সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডে (বাপেক্স) বিশেষ বোনাসের নামে সরকারি অর্থ ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়। এমনকি ওয়ার্কওভারের (পুরোনো কূপ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ) মতো নিয়মিত কাজের জন্যও এই সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশেষ বোনাস নিয়েছেন। অথচ এটি সরকারের একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান।
বাপেক্সের অন্তত তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরোনো গ্যাসকূপে ওয়ার্কওভারের মূল কাজ করেন খনন বিভাগের লোকজন। ওই কাজে সহায়তা লাগে প্রকৌশল বিভাগের কিছু লোকবলের। পাশাপাশি দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করেন আরও অর্ধশত অস্থায়ী শ্রমিক। কিন্তু বিশেষ বোনাস দেওয়া হয়েছে বাপেক্সের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। আর অস্থায়ী শ্রমিকদের হাজিরাও প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে বেশি দেখানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আলমগীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওয়ার্কওভার কাজে নেতৃত্ব দেন মূলত খনন বিভাগের লোকজন। এর বাইরে আমরা যাঁরা অন্যান্য বিভাগে কাজ করি, তাঁরা মাঝেমধ্যে সাইটে যাই। একটা পুরোনো কূপে ওয়ার্কওভার কাজ করতে সব মিলিয়ে ৬০-৭০ জনের লোকবল দরকার হয়। কিন্তু বিশেষ বোনাস দেওয়া হয়েছে ৩৬০ জনের বেশি স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।’
বাপেক্সের তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, ওয়ার্কওভার কাজের জন্য কোনো কোনো কূপে অস্থায়ী শ্রমিক দেখানো হয়েছে ১০৫-২১৩ জন।
ওয়ার্কওভার কাজে সবার সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও সবাইকে বিশেষ বোনাস দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেকোনো অর্জনই কোম্পানির অর্জন হিসেবে ধরা হয়। এ জন্য কোম্পানির সবাইকে বিশেষ বোনাস দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বোনাস দেওয়ার প্রচলন আগে থেকেই আছে।
জানা যায়, ওয়ার্কওভারের মতো নিয়মিত কাজ করে বিশেষ বোনাস নেওয়া ছাড়াও টাকার ভাগ পেতে অনিয়মিত শ্রমিক বেশি দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদও অর্থ নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত না থাকা লোকজনকেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ বোনাস। সরকারি এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়ের অধীন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ অডিট অধিপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাপেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা খাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ১০ কোটি ২০ লাখ ১ হাজার ৯৭৯ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে নিয়েছেন। বাপেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওই টাকা ফেরত দিতে বলেছে সিএজি কার্যালয়। এই টাকা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ও। নিরীক্ষাকালে বাপেক্সের বিভিন্ন রেজিস্টার ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করা হয়। চলতি বছর এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বিশেষ বোনাস এবং বিদ্যুৎ ও পানির বিলের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছে, ওয়ার্কওভার বাপেক্সের নিয়মিত কাজ। এই কাজের জন্য সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্মানী বা বিশেষ বোনাস পেতে পারেন না।
অডিট আপত্তির ব্যাপারে বাপেক্স জানিয়েছে, পুরোনো কূপে ওয়ার্কওভার কাজ ‘সফলভাবে’ সম্পন্ন করায় এবং আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে বাপেক্সের লোকবলের বেতন কম হওয়ায় কর্মীদের ‘উৎসাহ ও প্রণোদিত’ করতে এই বোনাস দেওয়া হয়েছে।
বাপেক্সের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, যে বছর বিশেষ বোনাস ও বাসাবাড়ির পানি-বিদ্যুতের বিল দেওয়া হয়েছে, সে বছর (২০১৬-১৭) বাপেক্সের নিট লোকসান হয় ২৬৩ কোটি ৩২ লাখ ৯২ হাজার ২৯ টাকা।
এক বছরে চারবার বিশেষ বোনাস
বাপেক্সের হিসাব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শ্রীকাইল ৪, তিতাস ১, ২, ৫, ১০ এবং শাহবাজপুর ৪ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজ পরিচালনার জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চারবার বিশেষ বোনাস (মূল বেতনের সমপরিমাণ) দেওয়া হয়। অস্থায়ী শ্রমিকদেরও বিভিন্ন সময় জনপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা বোনাস দেওয়া হয়।
বাপেক্সের নথি থেকে জানা যায়, সম্মানী ভাতা নেওয়া হয়েছে তিতাস ১ ও ২ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজের জন্য। এই দুই কূপের কাজে কর্মকর্তারা সম্মানী বাবদ পেয়েছেন ১ কোটি ৪৩ লাখ ১২ হাজার ৭৩৪ টাকা। কর্মচারীরা পেয়েছেন ৬২ লাখ ২১ হাজার ৯১০ টাকা। ২১৩ জন অস্থায়ী শ্রমিককে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা হিসাবে মোট ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনমতে, শ্রীকাইল ৪ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজ করার জন্য বাপেক্সের সব নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বিশেষ বোনাস ও সম্মানী ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়। এক বছরে শুধু কর্মকর্তাদের বাড়তি দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। কর্মচারীদের দেওয়া হয়েছে ৬৯ লাখ ১৩ হাজার ২৮০ টাকা।
তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ১০ ও ৫ নম্বর কূপে একই কাজের জন্য কর্মকর্তাদের বাড়তি দেওয়া হয় ১ কোটি ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭৩ টাকা। কর্মচারীদের দেওয়া হয় ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ৩৫০ টাকা। ২০৮ জন অস্থায়ী শ্রমিককে ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা বাড়তি দেওয়া হয়।
শাহবাজপুর ৪ নম্বর কূপে একই কাজে কর্মকর্তাদের বাড়তি দেওয়া হয় ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার ৪৩৮ টাকা। কর্মচারীদের দেওয়া হয় ৬৫ লাখ ৬০ হাজার ৫৬০ টাকা। জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা হিসাবে ১০৫ জন অস্থায়ী শ্রমিককে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাড়তি দেওয়া হয়।
ওয়ার্কওভার কাজে জড়িত না থেকেও কেন সম্মানী ভাতার নামে বিশেষ বোনাস নিয়েছেন জানতে চাইলে হিসাব ও অর্থ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এস এম তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই ওয়ার্কওভার কাজ করার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন থেকে কেনাকাটার সঙ্গে জড়িত থাকি। তা ছাড়া এই কাজে অনেকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। এ জন্য সবাইকে সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়েছে।’
বাসাবাড়ির পানি-বিদ্যুতের বিল
বাপেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাসায় ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও পানির বিলও সরকারি কোষাগার থেকে নিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদ খরচ হয় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬ হাজার ১৪ টাকা। এর মধ্যে শুধু কর্মকর্তারাই নিয়েছেন ১ কোটি ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫২ টাকা।
ওই অর্থবছরে বাপেক্স মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে দিয়েছে ৪০০ ইউনিট বিদ্যুৎ এবং ২০০ ইউনিট পানির বিল, উপমহাব্যবস্থাপকদের ৩৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ এবং ১৫০ ইউনিট পানির বিল, ব্যবস্থাপকদের ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ এবং ১০০ ইউনিট পানির বিল, উপব্যবস্থাপকদের ২৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ এবং ১০০ ইউনিট পানির বিল, সহকারী ব্যবস্থাপকদের ২৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ ও ১০০ ইউনিট পানির বিল, সহকারী অফিসারদের ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ও ১০০ ইউনিট পানির বিল এবং অন্যান্য কর্মচারীকে মাসিক ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ এবং মাসিক ১০০ ইউনিট পানির বিল।
এ বিষয়ে দশম জাতীয় সংসদে সরকারি হিসাবসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে বলা হয়, বাপেক্সের জন্য প্রচলিত প্রান্তিক সুবিধার যে তালিকা আছে, সেখানে এই সুবিধা দেওয়া নেই।
পানি ও বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে অডিট আপত্তির জবাবে বাপেক্স বলেছে, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বাপেক্সের বেতনকাঠামো ও প্রান্তিক সুবিধা অনেক কম। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসাহিত করার জন্য পদবি অনুযায়ী নির্ধারিত হারে বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাপেক্স নিয়মিত কাজ করেও যে বিশেষ বোনাস এবং বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত পানির জন্য যে বিল নিয়েছে, সেটা স্পষ্টতই অনৈতিক, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জনগণের অর্থের অপচয়।
তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডে (বাপেক্স) বিশেষ বোনাসের নামে সরকারি অর্থ ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়। এমনকি ওয়ার্কওভারের (পুরোনো কূপ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ) মতো নিয়মিত কাজের জন্যও এই সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশেষ বোনাস নিয়েছেন। অথচ এটি সরকারের একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান।
বাপেক্সের অন্তত তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরোনো গ্যাসকূপে ওয়ার্কওভারের মূল কাজ করেন খনন বিভাগের লোকজন। ওই কাজে সহায়তা লাগে প্রকৌশল বিভাগের কিছু লোকবলের। পাশাপাশি দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করেন আরও অর্ধশত অস্থায়ী শ্রমিক। কিন্তু বিশেষ বোনাস দেওয়া হয়েছে বাপেক্সের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। আর অস্থায়ী শ্রমিকদের হাজিরাও প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে বেশি দেখানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আলমগীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওয়ার্কওভার কাজে নেতৃত্ব দেন মূলত খনন বিভাগের লোকজন। এর বাইরে আমরা যাঁরা অন্যান্য বিভাগে কাজ করি, তাঁরা মাঝেমধ্যে সাইটে যাই। একটা পুরোনো কূপে ওয়ার্কওভার কাজ করতে সব মিলিয়ে ৬০-৭০ জনের লোকবল দরকার হয়। কিন্তু বিশেষ বোনাস দেওয়া হয়েছে ৩৬০ জনের বেশি স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।’
বাপেক্সের তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, ওয়ার্কওভার কাজের জন্য কোনো কোনো কূপে অস্থায়ী শ্রমিক দেখানো হয়েছে ১০৫-২১৩ জন।
ওয়ার্কওভার কাজে সবার সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও সবাইকে বিশেষ বোনাস দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেকোনো অর্জনই কোম্পানির অর্জন হিসেবে ধরা হয়। এ জন্য কোম্পানির সবাইকে বিশেষ বোনাস দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বোনাস দেওয়ার প্রচলন আগে থেকেই আছে।
জানা যায়, ওয়ার্কওভারের মতো নিয়মিত কাজ করে বিশেষ বোনাস নেওয়া ছাড়াও টাকার ভাগ পেতে অনিয়মিত শ্রমিক বেশি দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদও অর্থ নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত না থাকা লোকজনকেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ বোনাস। সরকারি এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়ের অধীন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ অডিট অধিপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাপেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা খাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ১০ কোটি ২০ লাখ ১ হাজার ৯৭৯ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে নিয়েছেন। বাপেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওই টাকা ফেরত দিতে বলেছে সিএজি কার্যালয়। এই টাকা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ও। নিরীক্ষাকালে বাপেক্সের বিভিন্ন রেজিস্টার ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করা হয়। চলতি বছর এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বিশেষ বোনাস এবং বিদ্যুৎ ও পানির বিলের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছে, ওয়ার্কওভার বাপেক্সের নিয়মিত কাজ। এই কাজের জন্য সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্মানী বা বিশেষ বোনাস পেতে পারেন না।
অডিট আপত্তির ব্যাপারে বাপেক্স জানিয়েছে, পুরোনো কূপে ওয়ার্কওভার কাজ ‘সফলভাবে’ সম্পন্ন করায় এবং আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে বাপেক্সের লোকবলের বেতন কম হওয়ায় কর্মীদের ‘উৎসাহ ও প্রণোদিত’ করতে এই বোনাস দেওয়া হয়েছে।
বাপেক্সের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, যে বছর বিশেষ বোনাস ও বাসাবাড়ির পানি-বিদ্যুতের বিল দেওয়া হয়েছে, সে বছর (২০১৬-১৭) বাপেক্সের নিট লোকসান হয় ২৬৩ কোটি ৩২ লাখ ৯২ হাজার ২৯ টাকা।
এক বছরে চারবার বিশেষ বোনাস
বাপেক্সের হিসাব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শ্রীকাইল ৪, তিতাস ১, ২, ৫, ১০ এবং শাহবাজপুর ৪ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজ পরিচালনার জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চারবার বিশেষ বোনাস (মূল বেতনের সমপরিমাণ) দেওয়া হয়। অস্থায়ী শ্রমিকদেরও বিভিন্ন সময় জনপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা বোনাস দেওয়া হয়।
বাপেক্সের নথি থেকে জানা যায়, সম্মানী ভাতা নেওয়া হয়েছে তিতাস ১ ও ২ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজের জন্য। এই দুই কূপের কাজে কর্মকর্তারা সম্মানী বাবদ পেয়েছেন ১ কোটি ৪৩ লাখ ১২ হাজার ৭৩৪ টাকা। কর্মচারীরা পেয়েছেন ৬২ লাখ ২১ হাজার ৯১০ টাকা। ২১৩ জন অস্থায়ী শ্রমিককে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা হিসাবে মোট ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনমতে, শ্রীকাইল ৪ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজ করার জন্য বাপেক্সের সব নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বিশেষ বোনাস ও সম্মানী ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়। এক বছরে শুধু কর্মকর্তাদের বাড়তি দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। কর্মচারীদের দেওয়া হয়েছে ৬৯ লাখ ১৩ হাজার ২৮০ টাকা।
তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ১০ ও ৫ নম্বর কূপে একই কাজের জন্য কর্মকর্তাদের বাড়তি দেওয়া হয় ১ কোটি ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭৩ টাকা। কর্মচারীদের দেওয়া হয় ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ৩৫০ টাকা। ২০৮ জন অস্থায়ী শ্রমিককে ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা বাড়তি দেওয়া হয়।
শাহবাজপুর ৪ নম্বর কূপে একই কাজে কর্মকর্তাদের বাড়তি দেওয়া হয় ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার ৪৩৮ টাকা। কর্মচারীদের দেওয়া হয় ৬৫ লাখ ৬০ হাজার ৫৬০ টাকা। জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা হিসাবে ১০৫ জন অস্থায়ী শ্রমিককে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাড়তি দেওয়া হয়।
ওয়ার্কওভার কাজে জড়িত না থেকেও কেন সম্মানী ভাতার নামে বিশেষ বোনাস নিয়েছেন জানতে চাইলে হিসাব ও অর্থ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এস এম তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই ওয়ার্কওভার কাজ করার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন থেকে কেনাকাটার সঙ্গে জড়িত থাকি। তা ছাড়া এই কাজে অনেকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। এ জন্য সবাইকে সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়েছে।’
বাসাবাড়ির পানি-বিদ্যুতের বিল
বাপেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাসায় ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও পানির বিলও সরকারি কোষাগার থেকে নিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদ খরচ হয় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬ হাজার ১৪ টাকা। এর মধ্যে শুধু কর্মকর্তারাই নিয়েছেন ১ কোটি ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫২ টাকা।
ওই অর্থবছরে বাপেক্স মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে দিয়েছে ৪০০ ইউনিট বিদ্যুৎ এবং ২০০ ইউনিট পানির বিল, উপমহাব্যবস্থাপকদের ৩৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ এবং ১৫০ ইউনিট পানির বিল, ব্যবস্থাপকদের ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ এবং ১০০ ইউনিট পানির বিল, উপব্যবস্থাপকদের ২৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ এবং ১০০ ইউনিট পানির বিল, সহকারী ব্যবস্থাপকদের ২৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ ও ১০০ ইউনিট পানির বিল, সহকারী অফিসারদের ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ও ১০০ ইউনিট পানির বিল এবং অন্যান্য কর্মচারীকে মাসিক ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ এবং মাসিক ১০০ ইউনিট পানির বিল।
এ বিষয়ে দশম জাতীয় সংসদে সরকারি হিসাবসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে বলা হয়, বাপেক্সের জন্য প্রচলিত প্রান্তিক সুবিধার যে তালিকা আছে, সেখানে এই সুবিধা দেওয়া নেই।
পানি ও বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে অডিট আপত্তির জবাবে বাপেক্স বলেছে, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বাপেক্সের বেতনকাঠামো ও প্রান্তিক সুবিধা অনেক কম। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসাহিত করার জন্য পদবি অনুযায়ী নির্ধারিত হারে বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাপেক্স নিয়মিত কাজ করেও যে বিশেষ বোনাস এবং বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত পানির জন্য যে বিল নিয়েছে, সেটা স্পষ্টতই অনৈতিক, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জনগণের অর্থের অপচয়।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে