আজাদুর রহমান চন্দন
‘আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে দেশে আলোচনা-বিতর্ক চলছে তিন-সাড়ে তিন দশক ধরে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর বিতর্কটি নতুন মাত্রা পায়। ওই সংশোধনীতে বাঙালি ছাড়া দেশের অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষের পরিচয় যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা মনঃপূত হয়নি অনেকেরই। ওই সব জাতিসত্তার মানুষেরা বেশ কয়েক বছর যাবৎ নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি করে আসছেন। দেশের বামপন্থী দলগুলোরও সমর্থন আছে ওই দাবির প্রতি। কিন্তু ‘আদিবাসী’ শব্দে আপত্তি সরকারের, এমনকি সচেতন অনেক নাগরিকেরও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগস্টের প্রথম দিকে এই বিতর্ক চাঙা হয়। কারণ ৯ আগস্ট ইন্টারন্যাশনাল ডে অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ইন্ডিজেনাস পিপলস বা আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ‘নাগরিকত্ব’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।’ ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ শুরু থেকেই বলে আসছি, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার ভুল করল। দেশের সব মানুষকে ‘জাতি হিসেবে বাঙালি’ বানাতে যাওয়া ঠিক হয়নি। আবার বাঙালি ছাড়া দেশের অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষের ‘আদিবাসী’ বলাটাও বাস্তবসম্মত নয়। এতে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর ক্ষুদ্র জাতিসত্তার খবরদারি কায়েম হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ‘আদিবাসী’ বা ‘ক্ষুদ্র জাতি’ এসব না বলে সরাসরি তাদের জাতি পরিচয় যেমন গারো, হাজং, চাকমা, মারমা ইত্যাদি বলা যায় কিংবা সবাইকে একসঙ্গে বোঝানোর বেলায় ‘অন্যান্য জাতিসত্তা’ কিংবা ভারতের মতো ‘জনজাতি’ বলা যায়। ২০১১ সালের ২৭ জুন এক অনুষ্ঠানে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ও বলেছিলেন, ভারতের সংবিধানে অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর অর্থে ‘তফসিলি জাতি’ ও ‘জনজাতি’ উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশেও সেটি করা যেতে পারে।
‘ইন্ডিজেনাস পিপলস’ বিষয়ে জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার হোসে মার্টিনেজ কোবোর যে সংজ্ঞাটি জাতিসংঘের
এ-সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ (ডব্লিউজিআইপি) ১৯৮২ সালে প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেছিল, সেটি দফায় দফায় পরিবর্তন করা
হয় বিতর্কের মুখে। তাতেও সুরাহা না হওয়ায় ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর’ অধিকারসংক্রান্ত ঘোষণার খসড়া প্রণয়নকালে তাতে কোনো সংজ্ঞাই রাখা হয়নি। অন্যদিকে ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১৬৯ নম্বর কনভেনশনে ‘আদিবাসী’ বলতে ‘স্বাধীন দেশগুলোর সেই সব জাতি’কে বোঝানো হয়েছে, যারা দেশটিতে রাজ্য বিজয়, কিংবা উপনিবেশ স্থাপন, কিংবা বর্তমান রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্ধারণকাল থেকে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর বংশধর, যারা তাদের আইনসংগত মর্যাদানির্বিশেষে নিজেদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর অংশবিশেষ বা সম্পূর্ণ লালন করে চলেছে।
এই একই যুক্তি বাংলাদেশের অবাঙালি জাতিসত্তার মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। বাঙালিরা বাইরে থেকে এসে বাংলাদেশ দখল করেনি; বরং উন্মুক্ত এই ভূখণ্ডে বিভিন্ন জাতির আগমনে ধীরে ধীরে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশ ঘটে। বাঙালিরা কখনোই এই ভূখণ্ড চাকমা, ত্রিপুরা, হাজং, সাঁওতালদের কাছ থেকে দখল করে রাজত্ব কায়েম করেনি। পাহাড়ে বাঙালিদের ইতিহাসের তুলনায় চাকমাসহ অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ইতিহাস বেশি প্রাচীন। সে ক্ষেত্রে পাহাড়ে তারাই আদিবাসী। কিন্তু এই পাহাড়িরা তো পাহাড়ের আদিবাসী হিসেবে নিজেদের দাবি করছে না। তারা দাবি করছে, বাংলাদেশের সংবিধানে ‘আদিবাসী’ হিসেবে নিজেদের পরিচয় অন্তর্ভুক্ত করতে। অথচ ‘আদিবাসী’ কোনো একটি অঞ্চলের হয় না, আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আদিবাসী বলতে বোঝায় কোনো রাষ্ট্রের প্রথম জনগোষ্ঠীকে। এখন যদি সংবিধান ও রাষ্ট্র পাহাড়ি ও সমতলের কিছু অবাঙালি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকার করে নেয়, তাহলে অনাবশ্যক জটিলতা দেখা দেবে। আর যদি ‘আঞ্চলিক আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হয়, তাহলে এ রকম আরও নতুন আদিবাসীর দাবি উঠবে। ‘ঢাকাইয়া’ নামে পরিচিত পুরান ঢাকার লোকজনও নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করতে পারবে।
দেশের অবাঙালি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ সুধীসমাজের কিছু সদস্য ও এনজিওরা আদিবাসী নিয়ে নানা কথা বললেও, আইএলও কনভেনশন ১৬৯-এর জটিলতার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে না কোথাও। কিন্তু আদিবাসী হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেওয়াটা শুধু একটি শব্দগত স্বীকৃতির বিষয় নয়, এর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া আছে। রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে আলাদাভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে, আইএলও কনভেনশন ১৬৯ মানার নৈতিক দায়িত্ব বর্তাবে বাংলাদেশের ওপর। যৌক্তিক কারণেই বাংলাদেশসহ অনেক দেশ এই কনভেনশনে সই করেনি এখনো।
বাঙালির ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের। বাংলাদেশে চার হাজার বছরের বেশি প্রাচীন তাম্র যুগের সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। অনেকে মনে করেন, বঙ্গ বা বাংলা নামটি এসে থাকতে পারে দ্রাবিড় ভাষী বং নামের একটি গোষ্ঠী থেকে, যারা এই অঞ্চলে আনুমানিক এক হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসবাস করত। প্রাচীন বাংলার রাজধানী পুণ্ড্রবর্ধনপুর, পাহাড়পুর, জগদল বিহারসহ অঙ্গ, বঙ্গ, কুলিঙ্গ, রাঢ়, বরেন্দ্র, গৌড় ইত্যাদি অঞ্চলে বসবাসরত প্রাচীন জনগোষ্ঠীকে এ দেশে আসা আর্যরা ‘অনার্য’ নামে অভিহিত করে। প্রাচীনকালের পরিব্রাজকদের কাছে এরাই ‘পাখির মতো কিচিরমিচির ভাষায় কথা বলা’ জনগোষ্ঠী। এরাই এ দেশের মূল বাসিন্দা। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১টি অবাঙালি জাতিসত্তা মঙ্গোলয়েড নরগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ ওই সব জাতিসত্তার আগমন আরাকান, ত্রিপুরা, মিজোরাম ইত্যাদি অঞ্চল থেকে। সাঁওতালসহ অনেক গোষ্ঠী এ দেশে এসেছে সাঁওতাল বিদ্রোহের পর। অনেকে এসেছে ব্রিটিশ আমলে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে।
এ দেশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আজীবন সোচ্চার ছিলেন প্রয়াত মানবেন্দ্র লারমা। তিনিও কিন্তু ‘আদিবাসী’ হিসেবে অধিকার দাবি করেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি পাহাড়ের ১১টি জাতিগোষ্ঠীর জন্য ‘জুম্ম জাতির’ রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন এবং জুম্ম জাতির স্বীকৃতি আদায়ের জন্যই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন পরিচালনা করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি উঠে আসছে মূলত এনজিওর সুবাদে। কারণ এর সঙ্গে বিদেশি অনুদান জড়িত। তাই সংশ্লিষ্ট এনজিও-লর্ডদের স্বার্থটা বুঝতে কষ্ট হয় না। কিন্তু সংবিধানে ‘ক্ষুদ্র’, ‘উপ’ ইত্যাদি শব্দ বাদ দিয়ে ‘অন্যান্য জাতিসত্তা’ বা ‘জনজাতি’ প্রয়োগ করে সহজ সমাধানের দিকে না গিয়ে বিতর্কটি জিইয়ে রেখে সরকারের কী লাভ হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
‘আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে দেশে আলোচনা-বিতর্ক চলছে তিন-সাড়ে তিন দশক ধরে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর বিতর্কটি নতুন মাত্রা পায়। ওই সংশোধনীতে বাঙালি ছাড়া দেশের অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষের পরিচয় যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা মনঃপূত হয়নি অনেকেরই। ওই সব জাতিসত্তার মানুষেরা বেশ কয়েক বছর যাবৎ নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি করে আসছেন। দেশের বামপন্থী দলগুলোরও সমর্থন আছে ওই দাবির প্রতি। কিন্তু ‘আদিবাসী’ শব্দে আপত্তি সরকারের, এমনকি সচেতন অনেক নাগরিকেরও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগস্টের প্রথম দিকে এই বিতর্ক চাঙা হয়। কারণ ৯ আগস্ট ইন্টারন্যাশনাল ডে অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ইন্ডিজেনাস পিপলস বা আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ‘নাগরিকত্ব’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।’ ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ শুরু থেকেই বলে আসছি, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার ভুল করল। দেশের সব মানুষকে ‘জাতি হিসেবে বাঙালি’ বানাতে যাওয়া ঠিক হয়নি। আবার বাঙালি ছাড়া দেশের অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষের ‘আদিবাসী’ বলাটাও বাস্তবসম্মত নয়। এতে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর ক্ষুদ্র জাতিসত্তার খবরদারি কায়েম হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ‘আদিবাসী’ বা ‘ক্ষুদ্র জাতি’ এসব না বলে সরাসরি তাদের জাতি পরিচয় যেমন গারো, হাজং, চাকমা, মারমা ইত্যাদি বলা যায় কিংবা সবাইকে একসঙ্গে বোঝানোর বেলায় ‘অন্যান্য জাতিসত্তা’ কিংবা ভারতের মতো ‘জনজাতি’ বলা যায়। ২০১১ সালের ২৭ জুন এক অনুষ্ঠানে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ও বলেছিলেন, ভারতের সংবিধানে অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর অর্থে ‘তফসিলি জাতি’ ও ‘জনজাতি’ উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশেও সেটি করা যেতে পারে।
‘ইন্ডিজেনাস পিপলস’ বিষয়ে জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার হোসে মার্টিনেজ কোবোর যে সংজ্ঞাটি জাতিসংঘের
এ-সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ (ডব্লিউজিআইপি) ১৯৮২ সালে প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেছিল, সেটি দফায় দফায় পরিবর্তন করা
হয় বিতর্কের মুখে। তাতেও সুরাহা না হওয়ায় ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর’ অধিকারসংক্রান্ত ঘোষণার খসড়া প্রণয়নকালে তাতে কোনো সংজ্ঞাই রাখা হয়নি। অন্যদিকে ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১৬৯ নম্বর কনভেনশনে ‘আদিবাসী’ বলতে ‘স্বাধীন দেশগুলোর সেই সব জাতি’কে বোঝানো হয়েছে, যারা দেশটিতে রাজ্য বিজয়, কিংবা উপনিবেশ স্থাপন, কিংবা বর্তমান রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্ধারণকাল থেকে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর বংশধর, যারা তাদের আইনসংগত মর্যাদানির্বিশেষে নিজেদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর অংশবিশেষ বা সম্পূর্ণ লালন করে চলেছে।
এই একই যুক্তি বাংলাদেশের অবাঙালি জাতিসত্তার মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। বাঙালিরা বাইরে থেকে এসে বাংলাদেশ দখল করেনি; বরং উন্মুক্ত এই ভূখণ্ডে বিভিন্ন জাতির আগমনে ধীরে ধীরে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশ ঘটে। বাঙালিরা কখনোই এই ভূখণ্ড চাকমা, ত্রিপুরা, হাজং, সাঁওতালদের কাছ থেকে দখল করে রাজত্ব কায়েম করেনি। পাহাড়ে বাঙালিদের ইতিহাসের তুলনায় চাকমাসহ অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ইতিহাস বেশি প্রাচীন। সে ক্ষেত্রে পাহাড়ে তারাই আদিবাসী। কিন্তু এই পাহাড়িরা তো পাহাড়ের আদিবাসী হিসেবে নিজেদের দাবি করছে না। তারা দাবি করছে, বাংলাদেশের সংবিধানে ‘আদিবাসী’ হিসেবে নিজেদের পরিচয় অন্তর্ভুক্ত করতে। অথচ ‘আদিবাসী’ কোনো একটি অঞ্চলের হয় না, আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আদিবাসী বলতে বোঝায় কোনো রাষ্ট্রের প্রথম জনগোষ্ঠীকে। এখন যদি সংবিধান ও রাষ্ট্র পাহাড়ি ও সমতলের কিছু অবাঙালি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকার করে নেয়, তাহলে অনাবশ্যক জটিলতা দেখা দেবে। আর যদি ‘আঞ্চলিক আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হয়, তাহলে এ রকম আরও নতুন আদিবাসীর দাবি উঠবে। ‘ঢাকাইয়া’ নামে পরিচিত পুরান ঢাকার লোকজনও নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করতে পারবে।
দেশের অবাঙালি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ সুধীসমাজের কিছু সদস্য ও এনজিওরা আদিবাসী নিয়ে নানা কথা বললেও, আইএলও কনভেনশন ১৬৯-এর জটিলতার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে না কোথাও। কিন্তু আদিবাসী হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেওয়াটা শুধু একটি শব্দগত স্বীকৃতির বিষয় নয়, এর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া আছে। রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে আলাদাভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে, আইএলও কনভেনশন ১৬৯ মানার নৈতিক দায়িত্ব বর্তাবে বাংলাদেশের ওপর। যৌক্তিক কারণেই বাংলাদেশসহ অনেক দেশ এই কনভেনশনে সই করেনি এখনো।
বাঙালির ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের। বাংলাদেশে চার হাজার বছরের বেশি প্রাচীন তাম্র যুগের সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। অনেকে মনে করেন, বঙ্গ বা বাংলা নামটি এসে থাকতে পারে দ্রাবিড় ভাষী বং নামের একটি গোষ্ঠী থেকে, যারা এই অঞ্চলে আনুমানিক এক হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসবাস করত। প্রাচীন বাংলার রাজধানী পুণ্ড্রবর্ধনপুর, পাহাড়পুর, জগদল বিহারসহ অঙ্গ, বঙ্গ, কুলিঙ্গ, রাঢ়, বরেন্দ্র, গৌড় ইত্যাদি অঞ্চলে বসবাসরত প্রাচীন জনগোষ্ঠীকে এ দেশে আসা আর্যরা ‘অনার্য’ নামে অভিহিত করে। প্রাচীনকালের পরিব্রাজকদের কাছে এরাই ‘পাখির মতো কিচিরমিচির ভাষায় কথা বলা’ জনগোষ্ঠী। এরাই এ দেশের মূল বাসিন্দা। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১টি অবাঙালি জাতিসত্তা মঙ্গোলয়েড নরগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ ওই সব জাতিসত্তার আগমন আরাকান, ত্রিপুরা, মিজোরাম ইত্যাদি অঞ্চল থেকে। সাঁওতালসহ অনেক গোষ্ঠী এ দেশে এসেছে সাঁওতাল বিদ্রোহের পর। অনেকে এসেছে ব্রিটিশ আমলে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে।
এ দেশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আজীবন সোচ্চার ছিলেন প্রয়াত মানবেন্দ্র লারমা। তিনিও কিন্তু ‘আদিবাসী’ হিসেবে অধিকার দাবি করেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি পাহাড়ের ১১টি জাতিগোষ্ঠীর জন্য ‘জুম্ম জাতির’ রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন এবং জুম্ম জাতির স্বীকৃতি আদায়ের জন্যই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন পরিচালনা করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি উঠে আসছে মূলত এনজিওর সুবাদে। কারণ এর সঙ্গে বিদেশি অনুদান জড়িত। তাই সংশ্লিষ্ট এনজিও-লর্ডদের স্বার্থটা বুঝতে কষ্ট হয় না। কিন্তু সংবিধানে ‘ক্ষুদ্র’, ‘উপ’ ইত্যাদি শব্দ বাদ দিয়ে ‘অন্যান্য জাতিসত্তা’ বা ‘জনজাতি’ প্রয়োগ করে সহজ সমাধানের দিকে না গিয়ে বিতর্কটি জিইয়ে রেখে সরকারের কী লাভ হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে