ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র
জলজ প্রাণী বলতে সেসব প্রাণীকেই বোঝায় যারা মেরুদণ্ডী বা অমেরুদণ্ডী, জীবনচক্রের সমস্ত বা বেশির ভাগ সময় জলে কাটায়। জলজ প্রাণীরা সাধারণত ফুলকা বা ত্বকের মাধ্যমে শ্বাসকার্য চালায়। মোট প্রাণী প্রজাতির ৪০ ভাগের আশ্রয়স্থল জলাভূমি। প্রতিনিয়ত এসব জায়গা থেকে নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের বিশাল বড় একটা প্রাণী প্রজাতি জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল।
প্রায় ৬৪ প্রজাতির উভচর তো বটেই, ৮৩ প্রজাতির সৈকত পাখি, ৩০ প্রজাতির বুনোহাঁস, ৮ প্রজাতির শামুকখোল, ১৮ প্রজাতির বগলাসহ অসংখ্য প্রজাতি জলাভূমির ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। এ ছাড়া প্রতিবছর শীতের সময় বিপুলসংখ্যক পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে, যাদের আবাসস্থল ও খাবার দুটোই জলাভূমিকে কেন্দ্র করে।
বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী জলাভূমি বলতে বোঝায় স্যাঁতসেঁতে জলনিমগ্ন ভূমি, যার পানি মিঠা বা নোনা হতে পারে, তা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম হতে পারে এবং স্রোতহীন বা ৬ মিটার গভীর হতে পারে। রামসার কনভেনশন অনুযায়ী জলাভূমি বলতে প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট, স্থায়ী বা অস্থায়ী, স্থির বা প্রবহমান পানিরাশিবিশিষ্ট স্বাদু, লবণাক্ত বা মিশ্র পানির এলাকা বোঝায়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের জলাভূমি গত ৫০ বছরে ৭০ ভাগ কমে গেছে। ১৯৭১ সালে জলাভূমির পরিমাণ ছিল ৯৩ লাখ হেক্টর, তা কমে এখন হয়েছে ২৮ লাখ হেক্টরে। অর্থাৎ ৬৫ লাখ হেক্টর জলাভূমি কমেছে।
বিশ্বের দিকে তাকালেও এমন চিত্র চোখে পড়বে। বিশ্বের মোট জলাভূমির প্রায় ৯০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়েছে। বাকি জলাশয়গুলোও হুমকির মুখে রয়েছে। নদী কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট নদ-নদীর সংখ্যা ১ হাজার ৮টি। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী প্রবহমান নদীর সংখ্যা ৯৩১টি। ৩০৮টি নদী নাব্যতা হারিয়েছে।
৩০৮টি নদীর মধ্যে ঢাকা বিভাগে নাব্যতা হারানো নদীর সংখ্যা ৮৫টি, রংপুরে ৭১টি, রাজশাহীতে ১৮টি, চট্টগ্রামে ১১টি, সিলেটে ১০টি ও ময়মনসিংহে ২৬টি এবং খুলনা বিভাগে ৮৭টি। বাংলাদেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমি নদী।উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। আর দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে নদীগুলো স্রোতহীন হয়ে পড়েছে। পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জলজ জীববৈচিত্র্য এখন মারাত্মক হুমকির মধ্যে।
২০২২ সালে আরডিআরসির দেওয়া তথ্য মতে, বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ গড়ে লিটারপ্রতি ২ মিলিগ্রামের নিচে। এর অর্থ হচ্ছে, পানিতে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী বাঁচার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ থাকতে হয় লিটারপ্রতি ৪ মিলিগ্রাম। বুড়িগঙ্গা নদীর জলজ প্রাণীর অবস্থা বুঝতে বোধকরি আর কোনো তথ্যের প্রয়োজন নেই।
তারা মোট ৫৬টি নদী নিয়ে গবেষণা করেছিল। ৫৬টি নদীর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৯টি নদীর অবস্থা খুবই ভয়াবহ দেখা গেছে। ঢাকা বিভাগের ১৯টি নদীই মারাত্মক দূষণের সম্মুখীন। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) তথ্য মতে, বুড়িগঙ্গা নদীর পানি প্রায় অক্সিজেনশূন্য। লিটারে তারা অক্সিজেনের মাত্রা পেয়েছে মাত্র ০.৬ মিলিগ্রাম।
শুধু নদী নয়, বঙ্গোপসাগরও দূষণের কবলে। কুয়াকাটা পটনকেন্দ্রের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে জলজ স্তন্যপ্রাণী মরে ভেসে ওঠে। ২০২০ সালে সৈকতের ১৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাঁচ-ছয়টি তিমি ও শুশুক মরে পড়ে থাকে। পটকাসহ বিভিন্ন মাছও মরে পচে থাকতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি জাহাজের পোড়া মোবিল সাগর দূষিত করছে। এসব মোবিল বা তেল পানিতে মিশে সাগরের পানি দূষিত করছে। এতে সাগরের জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। ভেঙে পড়ে সাগরের জলজ বাস্তুতন্ত্র।
বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে জলাশয় হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলো: শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, নদী-জলাশয়-লেক-জলাভূমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ, জলাশয়ে পয়ঃপ্রণালি স্থাপন, বিভিন্ন তরল ও কঠিন বর্জ্য নির্গমন, বালু-পাথর আহরণ ইত্যাদি। এ ছাড়া ঝিনুক, কোরাল, মাছ, কচ্ছপ প্রভৃতি ধরা-মারাও জলাশয়ের ওপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করছে। এসব জলজ প্রাণী বাঁচাতে আমাদের এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে। করতে হবে দূষণমুক্ত।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক
জলজ প্রাণী বলতে সেসব প্রাণীকেই বোঝায় যারা মেরুদণ্ডী বা অমেরুদণ্ডী, জীবনচক্রের সমস্ত বা বেশির ভাগ সময় জলে কাটায়। জলজ প্রাণীরা সাধারণত ফুলকা বা ত্বকের মাধ্যমে শ্বাসকার্য চালায়। মোট প্রাণী প্রজাতির ৪০ ভাগের আশ্রয়স্থল জলাভূমি। প্রতিনিয়ত এসব জায়গা থেকে নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের বিশাল বড় একটা প্রাণী প্রজাতি জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল।
প্রায় ৬৪ প্রজাতির উভচর তো বটেই, ৮৩ প্রজাতির সৈকত পাখি, ৩০ প্রজাতির বুনোহাঁস, ৮ প্রজাতির শামুকখোল, ১৮ প্রজাতির বগলাসহ অসংখ্য প্রজাতি জলাভূমির ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। এ ছাড়া প্রতিবছর শীতের সময় বিপুলসংখ্যক পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে, যাদের আবাসস্থল ও খাবার দুটোই জলাভূমিকে কেন্দ্র করে।
বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী জলাভূমি বলতে বোঝায় স্যাঁতসেঁতে জলনিমগ্ন ভূমি, যার পানি মিঠা বা নোনা হতে পারে, তা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম হতে পারে এবং স্রোতহীন বা ৬ মিটার গভীর হতে পারে। রামসার কনভেনশন অনুযায়ী জলাভূমি বলতে প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট, স্থায়ী বা অস্থায়ী, স্থির বা প্রবহমান পানিরাশিবিশিষ্ট স্বাদু, লবণাক্ত বা মিশ্র পানির এলাকা বোঝায়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের জলাভূমি গত ৫০ বছরে ৭০ ভাগ কমে গেছে। ১৯৭১ সালে জলাভূমির পরিমাণ ছিল ৯৩ লাখ হেক্টর, তা কমে এখন হয়েছে ২৮ লাখ হেক্টরে। অর্থাৎ ৬৫ লাখ হেক্টর জলাভূমি কমেছে।
বিশ্বের দিকে তাকালেও এমন চিত্র চোখে পড়বে। বিশ্বের মোট জলাভূমির প্রায় ৯০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়েছে। বাকি জলাশয়গুলোও হুমকির মুখে রয়েছে। নদী কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট নদ-নদীর সংখ্যা ১ হাজার ৮টি। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী প্রবহমান নদীর সংখ্যা ৯৩১টি। ৩০৮টি নদী নাব্যতা হারিয়েছে।
৩০৮টি নদীর মধ্যে ঢাকা বিভাগে নাব্যতা হারানো নদীর সংখ্যা ৮৫টি, রংপুরে ৭১টি, রাজশাহীতে ১৮টি, চট্টগ্রামে ১১টি, সিলেটে ১০টি ও ময়মনসিংহে ২৬টি এবং খুলনা বিভাগে ৮৭টি। বাংলাদেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমি নদী।উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। আর দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে নদীগুলো স্রোতহীন হয়ে পড়েছে। পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জলজ জীববৈচিত্র্য এখন মারাত্মক হুমকির মধ্যে।
২০২২ সালে আরডিআরসির দেওয়া তথ্য মতে, বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ গড়ে লিটারপ্রতি ২ মিলিগ্রামের নিচে। এর অর্থ হচ্ছে, পানিতে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী বাঁচার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ থাকতে হয় লিটারপ্রতি ৪ মিলিগ্রাম। বুড়িগঙ্গা নদীর জলজ প্রাণীর অবস্থা বুঝতে বোধকরি আর কোনো তথ্যের প্রয়োজন নেই।
তারা মোট ৫৬টি নদী নিয়ে গবেষণা করেছিল। ৫৬টি নদীর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৯টি নদীর অবস্থা খুবই ভয়াবহ দেখা গেছে। ঢাকা বিভাগের ১৯টি নদীই মারাত্মক দূষণের সম্মুখীন। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) তথ্য মতে, বুড়িগঙ্গা নদীর পানি প্রায় অক্সিজেনশূন্য। লিটারে তারা অক্সিজেনের মাত্রা পেয়েছে মাত্র ০.৬ মিলিগ্রাম।
শুধু নদী নয়, বঙ্গোপসাগরও দূষণের কবলে। কুয়াকাটা পটনকেন্দ্রের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে জলজ স্তন্যপ্রাণী মরে ভেসে ওঠে। ২০২০ সালে সৈকতের ১৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাঁচ-ছয়টি তিমি ও শুশুক মরে পড়ে থাকে। পটকাসহ বিভিন্ন মাছও মরে পচে থাকতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি জাহাজের পোড়া মোবিল সাগর দূষিত করছে। এসব মোবিল বা তেল পানিতে মিশে সাগরের পানি দূষিত করছে। এতে সাগরের জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। ভেঙে পড়ে সাগরের জলজ বাস্তুতন্ত্র।
বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে জলাশয় হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলো: শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, নদী-জলাশয়-লেক-জলাভূমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ, জলাশয়ে পয়ঃপ্রণালি স্থাপন, বিভিন্ন তরল ও কঠিন বর্জ্য নির্গমন, বালু-পাথর আহরণ ইত্যাদি। এ ছাড়া ঝিনুক, কোরাল, মাছ, কচ্ছপ প্রভৃতি ধরা-মারাও জলাশয়ের ওপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করছে। এসব জলজ প্রাণী বাঁচাতে আমাদের এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে। করতে হবে দূষণমুক্ত।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে