আহমদ ইবসাইস
সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত এক বছরে, ইসরায়েলের গণহত্যায় গাজায় প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তবে ধারণা করা হয়, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। গাজার পাশাপাশি ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী পশ্চিম তীরেও বারবার রক্তাক্ত হামলা চালিয়েছে। হত্যা করেছে ৭৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে। গত মাসে ইসরায়েল তার হামলাকে লেবাননে প্রসারিত করেছে, যেখানে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। দুই সপ্তাহে ইসরায়েল ২ হাজারের বেশি লেবানিজকে হত্যা করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পুরো গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। কী করেনি তারা–বুলডোজার দিয়ে রাস্তা খুঁড়েছে, অবকাঠামো ও পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস এসব স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করেছে এবং আবাসিক ভবনগুলোকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সব স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে–পানি শোধনাগার, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সোলার প্যানেল ধ্বংস করেছে। সংক্ষেপে, ইসরায়েল গাজায় জীবনকে টিকিয়ে রাখার সবকিছু নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে।
গাজা উপত্যকার বড় একটি অংশকে খালি করে দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং মোট ভূখণ্ডের ১৬ শতাংশে তাদের গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। ভূমি খালি করার এই একই কৌশল পশ্চিম তীরের কিছু এলাকায় এবং এখন লেবাননে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি জনগণকে বলা হচ্ছে, একবার ইসরায়েলের ‘সামরিক অভিযান’ শেষ হয়ে গেলে তারা ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে এই গণহত্যার উদ্দেশ্য হলো উপনিবেশ স্থাপনের জন্য জমি পরিষ্কার করা। এটি আগে ঘটেছিল–১৯৪৮ সালের নাকবার সময়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে এমনটি দাবি করা হলেও ফিলিস্তিনিদের কখনোই আর তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেওয়া হয়নি। আর সে জন্যই ফিলিস্তিনিরা আবার তাদের ভূমি ছেড়ে যাবে না।
কিছু বহিরাগতের জন্য ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমির প্রতি গভীর অনুরাগ অনুভব করার বিষয়টি বোঝা কঠিন বলে মনে হতে পারে। এটা বিশেষ করে ইহুদিবাদীদের কাছে বোধগম্য নয়, যারা আমাদের অনেককে বহিষ্কার করেছে এই আশায় যে আমরা আরব বিশ্বের অন্য কোথাও চলে যাব এবং সেখানে মিশে যাব। কিন্তু ফিলিস্তিনি জনগণ সাত দশকের বেশি সময় ধরে নিজ ভূমির ওপর তাদের ন্যায্য দাবি ছেড়ে দেয়নি।
অবিরাম বোমাবর্ষণ, অভিযান ও অর্থনৈতিক দখলদারত্বের মুখেও কেন ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘর ও পৈতৃক জমি ছাড়তে অস্বীকার করছে? এটি কেবল ভূগোল বা সম্পত্তির মালিকানার বিষয় নয়, বরং এটি তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সম্মিলিত পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। প্রজন্মের পর প্রজন্মের স্মৃতি এবং জমির প্রতি তাদের আবেগ, তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে। তারা বিশ্বাস করে যে তাদের জমি ও বাড়িঘর ছেড়ে দিলে তাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে।
একটি কৃষিনির্ভর সমাজ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের সংস্কৃতি ও সম্মিলিত চেতনায় জমির একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। জলপাইগাছ এর নিখুঁত প্রতীক। ফিলিস্তিনিদের সংস্কৃতিতে জলপাইগাছের একটি গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। জলপাইগাছ যেমন প্রাচীন, স্থিতিস্থাপক ও এর শিকড় গভীরভাবে প্রোথিত–ফিলিস্তিনি জনগণও তেমনই। ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর যেমন তাদের ঐতিহ্যের প্রতি ঝোঁক রয়েছে, সেভাবে এই গাছগুলোর প্রতি রয়েছে ভালোবাসা। জলপাই সংগ্রহ করা, তেলে চাপ দেওয়া এবং সেই তেল প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের একটি কাজ।
এ কারণেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং বসতিস্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের জলপাইগাছগুলোতে আক্রমণ করতে পছন্দ করে। একটি জলপাইগাছ ধ্বংস করা ফিলিস্তিনিদের জীবিকার ওপর আক্রমণের শামিল। এটা ফিলিস্তিনি আত্মপরিচয়ের ওপর আক্রমণ। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও বসতিস্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের জলপাইগাছগুলোতে আক্রমণ করে তাদের সংস্কৃতি এবং পরিচয়ের প্রতি আঘাত করতে চায়। ইসরায়েলিরা ১৯৬৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তাদের প্রায় ৮ লাখ জলপাইগাছ উপড়ে ফেলেছে।
মাতৃভূমির প্রতি অনুরাগ আমাদের, প্রবাসী ফিলিস্তিনিদের মধ্যেও রয়েছে। আমি নিজেও অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুসে জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু বড় হয়েছি ফিলিস্তিনের বাইরে। দূরে থাকলেও আমি ফিলিস্তিনি মাটির সঙ্গে সব সময় গভীর সংযোগ অনুভব করি।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় আমার পরিবার ফিলিস্তিন থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আমার বাবা দেখেছিলেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাঁর জমি দখল করে একটি সামরিক চেকপয়েন্টে পরিণত করেছে এবং আমার মা তাঁর কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বসতিস্থাপনকারীদের হামলার শিকার হন। তাঁকে গুলি করা হয়েছিল। তাঁরা স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়েননি। বাঁচার জন্য দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
দুই দশক ধরে, আমি নিয়মিত ফিলিস্তিনে ফিরে গেছি, দেখেছি বসতিস্থাপনকারীরা ক্রমাগত ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করছে, আরও বেশি ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করছে। শৈশবের কথা যতটুকু মনে পড়ে, বেআইনিভাবে তৈরি বাড়ি গোটা শহরে ছেয়ে গিয়েছিল–চারদিক থেকে ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামগুলোকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল।
কিন্তু আমি যেমন দেখেছি ফিলিস্তিনিদের জলপাইগাছ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের পানি চুরি করা হয়েছে এবং বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে, তেমন আমি একইভাবে এসব ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের সাক্ষীও হয়েছি। ইসরায়েলিরা পানি চুরি করার পর ফিলিস্তিনিরা আবার পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন করেছিল।
ইসরায়েলিদের ধ্বংসযজ্ঞের পর রাতে তাদের বাড়িগুলো পুনর্নির্মাণ করেছিল এবং তারা হুয়ারার মতো শহরগুলোতে ইসরায়েলের হামলার শিকার মানুষের সাহায্য করতে ছুটে গিয়েছিল।
গত বছর ইসরায়েলি সহিংসতা গণহত্যায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা একই রকম অটল ও দৃঢ় আছে। জেনিন থেকে গাজা পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা অবিরাম ইসরায়েলি আক্রমণ এবং বোমাবর্ষণের মধ্যে বেঁচে আছে। তবে খুব সহজ জীবনাচরণের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক আক্রমণকে প্রতিরোধ করে যাচ্ছে।
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী যত বেশি ফিলিস্তিনিদের জীবনকে অসম্ভব করে তোলার চেষ্টা করে, ততই ফিলিস্তিনিরা এটিকে সম্ভব করার জন্য অস্থায়ী সমাধান নিয়ে আসে—তা সাইকেলচালিত একটি ওয়াশিং মেশিন হোক, রুটি সেঁকার জন্য কাদা এবং খড় দিয়ে তৈরি একটি মাটির চুলা হোক বা একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটর। এগুলোই হচ্ছে সেই একরোখা প্রয়াস, যা একসময় কঠিন স্ফটিকের রূপ ধারণ করে।
এদিকে প্রবাসে আমাদের হৃদয় ও মন ফিলিস্তিন ছেড়ে যায়নি। আমরা বেদনা ও আতঙ্কের মধ্যে দেখেছি যে গণহত্যা হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিরা যেসব দেশে আশ্রয় চেয়েছে, সেসব দেশের নেতারা চোখ বন্ধ করে রেখেছেন। পশ্চিমের অনেকেই ফিলিস্তিনিদের জীবনের মূল্য আছে বলে বিশ্বাস করে না। তারা আমাদের মানুষ হিসেবে দেখে না।
ফিলিস্তিনিদের মুছে ফেলার অব্যাহত প্রয়াস আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু গাজার জনগণ যখন গণহত্যার ভয়াবহতার মধ্যে বেঁচে থাকে, তখন আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়ার অধিকার নেই। আমাদের মধ্যে ফিলিস্তিনি দৃঢ়তা জাগিয়ে তুলতে হবে এবং অন্য সমাজকে বলতে হবে যে আমরা এখানে আছি, আমরা আছি এবং আমরা আমাদেরকে মুছে ফেলার জন্য সব চেষ্টাকে প্রতিহত করব।
‘আমরা ভূমি’-এর রূপক শুধু কাব্যিক নয়, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি জীবন্ত বাস্তবতা। যখন ফিলিস্তিনিদের জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘তোমরা চলে যাচ্ছো না কেন?’ তারা উত্তর দেয়, ‘কেন আমরা যাব?’ এটি ফিলিস্তিনি ভূমি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম রক্ত ও চোখের পানিতে এই জমি চাষ করেছে। ফলে ছেড়ে দেওয়া মানেই সব হারানো। এর অর্থ হবে আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সম্মিলিত আত্মাকে মুছে ফেলার অনুমতি দেওয়া। গণহত্যার এক বছর পরও ফিলিস্তিনিরা রয়ে গেছে, কারণ তাদের থাকতেই হবে।
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
আহমদ ইবসাইস
প্রথম প্রজন্মের ফিলিস্তিনি আমেরিকান এবং আইনের ছাত্র
সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত এক বছরে, ইসরায়েলের গণহত্যায় গাজায় প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তবে ধারণা করা হয়, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। গাজার পাশাপাশি ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী পশ্চিম তীরেও বারবার রক্তাক্ত হামলা চালিয়েছে। হত্যা করেছে ৭৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে। গত মাসে ইসরায়েল তার হামলাকে লেবাননে প্রসারিত করেছে, যেখানে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। দুই সপ্তাহে ইসরায়েল ২ হাজারের বেশি লেবানিজকে হত্যা করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পুরো গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। কী করেনি তারা–বুলডোজার দিয়ে রাস্তা খুঁড়েছে, অবকাঠামো ও পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস এসব স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করেছে এবং আবাসিক ভবনগুলোকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সব স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে–পানি শোধনাগার, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সোলার প্যানেল ধ্বংস করেছে। সংক্ষেপে, ইসরায়েল গাজায় জীবনকে টিকিয়ে রাখার সবকিছু নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে।
গাজা উপত্যকার বড় একটি অংশকে খালি করে দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং মোট ভূখণ্ডের ১৬ শতাংশে তাদের গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। ভূমি খালি করার এই একই কৌশল পশ্চিম তীরের কিছু এলাকায় এবং এখন লেবাননে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি জনগণকে বলা হচ্ছে, একবার ইসরায়েলের ‘সামরিক অভিযান’ শেষ হয়ে গেলে তারা ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে এই গণহত্যার উদ্দেশ্য হলো উপনিবেশ স্থাপনের জন্য জমি পরিষ্কার করা। এটি আগে ঘটেছিল–১৯৪৮ সালের নাকবার সময়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে এমনটি দাবি করা হলেও ফিলিস্তিনিদের কখনোই আর তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেওয়া হয়নি। আর সে জন্যই ফিলিস্তিনিরা আবার তাদের ভূমি ছেড়ে যাবে না।
কিছু বহিরাগতের জন্য ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমির প্রতি গভীর অনুরাগ অনুভব করার বিষয়টি বোঝা কঠিন বলে মনে হতে পারে। এটা বিশেষ করে ইহুদিবাদীদের কাছে বোধগম্য নয়, যারা আমাদের অনেককে বহিষ্কার করেছে এই আশায় যে আমরা আরব বিশ্বের অন্য কোথাও চলে যাব এবং সেখানে মিশে যাব। কিন্তু ফিলিস্তিনি জনগণ সাত দশকের বেশি সময় ধরে নিজ ভূমির ওপর তাদের ন্যায্য দাবি ছেড়ে দেয়নি।
অবিরাম বোমাবর্ষণ, অভিযান ও অর্থনৈতিক দখলদারত্বের মুখেও কেন ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘর ও পৈতৃক জমি ছাড়তে অস্বীকার করছে? এটি কেবল ভূগোল বা সম্পত্তির মালিকানার বিষয় নয়, বরং এটি তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সম্মিলিত পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। প্রজন্মের পর প্রজন্মের স্মৃতি এবং জমির প্রতি তাদের আবেগ, তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে। তারা বিশ্বাস করে যে তাদের জমি ও বাড়িঘর ছেড়ে দিলে তাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে।
একটি কৃষিনির্ভর সমাজ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের সংস্কৃতি ও সম্মিলিত চেতনায় জমির একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। জলপাইগাছ এর নিখুঁত প্রতীক। ফিলিস্তিনিদের সংস্কৃতিতে জলপাইগাছের একটি গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। জলপাইগাছ যেমন প্রাচীন, স্থিতিস্থাপক ও এর শিকড় গভীরভাবে প্রোথিত–ফিলিস্তিনি জনগণও তেমনই। ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর যেমন তাদের ঐতিহ্যের প্রতি ঝোঁক রয়েছে, সেভাবে এই গাছগুলোর প্রতি রয়েছে ভালোবাসা। জলপাই সংগ্রহ করা, তেলে চাপ দেওয়া এবং সেই তেল প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের একটি কাজ।
এ কারণেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং বসতিস্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের জলপাইগাছগুলোতে আক্রমণ করতে পছন্দ করে। একটি জলপাইগাছ ধ্বংস করা ফিলিস্তিনিদের জীবিকার ওপর আক্রমণের শামিল। এটা ফিলিস্তিনি আত্মপরিচয়ের ওপর আক্রমণ। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও বসতিস্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের জলপাইগাছগুলোতে আক্রমণ করে তাদের সংস্কৃতি এবং পরিচয়ের প্রতি আঘাত করতে চায়। ইসরায়েলিরা ১৯৬৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তাদের প্রায় ৮ লাখ জলপাইগাছ উপড়ে ফেলেছে।
মাতৃভূমির প্রতি অনুরাগ আমাদের, প্রবাসী ফিলিস্তিনিদের মধ্যেও রয়েছে। আমি নিজেও অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুসে জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু বড় হয়েছি ফিলিস্তিনের বাইরে। দূরে থাকলেও আমি ফিলিস্তিনি মাটির সঙ্গে সব সময় গভীর সংযোগ অনুভব করি।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় আমার পরিবার ফিলিস্তিন থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আমার বাবা দেখেছিলেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাঁর জমি দখল করে একটি সামরিক চেকপয়েন্টে পরিণত করেছে এবং আমার মা তাঁর কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বসতিস্থাপনকারীদের হামলার শিকার হন। তাঁকে গুলি করা হয়েছিল। তাঁরা স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়েননি। বাঁচার জন্য দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
দুই দশক ধরে, আমি নিয়মিত ফিলিস্তিনে ফিরে গেছি, দেখেছি বসতিস্থাপনকারীরা ক্রমাগত ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করছে, আরও বেশি ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করছে। শৈশবের কথা যতটুকু মনে পড়ে, বেআইনিভাবে তৈরি বাড়ি গোটা শহরে ছেয়ে গিয়েছিল–চারদিক থেকে ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামগুলোকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল।
কিন্তু আমি যেমন দেখেছি ফিলিস্তিনিদের জলপাইগাছ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের পানি চুরি করা হয়েছে এবং বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে, তেমন আমি একইভাবে এসব ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের সাক্ষীও হয়েছি। ইসরায়েলিরা পানি চুরি করার পর ফিলিস্তিনিরা আবার পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন করেছিল।
ইসরায়েলিদের ধ্বংসযজ্ঞের পর রাতে তাদের বাড়িগুলো পুনর্নির্মাণ করেছিল এবং তারা হুয়ারার মতো শহরগুলোতে ইসরায়েলের হামলার শিকার মানুষের সাহায্য করতে ছুটে গিয়েছিল।
গত বছর ইসরায়েলি সহিংসতা গণহত্যায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা একই রকম অটল ও দৃঢ় আছে। জেনিন থেকে গাজা পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা অবিরাম ইসরায়েলি আক্রমণ এবং বোমাবর্ষণের মধ্যে বেঁচে আছে। তবে খুব সহজ জীবনাচরণের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক আক্রমণকে প্রতিরোধ করে যাচ্ছে।
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী যত বেশি ফিলিস্তিনিদের জীবনকে অসম্ভব করে তোলার চেষ্টা করে, ততই ফিলিস্তিনিরা এটিকে সম্ভব করার জন্য অস্থায়ী সমাধান নিয়ে আসে—তা সাইকেলচালিত একটি ওয়াশিং মেশিন হোক, রুটি সেঁকার জন্য কাদা এবং খড় দিয়ে তৈরি একটি মাটির চুলা হোক বা একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটর। এগুলোই হচ্ছে সেই একরোখা প্রয়াস, যা একসময় কঠিন স্ফটিকের রূপ ধারণ করে।
এদিকে প্রবাসে আমাদের হৃদয় ও মন ফিলিস্তিন ছেড়ে যায়নি। আমরা বেদনা ও আতঙ্কের মধ্যে দেখেছি যে গণহত্যা হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিরা যেসব দেশে আশ্রয় চেয়েছে, সেসব দেশের নেতারা চোখ বন্ধ করে রেখেছেন। পশ্চিমের অনেকেই ফিলিস্তিনিদের জীবনের মূল্য আছে বলে বিশ্বাস করে না। তারা আমাদের মানুষ হিসেবে দেখে না।
ফিলিস্তিনিদের মুছে ফেলার অব্যাহত প্রয়াস আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু গাজার জনগণ যখন গণহত্যার ভয়াবহতার মধ্যে বেঁচে থাকে, তখন আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়ার অধিকার নেই। আমাদের মধ্যে ফিলিস্তিনি দৃঢ়তা জাগিয়ে তুলতে হবে এবং অন্য সমাজকে বলতে হবে যে আমরা এখানে আছি, আমরা আছি এবং আমরা আমাদেরকে মুছে ফেলার জন্য সব চেষ্টাকে প্রতিহত করব।
‘আমরা ভূমি’-এর রূপক শুধু কাব্যিক নয়, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি জীবন্ত বাস্তবতা। যখন ফিলিস্তিনিদের জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘তোমরা চলে যাচ্ছো না কেন?’ তারা উত্তর দেয়, ‘কেন আমরা যাব?’ এটি ফিলিস্তিনি ভূমি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম রক্ত ও চোখের পানিতে এই জমি চাষ করেছে। ফলে ছেড়ে দেওয়া মানেই সব হারানো। এর অর্থ হবে আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সম্মিলিত আত্মাকে মুছে ফেলার অনুমতি দেওয়া। গণহত্যার এক বছর পরও ফিলিস্তিনিরা রয়ে গেছে, কারণ তাদের থাকতেই হবে।
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
আহমদ ইবসাইস
প্রথম প্রজন্মের ফিলিস্তিনি আমেরিকান এবং আইনের ছাত্র
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে