভব? মনে হয় না।
কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কথা। ‘বিএনপিপন্থী’ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ও বৃত্তিজীবী এর প্রবক্তা। তাঁদের কেউ কেউ এমনও বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এবারও যদি তেমনটি দেন, তাহলে জাতীয় সরকার গঠন ও
তার অধীনে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, ২০১৩-১৪ আর ২০২২-২৩ সাল কি এক? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন যা করেছিলেন এখনো তা করবেন কেন? তাঁর কি অন্য কোনো রাজনৈতিক কৌশল থাকতে পারে না? তা বিসর্জন দিয়ে তিনি কেন বিরোধীদের কথামতো কাজ করবেন! তারপরও যদি বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর সমন্বয়ে। সেখানেও তো বিএনপি নেই! সুতরাং সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত অত্যন্ত ক্ষীণ, যদি বিএনপি শর্ত প্রত্যাহার করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে।
খাদ্য ও খাদ্যের দাম: এ মৌসুমের বেশির ভাগ আমন ধান উঠে গেছে। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সারা দেশে ফসল ভালো হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেশি পড়া সত্ত্বেও ফড়িয়া-মহাজনদের কাছে ধানের ভালো দামই পাচ্ছেন কৃষক। মণপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত। এই দামের প্রভাব পড়েছে খাদ্যের বাজারে। অন্যান্য বছর ধান ওঠার পর বাজারে চালের দাম কমার যে প্রবণতা থাকত, এবার তা নেই।
পাশাপাশি সরকার ধান-চাল সংগ্রহের জন্য যে দাম নির্ধারণ করেছে (প্রতি কেজি ধান ২৮ টাকা, চাল ৪২ টাকা), তা বাজারের তুলনায় অনেক কম। তাই এই মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যে পূরণ হবে না, তা প্রায় নিশ্চিত।
এমনিতেও কৃষক সরকারের কাছে চাল বিক্রি করেন না। চাল বিক্রি করেন বড় মিলমালিকেরা। কৃষক বিক্রি করেন ধান। কিন্তু সরকারি গুদামের জন্য ধান কেনার ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ আর্দ্রতার বাধ্যবাধকতা থাকায় খুব কম কৃষকের পক্ষেই সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার সুযোগ হয়। সেই সুযোগ নেন ফড়িয়া-মহাজন। এ বছর দেশের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপও ধান-চাল কিনছে। তাতে কৃষকের ভালো দাম পাওয়ার সুযোগ বাড়তে পারে। তবে পরে ধান-চালের বাজার চড়া থাকবে বলে ধারণা করা যায়।
সেই চড়া দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, সেটি এক বড় প্রশ্ন। কারণ, সরকার ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তার গুদামের শস্য খোলাবাজারে ছেড়ে। কিন্তু এ বছর ধানের পাশাপাশি সরকার চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা কতটা পূরণ করতে পারবে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কেননা, সরকারের নির্ধারিত দাম অনেক কম হওয়ায় মিলমালিকেরা সরকারের গুদামে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে অনাগ্রহী।
সরকারের সঙ্গে মিলমালিকদের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল ৮ ডিসেম্বর। একমাত্র বগুড়া জেলাতেই ওই সময়ের মধ্যে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ মিলমালিক চুক্তিবদ্ধ হননি। সেখানে মোট ১ হাজার ১২০ জন মিলারের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ৪৪৭ জন। অন্যান্য জেলাতেও একই প্রবণতা বিদ্যমান। এটি সরকার এবং আগামী বছরের ধান-চালের বাজারদরের জন্য ভালো সংকেত নয়। দেশে ধান-চালের অভাব থাকবে না, তবে দাম হবে চড়া।
এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ডলার-সংকট বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের প্রাপ্যতারও সংকট দেখা দিতে পারে। কেননা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছর বিশ্বে চালের উৎপাদন কিছুটা কম হবে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হবে বলেই সংশ্লিষ্ট সবার ধারণা।
জ্বালানির দামে তুঘলকি: বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে কমতে এক বছর আগের পর্যায়ে নেমেছে। ব্রেন্ট ক্রুড প্রতি ব্যারেল ৭৮ ডলার। এই দামে তেল কিনে বর্তমান দামে বিক্রি করলে সব ধরনের জ্বালানি তেলে লিটারপ্রতি গড়ে ৫০ টাকা মুনাফা হওয়ার কথা।তা-ও দেশে তেলের দাম কমানোর নাম নেই। অথচ অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ানোর সময় বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও সমন্বয় করা হবে। এখন বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও তা স্থিতিশীল নয়।
জ্বালানির বিশ্ববাজারের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে অস্থিরতা। সে জন্য মাসাধিককাল ধরে অব্যাহতভাবে দাম কমার পরও দেশে সমন্বয় না করার পক্ষে যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। তা ছাড়া, ইউরোপসহ সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে জ্বালানির চাহিদাও কমছে।আগামী বছরও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও জ্বালানি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিমত। তারপরও যদি সরকার নিশ্চিত হতে না পারে তাহলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ যা করে, একটি নির্দিষ্ট সময় (কোথাও প্রতিদিন, কথাও প্রতি সপ্তাহে) অন্তর জ্বালানির দাম সমন্বয়, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না কেন?
ব্যয়ের হিসাবে বিরাট অসংগতি: আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় এক রহস্যের বিষয়। এখন যেমন জ্বালানির দাম এক বছর আগের স্তরে নামার পরও বিপিসির নাকি প্রতিদিন ৯ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
গত অর্থবছরের একটি হিসাবও এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১২ বিলিয়ন ডলার। বিপিসির হিসাব মতে, এই ব্যয় মাত্র সাড়ে ৫ বিলিয়ন। আবার কাস্টমস তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে তা আরও কম, ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বিপিসি এবং তার অধীন বিপণন কোম্পানিগুলো জ্বালানি তেল ও আমদানি করা অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের শুল্কায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয় না।
বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাবে অস্বচ্ছতার অভিযোগ বহু দিনের। কয়েক বছর আগে একটি বহুজাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কোনো অডিট কোম্পানি নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। তখনকার অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত এ ব্যাপারে কিছু উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পরে আর তা এগোয়নি।
গত আগস্ট মাসেও বিপিসির একটি হিসাবের গরমিল নিয়ে গণমাধ্যমে খবর হয়েছিল। তখন বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত (সাত বছরে) বিপিসি মোট ৪২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা
মুনাফা করেছে।
কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ ’-এ উল্লিখিত আছে, ওই সাত বছরে বিপিসি প্রকৃত মুনাফা করেছে ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিপিসির চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্য এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যের মধ্যে ব্যবধান ৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
এ বিষয়েও পরে আর কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে আগামী বছরের সম্ভাব্য বিশ্ব পরিস্থিতির যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এসব বিষয়ে যথাযথ নজর দেওয়া না হলে দেশের রাজনীতির ওপর অর্থনীতির কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হতে পারে। তাতে বদলে যেতে পারে রাজনীতির নিয়ন্ত্রকও।
লেথক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
শেষ পর্যন্ত রাজনীতিই নাকি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কখনো কখনো অবশ্য রাজনীতিকেও নিয়ন্ত্রিত হতে হয়। সেই নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা থাকে অর্থনীতির। স্থান-কালভেদে এবং পরিস্থিতির গভীরতা বিবেচনায় সেই অবস্থাকে জটিল, সঙিন কিংবা নিদেনপক্ষে বেকায়দায় পড়া বলা যায়। বর্তমান পৃথিবীর প্রতিটি দেশ এই তিনটির কোনো না কোনো একটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সমগ্র ইউরোপ এখন অর্থনৈতিক সংকটের পথযাত্রী। যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে তা প্রকট হয়ে উঠেছে। আমেরিকার শরীর অনেক বড় কাপড়ে আবৃত। তাই কোনো দিকে কমতি হলে অন্যদিক থেকে কাপড় টেনেটুনে ঢাকা দেওয়া সম্ভব। তবে শিগগিরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কিছু একটা সুরাহা না হলে আমেরিকার অনাবৃত শরীর দৃশ্যমান হওয়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়।
আমাদের দেশও এই বিশ্ব পরিস্থিতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের বড় আশঙ্কার বিষয় খাদ্য ও জ্বালানির দাম এবং ডলারের সংকট। এর কোনোটিরই গতি-প্রকৃতি ভালো নয়। তবে দেশে এসব আশঙ্কার বিষয়ে ভয়-ভাবনা আপাতত কম; বরং সবচেয়ে বড় ভাবনার জায়গাজুড়ে আছে রাজনীতি। সুষ্ঠু নির্বাচন।
কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন: সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি সর্বজনীন আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রথম পূর্বশর্ত হলো—গণতন্ত্র ও নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ। কিন্তু বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ শর্তসাপেক্ষ করেছে। ফলে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এসেছে। আবার আইনি প্রক্রিয়ায় সেই ব্যবস্থার অবসানও হয়েছে। এ নিয়েও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ সন্ত্রাস-অগ্নিসংযোগে অনেক নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। বহু মানুষের প্রাণ গেছে। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত এখনো বহাল আছে।
আগামী নির্বাচনে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও তার বলয়ভুক্ত দলগুলোর শর্ত—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন নয়। কিন্তু সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বিলোপ করা হয়েছে আগেই। তাই ওই দাবি মানতে হলে সংবিধানের বিপরীত সংশোধনী দরকার। আওয়ামী লীগ সেটা কেন করবে! বিএনপি ও তার বলয়ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো কি আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ওই পথে নিতে সক্ষম? বিদেশি কূটনীতিকদের প্রভাব কিংবা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেও কি তা সম্ভব? মনে হয় না।
কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কথা। ‘বিএনপিপন্থী’ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ও বৃত্তিজীবী এর প্রবক্তা। তাঁদের কেউ কেউ এমনও বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এবারও যদি তেমনটি দেন, তাহলে জাতীয় সরকার গঠন ও
তার অধীনে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, ২০১৩-১৪ আর ২০২২-২৩ সাল কি এক? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন যা করেছিলেন এখনো তা করবেন কেন? তাঁর কি অন্য কোনো রাজনৈতিক কৌশল থাকতে পারে না? তা বিসর্জন দিয়ে তিনি কেন বিরোধীদের কথামতো কাজ করবেন! তারপরও যদি বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর সমন্বয়ে। সেখানেও তো বিএনপি নেই! সুতরাং সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত অত্যন্ত ক্ষীণ, যদি বিএনপি শর্ত প্রত্যাহার করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে।
খাদ্য ও খাদ্যের দাম: এ মৌসুমের বেশির ভাগ আমন ধান উঠে গেছে। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সারা দেশে ফসল ভালো হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেশি পড়া সত্ত্বেও ফড়িয়া-মহাজনদের কাছে ধানের ভালো দামই পাচ্ছেন কৃষক। মণপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত। এই দামের প্রভাব পড়েছে খাদ্যের বাজারে। অন্যান্য বছর ধান ওঠার পর বাজারে চালের দাম কমার যে প্রবণতা থাকত, এবার তা নেই।
পাশাপাশি সরকার ধান-চাল সংগ্রহের জন্য যে দাম নির্ধারণ করেছে (প্রতি কেজি ধান ২৮ টাকা, চাল ৪২ টাকা), তা বাজারের তুলনায় অনেক কম। তাই এই মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যে পূরণ হবে না, তা প্রায় নিশ্চিত।
এমনিতেও কৃষক সরকারের কাছে চাল বিক্রি করেন না। চাল বিক্রি করেন বড় মিলমালিকেরা। কৃষক বিক্রি করেন ধান। কিন্তু সরকারি গুদামের জন্য ধান কেনার ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ আর্দ্রতার বাধ্যবাধকতা থাকায় খুব কম কৃষকের পক্ষেই সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার সুযোগ হয়। সেই সুযোগ নেন ফড়িয়া-মহাজন। এ বছর দেশের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপও ধান-চাল কিনছে। তাতে কৃষকের ভালো দাম পাওয়ার সুযোগ বাড়তে পারে। তবে পরে ধান-চালের বাজার চড়া থাকবে বলে ধারণা করা যায়।
সেই চড়া দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, সেটি এক বড় প্রশ্ন। কারণ, সরকার ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তার গুদামের শস্য খোলাবাজারে ছেড়ে। কিন্তু এ বছর ধানের পাশাপাশি সরকার চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা কতটা পূরণ করতে পারবে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কেননা, সরকারের নির্ধারিত দাম অনেক কম হওয়ায় মিলমালিকেরা সরকারের গুদামে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে অনাগ্রহী।
সরকারের সঙ্গে মিলমালিকদের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল ৮ ডিসেম্বর। একমাত্র বগুড়া জেলাতেই ওই সময়ের মধ্যে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ মিলমালিক চুক্তিবদ্ধ হননি। সেখানে মোট ১ হাজার ১২০ জন মিলারের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ৪৪৭ জন। অন্যান্য জেলাতেও একই প্রবণতা বিদ্যমান। এটি সরকার এবং আগামী বছরের ধান-চালের বাজারদরের জন্য ভালো সংকেত নয়। দেশে ধান-চালের অভাব থাকবে না, তবে দাম হবে চড়া।
এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ডলার-সংকট বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের প্রাপ্যতারও সংকট দেখা দিতে পারে। কেননা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছর বিশ্বে চালের উৎপাদন কিছুটা কম হবে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হবে বলেই সংশ্লিষ্ট সবার ধারণা।
জ্বালানির দামে তুঘলকি: বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে কমতে এক বছর আগের পর্যায়ে নেমেছে। ব্রেন্ট ক্রুড প্রতি ব্যারেল ৭৮ ডলার। এই দামে তেল কিনে বর্তমান দামে বিক্রি করলে সব ধরনের জ্বালানি তেলে লিটারপ্রতি গড়ে ৫০ টাকা মুনাফা হওয়ার কথা।তা-ও দেশে তেলের দাম কমানোর নাম নেই। অথচ অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ানোর সময় বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও সমন্বয় করা হবে। এখন বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও তা স্থিতিশীল নয়।
জ্বালানির বিশ্ববাজারের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে অস্থিরতা। সে জন্য মাসাধিককাল ধরে অব্যাহতভাবে দাম কমার পরও দেশে সমন্বয় না করার পক্ষে যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। তা ছাড়া, ইউরোপসহ সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে জ্বালানির চাহিদাও কমছে।আগামী বছরও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও জ্বালানি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিমত। তারপরও যদি সরকার নিশ্চিত হতে না পারে তাহলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ যা করে, একটি নির্দিষ্ট সময় (কোথাও প্রতিদিন, কথাও প্রতি সপ্তাহে) অন্তর জ্বালানির দাম সমন্বয়, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না কেন?
ব্যয়ের হিসাবে বিরাট অসংগতি: আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় এক রহস্যের বিষয়। এখন যেমন জ্বালানির দাম এক বছর আগের স্তরে নামার পরও বিপিসির নাকি প্রতিদিন ৯ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
গত অর্থবছরের একটি হিসাবও এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১২ বিলিয়ন ডলার। বিপিসির হিসাব মতে, এই ব্যয় মাত্র সাড়ে ৫ বিলিয়ন। আবার কাস্টমস তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে তা আরও কম, ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বিপিসি এবং তার অধীন বিপণন কোম্পানিগুলো জ্বালানি তেল ও আমদানি করা অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের শুল্কায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয় না।
বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাবে অস্বচ্ছতার অভিযোগ বহু দিনের। কয়েক বছর আগে একটি বহুজাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কোনো অডিট কোম্পানি নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। তখনকার অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত এ ব্যাপারে কিছু উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পরে আর তা এগোয়নি।
গত আগস্ট মাসেও বিপিসির একটি হিসাবের গরমিল নিয়ে গণমাধ্যমে খবর হয়েছিল। তখন বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত (সাত বছরে) বিপিসি মোট ৪২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা
মুনাফা করেছে।
কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ ’-এ উল্লিখিত আছে, ওই সাত বছরে বিপিসি প্রকৃত মুনাফা করেছে ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিপিসির চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্য এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যের মধ্যে ব্যবধান ৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
এ বিষয়েও পরে আর কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে আগামী বছরের সম্ভাব্য বিশ্ব পরিস্থিতির যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এসব বিষয়ে যথাযথ নজর দেওয়া না হলে দেশের রাজনীতির ওপর অর্থনীতির কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হতে পারে। তাতে বদলে যেতে পারে রাজনীতির নিয়ন্ত্রকও।
লেথক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে