বিসিএস প্রিলিমিনারি পাসের পর লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে। প্রিলিমিনারিতে যাঁরা উত্তীর্ণ হন, তাঁরাই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ছয়টি বিষয়ের ওপর ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে। এ ছাড়া টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য আলাদা নিজস্ব বিষয়ে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে লিখিত প্রস্তুতির বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ তুলে ধরা হলো। আজ থাকছে ষষ্ঠ পর্ব:

বিসিএস লিখিত পরীক্ষা মোট ৯০০ নম্বরের মধ্যে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতার জন্য বরাদ্দ নম্বর হলো ১০০ (গাণিতিক যুক্তি ৫০ ও মানসিক দক্ষতা ৫০)। প্রতি বিষয়ের জন্য পৃথক পরীক্ষা হয়। এ ক্ষেত্রে গাণিতিক যুক্তি পরীক্ষার সময় হলো ২ ঘণ্টা। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত মোট নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর করে কাটা যাবে। উল্লেখ্য, লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর ও কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার লাভে এ দুটি বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গাণিতিক যুক্তি (৫০ নম্বর)

গাণিতিক যুক্তি অংশের সিলেবাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

• গুরুত্বপূর্ণ (সবাই চেষ্টা করলে পারবে এমন টপিক)-সরল ও যৌগিক মুনাফা, শতকরা, ঐকিক নিয়ম (একটা প্রশ্ন থাকেই), মান নির্ণয়, উৎপাদক, সমীকরণের সমাধান, সূচক, লগারিদম, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতির দূরত্ব ও উচ্চতাসংক্রান্ত অঙ্ক ইত্যাদি। যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী অল্প অনুশীলনের মাধ্যমে সহজেই এ টপিকগুলো থেকে উত্তর করতে পারবে। আর এ টপিকগুলো থেকে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ প্রশ্ন চলে আসে। যারা গণিতে দুর্বল, তারা এ অধ্যায়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে পারে।
• বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা, ধারা, সেট, ভেনচিত্র, পরিমিতি—এ অধ্যায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ; তবে এসব অধ্যায় থেকে উত্তর করার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর বেসিক ক্লিয়ার থাকতে হবে। উল্লিখিত অধ্যায়গুলো সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য উত্তর করা সহজ হয়। এ টপিকগুলো থেকে ৩০-৪০ ভাগ প্রশ্ন হয়ে থাকে।
• কম গুরুত্বপূর্ণ, তবে পরীক্ষায় আসে এমন কিছু টপিক হলো ত্রিকোণমিতিক সমাধান ও অসমতা। গণিতে দুর্বল পরীক্ষার্থীরা এসব অধ্যায় বাদ দিতে পারেন।
• বিগত বছরের প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলন করলে জ্যামিতি অংশের উত্তর করা সহজ হয়।
• বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা, স্থানাঙ্ক জ্যামিতির সরলরেখা অধ্যায়গুলো একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির যেকোনো বই আর গণিতের বাকি সব টপিক নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত বই থেকে অনুশীলন করলেই হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সিলেবাসে উল্লিখিত অধ্যায় ধরে অনুশীলন করতে হবে।
• পরীক্ষায় ভালো করার জন্য নিয়মিত অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা বা ১০-১৫টি অঙ্ক ভালোভাবে অনুশীলন করা যেতে পারে।
• গণিতে ভালো করতে হলে খাতায় বারবার অনুশীলন করতে হবে। বিগত সালের প্রশ্নগুলো অবশ্যই টপিক ধরে অনুশীলন করতে হবে; বিশেষ করে পরীক্ষার আগমুহূর্তে বিগত প্রশ্নগুলোই বারবার রিভিশন দেওয়া যেতে পারে।
• সব সূত্র টপিকভিত্তিক একসঙ্গে লিখে নোট করতে হবে এবং প্রায়ই রিভিশন দিতে হবে।
• পরীক্ষার হলে সহজ ও জানা ম্যাথ দিয়ে উত্তর শুরু করতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে সেটা নিয়ে বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। এতে মানসিক চাপ বাড়ে ও জানা অঙ্কও ভুল হয়।
• পরীক্ষার প্রথম ঘণ্টায় ৩০ ও দ্বিতীয় ঘণ্টায় বাকি ২০ নম্বরের উত্তর করার চেষ্টা করতে হবে।

মানসিক দক্ষতা (৫০ নম্বর)

• মানসিক দক্ষতা অংশের প্রস্তুতির জন্য প্রথমেই বিগত সালের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সব প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ ভালোভাবে বুঝে বুঝে অনুশীলন করতে হবে।
• এ বিষয়ের বিগত সালের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করলে দেখা যায়, ঘড়ি, দিন ও পঞ্জিকা, ত্রিভুজ বা চতুর্ভুজ গণনা, কোডিং-ডিকোডিং, সিরিজ, যান্ত্রিক দক্ষতা, পানিতে ও আয়নায় প্রতিবিম্ব, সম্পর্ক নির্ণয়, দিক নির্ণয়, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, বানান প্রভৃতি টপিক থেকে প্রায় প্রতি পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। এই টপিকগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। এ জন্য যেকোনো মানসিক দক্ষতার বই থেকে টপিকভিত্তিক নিয়মিত অনুশীলনই যথেষ্ট। উল্লেখ্য, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ ও বানানের ক্ষেত্রে বাংলা ২য় পত্রের প্রস্তুতি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
• উপস্থিত জ্ঞানভিত্তিক কিছু প্রশ্ন থাকে, যেগুলো কমনসেন্স কাজে লাগিয়ে উত্তর করতে হবে।
• সাধারণত দেখা যায়, মানসিক দক্ষতা অংশের জন্য কম প্রস্তুতি গ্রহণ ও অনুশীলন করার ফলে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী এ বিষয়ে খারাপ করে। নিয়মিত অনুশীলন করলে এ বিষয়ে সহজেই ৪৫-৫০ নম্বর তোলা যায়। যারা গাণিতিক যুক্তি অংশে দুর্বল, তারা মানসিক দক্ষতায় ভালো প্রস্তুতির মাধ্যমে সার্বিকভাবে ভালো নম্বর পেতে পারে।

সবশেষে, পরীক্ষার হলে নেগেটিভ মার্কিং ও সময়ের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম