অরুণ কর্মকার
আমরা বাঙালিরা তর্ক করতে বড় ভালোবাসি। কোনো বিষয়ে তর্ক শুরু হলে তা নিয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিতে আমাদের জুড়ি নেই। এটা বাঙালির জাতিগত বৈশিষ্ট্য বলে অনেকেই জানি। তবে নোবেল বিজয়ী বাঙালি পণ্ডিত অমর্ত্য সেনের ‘তর্কপ্রিয় ভারতীয়’ গ্রন্থখানা যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জেনে থাকবেন যে তর্কপ্রিয়তা শুধু বাঙালির মধ্যে সীমিত নয়। এ বস্তু ভারতীয় উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যও বটে, যা উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে।
অমর্ত্য সেন নিজেও বোধ করি তর্ক পছন্দ করেন। ঢাকায় তাঁর একাধিক বক্তৃতায় বলতে শুনেছি, ‘তক্কাতক্কি করতে হবে।’ অমর্ত্য সেনের এই ‘তক্কাতক্কি’ বা আমাদের তর্ক, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘আরগুমেন্ট’ একটি নির্দোষ, স্বাস্থ্যকর ও অতিপ্রয়োজনীয় অধ্যবসায়। কোনো বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করার এবং সত্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছার জন্য এর চেয়ে উত্তম মাধ্যম আর হয় কি না, সন্দেহ।
তবে বিতর্ক বিষয়টা তর্কের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। বিতর্কের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘কন্ট্রোভার্সি’, অর্থাৎ বিতর্কে অবতীর্ণ হওয়া বা বিতর্ক সৃষ্টি করার একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা স্বাস্থ্যকর নয়। সেই উদ্দেশ্যটা হয় সাধারণত প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। প্রতিপক্ষের চলন-বলন, যুক্তি-বুদ্ধিকে অসার কিংবা ভুল অথবা ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণ করা। প্রচলিত কথায় যাকে বলে ক্যাচাল লাগানো। ক্যাচাল লাগিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো। এ জন্য যিনি বিতর্কে অবতীর্ণ হন, তাঁকে একটা পক্ষ নিতে হয়।
আজকাল আমরা স্বাস্থ্যকর ও পক্ষপাতহীন তর্কের চেয়ে অস্বাস্থ্যকর ও পক্ষপাতদুষ্ট বিতর্কের প্রতিই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছি। এর সর্বশেষ উদাহরণ দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া পদ্ধতি যথাযথ হয়েছে কি না, রাষ্ট্রপতি পদটি কোনো লাভজনক পদ কি না, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কি না, এসব বিষয়ে কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। বলা ভালো, বিতর্ক উসকে দেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, রাষ্ট্রপতি পদের সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে গণমাধ্যমে যে জল্পনা-কল্পনা চলেছিল, তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কেন মিলল না, আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের কোনো নেতাই আগেভাগে প্রার্থীর নাম জানতে পারলেন না, এমনকি প্রার্থী নিজেও জেনেছেন একেবারে মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করার সময়, তিনি রাষ্ট্রপতির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন কি না, তাই-বা কেন জানতে চাওয়া হলো না—এসবও ছিল অনুযোগের বিষয়।
এত সব বিষয়ে অনুপুঙ্খ আলোচনা-সমালোচনার পর বিতর্কের প্রধান বিষয় গিয়ে দাঁড়ায় প্রজাতন্ত্রের কাজে রাষ্ট্রপতি পদটি লাভজনক পদ কি না এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন ওই পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য কি না, সেই প্রশ্নে। যদি রাষ্ট্রপতি পদটি লাভজনক পদ হয় তাহলে মো. সাহাবুদ্দিন ওই পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না।
এ বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন সুপরিচিত আইনজীবীর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে। সেই লেখায় তিনি রাষ্ট্রপতি পদটিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদ হিসেবে মত প্রকাশ করেছেন। এই মতের পক্ষে তিনি সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ ও ধারা-উপধারাও উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু সেখানে এ বিষয়সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখলাম অনুল্লেখ্য। বিষয়টি হলো সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় এবং নির্বাচিত করে, তখন বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। রাষ্ট্রপতি পদটি প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক নাকি লাভজনক নয়, এই প্রশ্নের মীমাংসার জন্য একটি রিট পিটিশন দায়ের হয়েছিল। ওই পিটিশনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপতি পদটি লাভজনক নয় বলে রায় দিয়েছিলেন।
আমি নিশ্চিত যে ওই আইনজীবী সেই রিট মামলা এবং হাইকোর্টের রায় সম্পর্কে সম্যক অবগত। তারপরও কেন তিনি তাঁর নিবন্ধে বিষয়টির উল্লেখ পর্যন্ত করলেন না? তাহলে কি তিনি ওই রায়কে ভুল মনে করেন? যদি তা-ই হয়, সে কথাও তো তিনি বলতে পারতেন। কোনো রায়ের সমালোচনা করা তো বেআইনি নয় বলেই জানি। তা ছাড়া, ১৯৯৬ সালেও তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন বলে ধারণা করি। সে ক্ষেত্রে তাঁর তো সুযোগ ছিল ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে যাওয়া। বিষয়টি নিঃসন্দেহে তেমনই একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কিন্তু তিনি এর কোনোটিই করলেন না। শুধু তাঁর নিবন্ধে বিষয়টির উল্লেখ মাত্র না করে সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ, ধারা-উপধারা ব্যাখ্যা করে বলার চেষ্টা করলেন যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে রাষ্ট্রপতি পদটি লাভজনক। একজন আইনজীবী হিসেবে সংবিধানের ব্যাখ্যা তিনি দিতেই পারেন। কিন্তু আমরা জানি যে সংবিধানের ব্যাখ্যা দেওয়ার কাজ সুপ্রিম কোর্টের। সুপ্রিম কোর্ট যে ব্যাখ্যা দেবেন, সেটাই গ্রহণযোগ্য হবে। অন্য কারও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নয়। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই হচ্ছে বিষয়টির ব্যাখ্যা। জেনেশুনে সেটি এড়িয়ে যাওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ আছে।
এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া অনেক রাজনৈতিক ভাষ্যকার, নিবন্ধকারের কাছে নানাবিধ বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো দলীয় আনুগত্যের কারণে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির পদ দেওয়া হয়েছে। এটা কি বিশেষ কোনো বার্তা? আওয়ামী লীগ কি এমন কোনো দাবি করেছে যে তারা একজন দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে প্রার্থী করেছে?
কেউ কেউ আবার এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে গুরুতর গলদ খুঁজে পেয়েছেন। সেই গলদ হচ্ছে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন ঘটানোর ধারণার গলদ। এটি গলদ হলে তা তো শুধু এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়ার গলদ নয়, এটা তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই গলদ। আধুনিক গণতন্ত্রের জনক জন লক যেমনটি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের সমান ভোটাধিকার থাকে। আইন প্রস্তাব, প্রণয়ন ও তৈরির ক্ষেত্রে সব নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ থাকে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে।’
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আসলেই নির্বাচিত কি না।
এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে আমাদের দেশে গণতন্ত্রের বিকৃত কর্মকাণ্ডের সূচনা কবে হলো, কীভাবেই তা ডালপালা ছড়িয়ে মহিরুহ হয়ে উঠল, তা খুঁজতে হবে। সে জন্য আগে দরকার যাঁরা খুঁজবেন, তাঁদের নির্মোহ অবস্থান।
অন্যথায় বিতর্ক আর বিভ্রান্তির বেড়াজাল কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকবে।
আমরা বাঙালিরা তর্ক করতে বড় ভালোবাসি। কোনো বিষয়ে তর্ক শুরু হলে তা নিয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিতে আমাদের জুড়ি নেই। এটা বাঙালির জাতিগত বৈশিষ্ট্য বলে অনেকেই জানি। তবে নোবেল বিজয়ী বাঙালি পণ্ডিত অমর্ত্য সেনের ‘তর্কপ্রিয় ভারতীয়’ গ্রন্থখানা যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জেনে থাকবেন যে তর্কপ্রিয়তা শুধু বাঙালির মধ্যে সীমিত নয়। এ বস্তু ভারতীয় উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যও বটে, যা উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে।
অমর্ত্য সেন নিজেও বোধ করি তর্ক পছন্দ করেন। ঢাকায় তাঁর একাধিক বক্তৃতায় বলতে শুনেছি, ‘তক্কাতক্কি করতে হবে।’ অমর্ত্য সেনের এই ‘তক্কাতক্কি’ বা আমাদের তর্ক, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘আরগুমেন্ট’ একটি নির্দোষ, স্বাস্থ্যকর ও অতিপ্রয়োজনীয় অধ্যবসায়। কোনো বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করার এবং সত্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছার জন্য এর চেয়ে উত্তম মাধ্যম আর হয় কি না, সন্দেহ।
তবে বিতর্ক বিষয়টা তর্কের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। বিতর্কের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘কন্ট্রোভার্সি’, অর্থাৎ বিতর্কে অবতীর্ণ হওয়া বা বিতর্ক সৃষ্টি করার একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা স্বাস্থ্যকর নয়। সেই উদ্দেশ্যটা হয় সাধারণত প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। প্রতিপক্ষের চলন-বলন, যুক্তি-বুদ্ধিকে অসার কিংবা ভুল অথবা ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণ করা। প্রচলিত কথায় যাকে বলে ক্যাচাল লাগানো। ক্যাচাল লাগিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো। এ জন্য যিনি বিতর্কে অবতীর্ণ হন, তাঁকে একটা পক্ষ নিতে হয়।
আজকাল আমরা স্বাস্থ্যকর ও পক্ষপাতহীন তর্কের চেয়ে অস্বাস্থ্যকর ও পক্ষপাতদুষ্ট বিতর্কের প্রতিই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছি। এর সর্বশেষ উদাহরণ দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া পদ্ধতি যথাযথ হয়েছে কি না, রাষ্ট্রপতি পদটি কোনো লাভজনক পদ কি না, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কি না, এসব বিষয়ে কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। বলা ভালো, বিতর্ক উসকে দেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, রাষ্ট্রপতি পদের সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে গণমাধ্যমে যে জল্পনা-কল্পনা চলেছিল, তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কেন মিলল না, আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের কোনো নেতাই আগেভাগে প্রার্থীর নাম জানতে পারলেন না, এমনকি প্রার্থী নিজেও জেনেছেন একেবারে মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করার সময়, তিনি রাষ্ট্রপতির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন কি না, তাই-বা কেন জানতে চাওয়া হলো না—এসবও ছিল অনুযোগের বিষয়।
এত সব বিষয়ে অনুপুঙ্খ আলোচনা-সমালোচনার পর বিতর্কের প্রধান বিষয় গিয়ে দাঁড়ায় প্রজাতন্ত্রের কাজে রাষ্ট্রপতি পদটি লাভজনক পদ কি না এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন ওই পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য কি না, সেই প্রশ্নে। যদি রাষ্ট্রপতি পদটি লাভজনক পদ হয় তাহলে মো. সাহাবুদ্দিন ওই পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না।
এ বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন সুপরিচিত আইনজীবীর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে। সেই লেখায় তিনি রাষ্ট্রপতি পদটিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদ হিসেবে মত প্রকাশ করেছেন। এই মতের পক্ষে তিনি সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ ও ধারা-উপধারাও উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু সেখানে এ বিষয়সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখলাম অনুল্লেখ্য। বিষয়টি হলো সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় এবং নির্বাচিত করে, তখন বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। রাষ্ট্রপতি পদটি প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক নাকি লাভজনক নয়, এই প্রশ্নের মীমাংসার জন্য একটি রিট পিটিশন দায়ের হয়েছিল। ওই পিটিশনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপতি পদটি লাভজনক নয় বলে রায় দিয়েছিলেন।
আমি নিশ্চিত যে ওই আইনজীবী সেই রিট মামলা এবং হাইকোর্টের রায় সম্পর্কে সম্যক অবগত। তারপরও কেন তিনি তাঁর নিবন্ধে বিষয়টির উল্লেখ পর্যন্ত করলেন না? তাহলে কি তিনি ওই রায়কে ভুল মনে করেন? যদি তা-ই হয়, সে কথাও তো তিনি বলতে পারতেন। কোনো রায়ের সমালোচনা করা তো বেআইনি নয় বলেই জানি। তা ছাড়া, ১৯৯৬ সালেও তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন বলে ধারণা করি। সে ক্ষেত্রে তাঁর তো সুযোগ ছিল ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে যাওয়া। বিষয়টি নিঃসন্দেহে তেমনই একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কিন্তু তিনি এর কোনোটিই করলেন না। শুধু তাঁর নিবন্ধে বিষয়টির উল্লেখ মাত্র না করে সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ, ধারা-উপধারা ব্যাখ্যা করে বলার চেষ্টা করলেন যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে রাষ্ট্রপতি পদটি লাভজনক। একজন আইনজীবী হিসেবে সংবিধানের ব্যাখ্যা তিনি দিতেই পারেন। কিন্তু আমরা জানি যে সংবিধানের ব্যাখ্যা দেওয়ার কাজ সুপ্রিম কোর্টের। সুপ্রিম কোর্ট যে ব্যাখ্যা দেবেন, সেটাই গ্রহণযোগ্য হবে। অন্য কারও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নয়। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই হচ্ছে বিষয়টির ব্যাখ্যা। জেনেশুনে সেটি এড়িয়ে যাওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ আছে।
এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া অনেক রাজনৈতিক ভাষ্যকার, নিবন্ধকারের কাছে নানাবিধ বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো দলীয় আনুগত্যের কারণে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির পদ দেওয়া হয়েছে। এটা কি বিশেষ কোনো বার্তা? আওয়ামী লীগ কি এমন কোনো দাবি করেছে যে তারা একজন দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে প্রার্থী করেছে?
কেউ কেউ আবার এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে গুরুতর গলদ খুঁজে পেয়েছেন। সেই গলদ হচ্ছে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন ঘটানোর ধারণার গলদ। এটি গলদ হলে তা তো শুধু এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়ার গলদ নয়, এটা তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই গলদ। আধুনিক গণতন্ত্রের জনক জন লক যেমনটি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের সমান ভোটাধিকার থাকে। আইন প্রস্তাব, প্রণয়ন ও তৈরির ক্ষেত্রে সব নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ থাকে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে।’
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আসলেই নির্বাচিত কি না।
এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে আমাদের দেশে গণতন্ত্রের বিকৃত কর্মকাণ্ডের সূচনা কবে হলো, কীভাবেই তা ডালপালা ছড়িয়ে মহিরুহ হয়ে উঠল, তা খুঁজতে হবে। সে জন্য আগে দরকার যাঁরা খুঁজবেন, তাঁদের নির্মোহ অবস্থান।
অন্যথায় বিতর্ক আর বিভ্রান্তির বেড়াজাল কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে